৩৪তম পর্ব
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
২য় কিস্তি
দু’দিনপর সেনাসদর থেকে খবর এলো ওয়্যারলেসে, আফ্রিকার একটি দেশের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট কমান্ডারকে জরুরী ভিত্তিতে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য UN Headquarters-এঅনুরোধ জানানো হয়েছে। আরও জানতে পারলাম দেশে ফেরার পর প্রোমোশন দিয়ে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ আর্মি চীফ নুরুদ্দিনের পরামর্শে। খবরটা ইতিবাচক। তার সাথে কুমিল্লা ব্রিগেডেএকসাথে কাজ করেছি। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে এবং পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত একজন অফিসার হওয়া সত্ত্বেও মনেপ্রাণে একজন সাচ্চা ইমানদার জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশী।যুদ্ধে শরিক হবার জন্য অনেক চেষ্টা করেও বেচারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালাতে পারেনি। দেশে ফিরে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় নীলনকশা সম্পর্কে অবগত হবার পর ও ভীষণভাবে ভারত এবং আওয়ামী-বাকশালি বিরোধী হয়ে ওঠে। ফলে সে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে ওঠে। জানতে পারলাম, UN Headquarters থেকে তার Release order সে পেয়ে গেছে। কিন্তু ফিরে যাবার পর তাকে কোথায় কি পদে নিয়োগ দেয়া হবে সে সম্পর্কে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে আমিই তাকে সুখবরটা দিলাম। তাকে ফেরার পর পদোন্নতি দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাকে বললাম, খবরটা ঢাকাতে এখনও গোপনীয়। তাইসে যেনো খবরটা কাউকে না বলে। একই সাথে বললাম, ফিরে যাবার পথে যাত্রা বিরতি কালে এবার সে হোটেলে নয়, থাকবে আমার বাড়িতে। কিছু বিশেষ আলাপ আছে। তাকে আর কিছু বলতে হল না। জবাবে সে বললো,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে নাইরোবি পৌঁছানোর চেষ্টা কোরবে।প্রোমোশনের খবরটা জানাতেই ও খুশি হয়ে বলে উঠলো, খবরটা জানানোর জন্য সে কৃতজ্ঞ। এসে পৌঁছাল বন্ধু। প্রথম রাতে খাবারের পাট চুকিয়ে দু’জনে বসলাম একান্তে কথাবার্তা বলার জন্য।
স্যার, বলুন দেশে কি হচ্ছে? মিডিয়াতে অনেক কিছুই বেরুচ্ছে, কিন্তু আসল ঘটনা কি?
আমি তোমাকে সবই খুলে বলবো, তবে তার পেছনে একটা প্রত্যাশা নিয়ে। তুমি একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওনি বলে তোমার মনের খেদ আমার দৃষ্টি এড়ায়নি। কিন্তু ভাই, এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করে রাখার চক্রান্ত চলে আসছে জন্মলগ্ন থেকেই। সেই চক্রান্তের গাঁটছড়া বেঁধেছে দেশের কায়েমী স্বার্থবাদী শাসক ও শোষক গোষ্ঠী। বাংলাদেশকে একটি করদরাজ্যে পরিণত করে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গোলাম বানানোর সুদূর প্রসারী নীলনকশা রয়েছে ভারতীয় চাণক্যদের।এর বিরুদ্ধে আমরা লড়ে এসেছি মুক্তিযুদ্ধকাল থেকেই।
৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসানোর পর জিয়া সেনা পরিষদের মধ্যমণি হয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করায় আমাদের সুচিন্তিত অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের সাথে আমাদের সংগঠনের মধ্যমণি জিয়া শুধুমাত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য আপোষ কোরে ভেবেছিলেন ভারতকে ছাড় দিয়ে বিলীন হওয়ার পথে হাসিনার নেতৃত্বেআওয়ামী-বাকশালিদের দেশের রাজনীতির মূলধারায় পুনর্বাসিত করলেই তিনি স্বচ্ছন্দে বাংলাদেশের শাসক হয়ে থাকতে পারবেন ভারতের আশির্বাদে। কিন্তু সেটা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তার সেই অভিলাষ ভুল প্রমাণিত হয়। ভারত তাদের কাজ হাসিল করে নিয়ে জিয়াকে তাদেরই আর এক দালাল জেনারেল এরশাদের মাধ্যমে ইহধাম থেকে সরিয়ে আওয়ামী-বাকশালিদের সহযোগিতায় এরশাদকেই ক্ষমতায় বসায়। তারা এরশাদের মাধ্যমে দুইটি স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিলো।
প্রথমত- জিয়া এবং তার সাথে বেঁচে থাকা পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক অফিসার এবং সদস্যদের সামরিক বাহিনী থেকে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলা।
দ্বিতীয়ত- আওয়ামী-বাকশালিদের সাংগঠনিক ভাবে মজবুত করে তোলা।
এই দুইটি উদ্দেশ্য তারা হাসিল করে ফেলেছে,তাই এখন তাদের এরশাদের আর প্রয়োজন নেই মুখ্য খেলোয়াড় হিসেবে।এখন তারা চায় হাসিনাকে ক্ষমতায়।বর্তমানে দেশেএরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ভারতের ইশারাতেই আওয়াম লীগ খালেদার সাথে যুগপৎ আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের মাঝে একসময় খালেদাকে ধরাশায়ী করে আওয়ামীলীগকেই ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হবে। একবার যদি আওয়ামী-বাকশালিদের আবার ক্ষমতায় বসানো সম্ভব হয় তবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশ পরিণত হবে করদ রাজ্যে আর আমরা পরিণত হবো গোলামে।
এই অবস্থায় সীমিত শক্তি নিয়ে আমাদের পক্ষে অগ্রণী হয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু তোমার মতো আরও যারা এখন সামরিক বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে রয়েছে তারা অবশ্যই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তোমাদের সহায়ক শক্তি হিসাবে যথাসাধ্য ভূমিকা রাখারচেষ্টা করতে পারি।
স্যার, আর একটু পরিষ্কার করে বলুন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় কি? আগ্রহপ্রকাশ করলো আগত অতিথি। তার উৎসাহে আমি আরও কিছুটা অনুপ্রাণিত হলাম।
দেশের বর্তমান এরশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলন এক বিস্ফোরক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সরকারী প্রশাসন টালমাটাল। সারাদেশ প্রায় অচল। এই অবস্থায় ভারত এরশাদকে চাপ দিচ্ছে দেশে মার্শাল ল’ জারি করার জন্য। কারণ, এই অবস্থায় দেশে মার্শাল ল’ জারি করলেযে অবস্থা সৃষ্টি হবে সেটা সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া কিছুতেই সম্ভব হবেনা। তখন বেসামাল এরশাদ চাপিয়ে দেয়া গৃহযুদ্ধের দাবানল থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে ‘২৫ বছরের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির’আওতায়বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। সেইসুযোগে চাণক্যরা অতি সহজেই ত্রাণকর্তা হিসাবে দেশে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে তাদের পছন্দসই হাসিনার নেত্রীত্বে নব্য বাকশালি সরকারকে ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত কোরে তাদের হারানো স্বর্গ ফিরে পাবে। গণ-আন্দোলন যাবে বানের জলে ভেসে। এইঘৃণ্য চক্রান্ত কি মেনে নেয়া যায়?
অবশ্যই নয় স্যার, কিন্তু আমরা কি করে এই চক্রান্তের মোকাবেলা করতে পারি?
সেটা পরের কথা। প্রথমে ঠিক করতে হবে এই হীন চক্রান্তের অন্ধকার থেকে দেশ ওদেশবাসীকে বাঁচানোর জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে একে অপরকে বিশ্বাস করেএকাত্মভাবে কাজ করতে রাজি আছি কিনা।
আমি আপনাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে সম্মতি জানালাম। আপনি আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন, স্যার। আপনাদের খুবই কাছ থেকে দেখার এবং বোঝার সুযোগ আমার হয়েছে। আপনারা সবাই পরীক্ষিত, নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক।সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে আপনারা।
মানুষ আজকের দুনিয়ায় দেশ ও জাতির স্বার্থে এতোটাও নিঃস্বার্থ হতে পারে সেটা অনুধাবন করে আপনাদের ভীষণভাবেশ্রদ্ধা করে এসেছি যদিও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ পাইনি। আমি নিশ্চিত এই সংকটের মোকাবেলা করার জন্য আপনি আপনার সাথীদের সাথে নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও পরিকল্পনা করছেন, অতীতের সংকটগুলোর মোকাবেলা করার মতোই। আমাকে বিশ্বাস করে যদি কোনও বিশেষ দায়িত্ব দেন তবে সেটা পূরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা আমি কোরব পরিণতি যাই হউক না কেনও ইন শা আল্লাহ।
আমাদের কাজ হল চেষ্টা করা,প্রতিফল দেবার মালিক আল্লাহ্। আমি যতটুকু জানতেপেরেছি, যাদের প্ররোচনায় জেনারেল এরশাদ দেশে মার্শালল’ জারি করতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেআর্মি চীফ জেনারেল নুরুদ্দিন,জেনারেল মচ্ছু সালাম, জেনারেল মাহমুদুল হাসান, জেনারেল মীর শওকত, ব্রিগেডিয়ার মাহমুদ, ব্রিগেডিয়ার রফিক, ব্রিগেডিয়ার ওয়াহিদ, ব্রিগেডিয়ার নাসিম, ব্রিগেডিয়ার আশরাফ, ব্রিগেডিয়ার নাসের, ব্রিগেডিয়ার আ ম সা আমিন।
তবে বেশিরভাগ সেনা অফিসার এবং সৈনিকরা এই পদপক্ষেপকে আত্মঘাতী মনে করে সমর্থন কোরছে না। বিশেষ করে ইউনিট কমান্ডারদের পর্যায়ে।কিন্তু সাহসী নেতৃত্বের অভাবেতারা সোচ্চার হতে পারছে না। ক্যারিয়ারের কথা ভেবেও অনেকে সবকিছু বুঝেও প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করতে পারছে না। আমার জানামতে, ইউনিট কমান্ডারদের লেভেল থেকে নিচ পর্যায়ের ৯০% মার্শাল ল’-এর বিরুদ্ধে। ধিক্কৃত চরিত্রহীন রাষ্ট্রপতির তার বিদেশী প্রভু ভারতের স্বার্থে দেশের জনগণের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর জন্য দেশের সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার ঘোর বিরোধী তারা। আমার খবরের সত্যতা যাচাই করা তোমার জন্য কষ্টসাধ্য হবে না।
গুরুত্বপূর্ণ পদে নবনিযুক্ত অফিসার হিসাবে ইউনিট কমান্ডারদের সাথে পরিচিত হবার জন্য একটিকনফারেন্স ডাকলেই তুমি তাদের মনোভাব সরেজমিনে জানতে পারবে। সেই কনফারেন্সেই তুমি বুঝতে পারবে আমার বক্তব্যের সত্যতা এবং বাস্তব অবস্থা।
প্রথা অনুযায়ী দেশে মার্শাল ল’ঘোষণার আদেশ সেনাসদরে পৌঁছার পর এক ঝটিকা অভিযানেরমাধ্যমে তুমি প্রেসিডেন্ট এরশাদ, তার বিশ্বাসভাজনদের গৃহবন্দী করে বাইরের সাথে তাদের যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দেবে। তারা যাতে একে অপরের সাথে কোনোও প্রকার যোগাযোগ করতে না পারে সেই ব্যবস্থাও তমাকে নিশ্চিত করতেহবে। এরপর থেকে তুমিই হবে ডিফ্যাক্টো চীফ। গৃহবন্দী এরশাদের সাথে শুধুমাত্র ‘মোহাম্মাদ’ নামের ব্যাক্তিরই যোগাযোগের পথ খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে তোমাকে।
খালেদা জিয়ার সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে লুকিয়ে থাকা ভেড়ার ছালে আবৃত ধূর্ত ভারতীয় পোষা শৃগালগুলোর একটা লিস্টও তোমাকে দেয়া হবে। ওদেরকেও বন্দী করে ফেলতে হবে ত্বরিতগতিতে কোনও প্রতিক্রিয়ার সময় না দিয়ে। কার বিরুদ্ধে কোন চার্জ আনা হবে সেসব নির্ভরযোগ্য তথ্যও তুমি পেয়ে যাবে।
তোমার এই পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন নিশ্চিত করবেন বেগম খালেদা জিয়া চলমান গণআন্দোলনের মুখ্য নেত্রী হিসাবে। তোমাকে সেনাবাহিনীতে সার্বিক ভাবে সমর্থন দেবে সেনা পরিষদ এবং অন্য সব দেশপ্রেমিক অফিসার আর সেনাসদস্যরা।এরপর আমি এরশাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দুই নেত্রী খালেদাএবং হাসিনার বিরুদ্ধে জারীকৃত হুলিয়া উঠিয়ে নেবো। এরশাদকে বাধ্য কোরব পদত্যাগ করে ক্ষমতা চীফ জাস্টিসের কাছে হস্তান্তর করে নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিতে।এরপর জেনারেল এরশাদ যদি সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান তবে তাকে যেতে দেয়া হবে এই বিষয়ে খালেদা জিয়ার সাথে আমার ইতিমধ্যেই বোঝাপড়া হয়েগেছে। আমার অনুরোধে তিনি ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচিও সাময়িকভাবে স্থগিত করতে রাজি হয়েছেন। বিষয়গুলো খুবই স্পর্শকাতর। তাই এইসবের গোপনীয়তা সতর্কতার সাথে রক্ষা করতে হবে ভাই। সেনাবাহিনীর ভেতরে কি ঘটবে সেই সম্পর্কে কিছুই খালেদাকে জানাইনি গোপনীয়তার স্বার্থেই।
কিন্তুস্যার, আপনি কিন্তু চীফ সম্পর্কে কিছুই বললেন না। তার অধীনস্থ হয়ে আমারপক্ষে দায়িত্বগুলো পালন করা কি সম্ভব হবে, যেখানে জেনারেল নুরুদ্দিন জেনারেল এরশাদের বিশ্বস্তদের একজন?
সম্ভব হবে, জেনারেল নুরুদ্দিনকে চীফ হিসাবে রেখেই।
কারণ, জেনারেল নুরুদ্দিন একজনউচ্চাভিলাষী ব্যক্তি কিন্তু অন্তরে খুবই ভীরু। জেনারেল জিয়া হত্যার চক্রান্তের শেষপর্যায়ে তিনি তার উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য হাসিনার সাথে দেখা করে তার আনুগত্য জানিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় হাসিনা তাকে জেনারেলএরশাদের কথামতো চলার পরামর্শ দেয়। যার ফলে জিয়া হত্যা, মঞ্জুর হত্যা ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ফাঁসির ঘটনাগুলোতে তার একটা মুখ্য ভূমিকা থাকে জেনারেল এরশাদের নির্দেশে।
কিন্তু ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর হাসিনার আওয়ামীলীগ এবং জামায়াত যখন এরশাদকে বর্জন করে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে পুনরায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়, তখন থেকেই নুরুদ্দিন জেনারেলএরশাদের দিন শেষ হয়ে আসছে সেটা বুঝতে পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে। তিনি এখন বাঁচার অবলম্বন খুঁজছেন। এই দুর্বলতাটাই তমাকে কাজে লাগাতে হবে। তুমি তাকে বোঝাবে, তোমার কথা মতো চললে ভবিষ্যতে তার কোনও ক্ষতি হবে না। সে তখন তোমাকেই বাঁচার অবলম্বন হিসাবে গ্রহণ করে নেবে নিরুপায় হয়ে। সেই অবস্থায় তাকে সামনে রেখেই তুমি সবকিছুই করতে পারবে। এতে তোমাকে কোনও কিছুর জন্য অভিযুক্ত করাও সম্ভব হবে না। একই ভাবে, সব কিছুর মূলে থেকেও তুমি থাকবে নিরাপদ। এভাবেই, সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। একজন বীর দেশপ্রেমিক হয়েও তুমি থেকে যাবে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান,তাই এই খেলায় তোমার ভূমিকা পালন করতে বেগ পেতে হবে না, সে বিশ্বাস আমার আছে।
বৃহত্তর স্বার্থে এই দায়িত্ব যদি সফলভাবে পালন করতে পারো তবে ইতিহাসে তোমার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাছাড়া পরকালে শেষ বিচারের দিনে একজন সাচ্চা ইমানদার হিসেবে তোমাকে পুরস্কৃত কোরবেন আল্লাহ। কঠিন দায়িত্ববটে, তবে অসম্ভব নয়। জুলুমকারীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় এবং শান্তিকামীদের উপরই আল্লাহ্র রহমত নাজেল হয়। সময় নিয়ে ধীরস্থির ভাবে ভেবেচিন্তে যাবার আগে আমাকে স্পষ্ট করে জবাব দিয়ে যাবে, তোমার দায়িত্ব তুমি পালন করতে রাজি আছো কি না।
যাবার আগে দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক বীর শপথ নিলো তার দায়িত্ব সে পালন করবে।
খুবিখুশি হলাম। তোমার সম্পর্কে আমরা যা ভেবে এসেছি তুমি আজ নিজেকে তার চেয়েও অনেক বড় বলে প্রমাণিত করলে! তবে খুবই সতর্কতার সাথে চলতে হবে তমাকে। বিচক্ষণতার সাথেই নিতে হবে প্রতিটি পদক্ষেপ। চলে গেলো দেশপ্রেমিক অফিসার।
দেশে ফেরার সাথে সাথেই তাকে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হলো। নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই জানতে পারলাম নতুন দায়িত্ব পাবার পর আমার কথার সাথে বাস্তব পরিস্থিতির মিল পেয়ে সে তার কাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। জেনারেল নুরুদ্দিনকেও সহজেই তার আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে সমমনা দেশপ্রেমিক।
প্রেসিডেন্ট নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দিনরাত তার অনুগত সেনাপ্রধানসহ বিশ্বাসভাজনদের নিয়ে বঙ্গভবনে এবং কমান্ডার ইন চীফ এর দফতরে লাগাতার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে মার্শাল ল’ জারি করার ব্লু প্রিন্ট প্রণয়ন করছেন। চীফ সেনাসদরে খুব কমই আসছেন।
সেই ফাঁকে বন্ধু তার করণীয় সবকিছুই করে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই ফর্মেশন ও ইউনিট কমান্ডারদের মিটিং সেরেএবং প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে ভিজিট করে সরেজমিনে অফিসার আর সৈনিকদের প্রতিক্রিয়া ও মনোভাব জেনে নিয়েছে সে।
অতিউত্তম! জানতে পারলাম, দেশের সব কয়টি ক্যান্টনমেন্টেই সেনাসদস্যরা দেশে মার্শাল ল’ জারি করার বিপক্ষে সেটাও ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছে বন্ধু।
সামরিকবাহিনীর সদস্যরা একজন গণধিক্কৃত স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াতে চায় না। তারা মনে করে, সামরিক বাহিনীর জন্য জেনারেল এরশাদ এখন একটা গলগ্রহ ভারতীয় দালাল ছাড়া আর কিছুই নয়। এইসব খবর পাবার পর আমি নিশ্চিত হলাম আমাদের পরিকল্পনা সফল হবে। বাস্তব পরিস্থিতি বন্ধুর আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে তুলেছে খবর পেলাম।
এখন খালেদাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে তিনি যেকোনো দিন ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেবেন।এই কথাটা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে তার মিত্র হাসিনার প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা না করেই, তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নয়। এই ধরনের দেশব্যাপী বহুল প্রচারিত হুমকিতে প্রেসিডেন্ট বিচলিত হয়ে মার্শাল ল’ জারির ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেবেন আর সেটা কার্যকরী করার জন্য ট্রুপস ডেপ্লয়মেন্ট-এর হুকুম জারি করবেন চীফ। ঠিক সেই সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্ধু তার দায়িত্ব পালনশুরু করবে। এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা পর্যন্ত তাকেই সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে ডিফ্যাক্টো চীফ হিসাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর না করছে, AHQ থেকে ISPR-এর মাধ্যমে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে না। মিডিয়ার সাথেও কোনোরকম যোগাযোগ রাখা হবে না। People should be absolutely in dark about the whole episode so that no one can react. He should also not meet any diplomat at any level.
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হবে। লিস্ট অনুযায়ী আওয়ামীলীগেরঃ
সাজেদাচৌধুরী, নাসিম, শেখ সেলিম, আমির হোসেন আমু, জিল্লুর রাহমান, হানিফ, আইভিরাহমান, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, ডঃ কামাল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, গাজি গোলাম দস্তগির, মায়া, শামিম ওসমান, ডঃ ইকবাল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জয়নাল হাজারি, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন।
জাতীয় পার্টিরঃ
এরশাদের ভাই কাদের, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান, ডঃ মোশররফ হোসেন, কাজি জাফর, ব্যারিস্টার মওদুদ, আনিসুর রহমান।
বিএনপিরঃ
ব্রিগেডিয়ারহান্নান শাহ, বি চৌধুরী, ওবায়দুর রহমান, আব্দুল মন্নান, ব্যেরিস্টার নাজমুল হুদা, জমিরুদ্দিন সরকার, খন্দকার মোশাররফ, জেনারেল ভূঁইয়া এদের সবাইকে নিজ নিজ বাড়ীতে নজরবন্দী করা হবে।
মিডিয়া, কূটনৈতিক পাড়ার কারো সাথে কিংবা পার্টির কোনও নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের যোগাযোগ করতে দেয়া হবে না। তাদের সবার টেলিফোন লাইন কেটে দেয়া হবে। বর্ডারের উপর BDR কে বর্ডারে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের হুকুম জারি করা হবে। বিশেষ করে কাদের সিদ্দিকিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।
এইসব এ্যাকশন শেষ হলে আমি এরশাদের সাথে যোগাযোগ করে আলোচনার মাধ্যমে নেত্রীদ্বয়-এর বিরুদ্ধে জারীকৃত হুলিয়া উঠিয়ে নেবার নির্দেশ আদায় করে নেবো এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য কোরব।এরশাদের সাথে যোগাযোগ কালে খালেদা জিয়ার সাথেও আমাকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। সতর্কতার সাথে সবকিছুর পেছনে বন্ধুই যে প্রধান ক্রিয়ানক সেটা গোপন রাখা হবে যাতে একজন নির্লোভ দেশপ্রেমিক হিসাবে তার জীবন এবং ক্যারিয়ারের কনও ক্ষতি না হয়।
তার দেশপ্রেম সাহসিকতার ফলেই দেশ ও জাতিকে বর্তমান চক্রান্তের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হবো আমরা ইন শাহ আল্লাহ্।
আবেগে আমি আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম।এতো প্রলয় ঘটে যাবার পরও আমাদের হাতে গড়া সেনাবাহিনীতে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী তথা ’৭১-এর দেশপ্রেম এখনও সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ হয়ে যায়নি আল্লাহ্র অসীম করুণায়।
আমার নিরন্তর ছায়াসঙ্গী রব্বানি খান নীরবে সব কিছুই দেখছে আর শুনে বোঝার চেষ্টা করছে অবাক বিস্ময়ে!
খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানালাম
ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচি আপনি যে কোনোদিন দিতে পারেন এই কথাটা দেশের প্রতিপ্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়। এই ধরনের প্রচারণা আপনার শরিক দলআওয়ামীলীগ পছন্দ না করলেও আপনি আপনার কাজ এমন ভাবে করবেন যাতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ শঙ্কিত এবং ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মার্শাল ল’ জারি করার ত্বরিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আমার এই প্রস্তাবে খালেদা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন বলে মনে হল।
কেনও এমনটি করতে বলছেন, সেটা আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না?
এই কেনও-র উত্তরটা পরবর্তী ঘটনাবলী থেকেই পেয়ে যাবেন। এই মুহূর্তে বিস্তারিত আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব না। Need to know basis-এ কিছুদিন আমাদের কথাবার্তা সীমিত রাখতে হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, ঘটনা যাই ঘটুক সেটা আপনাদের এবং দেশ ও জাতীয় স্বার্থেই ঘটবে ইন শা আল্লাহ! সাপ ও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না।
ঠিক আছে, আপনার কথা মেনে নিয়ে আমি সব ব্যবস্থা করছি।
ধন্যবাদ। ফোন রেখে দিলাম।
এরপর থেকে সব কিছুই ঘটছিলো অতি দ্রুত লয়ে।
পর্দার অন্তরালে সব কিছুর চূড়ান্ত ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে। ঘেরাও কর্মসূচির খবরটা নেতা-কর্মীরা ছড়িয়ে দিলো। সারাদেশে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হল। সাজসাজ রবে মুখরিত হয়ে উঠলো সচেতন জনতা। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে খবরটা ছাপা হল।দেশ জুড়ে এই ঘেরাও কর্মসূচির প্রতি জনসমর্থন লক্ষ করে শঙ্কিত হয়ে দেশে মার্শাল ল’ জারি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন জনধিক্কৃত স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ধরে রাখার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে। সশস্ত্র বাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল এরশাদ তিন বাহিনী প্রধানকে ডেকে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিলেন। দেশের সামরিক বাহিনী এবং অন্যরা সম্মিলিত ভাবে এই আদেশ কার্যকরী কোরলেও এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে সেনাবাহিনী। সেনাসদরে ফিরে আর্মি চীফ নুরুদ্দিন সংশ্লিষ্ট জনকে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নির্দেশ দিলেন পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রুপ্স ডেপ্লয়মেন্টের ব্যবস্থা করতে। নির্দেশ অনুযায়ী ট্রুপ্স ডেপ্লয় করা হলো বটে,তবে সেটা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচি রোধ করার জন্য নয়, দেশের রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ এবং তার অনুগত তাঁবেদারদের গৃহবন্দী করার জন্য। একই সাথে লিস্ট অনুযায়ী সবাইকে গৃহবন্দী এবং নজরবন্দী করা হল ত্বরিত গতিতে। হতভম্ব প্রেসিডেন্ট আর্মি চীফকে যখন জিজ্ঞেস করলেন
এ সবের মানে কি?
তখন জেনারেল নুরুদ্দিন প্রেসিডেন্টকে বিনীত ভাবে জানালেন
একজন Loyal officer হিসাবে প্রেসিডেন্টসহতার নিকটস্থ আস্থাভাজনদের বাঁচানোএবং তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই তাদেরকে Protective Custody-তে নেয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। কারণ, দেশে মার্শাল ল’ জারি করার হুকুম তামিল করতে গেলে সমগ্র সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহের বিস্ফোরণ ঘটে যেতো, আর দেশে জুড়ে জ্বলে উঠতো দাবানল। দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীর অফিসার এবং সেনারা মার্শাল ল’ এর বিপক্ষে। শুধু তাই নয়, তারা একজন গণধিকৃত রাষ্ট্রপতির জন্য জনগণের বিরুদ্ধেহাতিয়ার হাতে দাঁড়াতে সম্মত নয়। সবারই ধারণা, জেনারেল এরশাদ বর্তমানে সামরিক বাহিনীর জন্য একটি গলগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নন। ব্যাক্তির চেয়ে দেশ বড়, তাই রাষ্ট্রপতির উচিৎ হবে দেশে আগুন না জ্বালিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে কালবিলম্ব না করে পদত্যাগ করা। তা না হলে, সামরিক বাহিনী সহ সারা দেশে যে বিস্ফোরণ ঘটবে তাতেআমরা সবাই জ্বলে ছাই হয়ে যাবো। ক্ষমতা থেকে স্যার, আপনাকে সরে দাঁড়াতেই হবে।
অতর্কিত এবং অভাবনীয় এই ঘটনায় বিস্মিত হয়ে গেলো দেশবাসী। বন্ধ করে দেয়া হল ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচি। কিছুটা স্বস্তির সাথেই দেশবাসী প্রতীক্ষা করতে থাকলো আগামীতে ইতিবাচক কিছু ঘটার প্রত্যাশায়। খালেদা জিয়াও বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন এমন অপ্রত্যাশিত অভাবনীয় ঘটনায়! তিনি ফোন করলেন আমাকে
এটা কি করে সম্ভব হল?
হয়েছে পরিকল্পনা অনুযায়ী।এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে দেশে যাতে আইন-শৃঙ্খলাপরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশে জনগণের স্বাভাবিক জীবন যাতে বিঘ্নিত কিংবা বিপর্যস্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করা।এখান থেকে এরশাদের সাথে আলোচনা করায় কিছু অসুবিধে আছে তাই আমি গোপনে লন্ডন যাচ্ছি কয়েকদিনের মধ্যেই। পৌঁছানোর পরই প্রথমে আপনাদের দু’জনের বিরুদ্ধে জারিকৃত হুলিয়া উঠিয়ে নেয়ার আদেশ জারি করতে বাধ্য কোরব বন্দী প্রেসিডেন্ট এরশাদকে। এতে করে আপনি এবং দলের শীর্ষনেতারা খোলাখুলিভাবে গণসংযোগ স্থাপন করে অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন। এরপর শুরু হবে পদত্যাগের আলোচনা। আপনার সাথে এবং সেনাবাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা কোরেই আলোচনা কোরব আমি। অগ্রগতি এবং ফলাফলও আপনি জানতে পারবেন। রাখি আজকের মতো, কিছু জরুরী কাজ শেষ করে নিতে হবে সফরের প্রস্তুতি হিসাবে। আল্লাহ্ হাফেজ।
ঝটিকা এ্যাকশনের পর আমাকে ফোন কোরল শফিকুল গণি স্বপন বেশ কিছুটা উৎকন্ঠার সাথেই। আকস্মিকভাবে এ ধরনের একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা যে ঘটতে পারে সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিলো না তার।
ডালিম ভাই, আপনি কি কিছু জানেন কি কোরে কাদের দ্বারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হল?
আমার পক্ষে কি করে জানা সম্ভব ভাই? আমিতো তোমাকেই ফোন কোরব ভাবছিলাম।তুমি প্রখ্যাত সাংবাদিক, তদুপরি জাদু মিয়ার ছেলে হিসাবে বিএনপির একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা হওয়া ছাড়াও জেনারেল এরশাদের সাথেও তোমার আত্মীয়তা আছে। সেইক্ষেত্রে তোমার চেয়ে এই বিষয় আর কে বেশি কিছু জানতে পারে?
একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলোস্বপন।
খালেদা জিয়ার সাথেও তো তোমার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আমি তো আশা করেছিলাম তোমার কাছ থেকেই আসল খবরটা জানতে পারবো। নিউইয়র্ক-এর মিশনে অবস্থিত মহিউদ্দিন ভাই এবং মুক্তি আপি, তারাও কি কিছুই বলতে পারছেন না?
দেশে-বিদেশে কেউ কিছুই জানে না, সবাই অন্ধকারে। তবে আমার একটা অনুরোধ,যদি সম্ভব হয় তাহলে দেখবেন শারীরিক ভাবে তাদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়। মহিউদ্দিনভাই, মুক্তি, বাবু, নেলি নিউইয়র্ক এবং লন্ডন থেকে ফোন করছে ঘন ঘন।ওরা সবাই ভয়এবং আতঙ্কে ভেঙ্গে পড়েছে। আপনাকেও তারা ফোন করতে পারে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী আপনাদের হাতে গড়া। তাই এই অনুরোধ, কিছু মনে করলেন নাতো?
মনেকরার কিছুই নেই। তবে কি জানো স্বপন, আমাদের গড়া সামরিক বাহিনীর চরিত্র হনন করা হয়েছে অনেকাংশেই। বদলে ফেলা হয়েছে নৈতিকতা, নীতি-আদর্শ। তবুও আমি দেখবো, যদি আমার পক্ষে কিছু করার কোনও অবকাশ থাকে।
স্বপনের সাথে কথা বলার পরই লন্ডন থেকে বাবু আর নেলি ফোন কোরল। বাবু মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। আমি যখন হংকং এ ছিলাম তখন বাবুও হংকং এ BCCI Bank-এ চাকরি করতো।সেই সুবাদে পরিচয়। বাবু আর নেলিকে প্রথম দেখাতেই আমাদের ভালো লেগেছিলো। খুবই সহজ সরল আর প্রাণখোলা দু’জনেই। প্রেসিডেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা থাকলেও এই দম্পতির মধ্যে কোনও দম্ভ ছিল না। সব ব্যাপারেই তারা আমাদের পরামর্শ নিয়ে চলতো। বাবু আর নেলির কাছে আমি ও নিম্মি দুজনেই বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলাম। মন থেকে দু’জনই আমাদের ভালোবাসতো।
পাকিস্তান আমল থেকেই ডেইজি ভাবী, মানে বেগম এরশাদকে জেনে এসেছি। Young Officer-দের প্রতি তিনি সর্বদা ছিলেন স্নেহবৎসল। মেজর এরশাদ হাসিখুশি সৌখীন মানুষ হলেও Three Ws (Wealth Women Wine)-এর প্রতি তিনি বরাবরই ছিলেন আসক্ত।
আমি যখন গণচীনে তখন ডেইজি ভাবী প্রায় তিন মাসের উপর সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।তখন আমি আর নিম্মিই তার দেখাশোনা করতাম। সেই সময় তার একান্ত সান্নিধ্যেআসার সুযোগ হয়েছিলো আমাদের। তাই তাকে আরও ভালো লেগেছিল।তিনিও আমাকে আরনিম্মিকে আন্তরিকভাবেই ভালোবেসেছিলেন।
বাবু আর নেলি ফোনে অনেক কান্নাকাটি করে মিনতি জানালো যাতে আমি সেনাবাহিনীতেপরিচিত জনদের সাথে কথা বলে কোনোক্রমে জেনারেল এরশাদ আর অসুস্থ ডেইজি ভাবীকে দেশ থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করি।
আমি আর নিম্মি দুইজনেই তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম, সাধ্যমত সব কিছুইকোরব। প্রয়োজনে তাদের অনুরোধ রক্ষা করে লন্ডনেও চলে আসবো।এতেবেশ কিছুটাআশ্বস্ত হয়েছিলো বাবু এবংনেলি দুইজনই।
বাবুদের সাথে কথা বলার পর জেনারেল এরশাদের সাথে যোগাযোগ করলাম। সার্বক্ষণিক ছায়াসঙ্গী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু গোলাম রব্বানি খান পাশে বসা একটি নোট প্যাডআর কলম হাতে। He is a very meticulous person. Rabbani is an extremely intelligent character with unbelievable photogenic memory.
আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন?
হঠাৎঅপ্রত্যাশিত ভাবে আমার কল পেয়ে জেনারেল এরশাদ খুবই আশ্চর্য হলেন।
ওয়ালাইকুম আসসালাম, ডালিম তুমি কোথা থেকে? যোগাযোগ কোরলে কি ভাবে?
এর জবাব অবান্তর। আপনি পুরো দেশটাকে একটা সর্বনাশা সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। শুধুমাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য দেশে মার্শাল ল’ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেনকেনও? আপনার সেই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলেই আজ আপনিএবং আপনার সহচররা সবাই গৃহবন্দী। আপনার দীর্ঘ ৮ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আজ সারা দেশবাসী জেগে উঠেছে সেই অবস্থায় আপনার এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের বেশিরভাগই অবস্থান নিয়েছে দেশকে একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। গৃহযুদ্ধে আপনার আর আপনার দোসরদের পরিণতি কি হতো সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সময় এটা নয়। তবে আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে একটি বাস্তব সত্য জানাচ্ছি।সামরিক বাহিনীর এই আকস্মিক পদক্ষেপ জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তারা এখন অপেক্ষায় রয়েছে এর পর কি হয় দেখার জন্য।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবদিক বাঁচিয়ে বিশেষ করে আপনার পরিণতির কথা ভেবেইএকটা গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্যই আমি আপনাকে ফোন করেছি বিবেকের তাড়নায়। ইতিমধ্যেই, ঢাকা থেকে স্বপন এবংলন্ডন থেকে বাবু আর নেলি ফোন করেছিলো। তারা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত এবং আপনার এবং ডেইজি ভাবীর নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। আমাকে আপন ভেবে তারা তিনজনই মিনতি জানিয়েছে, আপনাদের ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব হলে করার জন্য।
স্যার, মোনাফেকি আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। রাজনৈতিকভাবে আমাদের নীতি-আদর্শের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও পারিবারিক এবং ব্যক্তিগতভাবে শেখ সাহেব, জেনারেল জিয়া ও আপনার পরিবারের সাথে আমার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবসময়েই ছিল এবং আছে, আর এই সম্পর্ক সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে। এই সম্পর্ক প্রীতি, স্নেহ আর ভালবাসার সম্পর্ক। তাই আমি তাদের শান্ত করার জন্য আন্তরিকভাবেই বলেছি, আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো যাতে আপনাদের উপর কোনও প্রকার শারীরিক নির্যাতন কিংবা অপ্রীতিকর কিছু করা না হয়। তবে আমার চেষ্টাকে সফল কোরে তোলার জন্য আপনার তরফ থেকেও সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।এখন আপনি বলুন, বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আপনি আমার সাথে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন কিনা? আমাকে বিশ্বাস কোরে যদি আপনি সহযোগিতার কথা দেন, তবেই আমি এগুবো, তা না হলে আমি আমার সব উদ্দগ থেকে সরে দাঁড়াবো।
কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে জেনারেল এরশাদ বললেন
বেশ, বলো তুমি কি ধরনের সহযোগিতা চাও।
আমি যা বলবো সেটাকে আবেগ দিয়ে বিচার না করে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
তাই করবো।
প্রথমে বলুন, আপনাদের কোনও বিশেষ অসুবিধে হচ্ছে না তো? ডেইজিভাবী কেমন আছেন?
ডেইজি ভালোই আছে। আমারও বন্দীত্ব ছাড়া তেমন কোনও অসুবিধা নেই। স্বাভাবিকঅবস্থাতেই রাখা হয়েছে আমাদের। শুধু কারো সাথে যোগাযোগের কোনও সুযোগ নেই।
এটাতো Rules of Business সেটা আপনার ভালো করেই জানা আছে। স্যার মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবার। খালেদা জিয়ার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার কথায় ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচি তিনি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে রাজি হয়েছেন যদিও আওয়ামীলীগ বিশেষ করে হাসিনা তার এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করছেন। কেনও সেটা আপনার বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। আমার বিবেচনায় এখন আপনার জন্য একটাই পথ খোলা রয়েছে। Temporary Retreat. আপনি যদি স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফাদিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে আগামী নির্বাচনের ঘোষণা দেন তবে খালেদা জিয়া কথা দিয়েছেন, আপনি চাইলে সপরিবারে আপনাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা তিনি করবেন এবং আর্মিও সেটা মেনে নেবে। আমি জানি, হাসিনা এইসিদ্ধান্ত মেনে নেবে না সহজে। শুধু তাই নয়, ভারতের ইশারায় খালেদার চেয়ে বেশি সোচ্চার হচ্ছে হাসিনা আপনাকে জেলে পাঠিয়ে বিচার করার ব্যাপারে যাতেআপনি হাসিনার করুণার পাত্র হয়ে তার ও ভারতের স্বার্থে ব্যবহৃত হন। একটা সত্যি আপনাকে মেনে নিতে হবে স্যার, ভারতের কাছে আপনার আর তেমন কোনও মূল্যনেই। আপনাকে ৮ বছর ক্ষমতায় রেখে তাদের যা হাসিল করার ছিল সেটা তারা করে নিয়েছে। এখন থেকে হাসিনা থাকবে ড্রাইভিং সিটে আর আপনাকে থাকতে হবে তার তাঁবেদার হয়ে। জেনারেল জিয়াও ভারতের সাথে আপোষ করেছিলেন। হাসিনার নেতৃত্বেআওয়ামী-বাকশালীদের রাজনীতির মূল ধারায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পর তার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যায়। ফলে তার পরিণতিটা কি হয়েছে সেই সময়ের একজন মুখ্য খেলোয়াড় হিসেবে আপনার ভালো করেই জানা আছে।
১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের পর বিলুপ্ত প্রায় আওয়ামী-বাকশালিদের পুনর্জীবিত করার জন্য জেনারেল জিয়া এবংআপনি ব্যবহৃত হয়েছেন ভারতের সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে। আমার অনুরোধ, আপনি আওয়ামীলীগকে যদি পলিটিক্যাল স্কোরিং-এর সুযোগটা না দেন তবে অতীতের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কিছুটা হলেও হবে। স্যার, শুধু সমঝোতা ভিত্তিক ক্ষমতার রাজনীতি জটিল এবং মর্মান্তিক ভাবে কুটিল।
তুমি সত্যিই বলছ ম্যাডাম কি সত্যই রাজি হয়েছেন আমাকে মুক্তি দিয়ে Safe Passage দেবার ব্যবস্থা তিনি করবেন!
জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর সাথে আপনার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তিনি যতটুকু জানেন তাতে আমি ভাবতে পারিনি তিনি আমার প্রস্তাবটা মেনে নেবেন। কিন্তু নিলেন আমাকে অনেকটা অবাক করে দিয়েই। স্যার, আমি মিথ্যাকে ঘৃণা করি। এটা কমবেশী পরিচিতজনরা সবাই জানে, আপনিও নিশ্চয় কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে থাকবেন দীর্ঘদিনের পরিচয়েরপরিপ্রেক্ষিতে।আপনি ভাবুন, কয়েক দিনের মধ্যেই আমি বাবু আর নেলির সাথে যাতে আপনি সরাসরি আলাপ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা কোরব। এতে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সুবিধে হতে পারে। রাখি স্যার, আজকের মতো।
ফোন রেখে দিয়ে রব্বানিকে আলাপের বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, এখন আমাকে লন্ডন যেতে হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের দরুন রব্বানি সারবস্তুর প্রায়সবি বুঝে ফেলে আমাদের কথাবার্তা বাংলাতে হলেও।
রব্বানি, কেনিয়া ভিজিটের সময় জেনারেল এরশাদের চেহারাটা দেখে তোমার কি ধারণা হয়েছে জানি না। ভীষণ পিছলে মাল, কথা পালটাতে এক মুহূর্ত লাগে না জেনারেল এরশাদের। CMLA থাকা কালে সবাই এরশাদ সম্পর্কে বলতো CMLA মানে Cancel My Last Announcement! দু’জনই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।
দোস্ত, আমি কিন্তু যতই তোমাকে দেখছি ততোই বিস্মিত হচ্ছি !
কেনও বলতো?
আমি পাকিস্তানের অনেক বাঘা বাঘা রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনারদের দেখেছি। দেখেছি তারা প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রাইম মিনিস্টার এর সাথে কিভাবে আচরণ করেণ।তোমাকেও দেখলাম রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভিজিটের সময়। যেকোনও VVIP visit এর সময় সবাইকে দেখেছি গলদঘর্ম হতে, আর তোমাকে দেখলাম জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রীয়সফর কালে নির্বিকার এবং সবসময় তুমি যেমন থাকো ঠিক তেমনই ! এখন দেখছি, হাজার মাইল দূরে বসে একটা মানুষ কি কোরে পাশা উল্টে দিচ্ছে অনায়াসে ! ইতিহাসের জ্ঞান আমার সীমিত, তবে এ ধরনের মানুষের কথা ইতিহাসেও বিরল। এতটা আত্মপ্রত্যয় আর বল তুমি পাও কি করে?
প্রিয়বন্ধু, উদ্দেশ্যটা যদি সঠিক হয় আর ব্যক্তিকেন্দ্রীক না হয়ে বৃহত্তর স্বার্থে হয় তবে অসীম করুণাময় আল্লাহ্ই প্রয়োজনীয় সাহস কিংবা আত্মপ্রত্যয় যুগিয়ে দেন। এটা আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা।
রব্বানি চলে যাবার পর কিছু বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। এরশাদের কথা আর কাজের মধ্যেঅনেক ফারাক থাকে। তাই তার কোনও কথাতেই অতি উৎসাহিত হওয়া চলবে না।অতএব,আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে খালেদা জিয়া এবং সেনাসদরের সাথে খুবই সতর্কতার সাথেই আলাপ চালাতে হবে। পরদিন রাতে আবার এরশাদকে ফোন করলাম। রব্বানি রয়েছে পাশেই।
আসসালাম, আজ কেমন আছেন স্যার? কি ভাবলেন? স্যার, কিছু মনে না করলে একটা কথা খুলে বলতে চাই। কথাটা নেহায়েত আমার নিজস্ব বিবেচনা।
বলো কি বোলতে চাও।তুমি একজন শুভার্থী হিসেবে যা বলবে সেটা আমাদের ভালোর জন্যই বোলবে, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই আমার। স্যার, জীবন বাঁচিয়ে সপরিবারে দেশছেড়ে বাইরে চলে আসুন। আপনিতো শুনি ইতিমধ্যেই ৬০০ মিলিয়ন ডলার এর মালিক হয়ে বসেছেন। সেটা বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের একাউন্টে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। টাকার অংকটা যদি অর্ধেকও হয় তবে সেটা দিয়ে বিশ্বের যে কোনও পছন্দসই জায়গাতে বিলাসবহুল জীবন কাটানো আপনার পক্ষে কষ্টসাধ্য হবে না। তাছাড়া তৃতীয় বিশ্বেরপ্রায় সব কয়টি দেশেই প্রচলিত অনিশ্চিত রাজনৈতিক প্রবাহে ফিরে আসার সুযোগ যেকোনো সময় আবার সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাবুদেরও এই অভিমত।এমনটি তো অহরহ ঘটছে চারিদিকে।
এই বয়সে জেলের ভাত আপনি হয়তো হজম করতে সক্ষমহবেন তবে, ভাবীর যেই শারীরিক অবস্থা তাতে এই ধরনের মানসিক এবং শারীরিক চাপ তার পক্ষে বরদাস্ত করাটা খুবই কষ্টকর হবে।উপরন্তু, বিদেশী প্রভুদের কথামতো না চললে আপনার বিষয়টি কিন্তু শুধুমাত্র কারাবন্দী পর্যন্ত নাও থাকতে পারে। তখন অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি সেটা নিশ্চয় আপনি বুঝতে পারছেন স্যার।
ঠিকই বলছো তুমি।আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি।
তাহলে, আপনার এই সিদ্ধান্তটা ম্যাডামকে জানাতে পারি কি?
নিশ্চয়ই।
দেখবেন স্যার, কথা রাখার ব্যাপারে বাজারে আপনার যে সুখ্যাতি রয়েছে সেটা যেনো এইক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়। তাহলে আমার পক্ষে কিন্তু আর কিছুই করা সম্ভব হবেনা। তাই আবারও জিজ্ঞেস করছি, ভালোভাবে ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেনতো? জেনারেল এরশাদ জবাব দিলেন, সবাই তো আর ডালিম নয়।
ঠিকআছে,তাহলে আমি ম্যাডামকে আপনার সম্মতির কথাটা জানিয়ে জিজ্ঞেস করিপদত্যাগ, ক্ষমতা হস্তান্তর এবং আগামি নির্বাচনের Modalities নিয়ে তারা কিসিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই অনুযায়ী আমাদের এগুতে হবে। আপনিও বিষয়টি নিয়েভাবুন। দু’পক্ষের ভাবনা চিন্তার উপর নির্ভর করেই সমস্যার সমাধান বের করতেহবে। কি বলেন স্যার? ঠিকই বলেছো তুমি।
খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে জানালাম
জেনারেলএরশাদ রাজি হয়েছেন পদত্যাগের পর ক্ষমতা হস্তান্তর করে জাতীয় নির্বাচনেরঘোষণা দিয়ে দেশত্যাগ করতে। এমন সহজেই এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন সেটা খালেদার জন্য অপ্রত্যাশিত হলেও খবরটা জেনে তিনি খুশিই হলেন। আমি তাকে আরও জানালাম, দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে জারিকৃত হুলিয়াও তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরশাদ। সহসাই তার এই হুকুমনামা কার্যকরী হয়ে যাবে সরকারি পর্যায়ে। এরপর খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন প্রেসিডেন্ট এরশাদ?
জবাবটা দুই একদিনের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করে আপনাকে জানাচ্ছি, বললেন বেগম খালেদা জিয়া।
আমি তাকে বললাম
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জবাবটা জানানোই শ্রেয়। কারণ জেনারেল এরশাদকে মত পালটানোরসময় এবং সুযোগ দেয়াটা ঠিক হবে না। আর একটি কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে। যদিওজেনারেল এরশাদ দেশ ছাড়তে রাজি হয়েছেন কিন্তু এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তনেবে ভারত এবং RAW। আমি নিশ্চিত, আপনি কারণটা বুঝতে পারবেন।
: আপনারগুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতগুলো মনে থাকবে। সেই প্রেক্ষিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলবো ইন শা আল্লাহ্।
: আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো।
ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখেদিলেন খালেদা জিয়া। এই সব কথোপকথনের সারবস্তু সেনাসদরের বিশেষজনকেও জানিয়ে দেয়া হচ্ছিল।
ইতিমধ্যেবাবু আর নেলি লন্ডন থেকে অস্থির হয়ে ফোন করছে বার বার। পাবলিক টেলিফোন বুথথেকে তারা ফোন করে অবস্থার ইতিবাচক কোনও অগ্রগতি হলকিনা জানতে চাইছে।প্রতিবারই আমি তাদের আশ্বস্ত করে জানাচ্ছি
আলোচনাচলছে, ভয়ের কোনও কারণ নেই।ভাই-ভাবী দুইজনই ভাল আছেন।আমার সাথে সবপক্ষেরই যোগাযোগ হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সংকট কেটে যাবে ইন শা আল্লাহ্। তোমরাও দোয়া করও তারা যেন সহি-সালামতে দেশ থেকে বরিয়ে আসতে পারেন।
পরদিনই খালেদাজানালেন চীফ জাস্টিসের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে প্রেসিডেন্টএরশাদকে। জেনারেল এরশাদকে খবরটা জানানোর পর তিনি সম্মত হলেন। জাতিরউদ্দেশে তার ভাষণ রেকর্ড করানো হলো। নাতিদীর্ঘ ভাষণে তিনি তার স্বেচ্ছায়পদত্যাগ, দুইনেত্রীর বিরুদ্ধে হুলিয়া প্রত্যাহার, সাধারণ নির্বাচনেরস্বার্থে চীফ জাস্টিসের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন বলে জাতিকে অবগতকরলেন। তার এই ভাষণ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই সারাদেশে জনগণআনন্দেফেটেপড়লো। খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকলো পুরো বাংলাদেশ। এভাবেই পর্দার অন্তরালের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় একআত্মঘাতী সংঘর্ষের হাত থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পেলো! প্রতিবেশী দেশেরচাণক্যদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেলো আল্লাহর অসীম করুণায়। আমি আর রব্বানিদু’জনই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মুখ্য খেলোয়াড় জেনারেলও পর্দার আড়ালেই রয়ে গেলো!
আমিকিন্তু এরপরও শঙ্কামুক্ত হতে পারছিলাম না। শৃগালের মত ধূর্ত জেনারেল এরশাদশুধুমাত্র নিজেকে বাঁচানোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেশান্তরী হবার সিদ্ধান্তনিলেও তার বিদেশী প্রভু ভারত কি তাকে এত সহজে ছাড় দিতে রাজি হবে? এইপ্রশ্নটাই ছিল আমার শঙ্কার প্রধান কারণ। যতদিন জেনারেল এরশাদ দেশ ত্যগ নাকরবেন ততদিন এই শঙ্কা থেকেই যাবে। যাই হউক, ভাষণটি জাতীয় প্রচার মাধ্যমেপ্রচারিত হবার পর এরশাদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য তাকে ফোন করলামরব্বানির উপস্থিতিতেই।
: আসসালামস্যার, কেমন আছেন? দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনি যে ত্যাগ স্বেচ্ছায় স্বীকারকরলেন সেটা প্রশংসনীয়। আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি অন্তর থেকেই। এবার বলুন, কবে আপনি দেশ ছাড়ছেন?আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করা হবে।
: আমি দেশ ছাড়বো না।নির্বাচনে জিতে আমিই আবার সরকার গঠন কোরব। আগামী নির্বাচনে আমি প্রায়১৫০ টি আসনে জিতবো।
স্তম্ভিতহয়ে গেলাম! কি প্রলাপ বকছেন জেনারেল এরশাদ! আমার শঙ্কাই সঠিক বলে প্রমাণিতহল! খেলার সমাপ্তি হয়নি। কি সেই খেলা? আগামী নির্বাচনে কোনও কারচুপিরঅবকাশ থাকবে না। কারণ, চীফ জাস্টিস সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়েই বিশ্বপরিসরেএকটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করাবেন। সেই ক্ষেত্রে জেনারেল এরশাদ এবং তারদল কি করে ১৫০ টি সিটে জিতে সরকার গঠন করবেন সেটা কনও পাগলের পক্ষেওবিশ্বাস করা কঠিন! এইবাস্তবতার নিরিখে খেলাটা হবে, জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রেখালেদার তুলনায় যেহেতু হাসিনা পিছিয়ে রয়েছে তাই এরশাদের মাধ্যমে তার ভোটেভাঙ্গন ধরিয়ে পরে আওয়ামীলীগ এরশাদকে প্রয়োজনে সাথে নিয়ে সরকার গঠন করবে।তাই তাকে দেশ ছাড়তে দিচ্ছে না প্রভু ভারত। ১৯৮৬সালে এরশাদ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনেরপ্রহসনের মাধ্যমে তার অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকে বৈধ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ।এর পেছনে কলকাঠি োভারত। জেনারেল এরশাদ এবংআওয়ামী লীগের গলায় বাঁধা সুতো ভারতীয় চাণক্যদের হাতে। জামায়াতের রাজনীতিজন্মের পর থেকেই বিভ্রান্তিকর।
পাকিস্তান আন্দোলন কালে জামায়াতের তাত্ত্বিক গুরু মাওলানা মওদুদী দ্বিজাতি তত্ত্বের সমর্থন কিংবা বিরোধিতা না করে তার জন্মভূমি ভারতের দাক্ষিণাত্যেই থেকে যান। পরে তিরিশের দশকে হিজরত করে ভারত ছেড়েপশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাওলানা! পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই কাদিয়ানীদের অমুসলমান বলে ফতোয়া জারি করায় এক রক্তক্ষয়ীদাঙ্গা-ফ্যাসাদের সূত্রপাত ঘটে পাকিস্তানে। অনেক নিরীহ লোকেরপ্রাণহানি ঘটে সেই দাঙ্গায়। এই দাঙ্গায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মাওলানা মওদুদীকে বন্দী করা হয় এবং বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তবে কাকতলীয় ভাবে তিনি সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান। এরপর থেকে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট রাজনীতিকরে চলেছে।এর ভূরিভূরি প্রমাণ রয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রবাহে।
সূচীপত্র [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]
১ম পর্ব “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা
২য় পর্ব শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত
৪র্থ পর্ব – কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব
৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!
৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে
৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”
১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী
১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে
১৩তম পর্ব ১ম কিস্তি – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৪তম পর্ব – বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক
১৬তম পর্ব – শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ
১৭তম পর্ব – ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে
১৮তম পর্ব – বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস
১৯তম পর্ব – জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক
২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে
২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ
২৩তম পর্ব – জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে
২৪তম পর্ব – রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর
২৫তম পর্ব – আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক
২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর
২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া
২৯তম পর্ব – চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে
৩০তম পর্ব – জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল
৩১তম পর্ব – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ
৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন
৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি
৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি
৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি
৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে
৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে
৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা
৪০তম পর্ব – ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি
৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে
৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব
৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি
৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়
৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন
৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া
৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া – শেষ কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – শেষ কিস্তি