জিয়া থেকে খালেদা তারপর – বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম

৩৪তম পর্ব
১ম কিস্তি

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ

এরশাদবিরোধী আন্দোলন কালে আমি নাইরোবিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আগত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক নিয়োজিত Peace Keeping or Peace Making Mission এ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর Contingent গুলোর দেখাশোনার দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে অর্পণ করা হয়েছিলো আমার উপর। এতেকরে একদিকে সেনা সদর, সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত পদস্থ অফিসারবৃন্দ এবং অন্যদিকেআফ্রিকায় আগত সেনা সদস্যদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা আমার জন্য সহজ হয়ে যায়। সেই সুবাদে পূর্বপরিচিত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন সুহৃদদের কাছ থেকে দেশের চলমান রাজনীতি এবং অবস্থা সম্পর্কে সামরিক বাহিনীতে প্রকাশ্য ওগোপন প্রতিক্রিয়ার বিষয় সব খবরাখবরই আমি জানতে পারছিলাম। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যসামগ্রীর সার সংকলন থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে সোভিয়েত সমর্থিত ভারত সরকার RAW-এর মাধ্যমে যাতে করে অতিসত্বর তাদের নীলনকশা বাস্তবায়িত করা যায়। গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে। পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা হারানোর আগেই কিছু একটা করতে হবে।
ভেবে পাচ্ছিলাম না নির্বাসিত অবস্থায় আমাদের পক্ষে এই ক্রান্তিকালে গভীরষড়যন্ত্র এবং সংকট মোকাবেলা করা কি করে সম্ভব! সহযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা হল।সবাই অভিমত জানালো, এই বিষয়ে যদি কিছু করার থাকে তবে আমাকেই অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, বাস্তবতা এবং দৈনন্দিন কি ঘটছে সেটা জানার সুযোগ শুধু আমারই আছে। বিষয়টি নিয়ে আমার অনেকদিনের পুরনো পরীক্ষিত ভাতৃপ্রতিম বন্ধু গোলাম রব্বানি খানের সাথে আলোচনা কোরব ঠিক করলাম।

রব্বানি পেশাগতভাবে একজন ব্যাংকার। পড়াশোনাশেষে পাকিস্তান আমলেই হাবিব ব্যাঙ্কে অফিসার হিসাবে যোগদান করার মাধ্যমে তার ব্যাংকিং জীবনের সূত্রপাত। এরপর মেধা আর পরিশ্রমের ভিত্তিতেই সময়েরসাথে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বহুল পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্কে শীর্ষস্থানীয় এক্সিকিউটিভ হিসেবে দীর্ঘসময় কাজ করে। অবশেষে নাইরোবিতে নিজেই Export Bank Of Africa নামে একটি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করে। তার ভিশন, কর্মদক্ষতা, পরিপক্ব অভিজ্ঞতা এবং সততার ফলে অতি অল্প সময়েই বিপুল সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান হিসাবে অতিদ্রুত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শাখাখোলার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয় Export Bank Of Africa.
একজনবনেদী বংশের উত্তরাধিকারী, সাচ্চা ইমানদার, সৎ এবং মানবতাবাদী গরীবেরবন্ধু হিসাবে রব্বানির পরিচিতির স্বাক্ষর পাওয়া যাবে প্রতিটি দেশেই যেখানে সেকাজ করেছে। অত্যন্ত বিনয়ীঅমায়িক, নিঃস্বার্থ জনদরদী মানুষটি আমার দৃষ্টি কেড়ে নেয় এবং প্রথম দর্শনেই তাকে ভাল লেগেছিলো। সময়ের সাথে আমাদের মধ্যে সর্বকালীন নির্ভরশীল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
পেশাগতভাবে ব্যাঙ্কার হলেও জীবনদর্শন, বিশ্বরাজনীতি, ধর্ম এবং চলমান বিশ্বেরআর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, পরাশক্তিগুলোর আগ্রাসী মনোভাব ও তৎপরতা, মুসলিম জাহানের দুঃখজনক অবস্থা এবং রাজা-বাদশাহ, শেখ-আমীরদের অধঃপতন সম্পর্কে রব্বানির জ্ঞান ও বিশ্লেষণিক ক্ষমতা আমাকে বিস্মিত ও বিমোহিত করেছিলো। সারা দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শোষণ এবং তাদের তল্পিবাহক জাতীয় কায়েমী স্বার্থবাদীগোষ্ঠীর যাঁতাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নিষ্পেষণ, জুলুম এবং বঞ্চনার বিষয়ে একই ভাবে সচেতন রব্বানি। তাই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাঁধন অটুট হয়ে ওঠে দীর্ঘ সময়ের চড়াই-উৎরাই এর কষ্টিপাথরে।
উপমহাদেশে বহুলভাবে পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় কালিয়া শরিফের সূফী পরিবারের সাথে রক্তের সম্পর্কে সম্পৃক্ত রব্বানি খান এক অতি দুর্লভব্যক্তিত্ব। বিশেষকরে আজকের জামানায় রব্বানি খানের মতো এক অমূল্য রতন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলোর ক্ষমতা বলয়ে তার পরিচিতির পরিধিও ব্যাপক। কিন্তু পরিচিতি এবং বন্ধুত্ব বেচে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করাকে মনে-প্রাণে রব্বানি ঘৃণা কোরে এসেছে বরাবর। এটাও একটা অসাধারণ গুণ।
রব্বানির বাবা জাতে পাঠান ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের একজন অফিসার ছিলেন। তিনি কখনোই কনোও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। পাকিস্তানের সৃষ্টির পর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন দেশে কৃতিত্বের সাথে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা ছিলাম একই ভাবে চিন্তিত। আঞ্চলিক রাজনীতি, অসম আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, ভারতীয় চাণক্যদের কূটকৌশল এবং দুরভিসন্ধি সম্পর্কে আমরা ছিলাম বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের শাসকগোষ্ঠীর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং নির্মম আগ্রাসী আচরণের কারণে এই অঞ্চলের মুসলমানদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটাও আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছিলো।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, নিজ নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে এই উপমহাদেশের নিপীড়িত এবং বঞ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুক্তি এবং ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একত্রে আমরা অনেক কাজ করেছি নিজেদের সাধ্যানুযায়ী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শক্তিধর দেশগুলোর আগ্রাসন, সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রাম সম্পর্কেও ভাবতাম আমরা।
একদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট এবং ষড়যন্ত্রের সব কিছু খুলে বললাম রব্বানিকে।সব শুনে রব্বানি বললো
গভীর ক্রান্তিকালে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা চলবে না ভাই। যেভাবেই হউকএইষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাবার একটা পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা অবশ্যই কোরতে হবে। ফল দেবার মালিক আল্লাহ।
তার উৎসাহে বেশ অনুপ্রাণিত হয়ে আমি বললাম
খালেদা জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই সর্বনাশা সংকট থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। সে চেষ্টা আমি কোরতে পারি।
অবশ্যই সেটাই তোমাকে কোরতে হবে কালবিলম্ব না করে। আমি তোমার পাশে থেকে এই প্রচেষ্টায় সার্বিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা কোরতে প্রস্তুত।

রব্বানির সুচিন্তিত অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম খালেদার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা কোরব।

প্রবাসী জীবনে বিভিন্ন দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী, ধনী, সমাজপতি, শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমতা বলয়ের অদৃশ্য অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য হয়েছে নিজ উদ্যোগে এবং বিভিন্ন সূত্রে। তাদের অনেকের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কও গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক পর্যায়ে। দেশেও এ ধরনের পরিচিতি, বন্ধুত্ব এবংঘনিষ্ঠতার পরিধি ব্যাপক।এইসমস্ত সম্পর্কের ভিত্তিই হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা। রব্বানিকে বললাম
আমি বাসায় ফিরেই খালেদার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
সে আমার কথা শুনে বললো
চলো আমিও যাবো তোমার সাথে। দেখা যাক যোগাযোগ সম্ভব হয় কিনা।
ঠিকআছে, চলো দেখা যাক কি হয়।
ইতিমধ্যেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি নিজের পরিচয়টা গোপন রাখার জন্য ছদ্মনামেই খালেদার সাথে যোগাযোগ কোরব। ঠিক হল ‘মোহাম্মদ’ নামেই খালেদার সাথে যোগাযোগ করা হবে বিভিন্ন নম্বর থেকে।তিনিও জানিয়ে দেবেন কখন তাকে কন নম্বরে পাওয়া যাবে আলাপ করার জন্য।
বাসায় ফিরে সাচোকে প্রথমে ফোন করলাম জানতে কার কাছ থেকে খালেদার অবস্থান সম্পর্কে খবরাখবর পাওয়া সম্ভব। সাচো জানিয়ে দিল একমাত্র শফিকুল গণি স্বপনআর জনাব মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া তার গতিবিধি আর অবস্থান সম্পর্কে দলের কাউকেই কিছু জানানো হয় না।
যাদু মিয়ার ছেলে শফিকুল গণি স্বপন বয়সে ছোট হলেও বিশ্বস্ত বন্ধু। তাই কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। ফোনে যোগাযোগ করলাম স্বপনের সাথে। তাকে সংক্ষেপে বুঝিয়ে বললাম আমি জরুরী ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে চাই বিশেষ গোপনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। যদি তিনি রাজি থাকেন সেই ক্ষেত্রে তাকে আমার শর্তগুলো মেনেই আলাপ করতে হবে গোপনীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে। স্বপনকে শর্তগুলো জানিয়ে দিলাম। আমার কথা বুঝে স্বপন বললো
আপনিকিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, আমি আপনাকে ম্যাডামের অভিমত জানাচ্ছি।
বেশ, এইনম্বরেই আমি অপেক্ষায় রইলাম।
বলে রিসিভার রেখে দিয়ে অপেক্ষা করতে করতে রব্বানিকে সব বুঝিয়ে বললাম।বাসা থেকে বেরুবার সময় থেকেই ফকিরের হাতে তসবিহ। আমরা একেঅপরকে ‘ফকির’ বলেই সম্বোধন কোরতাম।
সব শুনে রব্বানি বললো, আল্লাহ্‌ যা করবেন সেটা ভালোর জন্যই করবেন ইন শা আল্লাহ্‌।
সেইদিন থেকে ‘৯১সালের নির্বাচন পর্যন্ত রব্বানি আমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছে তার দেয়া কথামতো। আধা ঘণ্টা পর ফোন বেজে উঠলো। স্বপন অপর প্রান্তে। ও আমাকে জানালো ম্যাডাম আমার সাথে যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক আমার সব শর্ত মেনে নিয়েই। বলেই একটা টেলিফোন নম্বর দিয়ে বললো
আপনি এখনি এই নম্বরে ‘মোহাম্মদ’ নামে ফোন করন, তিনি অপেক্ষায় আছেন।
স্বপনের কাছ থেকে পাওয়া টেলিফোন নম্বর দিয়েই শুরু হল যোগাযোগ।
তখনও মুঠোফোনের প্রচোলন হয়নি। প্রথমবার ডায়ালেই লাইন পাওয়া গেলো।
হ্যালো, কে কোথা থেকে বলছেন? অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল একটি পুরুষ কণ্ঠ।
আমি বিদেশ থেকে মোহাম্মদ বলছি।
ও আচ্ছা ধরুন, দিচ্ছি।
আসসালামু আলাইকুম, আমি খালেদা বলছি।
ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাবী কেমন আছেন?
সেটাতো বুঝতেই পারছেন ভাই।
ভাবী, একটি বিষয় প্রথমেই পরিষ্কার করে নিতে চাই। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মন যুগিয়ে কথা বলার অভ্যেস নেই আমার। খোলামেলা সরাসরি কথা বলতেই অভ্যস্ত আমি। সেটা মেনে নিয়ে কথা বলতে আপনি ইচ্ছুক হবেন কি হবেন না, সেটা আমার জেনে নেয়া উচিৎ।
স্বচ্ছন্দে আপনি খোলাখুলি ভাবেই আমার সাথে আলাপ করতে পারেন আপনার মতো করেই।
ধন্যবাদ।
আচ্ছা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন কন বিবেচনায়? আপনাদের আন্দোলনের শরিক দল আওয়ামীলীগ বোধকরি এই বিষয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আগ্রহী তাই নয় কি?
ভাবী, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজঅব্দি বিভিন্ন ভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামিক মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের পরিকল্পিতভাবে চতুরতার সাথে সমূলে উৎপাটন করা হচ্ছে বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাত এবং ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিয়ে। আপনার এই কর্মসূচীকে অজুহাত বানিয়ে এখন যারা বেঁচে আছে তাদেরও নির্মূল করা হবে সুপরিকল্পিত ভাবে। দেশবাসীর মোকাবেলায় দেশের সামরিক বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে এক আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের সৃষ্টির পরিকল্পনা চলছে।
খালেদা জিয়া কিছুটা বিব্রত হয়ে জবাব দিলেন
শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমেই ঐ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এর পরিণতিটা কি হবে সেটা সম্পর্কে আপনার আর অন্যান্য শরিকরা কি ভাবছেন সেটা আমি কি জানতে পারি?
আমাদের সবার ধারণা সারাদেশ থেকে জনতার স্রোত ঢাকায় এনে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করলে চাপের মুখে এরশাদকে রাষ্ট্রপতির পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা সম্ভব হবে এবংএকই সাথে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষণটা একটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।
কেনও এই কথা বললেন? আপনার বিশ্লেষণটা কি ভিন্ন?
হ্যাঁ।
তাহলে বলুন, আমি শুনতে ইচ্ছুক।
বিভিন্নসূত্রে পাওয়া খবরা-খবরের ভিত্তিতেই আমার বিশ্লেষণ।
আপনাদের ইচ্ছা পূরণটা এতো সহজ-সরল হবে না। শুধুমাত্র মিটিং, মিছিল আর গণ-সমাবেশের মাধ্যমে কোনও স্বৈরাশাসকের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছে এমন উদাহরণ মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিরল।
বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাংবিধানিক ভাবে একজন শক্তিধর ব্যাক্তি। সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্যআইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের উপর থেকে নিচ পর্যন্তস্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ে তার পছন্দসই লোকজনদের বসিয়ে তাদের তিনি তার সেবাদাস করে নিয়েছেন। জেনারেল জিয়ার অকাল মৃত্যুর ঘটনা এবং এর পরবর্তী সবকিছুর পেছনে ভারতের সেবাদাস জেনারেল এরশাদ নাটের গুরু হিসাবে আওয়ামী-বাকশালীদের সাথে নিয়ে চতুর খেলা খেলে নিজেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে সমর্থ একজন জেনারেল। তিনি লোক সমাগমের চাপে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন এমনটি ভাবার কোনও অবকাশ নেই। তার হাতে এখনও তুরুপের তাসটি রয়ে গেছে। যথাসময়ে সেটা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই। এ সম্পর্কে আপনারা কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন?
না, একটু খোলাসা করে বলুন।
আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করার কর্মসূচির সুযোগেই এরশাদ তার তুরুপের তাসটি খেলবেন।
কি ধরনের খেলা হবে সেটা একটু বুঝিয়ে বলুন ভাই।
এরশাদকে‘ভোলা বাদশাহ’ভাবছেন কেনো? লোকটি শৃগালের মতোই ধূর্ত এবং গিরগিটির মতই বর্ণচোরা। তিনি আপনাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত সব খবরা-খবরই রাখছেন।বঙ্গভবনে ইতিমধ্যেই একটি ‘Ops Room’ বানানো হয়েছে। স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উপরই কিন্তু নির্ভরশীল থাকছেন না জেনারেল এরশাদ। প্রাপ্ত সব খবরাখবরগুলোকে যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছেন RAW, KGB এবং আওয়ামী-বাকশালীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। এভাবেই নির্ধারিত হচ্ছে তার প্রতিটি চাল। আপনাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় লোকসমাগমের উদ্যোগকে অংকুরেই বিনষ্ট করে দেয়া হবে সারা দেশে সামরিক শাসন জারি করার মাধ্যমে।একই সাথে দেশজুড়ে শুরু করা হবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং টার্গেট কিলিং। ফলে গৃহযুদ্ধ হবে একটা বাস্তব পরিণতি।
আপনার সহযোগী হাসিনাএবং তার দল কিন্তু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের টার্গেট হবে না,টার্গেট করা হবে আপনাকে এবং জনগণের মাঝ থেকে বাছাই করা পরীক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রকৃত ভারত বিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতা-কর্মীদের।এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনও কারণে অবস্থা রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন বিরাজমান ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তির আওতায় এরশাদ ডেকে পাঠাবেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে। ভারতীয় হস্তক্ষেপে অতি অল্প সময়ে স্তব্ধ করে দেয়া হবে আপনাদের গণ-আন্দোলন।
সাধারণ শান্তিপ্রিয় জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভারতীয় হস্তক্ষেপকে স্বাগতও জানাতে পারে হাসিনার প্রচ্ছন্ন তৎপরতায়।
এরপর জেনারেল এরশাদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে ঠিক যেমনভাবে ফুরিয়ে গিয়েছিলো জেনারেল জিয়ার প্রয়োজনীয়তা হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন এবং রাজনীতিতে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসিত করার পর। ক্ষমতায় এরশাদের পরিবর্তে বসানো হবে হাসিনার নেতৃত্বে নব্য বাকশালী সরকার ভারতীয় নিরাপত্তায়।

তখন আপনি আপোষহীন দেশনেত্রী কি করবেন? আর একটি কালুরঘাট খুঁজে নিয়ে সেখান থেকে ঘোষণা দিবেন,‘আমি খালেদা জিয়া বলছি……’।
কথাটা বলেই হেসে উঠলাম। খালেদা একদম নিঃশচুপ ! তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলাম
ভাবী লাইনে আছেন তো?
আমি শুনছি, আপনি বলতে থাকেন।
আপনাকে জ্ঞান দেবার জন্য নয়, মনে হয় ’৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর-এর সাথে অনেকটা মিল রয়েছে বর্তমান অবস্থার। জানিনা, আপনি এর কতটুকু জানেন তাই বলছি।

১৬ইডিসেম্বর, জেনারেল ওসমানীর পরিবর্তে চুক্তির বরখেলাপ করে ভারতীয় বাহিনীর জেনারেল অরোরার কাছে রেসকোর্সে পাকবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করলেন।তার সাথেই হারিয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথা।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ হুকুম জারি কোরে প্রবাসী সরকার তাদের রাখে বর্ডার সংলগ্ন বনে-বাদারে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সরকার হুকুম দিলেন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা থেকে হাতিয়ার জমা নিয়ে তাদের জানিয়ে দেয়া হউক ‘দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।’ তাই তাদের কাজও শেষ। যুদ্ধ বিজয়ের পুরস্কার হিসাবে প্রত্যেকের হাতে ৫০ ভারতীয় রুপি ধরিয়ে দিয়ে পিঠ চাপড়ে তাদের সাবাশি দিয়ে বিদায় করা হউক।

অন্যদিকে তখন সারাদেশের সর্বত্র ছেয়ে যায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যে। ভারতীয় সেনাদের সাথে দেখা গেলো বিএলএফ এর সদস্য, অজস্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কাদেরিয়া বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক লীগেরমাস্তানদের মাথায় বিভিন্ন রং-বেরঙের পট্টি বাধা অস্ত্রধারীদের। এরা সবাই ছিল মুক্তিবাহিনীর বিপরীতে যুদ্ধকালেই RAW সৃষ্ট। এদেরকে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধের শেষলগ্নে আগেভাগেই অস্ত্রসহ দেশের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো বিজয়লগ্নে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ভারতীয় বাহিনীর দোসর হিসাবে তাদের অবাধ লুটতরাজে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। তুলনামূলকভাবে এদের বলা চলে ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক গঠিত ‘রাজাকার’, ‘আল বদর’ ও‘আলশামস’।
সারা দেশে ভারতীয় লুটেরা বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্বই হাইজ্যাক করে নিয়ে বিজয়ী বীরের বেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশের প্রতিপ্রান্তে। দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নারী-পুরুষ তাদের ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছিলো।
অবশ্য অতি অল্প সময়ে তাদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়ে পড়ে দেশবাসীর কাছে। ধরা পড়ে যায় ভারতীয় চাণক্য এবং তাদের তাঁবেদার প্রতিষ্ঠিত সরকারের শুভঙ্করের ফাঁকি! তাই দেশবাসী তাদের নামকরণ করেছিল ‘১৬ ডিভিশন।’
বিজয়ের পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যে ফুলের পাপড়ি না জুটলেও তারা ন্যায় আর সত্যের জন্য প্রতিবাদী হওয়ায় রাষ্ট্রীয় রোষানল, সন্ত্রাস এবং দলীয়বাহিনী সমূহের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি শেখ মুজিবের আওয়ামী-বাকশালি স্বৈরশাসনের আমলে।
ভারতের পালিত কন্যা হাসিনা ও তার দলকে ক্ষমতায় বসানো হবে গণতন্ত্রের লেবাসেই। দেশ পরিণত হবেএকটি মেরুদণ্ডহীন করদ রাজ্যে আর জাতি হারাবে নিজ স্বকীয়তা, পরিণত হবে গোলামে অনির্দিষ্টকালের জন্য।স্বাধীনতার অর্থ হবে একটি জাতীয় পতাকা আরএকটি জাতীয় সঙ্গীত,যার রচয়িতাও একজন ভারতীয় কবি যিনি লিখেছেন ভারতের জাতীয়সঙ্গীতও। কাকতালীয় ঘটনা বটে, তবে বিশ্বে এ ধরনের আরেকটি উপমা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ইতিহাস বলে, তৃতীয় বিশ্বে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কোনও চমক সৃষ্টি করে সেটাকে যথার্থ বলে প্রতিষ্ঠিত করা যেকোনও শাসকের পক্ষে খুবই সহজ ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে, কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী করার কাজটি অসম্ভব।
তৃতীয়বিশ্বের যারাই ক্ষমতায় যান তাদের বেশিরভাগই এই সত্যটাকে ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের কারণে ঠিক অনুধাবন করতে পারেন না। যদি কখনো বুঝতে পারেন তখন তাদের শোধরানোর সময়-সুযোগথাকে না।
উদাহরণ স্বরূপ, আপনার প্রয়াত স্বামী জেনারেল জিয়াকেই ধরে নিন।
তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে চীন সফরকালে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টার উপর আমার সাথে খোলাখুলিভাবে আলোচনাকালে অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে পুনরায় আমাদের সাথে একত্রিত হয়ে রাজনীতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন আমার প্রয়াত পিতার উপস্থিতিতে। তার সেই আহবান সম্পর্কে বিতর্কে না গিয়ে আন্তরিক ভাবেই শুধু তাকে বলেছিলাম, সেটা সার্বিক বিবেচনায় বাস্তব সম্মত নয়। কারণ,পানি তখন অনেক গড়িয়ে গিয়েছিলো। সেই সব আলোচনা এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে সবকিছুই আপনার জানা আশা করি।
আমি মনে করি, জাতীয় পরিসরে ক্ষমতার রাজনীতিতে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়রা ইতিহাস থেকে কেউই তেমন কোনও শিক্ষা নেন না। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
এই প্রক্রিয়াতে আপনার কিংবা জেনারেল এরশাদের ব্যক্তিগতভাবে কি হবে সেটা বলা মুশকিল, তবে পরিণতিটা সুখকর হবে না সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না। ব্যক্তিগত ভাবে কার কি হল সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, অন্তত আমাদের কাছে। তবে ক্ষমতার এই আত্মঘাতী লড়াইয়ের পরিণামে দেশ ও জাতির যে চরম অপূরণীয় ক্ষতি হবে তার দায়ভার আপনাকেও অন্যদের সাথে বহন করতে হবে
ইতিহাসের বিধান অতি নিষ্ঠুর! ইতিহাসের কষ্টিপাথরে প্রতিটি কার্যক্রমই ঘষে দেখা হয় সত্য উদ্ঘাটনের জন্য।এ থেকে নিষ্কৃতি পাবার কোনও উপায় নেই। তাই বলা হয় ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।
বলা হয়ে থাকে, ৪ঠা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের প্রতিক্রিয়াশীল ক্যুদেতার পর আমরা সবাই নাকি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম! সেটাই বিভিন্ন তরফ থেকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে যদিও খালেদ ভাবী আর হুদা ভাবী আমাদের সাথেই ব্যাংকক পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
বিরোধী পক্ষ এবং জোটের তরফ থেকে এই বিষয়ে নীরবতা সেই মিথ্যাচারের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন বললে সেটা কি ভুল হবে? দয়া করে মনে করবেন না আমি আপনাকে বিব্রত করার চেষ্টা করছি।
না,আমি তেমন কিছুই মনে করছি না, আমি আপনার বক্তব্য গুরুত্বের সাথেই শুনছি। কিন্তু ভাই, স্বৈরশাসনের যাঁতাকলের নিষ্পেষণের অবসান করার অন্য কোনও বিকল্প পথ আছে কি? আছে কি কোনও পথ যাতে করে স্বৈরশাসককে সরানো এবং দেশ ও জাতিকেও দুরভিসন্ধি মূলক চক্রান্তের হাত থেকে বাঁচানো যায়?
আপনি যদি ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করেন, তাহলে জেনারেলএরশাদ যাতে কোনোক্রমেই দেশে সামরিক শাসন জারি কোরতে না পারেন এবং চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই চেষ্টা আমি কোরতে পারি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত?
সব সমঝোতা হয় দেয়া-নেয়ার ভিত্তিতে। তাই যদি এরশাদ পদত্যাগ কোরে সপরিবারে প্রবাসে চলে যেতে চান সেটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। তিনি দেশ ছাড়তে নাও চাইতে পারেন।সেই ক্ষেত্রে পদত্যাগের পর অতি সহজেই তাকে জেলে পাঠানো সম্ভব হবে আপনাদের পক্ষে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইবো তিনি দেশান্তরী হন, কিন্তু আমি জানি তার সিদ্ধান্তটি হবে ভারতের নির্দেশ মতো যাতে করে ভবিষ্যতে তাকে কাজে লাগানো যায়।
ঠিক আছে, আমি আপনার শর্ত মেনে নিয়ে কথা দিলাম, সে যদি পদত্যাগের পর বিদেশে চলে যেতে চায় তবে তাকে সপরিবারে নিরাপদে বাইরে পাঠিয়ে দেবার রাস্তা করে দেয়ার সব দায়িত্বহবে আমার।
ঠিক আছে, তাহলে আমিও আমার যা করণীয় সেটা শুরু করছি সব ঝুঁকি নিয়েই। তবে কথা দিতে হবেএই সমস্তকিছুই সীমাবদ্ধ থাকবে শুধুমাত্র আপনার আর আমার মধ্যে। অন্য কোনও তৃতীয় পক্ষ কিছুই জানতে পারবে না।এমনকি আপনার অতি নিকট আত্মীয়-স্বজন কিংবা বিশ্বাসভাজন পরামর্শদাতারাও না।
কথা দিলাম।
ঠিক আছে, তাহলে আজকের মতো রাখি। প্রয়োজন মতো আমি আবার আপনার সাথে যোগাযোগ কোরব।
আমি আপনাকে বিশ্বাস করেই ঘেরাও কর্মসূচি সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দিচ্ছি। আপনার কাছ থেকে আপডেটস জানার জন্য আমি অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষায় থাকবো। দিনরাতের যেকোনো সময় আপনি সুবিধামতো আমার সাথে যোগাযোগ কোরতে পারেন। আমার অবস্থানের যদি কোনও পরিবর্তন ঘটে তাহলে সেটা আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
ধন্যবাদ।বলে ফোন ছেড়ে দিলাম।
পাশে বসা রব্বানিকে আলোচনার সার সংক্ষেপ জানিয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম দু’জনে মিলে। এরশাদের মার্শাল ল’ জারির খবরটা পেয়েছি।এখন জানতে হবে তার কৌশলটা কি হবে সেই বিষয়ে।

সূচীপত্র  [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]

১ম পর্ব   “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা

২য় পর্ব  শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত

৩য় পর্ব দ্বিজাতি তত্ত্ব

৪র্থ পর্ব –  কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব

৫ম পর্ব – সত্য কহন

৬ষ্ঠ পর্ব – ব্যাংককে আমরা

৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!

৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে

৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”

১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী

১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে

১২তম পর্ব  – নিজেদের আলোচনা

১৩তম পর্ব  ১ম কিস্তি   – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে

১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে

১৪তম পর্ব –  বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক

১৫তম পর্ব – এভিএম তোয়াব আসছেন

১৬তম পর্ব  –  শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ

১৭তম পর্ব  –  ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে

১৭তম পর্ব – ২য় কিস্তি

১৭তম পর্ব –  ৩য় কিস্তি

১৭তম পর্ব –  শেষ কিস্তি

১৮তম পর্ব –  বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস

১৯তম পর্ব –  জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক

২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে

২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা

২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ

২৩তম পর্ব –  জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে

২৪তম পর্ব –  রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর

২৫তম পর্ব  –  আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক

২৬তম পর্ব – দ্বিতীয় বৈঠক

২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর

২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া

২৯তম পর্ব  –  চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে

৩০তম পর্ব  –  জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল

৩১তম পর্ব  – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ

৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন

৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি

৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ

৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ

৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি

৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি

৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান  – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে

৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে

৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা 

৩৯তম পর্ব – ঢাকায় পৌঁছালাম

৪০তম পর্ব –  ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ

৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি

৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি

৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে

৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব

৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে

৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি

৪৪তম পর্ব –  হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি

৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়

৪৬তম পর্ব – গোপনে আমেরিকা সফর

৪৭তম পর্ব – আবার ঢাকায়

৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন

৪৯তম পর্ব – দেশে ফিরলাম

৫০তম পর্ব – নিরুদ্দেশে যাত্রা

৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া

৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া  –  শেষ কিস্তি

৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি

৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – শেষ কিস্তি

৫৪ তম পর্ব – শেষকথা

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *