৫২তম পর্ব –
দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া
শেষ কিস্তি
১৯৬৮ সালের মে মাসে ফ্রান্সের প্রবল প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট দ্য’গলের সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিলো। এই অভ্যুত্থানের ফলে দ্য’গলের সরকারের অবস্থা এমনই সঙ্গিন হয়ে পড়েছিলো যে এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট দ্য’গলের পক্ষে ফ্রান্সে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সুতরাং প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাকে দেশত্যাগ করে জার্মানির এক সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিতে হয়। সেই অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটেছিলো একটি অতি সাধারণ ঘটনা থেকে।
ঘটনার শুরু সবর্ণ ভার্সিটিতে। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা একটি ডরমেটরিতে বসবাসের অধিকার চাইলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মানতে রাজি হলো না। শুরু হলো প্রতিবাদ বিক্ষোভ। ক্রমশ সেই বিক্ষোভ আর সেই ক্ষুদ্র দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলো না। ছড়িয়ে পড়লো প্যারিসের ল্যাটিন কোয়ার্টারসে। শ্রমজীবী মানুষের বস্তি ল্যাটিন কোয়ার্টারস পরিণত হলো বিপ্লবের ঘাঁটিতে। ফ্রান্সের বেশিরভাগ মানুষ মেহনতি শ্রমিক। তাদের মধ্যেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় অতিদ্রুত এই প্রতিবাদী আন্দোলন সুষম সমাজ ব্যবস্থার গণ-অভ্যুত্থানের রূপ ধারণ করলো। আন্দোলনের বহ্নিশিখা গ্রাস করে ফেললো পুরো ফ্রান্সকে। কিন্তু কায়েমী স্বার্থের প্রতিভূ ফ্রান্সের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থে এই সর্বজনীন অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করায় দ্য’গল তাদের সহায়তায় সেই যাত্রায় চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পান। এই ঘটনাই প্রমাণ করে সময়ে একটি তুচ্ছ ঘটনা থেকেও অকল্পনীয়ভাবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই হতাশাগ্রস্ত হবার কারণ নেই।
বাংলাদেশে বিগত চার দশকেরও বেশি সময়ের অপশাসনের ফলে মানুষের মনে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যেভাবে দেশকে অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে তাকে প্রশমিত করার যোগ্যতা বর্তমানের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নেই। সেক্ষেত্রে দেশ জুড়ে যেকোনো সময় এমন একটা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে যাতে কায়েমী স্বার্থবাদী ও তথাকথিত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী সব বর্ণচোরা রাজনৈতিক দলগুলোর আম ও গাছ দুটোই হাত ছাড়া হয়ে যাবে। কেনও এমনটি হবে তার বাস্তব সম্মত যুক্তি রয়েছে।
বর্তমানের জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন আদর্শের ঠিকাদার বনে পাতানো খেলার রাজনীতিতে রত সবকয়টি রাজনৈতিক দলের চরিত্র যে একই, সেটা আজ জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তারা বুঝতে পারছে, এরা সবাই মুদ্রার এ পিঠ ওপিঠ। ক্ষমতার লড়াইয়ে জনসম্মুখে চলে ‘নুরা কুস্তি’ অন্যদিকে আড়ালে চলে সহবাস। তারা ধরে ফেলেছে শুভংকরের ফাঁকি। জন্মলগ্ন থেকেই উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। দেশবাসী বুঝতে পারছে বিগত চার দশকে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর প্রতিভূ ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলোর মতলবি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় সন্ত্রাসের জোরে দেশটাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করে চুষে ফোকলা করে ১৮ কোটি জনগণের ভবিষ্যৎঅনিশ্চিত করে তুলেছে। তারা নিজেরাই সমস্ত দেশটাকেই সন্ত্রাস সংকুল করে তুলেছে নিজেদের স্বার্থেই। শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতার রাজনীতি তাদের। নিজেদের পেটপূর্তির জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল, ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা, লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট, সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করার জন্য গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে জড়িয়ে ফ্যাসিবাদই তাদের হাতিয়ার। তাদের সব বিচার-বিবেচনা আর সিদ্ধান্তের কষ্টিপাথর হলো নিজস্ব, পারিবারিক, গোষ্ঠী এবং দলীয় স্বার্থ। দেশ ও জনগণের সমস্যা নিয়ে ভাবছে না কেউই। ক্ষমতার জন্য সবকিছুই তাদের পক্ষে করা সম্ভব। স্বৈরাচারের সাথে আঁতাত, সামরিক শাসন কায়েম, জরুরী অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগানো এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল ক্যু’দেতাকেও সমর্থন করতে কুণ্ঠিত হয় না তারা। ক্ষমতালাভের জন্য আন্দোলনের নামে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ-ঘেরাও করে নিরীহ মানুষের জীবন বিঘ্নিত করতে এবং নিজেদের স্বার্থে তাদের সাধারণ নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাতেও বিবেকে বাধে না তাদের। বোমা ফাটিয়ে, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মানুষ খুন গুম করতেও দ্বিধাবোধ করেনা তারা। প্রশাসনযন্ত্র এবং সরকারী আমলাদের দলীয়করণের মাধ্যমে উসকে দিয়ে গোটা শাসন ব্যবস্থাকেই স্থবির এবং অকেজো করে তুলেছে তারাই। আইন বিভাগকে দলীয়করণের মাধ্যমে বিচারের নামে এক তামাশার নাটকই মঞ্চস্থ করে চলেছে তারাই।পেশাধারীদের গুণগত মানে ধ্বস নামাচ্ছে তারাই। নৈতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ধর্ষিত হচ্ছে তাদেরই স্বার্থে। ক্ষমতার স্বার্থে রাজাকারদের বানানো হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা আবার প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের বানানো হচ্ছে রাজাকার। জামায়াতে ইসলামীর সাথে এক টেবিলে বসে আলোচনার পর জোট বেঁধে আন্দোলন করেছে বিএনপিএবং আওয়ামী লীগ। এই দু’টি দল এবং তাদের সাথে জোটবদ্ধ সব কয়টি শরিক লেজুড় দলগুলো আবার প্রয়োজনে জামায়াতকে এড়িয়ে চলেছে রাজনৈতিক সুবিধার্থে নির্দ্বিধায়!
পাকিস্তান আমলে ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে আইন ভঙ্গের দায়ে চাকুরিচ্যুত ল্যান্স নায়েক কাদের সিদ্দিকি যে নাকি ন্যক্কারজনক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেলওসমানীর ‘বঙ্গবীর’খেতাবটি হাইজ্যাক করে তার নামের প্রথমে যোগ দিয়ে শোভাবর্ধন করতে লজ্জিতনা হয়ে দেশবাসীর নাকের ডগার উপর দিয়ে জাতীয় নেতা হিসাবে গজিয়ে উঠলেন আর সবাই সেটা আপাতদৃষ্টিতে মেনেও নিলেন। সেই নির্লজ্জ ব্যক্তিকেই তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ ভারতের নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তাদের সাজা মওকুফ করিয়ে দেশের রাজনীতির মূলধারায় পুনর্বাসিত করলেন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে আওয়ামী লীগে ভাঙ্গন ধরানোর ভুয়া কৌশলের অজুহাতে। তাকে একটি দৈনিক কাগজ প্রকাশনার অনুমতি এবং অত্যাধুনিক একটি প্রেস কেনার জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার ব্যবস্থাও করে দেয়া হয় খালেদা জিয়ার জোট সরকারের আমলেই। ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ সহ কিছু বিএনপি নেতা যারা ছিলেন সাঈদ ইস্কান্দারের বিশেষ ঘনিষ্ঠ জন, তারাই ছিলেন এই বিষয়ে মূল উদ্যোগ গ্রহণকারী।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলেরাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এই কাদের সিদ্দিকিই বর্তমানে নিজের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কব্জা করার কিংবা ভাগ বসাবার সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুণছেনফাঁসির রজ্জুর বদলে গলায় গামছা ঝুলিয়ে।
আপোষের মাধ্যমে ভারতীয় খুঁটিঁর জোরে বেঁচে থাকা ১৫ই আগস্ট বৈপ্লবিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সীমান্তে সেনাবাহিনীর দুইজন অফিসার আর তিনজন সৈনিক হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এই ব্যক্তিকে যদি ভবিষ্যতেক্ষমতার পীঠস্থানের আরামদায়ক কেদারার পরিবর্তে জনতার দাবির মুখে আদালতের রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং খুনের আসামী হয়ে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হয় তখন যারা তার সব সাজা মাফ করিয়ে দিয়ে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনে গলায় গামছা ঝুলিয়ে রাজনৈতিক খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তারা দায়মুক্ত হবেন কোন সমঝোতা কিংবা যুক্তির ভিত্তিতে?এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়েও ভাবছে জনগণ। কারণ, ঘটনাটিকে সাময়িকভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হলেওভুলে যাওয়া কিংবা এড়ানো সম্ভব হবে না কখনোই।
পাকিস্তান থেকে ভুট্টো এবং ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বোঝাপড়ার পর দেশে ফিরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে শেখ মুজিব আইন করে চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী সহ ৯৭ হাজার পরাজিত আত্মসমর্পণকারী খানসেনা ও তাদের সহোদরদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ত্রিপক্ষীয় ‘সিমলা চুক্তির’ আওতায় বাংলাদেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে। ২০০১ সালে ‘উদ্দিন’ কুশীলবদের কারসাজিতে ক্ষমতায় এসে তারই সুপুত্রী হাসিনার সরকার বিষাক্তসাপের ফেলে যাওয়া খোলসের বিচার নিয়ে মেতে উঠেছেন যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে। এটাকে তামাশা ছাড়া আর কি বলা চলে? তবে অনেক আঁতেলই এই বিচারের প্রহসনকে রাজনীতির একটি কূটচাল বলেই অবহিত করছেন। অনেকেই আবার এর বিরোধিতা করছেন। বর্তমানের পাতানো খেলার রাজনীতিতে সবকয়টি দলই যার যার স্বার্থে যা কিছুই করছে সবকিছুই তাদের জন্য বেশ্যাবৃত্তির মতোই হালাল করা হচ্ছে এই সত্যটা আজ জনগণের কাছে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট লেখকের ধারণা।
বন্দুকের নলের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া জাস্টিস সায়েমকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেন। ১৯৮২ সালে একই কায়দায় তারই নিয়োজিত তাবেদারসেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে বঙ্গভবন থেকে বন্দুকের জোরে আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অবৈধ ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেন। যেমন গুরু তেমন শিষ্যই বটে! তার এই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘I am not unhappy’. এক পর্যায়ে তার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু চতুর এরশাদ নির্বাচনী খেলা খেলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ একটা নির্বাচনের আয়োজন করেন। এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান’। কিন্তু এরপরই খবরে প্রকাশ পেল, এরশাদের আমন্ত্রণে এক মধুচন্দ্রিমা রাতে হাসিনা চুপিসারে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সাথে এক লং ড্রাইভে গেলেন এবং ফিরে এসে ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই দেশবাসীকে হতবাক করে হাসিনা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসেন। এরশাদের এই নির্বাচনে শরিক হয়েছিলো আওয়ামী লীগের তৎকালীনলেজুড় এবং সহযোগী দল জামায়াতে ইসলামী। দুষ্ট লোকেরা বলে, ঐ রাতে লং ড্রাইভে মধ্যরাতের জোছনাময় রোমাঞ্চকর পরিবেশে হাওয়া খেতে খেতে হাসিনা দুর্নীতি পরায়ণ এরশাদের নিকট থেকে ১৭ কোটি টাকাও হাতিয়ে নিতে সমর্থ হন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত এর সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু অতি অল্পসময়ের মধ্যেই গোলাম আজমের নাগরিকত্ব প্রদানের তরিকা নিয়ে জামায়াত ও জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদার মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ভাগ-বাটোয়ারার পর জামায়াতের ১৭ টি সিটের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় বিএনপি প্রশাসনিক বিধানে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার দাবিটি অগ্রাহ্য করায় শুরু হয় টানাপড়েন। এই সুযোগ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য হাসিনা আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য তৎকালীনজামায়াতের আমীর ২০০৮ সালের পর যুদ্ধাপরাধী বিচারের আসামী গোলাম আজমের দোয়া ও সমর্থন চাইতে অক্টোবর মাসে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন। একই সাথে বিএনপিএবং জামায়াতের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর কৌশল হিসাবে হাসিনার ইশারায় ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল কমিটি’ সৃষ্টি করা হয় জাহানারা ইমাম এবং কর্নেল (অব) কাজি নুরুজ্জামানের নেতৃতে। এই সংগঠন প্রকাশ্যে গণআদালতে গোলাম আজমের বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করে ফাঁসির রায় দিয়ে তার কুশপুত্তলিকার ফাঁসি কার্যকর করে জামায়াতের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ। উপায়হীন জামায়াত বিএনপিজোট থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগের সাথে গাঁটছড়া বাধে। জামায়াতকে আওয়ামী খোঁয়াড়ে ঢুকানোর পর ভোজবাজির মত ‘ঘা দা কমিটির’ কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এ ভাবেই শুরু হল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত-এর যুগপৎআন্দোলন। জামায়াতের আন্দোলন শুরু হল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। আওয়ামী লীগ শুরু করে প্রেসিডেন্সিয়াল ধাঁচের সরকারের পরিবর্তে ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের সংসদীয় সরকার কায়েমের দাবিতে।
শেখ হাসিনার আহ্বানে ১৯৯৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী সংসদে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনডিপির একটি বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলগুলো এই দুইটি দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার জন্য ২৬শে এপ্রিল ১৯৯৪ থেকে হরতাল, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রা, জনসভাসহ পুরো দেশে বিভিন্ন রকম লাগাতার সহিংস কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ২৭শে জুনেই জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে। সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সম্মেলন কক্ষে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার সাথে এক টেবিলে বসেছিলেন জামায়াতের তৎকালীনসেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এনডিপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গণতান্ত্রিক পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তখন জামায়াতের আমীর ছিলেন গোলাম আজম। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর হাসিনা সরকার জামায়াতের এই দুই নেতা এবং এনডিপিপরে বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। নীতি-আদর্শ বিবর্জিত স্বার্থ ও সুবিধাবাদী রাজনীতির করুণ অবশ্যম্ভাবী পরিণতি! ২৮শে ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জামায়াত ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও এনডিপির ১৪৭ জন সাংসদ সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেই সময় রাশেদ খান মেনন তথাকথিত বামপন্থী নেতা যিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী মহাজোটের শরিক হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাংসদ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি এই ধরণের অশুভ আঁতাতের সমালোচনা করে বলেছিলেন
জামায়াত চায় মধ্যযুগীয় ব্লাসফেমি আইন, জাতীয় পার্টি চায় এরশাদের মুক্তি আর আওয়ামী লীগ চায় যে কোনো ভাবে ক্ষমতায় যেতে।
অর্থাৎক্ষমতায় যেতে জামায়াত ইসলামীকে মুক্তিযোদ্ধাদের সমমর্যাদায় একই গাঁটছড়ায় বাঁধতে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কোনও সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়নি স্বৈরশাসক এরশাদ এবং যুদ্ধাপরাধীদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করতে। বর্তমানে সেই আওয়ামী লীগই আজ নতুন খেলায় নেমেছে। এখন আওয়ামী লীগ তাদের মুরব্বি ভারতের মতোই জামায়াতকে আর পছন্দ করছে না। তাদের মধ্যে ইসলামী জঙ্গিবাদের জীবাণু আবিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ ভারত ও তাদের আঞ্চলিক স্ট্র্যাটেজিক মিত্র বিশ্বমোড়ল আমেরিকা এবং তাদের পশ্চিমা দোসরদের অনুকম্পা অর্জনের প্রত্যাশায়। এছাড়া একটি রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। জামায়াত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় ঐক্যজোটে রয়েছে। এই ঐক্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়। এই কথা স্মরণে রেখে বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের ব্রেইন চাইল্ড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনটি সংবিধান থেকে খারিজ করে দিয়েছে। তাতেও স্বস্তি পাচ্ছেন না হাসিনা। জামায়াত-এর উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের ১৮ দলীয় জোট থেকে বের করে এনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করে নির্বাচনের বৈধতা অর্জন এবং একই সাথে বিএনপিএবং জামায়াতকে আলাদা করে দুটো দলকেই দুর্বল করে তোলার জন্য বিভিন্ন কূটকৌশলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে পাইকারিভাবে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ সব নেতাদের আসামী হিসাবে কারাগারে বন্দী করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসি, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় জারি করানো হচ্ছে দেশী এবং বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে কড়া সমালোচনার তোয়াক্কা না করেই। সবপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পাইকারি হারে জেলবন্দী, জুলুম, হয়রানি, পাশবিক নির্যাতন, গুমহত্যা চলছে নির্বিচারে রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে। অবশেষে দলটির নিবন্ধনও বাতিল করে তাদের আর্থিক সঙ্গতির মেরুদণ্ডও ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।শেখ হাসিনার একসময়ের মিত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও জেলে ঢুকানো হয়েছেজামায়াতের নেতাদের মতোই যুদ্ধাপরাধের বিচারে তারও ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। এই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীই কোনো এক সময় সংসদে বড় গলায় গর্বের সাথে জানান দিতেন, শেখ পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার। তিনি হাসিনাকে সম্বোধন করতেন ‘বুবুজান’ বলে। এই বোনের জন্য নিয়মিত ধনকুবের এই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বড় বড় রুই, কাতলা, পাঙ্গাশ, গলদা চিংড়ি পাঠাতেন সেই কাহিনীও শুনিয়েছেন অনেকবারই। কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণে এখন ‘বুবুজান’ ভাইকে ত্যাজ্য করে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ফাঁসির রায় শোনালেন! কারণ, এখন তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নীতি-আদর্শহীন নৈতিকতা বিবর্জিত রাজনীতিবিদের কাছে কোন সম্পর্কেরই কোনওমূল্য নেই।সব সম্পর্কই মাপা হয় ক্ষমতার সমীকরণের মানদণ্ডে।এই রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের শিকার বিএনপিও যদিও আওয়ামী লীগকে ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কমতি কখনই ছিল না।
১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান বসন্তের কোকিল ডঃ কামাল হোসেন গং এর দূতিয়ালির মাধ্যমে ভারতের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যের নামে শেখ হাসিনা এবং রেহানাকে ভারতে ৮ বছরের বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশে ফিরিয়ে আনার ১৩/১৪ দিনের মাথায় তার ভুলের মাশুল গুণে এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারান। বিস্ময়ের ব্যাপার হলোজাতীয় শত্রুদের সাথে জাতীয়তাবাদীদের ঐক্য হওয়াটা কি করে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে!জিয়ার করুণ মৃত্যুতে দেশে সামরিক শাসন জারি এবং চক্রান্তের নাটের গুরু স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র বাংলার বাণী একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলো। শেখ হাসিনাও বিবিসিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘তিনি অখুশি নন’। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিমের ব্যর্থ ক্যুদেতার প্রতিও প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন হাসিনা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে। জেনারেল নাসিম এবং তার সাথী ভাইরা পরবর্তীতে খালেদা এবং হাসিনার রাজত্বকালেই শুধু নয়, আজ অব্দি সবরকম সরকারি সুখ-সুবিধাসহ বহাল তবিয়তে আয়েশি জীবনযাপন করছেন। পাঠকদের অবগতির জন্য বলছি, খালেদা জিয়া নাসিমকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োজিত করেছিলেন তার ভাই বিএনপির ক্ষমতাধর নেতা ক্যাপ্টেন (অব) সাঈদ ইস্কান্দারের মনোনয়নের উপর ভিত্তি করে। ১৯৯৬-এর নির্বাচনের পর জেনারেল খালেদের সহযোগী এবংজেনারেল নাসিমের অতি বিশ্বাসভাজন ক্যাপ্টেন তাজ হাসিনার বদান্যতায় প্রতিমন্ত্রীর পদটিও অলঙ্কৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন জেনারেল নাসিমের পরামর্শেই। বর্তমানে খালেদ এবং নাসিমের আস্থাভাজন অনুগত ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কি অদ্ভুত চলমান রাজনীতি বাংলাদেশে!
শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মম ভাবে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে, আগুনে জ্যান্ত নিরীহ শহরবাসীদের জ্বালিয়ে গণতন্ত্রের মানসকন্যা যে রাজনীতির তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিলেন তার কথা বোধকরি বর্তমানের প্রজন্ম ভুলে যায়নি এখনো।ঐনৈরাজ্য সৃষ্টি করেই জাতির ঘাড়ে জরুরী অবস্থা চাপিয়ে ‘উদ্দিনদের’ ক্ষমতা গ্রহণের রাস্তা করে দিয়ে হাসিনা তৃপ্তির সাথেই সদম্ভে বলেছিলেন, মইন-ফখরুদ্দিনের সরকার তাদের আন্দোলনেরই ফসল। পরে তাদের বৈধতা দেবার অঙ্গিকার করেই ক্ষমতার মসনদ অর্জনের ব্যবস্থাও তিনি পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলেন বিদেশী মোড়লদের সাহচর্যে। যে নেত্রী একটি লাশের পরিবর্তে দশটি লাশ নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে চাইতে পারেন তার জন্যএমন আচরণ অতি স্বাভাবিক। ক্ষমতায় আসীন হয়ে ‘উদ্দিন’ সরকারের সব কার্যক্রমের বৈধতা প্রদান করে তাদের বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে পাড়ি দেবার ব্যবস্থাও করে দেয় হাসিনা সরকার।
এক-এগারোর ঘটনার নেপথ্যের একটি প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাঠকদের অবগতির জন্য তুলে ধরা হল কায়েমী শাসক গোষ্ঠীর চরিত্র বোঝার স্বার্থে।
আওয়ামী লীগ জোটের লগি-বৈঠা ও লাশের প্রকোপে রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিনের অধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দিশেহারা তখন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন প্রেসিডেন্টের অফিসে গিয়ে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের দফতর থেকে জারিকৃত একটি ভুয়া চিঠি তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, তার অধীনস্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে দেশে নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য বেসামরিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে শান্তিরক্ষী কিংবা শান্তিস্থাপনের দায়িত্ব পালনের জন্য নেবে না এবং বর্তমানে নিয়োজিত সবাইকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এর ফলে শুধু সামরিক বাহিনীরই নয়, দেশেরও চরম আর্থিক ক্ষতি হবে। সেজন্য তার সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। এভাবে হুমকির মুখেই প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিনের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো। কাকতালীয় ভাবে সেই সময় জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছিলেন হাসিনার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব ফারুক চৌধুরীর ছোটভাই ইফতেখার চৌধুরী। তিনিই ঐ চিঠিটি জেনারেল মইনকে পাঠিয়েছিলেন। পরে অবশ্য জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট করে বিবৃতি দিয়ে ঐ ধরনের কোন চিঠি তার অফিস থেকে জারি করা হয়েছিলো সেটা অস্বীকার করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো রহস্যজনক এই ভুয়া চিঠি কি ভাবে, কোন পথে জেনারেল মইনের কাছে এলো এই বিষয়ে কিন্তু আজঅব্দি কোনো পক্ষ থেকেই কনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না!
হাসিনার মহাজোট সরকারের পর্বতসম দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার তৎপরতাএবং ভারতের সাথে নির্দ্বিধায় জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী একের পর এক অসম দাসত্বমূলক চুক্তি গোপনে করা নিয়েও কিন্তু বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে কোন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। ফলে মনে হচ্ছে, ‘মৌনং সম্মতি লক্ষণং।’
‘৭৫-এর নিঃস্বার্থ বীরদের প্রায় ১৪ বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কন্ডেম সেলের মৃত্যুগুহায় রেখে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো সরকারী ও বিরোধী জোটের আঁতাতের মাধ্যমে, ঘটে গেলো বিডিআর-এর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ যার লক্ষ্য ছিল জাতির মেরুদণ্ডে পঙ্গুত্বের এক চরম আঘাত। কিন্তু বিষয়টির সুদূরপ্রসারী পরিণতি কি হতে পারে, সেই সম্পর্কেও তথাকথিত জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের ধ্বজাধারীদের মনোভাব ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
অতীতে দেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করে রেখে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চক্রান্তের সাথে এই বিশেষ দুইটি ঘটনাকে দেখতে হবে। বর্তমানের সামরিক বাহিনীর বঙ্গশার্দুলদের মন-মানসিকতায় ভোগ বিলাসের লালসা উস্কে দিয়ে তাদের দেশপ্রেম এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও স্বপ্নকে অস্বচ্ছ করে তুলে, তাদেরকে শুধুমাত্র সরকারের অনুগত চাকুরেতে পরিণত করা হচ্ছে। প্রকৃত যেকোনো একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য এই অবক্ষয় অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক!
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, প্রতিরক্ষা, সীমান্তরক্ষী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে ভারত নির্ভর করে তোলা হচ্ছে।
ফলে, নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে অদূর ভবিষ্যতে দেশটিকে পরিণত হতে হবে ভারতের একটি করদ কিংবা অঙ্গরাজ্যে আর ১৮ কোটি জনগোষ্ঠী পরিণত হবে দাসে। এই সমস্ত জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তিগুলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যারা সই করেছেন সেগুলোকে কার্যকর করার জন্যই তুলনামূলকভাবে বিএনপি জোটের চেয়ে হাসিনার মহাজোটকেই আর একবার ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশাই বাস্তবায়ন হতে চলেছে। ব্যর্থ মহাজোট সরকারের অপশাসন, শোষণ, নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় সন্ত্রাস, গুম খুন, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, ডেস্টিনির জালিয়াতি, শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ পরিবারকে সর্বস্বান্ত করা, ব্যাংকের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, দণ্ডিত সন্ত্রাসী এবং দলীয় খুনিদের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে মুক্তি দেয়া, গণমাধ্যমের উপর খড়গ, বিদ্যুৎবিভ্রাট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি, গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্র কায়েম, মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, বাকস্বাধীনতা হরণ, সবকিছু দেখে এবং জেনেও স্বার্থের খাতিরে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে ইন্দো-আমেরিকান বলয়। বর্তমানে দেশের জনগণ জিম্মি হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে চলমান রাজনৈতিক ধারার মূল দু’টি নীতি-আদর্শ বিবর্জিত জোটের নাগপাশে। এ দু’টি জোটই ক্ষমতা উপভোগ করে এসেছে তিন দশকের বেশি সময় যার পরিণাম দেশবাসী আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তমসাচ্ছন্ন দেশের ভবিষ্যৎহয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। এই করুণ পরিণতির দায় দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীকে একইভাবে বহন করতে হবে। কারণ, পাতানো খেলার রাজনীতিতে এক তরফাভাবে কাউকেই দোষারোপ করার কোনও অবকাশ নেই। এই হতাশা ব্যঞ্জক অবস্থার হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যুগোপযোগী প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, অভিজ্ঞ ত্যাগী নেতৃত্বের অধীন নীতি-আদর্শ ভিত্তিক প্রগতিশীল সুস্থ রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করা। এই অঙ্গিকার নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। এ ছাড়া বর্তমানের অধোগতি থেকে পরিত্রাণের কোন বিকল্প নেই। চেনা বামুনদের নেতৃত্বে জাতির ইস্পিত লক্ষ্য অর্জন কখনই সম্ভব হবে না। এই প্রসঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে, যতক্ষণ না কোন দেশের সমাজপতি এবং শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে দালাল শ্রেণী সৃষ্টি করা সম্ভব না হয়ততদিন কোনোও বিদেশী শক্তির পক্ষেই সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অগুণতি চর দেশের সর্বস্তরে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যৎঅনিশ্চিত করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু এই সব অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎকরে দিতে পারে একমাত্র সচেতন সংগ্রামী জনতা।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, বুড়িগঙ্গা বিধৌত পলিমাটি দ্বারা গঠিত আদি বাংলা আজকের বাংলাদেশের মানুষ কখনো কোনো প্রতিকূলতার মোকাবেলায় নতশির না হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতা দূর করে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে এগিয়ে চলার স্বাক্ষর রেখেছে যুগে যুগে। বাংলাদেশের মানুষ পামির মালভূমি থেকে নেমে আসা যাযাবর আর্যদের আগ্রাসী নখর এই দেশের মাটিতে বসাতে দেয়নি। বিদেশী আগ্রাসী শক্তিসমুহ ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের বিজয় নিশান ওড়াতে সক্ষম হলেও বাংলার মাটিতে সেটা সম্ভব হয়নি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বাংলা বিজয় সম্ভব হয়েছিলো, বাংলার শেষ স্বাধীন নওয়াব সিরাজ উদ্দৌলার অনুগত মীরজাফর, মিত্রবেশী বিত্তশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের উমিচাঁদ, রাজবল্লভ প্রমুখ রাজন্যবর্গ, জমিদার এবং বণিক শ্রেণীর বিশ্বাসঘাতকতায়। তবে ইংরেজদেরও বাংলাদেশীদের সংগ্রামী চেতনাকে উপলব্ধি করতে হয়েছে প্রতিমুহূর্তে। এর ফলেই, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গান্ধীকে আমদানি করে স্যার ডগলাস হিউম এবং এ্যানি বেসান্তের মাধ্যমে কংগ্রেস পার্টি সৃষ্টি করে নেতার পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিলো আপোষকামী গান্ধীকে। বাংলাদেশীরাই বিশ্বের একমাত্র গর্বিত জাতি যারা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ হিসাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ‘৭১-এ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের ৭ কোটি আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা, ছাত্র ও যুব সমাজ এক কাতারে সামিল হয়ে জানবাজি রেখে লাখো প্রাণের আহুতি দিয়ে একটি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে একদলীয় স্বৈরশাসক শেখ মুজিব আগ্রাসী ভারতের সাথে ২৫ বছরের গোলামির চুক্তি স্বাক্ষর কোরে যখন দেশকে ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিলো তখন গর্জে ওঠে বাংলাদেশের জাগ্রত সিপাহী-জনতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনা পরিষদের নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক সেনা অভ্যুত্থানে পতন ঘটেছিলো মুজিবের বাকশালী এক নায়কত্বের। ২-৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ ভারত ও আওয়ামী-বাকশালীদের মদতে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে দেশটাকে আগস্ট বিপ্লবের পূর্ব অবস্থায় নিয়ে যাবার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল ক্যুদেতাকেও পরাজিত করেছিলো সেনা পরিষদ এবং কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার যৌথ নেতৃত্বে সংগঠিত ৭ই নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার মহান বিপ্লব।
বাংলাদেশের নিকট ইতিহাসে ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০ সাল অন্যায়-অবিচার বিরোধী ন্যায্য অধিকার আদায়ের দেশবাসীর শাণিত সংগ্রামী চেতনার স্বাক্ষর বহন করে। এইসব প্রতিটি গণজাগরণ সামাজিক ক্ষেত্রে এবং মন-মানসিকতায় এনেছে পরিবর্তন। আকণ্ঠ দুরাচার, অপশাসন, যুগের পরিপন্থী দুর্নীতিপরায়ণ পরিবারতান্ত্রিক অসুস্থ রাজনৈতিক কালচার, দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় সন্ত্রাস, জাতীয় সম্পদের অবাধ লুটপাট, ব্যাঙ্ক, বীমা, শেয়ার মার্কেট এবং সিন্ডিকেটেড কালো কারবারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পেশীশক্তির বলে জনগণের রক্ত চুষে নেয়ার জঘন্য প্রতিযোগিতা, মিথ্যাচারের মাধ্যমে ভারতের স্বার্থে দেশকে বিকিয়ে দেয়া এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি মহা গণজাগরণের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে দেশ এবং আপামর জনগণের স্বার্থেই। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা এবং স্বপ্নের আলোকেই সম্ভব তেমন একটি গণজাগরণ এবং আর একটি সার্বিক মুক্তিযুদ্ধ। বর্তমানের তমসাচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং স্বকীয়তা বজায় রেখে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে সম্ভাবনাময় করে তোলার অন্য আর কোনোও বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সঠিক পথ এবং নেতৃত্বের সন্ধান তখনই পাবে, যখন তারা বুঝতে সক্ষম হবে স্বাধীনতার চার দশকেরও বেশি সময়ের সংগ্রামী পথে অনেক চড়াই-উৎরাইপেরিয়ে আত্মাহুতি দিয়েও কেনও আজো ’৭১-এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো না!
সূচীপত্র [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]
১ম পর্ব “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা
২য় পর্ব শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত
৪র্থ পর্ব – কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব
৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!
৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে
৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”
১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী
১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে
১৩তম পর্ব ১ম কিস্তি – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৪তম পর্ব – বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক
১৬তম পর্ব – শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ
১৭তম পর্ব – ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে
১৮তম পর্ব – বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস
১৯তম পর্ব – জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক
২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে
২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ
২৩তম পর্ব – জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে
২৪তম পর্ব – রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর
২৫তম পর্ব – আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক
২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর
২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া
২৯তম পর্ব – চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে
৩০তম পর্ব – জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল
৩১তম পর্ব – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ
৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন
৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি
৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি
৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি
৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে
৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে
৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা
৪০তম পর্ব – ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি
৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে
৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব
৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি
৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়
৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন
৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া
৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া – শেষ কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – শেষ কিস্তি