৫৩তম পর্ব
বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম
শেষ কিস্তি
শাহবাগ জাগরণের সূচনাতে জনগণের মনে একটা আশা অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছিলো। তারা ভেবেছিলো তারুণ্যের এই স্বতঃস্ফূর্ত স্ফুলিঙ্গ একটি দাবানলের সৃষ্টি করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের রূপ নেবে। কিন্তু তাদের এই প্রত্যাশা অঙ্কুরেই পরিণত হলো মরীচিকায়।
কারণ আন্দোলনকারীদের ৬দফাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ‘৭১-এর চেতনা ও স্বপ্নের কোনও প্রতিফলন দেখা গেলো না। হতাশাগ্রস্ত জনগণ দেখলো এবং বুঝলো শাহবাগ আন্দোলন চলছে স্বৈরতান্ত্রিক সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হাসিনার মহাজোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। শুধু তাই নয়, তারা দেখলো এই মঞ্চের নট-নটীরা নর্তন-কুর্দন করছে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। তারা বুঝলো, এই আন্দোলনের নামে তামাশা সরকারের ঘৃণ্য স্বার্থে এবং এর লক্ষ্য কারও মুক্তি নয়, লক্ষ্য হলো সরকারের ইচ্ছামত কয়েকজন ব্যক্তির বিচার বহির্ভূতভাবে ফাঁসি।
এই তামাশার উদ্দেশ্য মানবতাবাদের পরিবর্তে ঘৃণা ও সহিংস সন্ত্রাসবাদ। এদের আন্দোলন নৈতিকতা এবং মানবিকতা বিবর্জিত বিধায় শ্মশান ঘাটের আলেয়ার মতোই হঠাৎপ্রজ্বলিত হয়ে দপ করে নিভে যাবে। গণবিচ্ছিন্ন বিধায় এই সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখবে না যদিও সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছিলো, শাহবাগের গণজমায়েত নাকি বাংলাদেশের ‘তাহরির স্কোয়ার’, তারুণ্যের নবজাগরণ, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ! কিন্তু দেশের সচেতন জনতার সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে শুভঙ্করের ফাঁকিটি ধরা পড়ে যায়। তাই তারা নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলো পর্যায়ক্রমে।
বস্তুত বিএনপিসহ বিরোধী জোটের জামায়াতে ইসলামীর উপর চাপ সৃষ্টি এবং তাদের সাথে বর্তমানের সংঘাতমূলক বিভৎসএবং অসুস্থ ক্ষমতার রাজনীতির থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেবার জন্যই ব্যর্থ মহাজোট সরকার ভারতের সাহায্যে শাহবাগ চত্বরের সমাবেশের উদ্যোগ নেয়। শাহবাগের কিছু কার্যক্রমের বৈপরীত্য কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।
মোমবাতি, মঙ্গল প্রদীপ, আলপনা, গান-বাজনা মানুষের সুকুমার বৃত্তির মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু সেখানে স্নিগ্ধ আলোর কুহেলিকা সৃষ্টি করে উস্কানিমূলক নৈরাজ্যিক স্লোগান তোলা হয়- ধরো, মারো, আগুন জ্বালো! আল্পনার সৌন্দর্যকে মাড়িয়ে দেখা গেছে ফাঁসিকাষ্ঠের দড়িতে ঝুলন্ত পুতুলের নিষ্ঠুরতা।
সারল্য এবং নিস্পাপতার প্রতীক এবং আগামি দিনের ভবিষ্যৎ শিশুদের মাথায় দেখা গেলো ফাঁসির নির্মম বাণীর টুপি। তাদের খেতে দেখা গেছে ‘ফাঁসি চাই’ খচিত কেক-পেস্ট্রি। তাদের কোমল মনে জিঘাংসার বীজ বপন করে দেয়া হলও কোন অধিকারে এবং কাদের স্বার্থে! এ সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে ভেবে দেখতে হবে প্রতিটি দেশপ্রেমিক সচেতন বাংলাদেশীকে।
রাজিব, ইকবাল প্রমুখ নাট্যমঞ্চের নেতারা ব্লগে যা লিখেছে এবং সেগুলোকে যেভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে তাতে ধর্মান্ধ নয়-কিন্তু ধর্মভীরু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা হয়। এখানে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়টি হলো, তাদের এইসব গণবিরোধী কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এবং তার মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ ও দলীয় নেতা-নেত্রীরা।
এই ধরনের খোলাখুলি সমর্থন শুধু হতাশাব্যঞ্জকই নয়, বিপদজনকও বটে। গোটা দেশটাকেই সাম্প্রদায়িক আস্তিক বনাম নাস্তিকের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবার একটা সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন হাসিনা। নিজস্ব রাজনৈতিক এবং ভারতের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে আগুন নিয়ে খেলেন তিনি দুইটি লক্ষ্য হাসিল করার স্বার্থে।
একদিকে ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হেনে তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৌলবাদী জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে সেটাই প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
অন্যদিকে ভারতকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার বিধায়তাদের পুরনো দাবী ‘বঙ্গভূমি’ কায়েমের যৌক্তিকতা এগিয়ে নেবার রাস্তা করে দিয়েছিলেন।
তার এই ঘৃণ্য অভিসন্ধি জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই নয়, তবে কার স্বার্থে সেটাও ভাবতে হবে দেশবাসীকে।যারা সুস্থ মানুষ, যারা শান্তি, সংহতি, সহাবস্থানে বিশ্বাসী, সহনশীলতা, মমত্ব, মানবপ্রেমে আস্থা রাখে তাদের জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে আগুয়ান হতে হবে দেশ ও জাতিকে নৈরাজ্য এবং গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচানোর অঙ্গীকারে।
আজকের পৃথিবীতে ঘটা করে বিচার বহির্ভূত ফাঁসির দাবি তোলাটা যে কতটা অসভ্যতা ও বর্বরতা সেসম্পর্কে সচেতন হতে হবে সবাইকে যাতে বিশ্বপরিসরে বাংলাদেশ ও জাতিকে একটি ধিকৃত রাষ্ট্র এবং জাতি হিসাবে কলংকের বোঝা বয়ে বেড়াতে না হয়।
শাহবাগ মঞ্চ থেকে নাস্তিক নেতাদের তরফ থেকে স্লোগান তোলা হয়েছে, ‘ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি এবং দল নিষিদ্ধ করা হউক’। একই দাবি উঠিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা হাসিনা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। ১৭ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় শাহবাগ চত্বর সম্পর্কে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে লেখা হয়,
‘তাহরির স্কোয়ারে গণবিক্ষোভ দেখেছে মানুষ, তিয়েন আন মেন স্কোয়ারের বিদ্রোহও দেখেছে। দিল্লীর গেট অফ ইন্ডিয়াতে দেখা গিয়েছে মোমবাতির মৌন গণসমাবেশ। কিন্তু গত দু’ দশকে এমন বিক্ষোভ দেখেনি কেউ।’ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি এবং দলীয় নেতা-নেত্রীদের শাহবাগে উপস্থিত হয়ে তাদের সমর্থনে বকতৃতা এবং স্লোগান দেয়ার ভূয়সী প্রশংসা করা হয় ঐ প্রতিবেদনে।
হাসিনার সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী এমনকি হাসিনার আমেরিকা নিবাসী সুপুত্র জয়ের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা দেখতে পেয়েছে দেশবাসী শাহবাগ মঞ্চের কুশীলবদের সমর্থন প্রদানের ক্ষেত্রে
সংসদে দাঁড়িয়ে হাসিনা শাহবাগ সম্পর্কে তার সমর্থন জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে, কিন্তু আমার মন পড়ে আছে শাহবাগে’।
তার এই বালখিল্য উক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করা হয় সেই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ এবং ভারতের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি ও সালমান খুরশিদ এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শাহবাগ নাট্যমঞ্চের গণজমায়েতকে প্রাণঢালা সমর্থন জানান।
‘সন্স অফ বাবর’ নাটকের নাট্যকার সালমান খুরশিদ শাহবাগ চত্বর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তার হোটেলে মধ্যাহ্ন ভোজন করতে করতে বলেছিলেন, ‘নবীন প্রজন্মের দাবি যুক্তিসঙ্গত’।
সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে ধর্মনিরপেক্ষতার অভিমুখে দু’দেশের এগিয়ে চলার অঙ্গিকারের কথারও পুনরুক্তি করেছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আধুনিক বিশ্বে ধর্ম নিরপেক্ষতার অন্য কোনও বিকল্প নাই।’
আন্না হাজারের আন্দোলনকে দমন করার জন্য ভারত সরকার যে বর্বরোচিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেছিলো তার পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ স্কোয়ারের প্রতি ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এতটুকুও লজ্জা পেলেন না জনাব সালমান খুরশিদ!
এই বোদ্ধা ব্যক্তি আরও বলেছিলেন,
‘তরুণ সমাজকে যেকোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে দেখাটা নাকি সর্বদাই আনন্দের বিষয়। তারা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরছে, আমি তাদের এই মনোভাবের প্রশংসা করি। গণতন্ত্রের মাধ্যমে এভাবেই জোরালো অনুভূতি এবং বিশ্বাস প্রকাশ পায়’।
২৬শে ফেব্রুয়ারি দিল্লীর ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ একটি সংবাদ ভাষ্যে বলেছে,
‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ের আন্দোলনকারীদের প্রতি ভারতের জোরালো সমর্থন রয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন গত শুক্রবার পুনাতে বলেছেন, উগ্রপন্থী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে শাহবাগের চলমান আন্দোলনে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর ‘স্বতঃস্ফূর্ত’উপস্থিতি থেকে বাংলাদেশী তারুণ্যের দৃঢ়চেতা অনুভূতি, রাজনৈতিকভাবে জনগণকে সমবেত করার ক্ষমতার মাধ্যমে তাদের মুক্তমনের পরিচয়ই ফুটে উঠেছে’।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং ভারত সরকারের যৌথ সমর্থনপুষ্ট হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং ইসলাম বিরোধী উন্মাদনা সৃষ্ট এই নাট্য উৎসবকেছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এই ঘটনাকে আমেরিকার সহযোগী আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদী ভারতের সুদূরপ্রসারী ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের পদক্ষেপ হিসাবেই দেশবাসীকে দেখতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে দেশপ্রেমিকদের।
বেশকিছুদিন আগে ভারতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপানো একটা খবরে চোখ আটকে গিয়েছিলো।খবরটি ছিলো, ‘ভারত সরকারের তরফ থেকে বিশ্ববাসীকে জানান দেয়া হচ্ছে, ফোর্ট উইলিয়ামের (ভারতের ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার) আর্কাইভ থেকে ‘৭১সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সব দলিল-দস্তাবেজ চুরি হয়ে গেছে। জনবহুল বাংলাদেশের কয়জন সেই খবরটা পড়েছেন বা এ নিয়ে ভেবেছেন সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে খবরটি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। হঠাৎকরে এমন সুরক্ষিত একটি জায়গা থেকে সব গোপনীয় দলিল-দস্তাবেজ চুরি হয়ে গেলো কি কারণে!
বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনার পর কারণটা বোধগম্য হলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে যুদ্ধোত্তর কালে দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন মহল থেকে ইতিহাস বিকৃতির যে জঘন্য প্রতিযোগিতা চলে আসছে মিথ্যার উপর ভিত্তি করে সেই ধারাবাহিকতায় কোনো দলিল ভারত থেকে চাওয়া হলে ভারত যাতে নিজ স্বার্থে মনগড়া বায়াদলিল ধরিয়ে দিতে পারে সেটাই মূল উদ্দেশ্য।
যুদ্ধকালে বাংলাদেশী প্রবাসী সরকার মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংরক্ষিত করার কোনও পদক্ষেপ না নেয়ার সুযোগটাই গ্রহণ করে ভারতীয় চাণক্যরা এই খবরটি রটিয়েছে।
শিবশংকর, সালমান খুরশিদ, দীপুমনি, হাসিনা, রাজিব, বাপ্পাদিত্য, ডাঃ ইকবাল, বাবা থাবা ও শাহবাগ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে ধরনের দাম্ভিক আচরণ করেছে সাজানো নাটকের মাধ্যমে তাতে যদি জনগণের মনে ধারণা জন্মায় বাংলাদেশের পরিসীমার মধ্যে আর একটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে সেটা দোষনীয় হবে না।
আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে জাতীয় পতাকা ওড়ানো, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো, স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার হুকুম জারি, আদালত অবমাননা, মানুষ হত্যার হুমকি, জবাই করার আহবান জানিয়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেবার উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিলো অবলীলাক্রমে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো তারা যেনো রাষ্ট্রীয় আইনের বাইরে।এ ধরনের হুকুম জারি করা কি কনও নাগরিক গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব! তাই প্রশ্ন দেখা দেয়, শাহবাগ নামক রাষ্ট্রটি ছিলো কার? কারা এই রাষ্ট্র চালাচ্ছিলো? রাষ্ট্রটির মালিকানা কি দেশের ভেতরে না বাইরে? ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যারা এই বিষয়ে শাহবাগ চত্বর থেকে সোচ্চার হয়েছে ’৭১-এ তাদের কে কোথায় ছিলো কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সাথে আদৌ জড়িত ছিল কিনা সেই বিতর্কে না গিয়েও নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এদের সিংহভাগই মুক্তিযুদ্ধ কিংবা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কি ঘটেছিলো সে সব বিষয়ের সাথে জড়িত ছিলো না। তাদের অনেকের হয়তো জন্মই হয়নি ১৯৭১ এ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যেসমস্ত চক্রান্তমূলক কূটকৌশল গৃহীত হয়েছিলো সেই বিষয়েও তারা একইভাবে অজ্ঞাত।
একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার প্রকাশিত বই, ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি’ থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য পাঠক, শাহবাগ মঞ্চের আন্দোলনকারী এবং তাদের সমর্থক দেশের ও ভারতের নেতা-নেত্রীদের ধূসর স্মৃতিকে স্বচ্ছ করার জন্য তুলে ধরছি।
‘মুক্তিযুদ্ধকে তার স্বাভাবিক পরিণতির দিকে এগুতে না দিয়ে শেষ পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর অবস্থা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃসাহসী তৎপরতায় সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত ঠিক তখনই ভারত সরকার সুযোগ পেয়ে যায় পাক-ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করার। যুদ্ধ ঘোষণার পর সৃষ্টি করা হয় মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ড মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ইন চীফ কর্নেল ওসমানীর নেতৃতে।
সিদ্ধান্ত হয় হানাদার বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয়ের পর যৌথ কমান্ডের শীর্ষনেতা কর্নেল ওসমানীর কাছেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে জেনারেল নিয়াজীর অধীনস্থ পাকসেনারা।
সেই অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ’কে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন কর্নেল ওসমানী সহযোগী বাহিনী প্রধান হিসেবে।
কিন্তু এই চুক্তির বরখেলাপ করে ইন্দিরা গান্ধীর ভারত সরকার। নিরাপত্তার মিথ্যা অজুহাত সৃষ্টি করে কর্নেল ওসমানীকে ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না দিয়ে ভারতীয় সরকার চাণক্যদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জেনারেল নিয়াজী ও তার ৯৭ হাজার সেনা ও তাদের সমর্থনকারীরা আত্মসমর্পণ করবে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল অরোরার কাছে।
এ ভাবেই ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথাকে ম্লান করে দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলো, পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতের বিজয়ের মাধ্যমেই প্রসূত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র।
এরপর ভারত শেখ মুজিবকে বাধ্য করলো চিহ্নিত ১৯৫ জন এবং বাকি আত্মসমর্পণকারীদেরকে ভারতের হাতে তুলে দিতে যাতে করে বন্দীদের জিম্মি করে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে সম্ভব হয় জুলফিকার আলী ভুট্টোকে চাপের মুখে রেখে ভারতের ইচ্ছেমত সব দাবি আদায় করে নেয়া।
সিমলা চুক্তির মাধ্যমে হয়েছিলও তাই।
তারপর, ভুট্টোর অনুরোধে ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবকে হুকুম দিলেন জাতসাপের ফেলে আসা খোলস নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করা চলবে না। হুকুম তামিল করে মুজিব সব যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করে দিয়েছিলেন একটি ‘সাধারণ ক্ষমা’ আইন জারি করে।
আজ সুদীর্ঘ চার দশক পর ঐ খোলসটাকেই কাটা-ছেঁড়া করার জন্য হঠাৎ হাসিনার মাধ্যমে ভারত কেনও এতো উঠে পড়ে লেগেছে?
এর উদ্দেশ্যটা কি সেটাও ভাবতে হবে দেশবাসীকে।
স্মরণে রাখতে হবে, শাহবাগের ঘটনা কোনও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১৫ই আগস্টের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থান এবং ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নেতাদের বিচারের প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করা, হাজার হাজার বিপ্লবী নেতা-কর্মী এবং সৈনিকদের হত্যা করা, বিডিআরএর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং তারই ধারাবাহিকতায় বেছে বেছে দুই শতাধিকেরও বেশি দেশপ্রেমিক অফিসারকে বিনা কারণে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করা, কারাপ্রকোষ্ঠে ছুড়ে ফেলা শত শত সৈনিক এবং শাহবাগ চত্বরের সাজানো নাটক, বিভিন্ন অজুহাতে ক্রস ফায়ারে বিচার বহির্ভূত ভাবে সবই একই সূত্রে গাঁথা।
কাদের স্বার্থে ঘটানো হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে এই সমস্ত ঘটনা সমূহ? এই সব প্রশ্নের সঠিক জবাব খুঁজে পাবার উপরেই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
এবার ধর্ম সম্পর্কে কিছু চিন্তার খোরাক। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে ধর্ম হলোসৃষ্টিকর্তা, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি রহস্য, জন্ম মৃত্যু, পরকাল, জাগতিক জীবন ব্যবস্থায় সঞ্চিত মূল্যবোধসমূহ সম্পর্কে একটি বিশ্বাস এবং জীবন বিধান। যারা ঈশ্বর এবং ঐশ্বরিক বিধানে বিশ্বাস করে তা সেটা যেই অবয়বেই হউক না কেনও তারা হলো আস্তিক বা ধার্মিক। আর যারা ঈশ্বর এবং ঐশ্বরিক বিধানে বিশ্বাসী না হয়ে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে বিশ্বাস রেখে জীবন অতিবাহিত করে তারা হলো নাস্তিক বা ধর্মহীন।
আস্তিক কিংবা নাস্তিক সবাই কিন্তু সমভাবে প্রাণহানীর বিপক্ষে এবং জীবনের পক্ষে, বন্দীত্বের বিপক্ষেমুক্তির পক্ষে, অমানবিকতার বিপক্ষেমানবতার পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষেন্যায়ের পক্ষে। শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে, অবিচার-অনাচারের বিপক্ষে। অনৈক্য, ঘৃণা, প্রতিহিংসা, স্বৈরশাসন ও জুলুমের বিপক্ষে। গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, নৈতিকতা, ভাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, সহনশীলতা, শান্তি, শৃঙ্খলা হচ্ছে আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতার মূলনির্যাস। বর্ণবাদ, সহিংসতা, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, আক্রোশ, হিংসা, লোভ, লালসা, স্বার্থপরতা, সাম্প্রদায়িকতা, অহংকার, পশুশক্তি, প্রাচুর্যের অপচয়, সন্ত্রাস এ সমস্তের কোওনো স্থান নেই আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতায়। ধর্মনিরপেক্ষতার অভিধানিক অর্থও নিহিত রয়েছে দু’টি দর্শনেই।
এবার দৃষ্টি দেয়া যাক ইসলামের দিকে। ‘ইসলাম’ এর শব্দার্থই হচ্ছে শান্তি। শান্তির ধর্ম ইসলামের সাথে গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, মানবিক অধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এবং প্রগতিশীলতার সাথে কনও সংঘাত বা বৈপরীত্য নেই। একই সাথে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, অকারণে জীবন নাশ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকেও সমর্থন করে না ইসলাম। ইসলাম ধর্মের ঐশ্বরিক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানকে মেনে চলা প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি বাধ্য-বাধকতা। পৃথিবীর ৭০০ কোটি ধর্মবিশ্বাসীদের মাঝে খৃস্টধর্মের পরেই ইসলামের স্থান। এই ধর্ম যদি অযৌক্তিক জীবনদর্শনই হতো তবে বর্তমান সভ্যজগতে এর প্রসার অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশি হতো না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকাসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১০ জন অন্য ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। এই প্রক্রিয়ায় তো কনও জোর, জুলুম, সন্ত্রাসবাদ কিংবা অর্থলোভ কাজ করছে না। ইসলাম ধর্মের স্বীয় মহিমাকে যুক্তিসঙ্গত মনে করেই সভ্য জগতের শিক্ষিত এবং আর্থিক সঙ্গতির নাগরিকরা স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়েই ইসলাম কবুল করছে সত্য-আদর্শ ভিত্তিক জীবন বিধান হিসাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্মীয় চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড উস্কে দিয়ে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টায় উন্মাদ হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনরা এবং একিসাথে বলছে, ‘বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক কোনোও রাজনীতির স্থান হতে পারে না, অস্তিত্ব থাকতে পারে না ধর্মের নামে কোনও রাজনৈতিক দলের। শুধু তাই নয়, যারা জোর প্রচারণা চালাচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গণতন্ত্রের পরিপন্থী, প্রগতিশীলতার পথকে বিঘ্নিত করে ধর্মীয় চেতনা,তাদের মিথ্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এতটুকু বললেই যথেষ্ট হবে, ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে সত্যকে মেনে নেয়াটাই কল্যাণকর। অস্বীকার করার উপায় নেই আধুনিক বিশ্বেও ধর্ম হচ্ছে মূল্যবোধের মূল উৎস।আদিকাল থেকেই ধর্ম সব দেশের সামাজিক সভ্যতা বিকাশের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এসেছে এবং করছে। বিসবের উন্নত অনুন্নত সবদেশেই। রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের থাকে একটি বিশেষ ভূমিকা। অধুনা প্রকাশিত সাড়া জাগানো Samuel P. Hutington এর লিখিত বইটির নাম The Clash of Civilizations and the Remarking of World Order না হয়ে ‘Clash of Religions and the Remarking of World Order’ হওয়াটাই হতো বেশি যুক্তিসঙ্গত।
একইভাবেজামায়াতকেনিষিদ্ধকরলেভিন্ননামেঅতি সহজেই তারা নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে নতুন আঙ্গিকে। ডজনদু’এক ডক্টরেট ডিগ্রীধারী মহিলা প্রধানমন্ত্রী হাসিনা, সেগুলো মেধাভিত্তিক কিংবা টাকা দিয়ে কেনাই হউক বা না হউক কেনও, ঘটে এতোটুকু বুদ্ধি থাকলেও তার বোঝা উচিৎছিলো, মানুষ হত্যা কিংবা গুম করা চলে, বিপ্লবীদের হত্যা করা সম্ভব হয়, পার্টি অস্তিত্বহীন কোরে দেয়া যায়, কিন্তুবিপ্লব কিংবা কোনও জীবন্ত বস্তুনিষ্ঠ ন্যায়সঙ্গত আদর্শকে কখনোই চিরতরে নিঃশেষ করে দেয়া যায় না রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অথবা শ্বেতসন্ত্রাস চালিয়ে।
পরিশেষে নিয়তির অমোঘ বিধানে মানুষ মাত্রইনশ্বর। সবাইকেই আগেপিছে ছেড়ে যেতে হবে পৃথিবী। আমাদের শূন্যস্থান পূর্ণ হবে নবাগতদের আগমনে। থাকবে বাংলাদেশ, থাকবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এবং তাদের ভবিষ্যৎ। তাদের কাছে থাকবে হাজারো বছরের সভ্যতার ঐতিহ্য, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। থাকবে স্বাধীনচেতা এই বীরের জাতির আত্মত্যাগী সংগ্রামী ইতিহাস। নেতা-নেত্রীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট যার আলোকেই তারা খুঁজে নেবে সঠিক পথ ও যোগ্য নেতৃত্ব উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের জন্য। নিজের এবং দেশের কিছু বিপ্লবী নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক আত্মত্যাগী সহযোদ্ধাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে লিখে রেখে গেলাম নৈতিক দায়িত্বপালনের স্বার্থে।
আশা করি, যথাসময়ে বস্তুনিষ্ঠ ঘটনাগুলো ইতিহাসের কষ্টিপাথরে সত্য হিসাবেই প্রমাণিত হয়ে সঠিক ইতিহাসের অংশে স্বাভাবিক ভাবেই ঠাঁই করে নেবে। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না চিরকাল ঠিক তেমনি মিথ্যা দিয়ে সত্যকেও ধামাচাপা দেয়া সম্ভবনয়।তাই সত্ যচিরভাস্বর।
সূচীপত্র [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]
১ম পর্ব “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা
২য় পর্ব শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত
৪র্থ পর্ব – কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব
৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!
৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে
৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”
১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী
১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে
১৩তম পর্ব ১ম কিস্তি – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৪তম পর্ব – বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক
১৬তম পর্ব – শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ
১৭তম পর্ব – ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে
১৮তম পর্ব – বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস
১৯তম পর্ব – জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক
২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে
২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ
২৩তম পর্ব – জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে
২৪তম পর্ব – রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর
২৫তম পর্ব – আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক
২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর
২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া
২৯তম পর্ব – চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে
৩০তম পর্ব – জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল
৩১তম পর্ব – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ
৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন
৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি
৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি
৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি
৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে
৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে
৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা
৪০তম পর্ব – ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি
৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে
৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব
৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি
৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়
৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন
৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া
৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া – শেষ কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – শেষ কিস্তি