জিয়া থেকে খালেদা তারপর – বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম

৩৮তম পর্ব

নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা

সব প্রস্তুতি শেষে নিম্মি এবং সস্তিকে নিয়ে সফরে বেরিয়ে পড়লাম। মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য হয়ে পাকিস্তান পৌঁছালাম।
সব দেশেই বন্ধুরা আমাদের উষ্ণ স্বাগত জানালেন। পাকিস্তানে পৌঁছার পরই চৌধুরী সুজাত এবং নওয়াজ শরিফ তো আবেগ-উষ্ণতায় আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন
আপনার মতো একজন দূরদর্শী, বিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান সৈনিককে বন্ধু হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। আপনি যে ধরনের আত্মপ্রত্যয়ের সাথে দৃঢ়ভাবে আপনার প্রতিবেদন এবং প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলেন আমাদের মধ্যে কিন্তু আপনার প্রস্তাবনার গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে তেমন দৃঢ়তা ছিল না, বরং সত্যি বলতে গেলে বলতে হয়, কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।
জবাবে বলেছিলাম
সেটাই স্বাভাবিক। একজন কূটনীতিক কিংবা গোয়েন্দা আমলার পক্ষে যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জানার ব্যাপারে একটা সীমাবদ্ধতা থাকে বিভিন্ন কারণে। আমরা কিন্তু তাদের তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রমী। আমরা শুধু কূটনৈতিক আমলাই নই, আমাদের বেশিরভাগই এমন সব ব্যক্তিত্ব যাদের জন্ম হয়েছে রাজনৈতিক পরিবারে। দেশের জন্মলগ্ন থেকেই রাজনৈতিক প্রবাহের সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই আমাদের আত্মবিশ্বাস বিচার বিশ্লেষণ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারা দু’জনই বেগম খালেদা জিয়াকে জয়ী হওয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা এবং পাকিস্তান সফরের নিমন্ত্রণ জানালেন। জবাবে বললাম
ঢাকায় পৌঁছানোর পর তিনিও আপনাদের সরাসরি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাবেন নিশ্চয়ই সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করার জন্য। আপনাদের নিমন্ত্রণ বার্তা আমি অবশ্যই তাকে জানিয়ে দেবো।
হোটেল ম্যারিয়টেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে। দু’জনই জানতে চাইলেন কবে নাগাদ পৌঁছাবো ঢাকায়। আমি জানালাম
আর্মি হাউসে সপরিবারে একটা দাওয়াত আছে। সেটা রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া কয়েকজন পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে হবে। এরপর দু’দিনের জন্য যেতে হবে পেশাওয়ার। ওখান থেকে ফিরে পুরনো বন্ধু রাষ্ট্রদূত আমজাদ নুনের নিমন্ত্রণে সারগোদায় তাদের হাভেলি হয়ে লাহোর, তারপর করাচী হয়ে ঢাকা ইন শা আল্লাহ্‌।
আর্মি হাউসে সপরিবারে দাওয়াতে যাবো শুনে চৌধুরী সুজাত এবং নওয়াজ শরিফ দু’জনই কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললেন, সেখানেও আপনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দেখছি !
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন।
এরপর তারা দুইজনই তাদের ব্যক্তিগত হট লাইন টেলিফোন নম্বর আমাকে দিলেন যাতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যোগাযোগ করতে সুবিধে হয়।
হোটেলে ফোন করে দেখা করতে এলো আমজাদ নুন আর তার স্ত্রী মেহরিন। কথাচ্ছলে বন্ধুবর রাষ্ট্রদূত আমজাদ আমাকে বলেছিলো, আমার আগের সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার পর তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবজাদা জেনারেল ইয়াকুব খান এবং তার শ্বশুর জনাব বন্দেয়াল ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং পারিবারিক বন্ধু জনাব ইজলাল হায়দার জায়েদি, তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাঁদরেল সেক্রেটারি এবং তার স্ত্রী শিরীন (বাঙ্গালী) জায়েদির সাথে দেখা তাদেরকে আমার প্রস্তাবনাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে সমর্থন দানের অনুরোধ জানিয়েছিল বন্ধুবর আমজাদ নুন। সেই ঘরোয়া বৈঠকে শিরীন জায়েদি জোরের সাথে জনাব ইজলাল হায়দার জায়েদিকে বলেছিলেন, যে রাষ্ট্রদূত শরিফুল হক ডালিমের বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করা উচিৎ। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে তারা তেমনটিই করেছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে ঘনিষ্ঠ সবাই পরে আমজাদ পরিবারকে সেটা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
আমি ওদের জানালাম, আগামীকাল লাঞ্চের পর আমরা যাচ্ছি পেশাওয়ার হযরতজী এবং খালেদ ভাইকে ধন্যবাদ জানাতে। খালেদ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে সব বন্দোবস্ত করা হয়ে গেছে। শুনে আমজাদ এবং মেহরিন উৎসাহের সাথে ইচ্ছে প্রকাশ করলো আমাদের সাথে যেতে। খালেদ ভাইকে ফোন করে তাদের ইচ্ছাটা জানালাম। খালেদ ভাই বললেন
কোনও অসুবিধা নেই, তাদেরকেও নিয়ে আসুন।
তবে এবার হোটেল নয়, থাকতে হবে তার বাসায়। রাজি হলাম আমি। ঠিক হল আমরা PC -তে পৌঁছে খালেদ ভাইকে ফোন করবো, এরপর তিনি এসে আমাদের তার বাসায় নিয়ে যাবেন। পরদিন গিয়ে পৌঁছালাম পেশাওয়ার। খালে দভাই PC থেকে এসে নিয়ে গেলেন তার বাসায়। ভাবী আমাদের দেখে ভীষণ খুশি হলেন, বিশেষ করে নিম্মি এবং মেহরিন সাথে থাকায়। রাতের খাওয়ার পর খালেদ ভাই জানালেন, হযরতজী আগামি কাল ফজরের পর তার গ্রামের খানকায় আমাদের নাস্তার দাওয়াত দিয়েছেন। তার খানকাটা শহর থেকে বেশি দূরে নয়। পরদিন প্রত্যুষে ফজরের পর যথাসময়ে খালেদ ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন হযরতজীর খানকায়। আমাদের পৌঁছার সংবাদ পেয়ে হযরতজী অনেকটা নিয়ম বহির্ভূতভাবেই সদর দুয়ারে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে বেরিয়ে এলেন। গাড়ীথেকে নামার পর সবার সাথে খালেদ ভাই একে একে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয়পর্ব শেষ হতেই হযরতজী নিম্মির দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে সস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন
‘আরে ভাই, তুম কিসকো লেকে অ্যায়া খালেদ, ইয়েতো শাহজাদী হ্যাঁয়। মেরা ঘর মে শাহজাদী অ্যায়া হ্যাঁয় সামঝে তুমলোগ’!
বলেই সবাইকে নিয়ে তিনি খানকার বড় একটা ঘরে বসিয়ে উঁচু গলায় বলে উঠলেন পর্দার অন্য পাশে দৃষ্টি রেখে
‘দেখো তুমসব, কউন অ্যায়া হ্যাঁয় আজ, এক শাহজাদী অ্যায়া হ্যাঁয় উসকো খোশ আমদিদ কাহোঁ’,
বলেই তিনি সস্তিকে কোলে তুলে নিয়ে নিম্মি ও মেহরিনকে সঙ্গে নিয়ে অন্দর মহলে চলে গেলেন। ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। আমি আমজাদ আর খালেদ ভাই মেঝেতে পাতা কার্পেটের উপর বসে তার ফেরার অপেক্ষা করছিলাম। ফিরে এসে তিনি খাটিয়াতে বসে ইশারায় আমাকে ডেকে পাশে বসালেন। তার ডান হাতটা আমার কাঁধের উপর রেখে হযরতজী বললেন, আমাদের আগমনে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন। জবাবে আমি বিনীতভাবে ভাবে বললাম
আপনাকে সালাম পেশ করে কৃতজ্ঞতা জানানোর ফরজ আদায় করার জন্যই এসেছি।
স্বল্প হেসে তিনি বললেন
খালেদা তো জিতলো, কিন্তু রক্তের হোলিখেলা কি তাতে বন্ধ হবে! তবে ভবিষ্যতে যাই হউক খালেদার বিজয়টা মন্দের ভাল এতটুকুই বলা চলে। তুমিতো কাছে কিনারেই অবস্থান নিচ্ছো সেটা দেখতে পাচ্ছি। আফ্রিকা তোমাকে ছাড়তে হবে।
নিশ্চুপ বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি আমজাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
তোমার কি অবস্থা? কি করছো আজকাল?
জবাবে আমজাদ তার নিজের অতীত সম্পর্কে সব সংক্ষেপে বলে অনুরোধ জানালো, যাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার আরও একটা পোস্টিং হয় তার জন্য হযরতজী যেন দোয়া করেন এটাই তার প্রার্থনা। হযরতজী কোনও সোজা জবাব না দিয়ে শুধু বললেন, সবকিছুই আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় হয়।
ইতিমধ্যে দস্তরখান বিছিয়ে পরিচারকরা বহুবিধ ব্যঞ্জনের নাস্তা পরিবেশন কোরল। হযরতজী বললেন
তোমরা নাস্তা করো, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।
হযরতজী পর্দা সরিয়ে আবার অন্দর মহলে চলে গেলেন। আমরা নাস্তায় মনোনিবেশ করলাম।অত্যন্ত যত্নের সাথে পরিচারকরা আমাদের আপ্যায়ন কোরছিলো।
নাস্তা শেষে নিজেদের মাঝে টুকটাক আলাপ করছিলাম, ঘরে জ্বলছিল কোয়েটা স্টোভ। কনকনে ঠাণ্ডা! কিছুক্ষণ পর নিম্মি, মেহরিন আর সস্তিকে সঙ্গে নিয়ে ফিরলেন হযরতজী। আমরা তিনজনই তাদের আগমনে উঠে দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে এগোতেই তিনি সস্তিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বললেন
চলো তোমাদের গাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। শাহজাদীকে তো আমাকে এগিয়ে দিতেই হবে।
গাড়ীতে ওঠার আগে সবাই তাকে সালাম জানিয়ে দোয়া চেয়ে বিদায় নিলাম। একই সাথে ধন্যবাদও জানালাম উষ্ণ আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য। উল্টো হযরতজীই বলে উঠলেন
শাহজাদী আমার আস্তানায় এসেছে, এটাতো আমারই সৌভাগ্য!
ফিরে এলাম ইসলামাবাদ।
ঠিক হল, নিম্মি আর সস্তিকে নিয়ে মেহরিন প্লেনে যাবে লাহোর, আমি আর আমজাদ গাড়ীতে সারগোদায় তাদের হাভেলিতে রাত কাটিয়ে পরদিন পৌঁছাবো লাহোর। প্ল্যান মতো নিম্মিরা চলে গেলো, আমি ও আমজাদ রওনা হলাম। পথে হঠাৎআমজাদ কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। পেটের গোলমাল। পথপার্শের একটা ফার্মেসি থেকে কিছু ঔষধ কিনে খেলো আমজাদ। দুপুরের আগেই আমরা তাদের গ্রাম ভুলওয়ালের হাভেলিতে পৌঁছে গেলাম। সেখানে তার মা আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। আমজাদের বাবা মেজর হামিদ আলী খান(অব) লাহোরে নিম্মিদের স্বাগত জানাবেন। তিনি জেনারেল জিয়াউল হকের কোর্সমেট ছিলেন।
অভিজাত পরিবারের মনোরম হাভেলি। বাগান-বাগিচা, ময়ূর, বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস-মুরগির খামার, ঘোড়ার আস্তাবল, গরু-মহিষের খামার, ফলের বাগিচা, যত্নে লালিত লন ভর্তি মৌসুমি ফুলের কেয়ারি, সুইমিং পুল, বিরাট ইঁদারা কোনও কিছুই বাদ নেই। বংশ পরিক্রমায় বিশ্বস্ত পরিচারক-পরিচারিকার কমতি নেই। প্রথা অনুযায়ী দেহরক্ষীরাও রয়েছে নিরাপত্তার জন্য। Feudal Lords-দের শান শওকত, আভিজাত্যের প্রাচুর্য এবং ঐতিহ্যের স্বাক্ষর সবখানেই।
আমজাদের মা আমাকে পুরো হাভেলি ঘুরে ঘুরে দেখালেন। একটা বিশাল হল রুমে দেখলাম কায়েদে আজম থেকে শুরু করে পৃথিবীর অনেক বিশিষ্ট সব নামিদামি ব্যক্তিবর্গ, নেতা-নেত্রীদের ফটো দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। বেগম হামিদ আমাকে অবগত করলেন এরা সবাই এই হাভেলিতে পদধূলি দিয়েছেন। ফাতিমা জিন্নাহ, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, সুহরাওয়ার্দি, বগুড়ার মোহাম্মদ আলি, খাজা নাজিমুদ্দিন, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, লিয়াকত আলি খান, আল্লামা ইকবাল, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, জুলফিকার আলি ভুট্টো, ইয়াহিয়া খান, ফিরোজ খান নুন, নওয়াবজাদা নাসরুল্লাহ খান, জেনারেল জিয়াউল হক, বেনজির ভুট্টোসহ আরও অনেকেরই ফটো টাঙ্গানো রয়েছে ঐ ছবির প্রদর্শনীতে। ঐতিহাসিক ফটোগুলো যখন বেগম হামিদ আমাকে দেখাচ্ছিলেন তখন এ ধরনের আর একটা ফটো নোমায়েশের কথা মনে পড়ে গেলো।
প্রয়াত রাষ্ট্রদূত খাজা কায়সার, যিনি ঢাকার নওয়াব পরিবারের একজন বলে বিশেষভাবে পরিচিত, পাকিস্তান আমলেই একজন বিচক্ষণ কূটনীতিক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তার দূতিয়ালির ফলেই আমেরিকার সেক্রেটারি অফ ষ্টেট হেনরি কিসিঞ্জারের পক্ষে গণচীনে প্রথম গোপন সফর সম্ভব হয়। আব্বা আর খাজা কায়সার একই সাথে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তেন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক ছাত্র হিসাবে থাকতেন। আব্বা তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের জেনারেল সেক্রেটারি। তাই তাকে চাচা বলেই সম্বোধন করতাম। একদিন তার বাসায় গিয়েছিলাম। বড় ড্রইং রুমের দেয়ালে ঠিক এ ধরনেরই একটি ফটো প্রদর্শনী দেখে চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ফটো প্রদর্শনীর মর্মটা কি? তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন
ভাতিজা, এইসব ফটো শুধু ফটো নয়, এগুলো অতি মূল্যবান সম্পদ যা দিয়ে ক্ষমতা বলয়ে অন্যের উপর টেক্কা দিয়ে স্বীয় স্বার্থ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই ছবি টাঙ্গানো হয়, আবার সরিয়েও ফেলা হয়। সারমর্মটা বুঝে নিলাম।
এরপর ঘোড়ায় চড়ে তাদের জমিদারি ঘুরে দেখলাম আমজাদের সাথে। বিকেলে পুল সাইডে বসে চা-নাস্তা খেতে খেতে হাভেলির চারপাশের শান্ত পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। রাতে ফায়ার প্লেস জ্বালান হলো সব ঘরে।
শেফিল্ডের কাটলারিজ এবং নরিটেকার ক্রোকারিজ, বেলজিয়ান বহেমিয়ান হ্যান্ড কাট গ্লাসের সাথে ক্যান্ডল লাইট ডিনার সারলাম। সব কিছুতেই পরিবারের মনোগ্রাম খচিত, মানে অর্ডার দিয়ে বানানো। এটাও বনেদী ফিউডাল পরিবারগুলোর আভিজাত্যের প্রতীক।

রাতে আরামের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবছিলাম আমজাদের সাথে কথোপকথনের বিষয় নিয়ে।তার কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই কি করে ২২ টি অভিজাত পরিবার যার মধ্যে নুন পরিবারও একটি, দেশের শাসকশ্রেণী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো।
এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে অবস্থিত ছোট-বড় দেশগুলোর সমষ্টিকেই বলা হয় অনুন্নত তৃতীয় বিশ্ব। কিন্তু এই বিশাল ভূখণ্ডেই বসবাস করছে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ। আর এই সমস্ত দেশগুলোর মাটির নিচে এবং উপরে রয়েছে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রাকৃতিক এবং জনসম্পদ। তারপরও এইসমস্ত দেশগুলোর পরিচিতি হলো গরীব অনুন্নত পশ্চাৎপদ দেশ হিসেবে যেখানে ৭০ থেকে ৮০% জনগোষ্ঠী বেঁচে আছে দারিদ্রসীমার নিচে।আমি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে যতটুকু বুঝি এর মূল কারণ হচ্ছেঃ
এই দেশগুলো ২০০ থেকে ৪০০ বছর পশুশক্তির জোরে লাগাতার শাসন ও শোষণ করে সব সম্পদ হরণ করে নিয়ে চলেছে সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো। সেই সম্পদের উপরেই তারা নিজেদের গড়ে তোলে উন্নত দেশ এবং জাতি হিসাবে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সাথে জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয় উপনিবেশগুলোতে যার মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে হয়ে ওঠে অসম্ভব। তখন তারা বাধ্য হয় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা দিয়ে তাদের গড়ে তোলা আস্থাভাজন তাবেদার কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীগুলোর হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার স্বার্থে।
এইভাবেই প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসক ও শোষক গোষ্ঠী হয়ে ওঠে কয়েকটি ক্ষমতাশালী পরিবার। উপনিবেশ কায়েমের পরই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের নিরাপত্তা, শাসন এবং শোষণ ব্যবস্থার স্থায়িত্বের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে স্বার্থপর উপজাতি এবং গোত্রীয় নেতাদের মধ্য থেকে যাচাই- বাছাই করে গড়ে তোলে তাদের তল্পিবাহক এক মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণী।
তারা শেষদিন পর্যন্ত তাদের বিদেশী প্রভুদের স্বার্থেই কাজ করে চলেছে। এইসব দালালরাই তাদের প্রভাব খাটিয়ে হাজার হাজার দেশবাসীকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভর্তি করেছিলো বলির পাঁঠা হিসাবে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এ কারণেই তাদের মালিকানা দিয়ে দেয়া হয় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দুইটি মূল উপাদান ভূমি এবং ওই ভূমিতে খেটে খাওয়া কৃষকদের।
ঐ সমস্ত আস্থাভাজনদের এলাকায় গিয়ে বিদেশী শাসকদের প্রতিনিধিরা নাকি ঢোল বাজাতো আর যতদূর সেই শব্দ শোনা যেতো সেই পর্যন্ত নির্ধারিত হতো তাদের ভূ-সম্পত্তির স্বত্বাধিকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত তাঁবেদারদের বলা হতো একনাগাড়ে যতদূর পর্যন্ত যে ঘোড়া হাঁকিয়ে যেতে সমর্থ হবে সেই পর্যন্ত নির্ধারিত হবে তার ভূমির স্বত্বাধিকার। এগুলো আমজাদই আমাকে জানিয়েছিল।
এ ভাবেই রাতারাতি তারা পরিণত হয় সামন্ত প্রভুতে আর তাদের এলাকার খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী পরিণত হয় তাদের দাসে।
সামন্ত প্রভুদের ওয়াফাদারির মানদণ্ডের বিচারে তাদেরকে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের ভূষিত করা হতো বিভিন্ন খেতাবে। যথা-মহারাজা, রাজা, নওয়াব, খান বাহাদুর, রায় বাহাদুর, স্যার ইত্যাদি। ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হতো এদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকেই। এভাবেই ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাহায্য এবং সহযোগিতায় এই কায়েমী গোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে অর্থবল, অস্ত্রবল এবং সামাজিক অবস্থানের বিচারে হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য ও প্রভাবশালী। তাদের আনুগত্য এবং তাঁবেদারির মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ কায়েম রাখতে সক্ষম হয়েছিলো সব দেশেই।
তবে এই সব সামন্ত প্রভুদের সাথে বৃহত্তর নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব এবং সংগ্রাম চলতে থাকে শুরু থেকেই। এর ফলে জাতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে তারা তাদের শত্রু মনে করে এসেছে বরাবরই। তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাদের সৃষ্টিকর্তা বিদেশী শক্তিগুলোর উপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব সামন্ত প্রভু এবং তাদের প্রজন্মকে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে মগজ ধোলাইয়ের জন্য। পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং জীবন যাত্রার নেশায় মত্ত হয়ে ফিরে আসে তারা।
এরপরেও কিন্তু সাদা চামড়ারা কখনোই তাদের জাতে তোলেনি। তাদেরকে বলা হতো ‘নেটিভস।’ ফলে নিজ দেশে তারা পরিণত হয় পরগাছায়। এদের নতুন পরিচয় হয় ‘ব্রাউন সাহেব’ হিসেবে। বাংলাদেশের প্রতিভাশালী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী পড়লে বিষয়টির পক্ষে যুক্তি ভাস্বর হয়ে ওঠে।
সাম্রাজ্যবাদের পতনের পর উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো। নব্য স্বাধীন দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয় এই ‘ব্রাউন সাহেবদের’ তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখার স্বার্থে। এই নব্যশাসক এবং শোষকগোষ্ঠী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ এবং প্রত্যাশার বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো দ্বারা প্রবর্তিত পুরনো রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা অটুট রেখে একই ভাবে অপশাসন এবং শোষণ করে চলেছে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত। এই কারণেই দেশগুলোর বেশিরভাগই আজ অবধি হয়ে রয়েছে হতদরিদ্র, পশ্চাদপদ, অনুন্নত এবং পরনির্ভরশীল। জনগণের বৃহদংশ বসবাস করছে দারিদ্র সীমার নিচে।এই শোচনীয় পরিস্থিতির আর একটি বিশেষ কারণ তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সবদেশেই জাতীয় সম্পদের ৮০ থেকে ৯০% এর মালিক হয়ে রয়েছে ১ থেকে ২% কায়েমী স্বার্থবাদী সামন্তবাদের অবশেষ এবং মুৎসুদ্দিশ্রেণী। যার পরিণতিতে দেশের ৯৮% মানুষ হয়ে পড়েছে মূলত তাদের দাসে।
ক্রমবর্ধমান এই অযৌক্তিক অবস্থায় কোনও দেশ বা জাতির পক্ষে স্বনির্ভরতার ভিত্তিতে প্রগতি এবং উন্নতির পথে এগুনো সম্ভব নয়। অসম আর্থ-সমাজিক ব্যবস্থায় জাতির সমষ্টিগত কর্মোদ্যম, সৃজনশীলতা এবং জীবনীশক্তির ইতিবাচক বহিঃপ্রকাশ ঘটানোও সম্ভব নয়।
ঘুণেধরা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যাঁতাকলে পিষ্ট শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি সংগ্রামের বিকাশ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের সর্বপ্রান্তে। একই সাথে দেখা যাচ্ছে নিপীড়িত জনগণের সচেতনা ও মুক্তিসংগ্রামকে প্রতিহত করার জন্য নব্য-সাম্রাজ্যবাদী এবং ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো এবং তাদের স্থানীয় দালালদের জোটবদ্ধ প্রয়াস। বিভিন্ন দেশে তাদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য চালানো হচ্ছে সামরিক আগ্রাসন কিংবা বিভিন্ন ধরনের ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম। পশু শক্তির জোরে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আন্তর্জাতিক আইন-কানুন প্রণয়ন করে বাধ্য করা হচ্ছে দুর্বল দেশগুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে তাদের পঙ্গু করে রাখতে। সৃষ্টি করা হচ্ছে এমন এক অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা এবং এর বাস্তবায়নের জন্য এমন সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যাতে করে তাদের প্রভুত্ব এবং স্বার্থ কায়েম থাকে সারা বিশ্বে নতুন আঙ্গিকে যাকে বলা হয় ‘নিও-ইম্পিরিয়ালিজম’ অথবা ‘নিও-কলোনিয়ালিজম’।
এদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক হিসাবে কাজ করছে তৃতীয় বিশ্বের তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর কায়েমী স্বার্থবাদী শাসকগোষ্ঠী। তৃতীয় বিশ্বের মুষ্টিমেয় যে কয়টি দেশে জনগণ সামন্তবাদ ও মুৎসুদ্দিশ্রেণির ধারক বাহক শাসকগোষ্ঠীকে বৈপ্লবিক পথে উৎখাত করতে সমর্থ হয়েছে তারা পেতে সক্ষম হয়েছে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ।
সেই সমস্ত দেশের জনগণ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের আলোকে গড়ে তুলতে পেরেছে প্রগতিশীল রাষ্ট্রীয় কাঠামো, ন্যায়ভিত্তিক সুষম সমাজ ব্যবস্থা, সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নিশ্চিত কোরতে পেরেছে প্রতিটি নাগরিকের সমঅধিকার।
এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে খুব কম দেশেই। বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই স্বাধীনতার পর কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীই শিকড় গেড়ে বসেছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলয়ের সর্বত্র, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে। রাজনীতিও তাদের হাতেই কুক্ষিগত। দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, আইন বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভূমি সব কিছুই তাদের করায়ত্ত।রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই শ্রেণীটিই হয়ে উঠেছে সুশীল সমাজের মাথা। দেশের সামরিক বাহিনী, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং মিডিয়াও তাদেরই স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে। এই ধরনের সমাজে শাসকগোষ্ঠীর লোভ লালসা, অহমিকা, ভোগ-বিলাসের জন্য জাতীয় সম্পদের লুটপাটে জনগণের প্রাণশক্তি লোপ পাচ্ছে।বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা হয়ে উঠছে নির্জীব, অথর্ব, বোধশক্তিহীন জিন্দা লাশে। ফলে স্বাধীন হয়েও তারা আজ সার্বিকভাবে পরাধীন।
পরনির্ভরশীলতার জোয়ালের নিচে জাতিগুলো হারিয়ে ফেলছে নিজেদের স্বকীয়তা, মানবিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ। এটাই হচ্ছে বর্তমান যুগের বাস্তবতা।
মুমূর্ষু এ সব জাতিকে বাঁচার তাগিদেই বেছে নিতে হবে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতৃত্ব, যাদের দিকনির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আমলের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আনতে হবে যুগোপযোগী আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই অকাট সত্যটাকে মেনে নিয়ে যারা উদ্যোগী হবে তারাই সক্ষম হবে দেশ এবং জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে। আর যারা উটপাখির মতো এই সত্যকে এড়াবার জন্য বালির ঢিবিতে মুখ গুঁজে থাকবে তারা প্রাকৃতিক নিয়মেই বিলীন হয়ে যাবে কালের ধারায় অতীতের অনেক জাতির মতোই। ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই বহন করে।
এখানে আর একটা বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যেকোনো স্বাধীন দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য কি ধরনের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান সমূহ, আইন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক আদর্শ, কর্মসূচি এবং সংবিধান আবশ্যকীয় সেটা নির্ধারণ করতে হবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ন্যায়সঙ্গত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা এবং তাদের প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করেই।
এর বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কোনও ব্যবস্থা যদি জনগণের উপর হুবহু চাপিয়ে দেয়া হয় সেই ব্যবস্থা কখনোই কার্যকর হতে পারে না। কারণ, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র।
এমন অন্ধ প্রবণতা যেকোনো দেশ ও জাতিকে ঠেলে দেয় ধ্বংসের দিকে। এর নজিরও সাম্প্রতিক ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর নয়।

সূচীপত্র  [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]

১ম পর্ব   “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা

২য় পর্ব  শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত

৩য় পর্ব দ্বিজাতি তত্ত্ব

৪র্থ পর্ব –  কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব

৫ম পর্ব – সত্য কহন

৬ষ্ঠ পর্ব – ব্যাংককে আমরা

৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!

৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে

৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”

১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী

১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে

১২তম পর্ব  – নিজেদের আলোচনা

১৩তম পর্ব  ১ম কিস্তি   – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে

১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে

১৪তম পর্ব –  বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক

১৫তম পর্ব – এভিএম তোয়াব আসছেন

১৬তম পর্ব  –  শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ

১৭তম পর্ব  –  ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে

১৭তম পর্ব – ২য় কিস্তি

১৭তম পর্ব –  ৩য় কিস্তি

১৭তম পর্ব –  শেষ কিস্তি

১৮তম পর্ব –  বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস

১৯তম পর্ব –  জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক

২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে

২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা

২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ

২৩তম পর্ব –  জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে

২৪তম পর্ব –  রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর

২৫তম পর্ব  –  আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক

২৬তম পর্ব – দ্বিতীয় বৈঠক

২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর

২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া

২৯তম পর্ব  –  চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে

৩০তম পর্ব  –  জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল

৩১তম পর্ব  – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ

৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন

৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি

৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ

৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ

৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি

৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি

৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান  – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে

৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে

৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা 

৩৯তম পর্ব – ঢাকায় পৌঁছালাম

৪০তম পর্ব –  ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ

৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি

৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি

৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে

৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব

৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে

৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি

৪৪তম পর্ব –  হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি

৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়

৪৬তম পর্ব – গোপনে আমেরিকা সফর

৪৭তম পর্ব – আবার ঢাকায়

৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন

৪৯তম পর্ব – দেশে ফিরলাম

৫০তম পর্ব – নিরুদ্দেশে যাত্রা

৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া

৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া  –  শেষ কিস্তি

৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি

৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – শেষ কিস্তি

৫৪ তম পর্ব – শেষকথা

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *