২১তম পর্ব
ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
বেনগাজি থেকে ঢাকায় এসে কিছুদিন কাটিয়ে একদিন গণচীনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম। হংকং হয়ে বেইজিং।
কস্মিনকালেও কল্পনা করতে পারিনি মাও সে তুং-এর দেশে যাবার সুযোগ হবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অভূতপূর্ব এক শিহরণ অনুভব করছি নিজের ভিতরে।
ছোটোকালে যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই শৈশবে দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটলের নাম শুনেছি আম্মার মুখেই। আম্মাই শুনাতেন রামায়ণ, মহাভারত, শকুন্তলার উপাখ্যান। শোনাতেন জুলিয়াস সিজার, হানিবল, আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস খান, আটিলা দি হুন, হেলেন অফ ট্রয়ের ঐতিহাসিক কাহিনী, রাধা- কৃষ্ণ, সোহরাব-রুস্তম, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ-এর মতো মর্মস্পর্শী লোকগাথা। চে গুয়েভারা, লেনিন, মার্ক্স, এঙ্গেলস, মাও সে তুং, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হো চি মিন, নগুয়েন গিয়াপ, আইদিত, সুভাষ বোসের মতো ব্যতিক্রম ধর্মী ব্যক্তিবর্গকে আদর্শ নায়ক হিসাবে শ্রদ্ধার সাথে মনে গেঁথে রেখেছি স্কুল জীবন থেকেই।
সময়ের সাথে সাথে যখন বড় হলাম তখন বই পড়া হয়ে উঠলো আমার নেশা, সময় কাটানোর প্রিয় মাধ্যম। এর কৃতিত্বের সবটুকুর ভাগীদার আমার বিদুষী আম্মা, যিনি আমাদের ছেড়ে অসময়ে চলে যান এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। তখন আমি মাত্র কলেজের ছাত্র! তিনি ছিলেন উচ্চ শিক্ষিতা, আত্মমর্যাদাশীল এক প্রতিষ্ঠিত মহিলা। বই পড়ার নেশা ছিল আম্মার। তাই বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি ছিল বহুল বিস্তৃত। রাজনীতি এবং সমাজ সচেতনতা ছিল তার অতি প্রখর। রক্ষণশীল পরিবারের পড়ুয়া মেয়ে হয়ে একজন তরুণী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। তার কলম ছিল ক্ষুরধার। বিধায় তিনি একজন কলামিস্ট হিসেবে নিয়মিত লিখতেন বিভিন্ন বিষয়ে সেই সময়ের বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক এবং মাসিক ম্যাগাজিনগুলোতে। আজকের আমি তাঁরই প্রভাবে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এক সত্তা।
প্রাপ্তবয়স্ক এক তরুণ হিসেবে আমি হযরত মুসা (আ), হযরত ঈসা (আ), শেষনবী হযরত মহাম্মদ( সা), খোলাফায়ে রাশেদিন, , সাহসী বীর হামযা (রা), খালেদ বিন ওয়ালিদ, সালাহউদ্দিন আইউবী, বখতিয়ার খিলজি, ইবনে খালদুন, ইমাম গাজ্জালি র., সৈয়দ কুতুব, হাসানুল বান্না-এর জীবনী পড়ে বিমোহিত হয়েছি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত কচি মনকে নাড়া দিয়েছে। বঙ্কিম চন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বনফুল, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবোধ ঘোষ, নীহার রঞ্জন গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমল মিত্র, জরাসন্ধ, শক্তিপদ রাজগুরু, মহাশ্বেতা দেবী, মনোজ বসু, আশাপূর্ণা দেবী, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার-এর লেখা আমার উঠতি যৌবনের অন্তরে রোমাঞ্চ ও আবেগ সৃষ্টি করেছে। শেক্সপিয়ার, ম্যাক্সিম গর্কি, টলস্টয়, বায়রন, কিটস, শেলি, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, এডাম স্মিথ, মাইলস, কারলাইল এর লেখা মনকে বিচলিত করে তুলেছে। তাদের মানবপ্রেম, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, সততা, অপরিমেয় সাহস ও আত্মপ্রত্যয় কচি বয়সেই আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নবাব সিরাজ উদ্দৌলা, মীর মদন, মোহন লাল, মীর কাসিম, হায়দার আলী, টিপু সুলতান, হাজী শরিয়তুল্লাহ, দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠক, তিতুমীর, তোরাব আলি, লক্ষীবাঈ, রাজগুরু, ভগত সিং, উধম সিং, ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা সেন, মাস্টারদার মতো বীর নর-নারীরা জীবন দিয়ে দেশবাসীর চোখ খুলে দেখিয়ে গিয়েছেন দেশপ্রেম কাকে বলে। তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ প্রদর্শক।
আফিমখোর নেশাগ্রস্ত একটি ঝিমিয়ে পড়া জাতিকে সচেতন করে তুলে চেয়ারম্যান মাও একদিকে জাপানি এবং পশ্চিমা অনান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে দেশকে আজাদ করতে দুর্বার যুদ্ধ শুরু করেন- অন্যদিকে একই সাথে স্থানীয় কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীদের প্রতিভূ চিয়াং কাইশেক এবং তার মিত্রদের অপশাসন, শোষণ, নিপীড়ন ও নিষ্পেষণের নাগপাশ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য চালিয়ে গেছেন জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম। দীর্ঘমেয়াদী এই সংগ্রাম ছিল অত্যন্ত দুরূহ এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু নৈতিকতা, নীতি-আদর্শ, অনমনীয় আত্মপ্রত্যয় এবং আত্মত্যাগের চেতনায় গড়ে তোলা লাল গণফৌজ এর নিবেদিতপ্রাণ বলিষ্ঠ নেতৃত্ব চিংকাং শানের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গল থেকে শুরু করে ইয়েনান হয়ে দীর্ঘ এগারো হাজার মাইল দূরত্বের ‘লং মার্চ’ এর মাধ্যমে দীর্ঘ আটাশ বছরের যুদ্ধের শেষে পিকিং-এর রাজপ্রাসাদে বিজয় নিশান উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো চেয়ারম্যান মাও-এর নেতৃত্বে।
দীর্ঘকালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পরীক্ষিত ‘লাল ফৌজ’ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বাধীনতার পর ঔপনিবেশিকদের সৃষ্ট রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং প্রশাসন, আইন এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সর্বেক্ষেত্রে নিজেদের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে এনেছিলেন আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তারই ফলে সব বাধা আর লৌহপ্রাচীর ভেঙ্গে গণচীন আজ বিশ্বের অন্যতম শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতির মাধ্যমে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমেও তেমন একটি সুযোগ আমাদের জন্যও সৃষ্টি হয়েছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে নিয়ে জাতীয় মুক্তি অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের। ইতিহাসের শিক্ষা নিয়েই এগুচ্ছিলাম আমরা দেশবাসীর সাথে একাত্মতার সম্পর্ক স্থাপন করে রাজনৈতিক সচেতনতার উপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে তুলে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল! এর জন্য দায়ী একজনই যাকে ‘আন্তরিকভাবে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক’ ভেবে আমাদের সংগঠনের মধ্যমণি হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথে। ১৫ ই আগস্টে সেনা পরিষদের নেতৃতে সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেনা পরিষদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান পদে নিয়োগ দেন বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
খালেদ চক্র বিরোধী ৭ই নভেম্বরের সফল সামরিক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবার পরই জাতীয় মুক্তির স্বপ্নের পিঠে ছুরি চালিয়ে দিল ভেড়ার লেবাসে ধূর্ত উচ্চাভিলাষী ক্ষমতা লোভী জেনারেল জিয়াউর রহমান।
দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগ তিতিক্ষার হল অপমৃত্যু!
ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনি, করবেও না। যেদিন বাংলাদেশের সত্য ইতিহাস লেখা হবে সেইদিন ইতিহাসবিদগণ মুজিব এবং জিয়াকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই মূল্যায়ন করবেন অবশ্যই। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক প্রতিবাদীদের রক্ত ঝরিয়ে স্বৈরাচারী শেখ মুজিব যেমন রেহাই পায়নি ঠিক একই ভাবে রেহাই পায়নি জেনারেল জিয়াও দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীর অগুণতি সেনা সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোভে হত্যা করে।
নিশ্চুপ বসে ভাবছিলাম এই সব কথা। নিম্মি পাশেই তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়।
এরই মধ্যে এলান হল অল্পক্ষণের মধ্যেই আমদের প্লেন পিকিং (বর্তমানে বেইজিং) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। মাইকে এলান শুনে নিম্মি জেগে উঠলো। আমদের প্লেন গণচীনের মাটি স্পর্শ করলো।
এক অভাবিত শিহরণ অনুভব করলাম। তৎকালীন গণচীনের একমাত্র এয়ার লাইন CAAC এর ফ্লাইট। প্লেনে ওঠার পর থেকেই বিশেষভাবে আমাদের দেখাশোনা করছিলো নির্মল হাসি মুখে বিমানবালারা। প্লেন তখন মাটি কামড়ে টারমাকের দিকে এগুচ্ছে। হঠাৎ একজন বিমানবালা হাসি মুখে এগিয়ে এসে ইংরেজিতে বলল, Well come to the People’s Republic of China. বলেই আমাদের দু’জনের হাতেই দুটো প্যাকেট দিয়ে বললো, Please accept these mementos on behalf of CAAC.
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম প্রীতি উপহার শুধু আমাদেরই দেয়া হয়েছে। তার মানে আমাদের পরিচয়টা তাদের আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ধন্যবাদ জানিয়ে গ্রহণ করলাম তার দেয়া প্রীতি উপহার। নিম্মি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে নিয়েছে। আমিও তৈরি হয়ে নিলাম। প্লেনটি এসে থামলো নির্দিষ্ট স্থানে।
প্লেনের দরজা খুলতেই দেখলাম এক বাঙ্গালী ভদ্রলোক সাথে একজন মহিলা, কয়েকজন চৈনিক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। আমরা বেরিয়ে আসতেই আমাদের হ্যান্ড ব্যাগেজগুলো নিয়ে নিলেন চৈনিকরা। বাঙ্গালী ভদ্রলোক পরিচয় দিলেন তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সেক্রেটারি জনাব ফসিউল আলম। আর সাথের ভদ্রমহিলা তার স্ত্রী। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছেন দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ডিরেক্টর কমরেড চেন সে হুং এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। ফসি সাহেব সবার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পর্ব শেষে একটি তরুণী হাসি মুখে আমাদের দু’জনকেই ভারি ওভারকোট আর কম্ফোর্টার পরিয়ে দিলো। ফসি বললেন, যা পরে আছেন তাতে কুলাবে না। বাইরে অনেক ঠাণ্ডা Temperature below freezing point আর সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস।
দুটো অপেক্ষমাণ গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল VIP Lounge এ। মেইন বিল্ডিং এর একপ্রন্তে VIP Lounge. পুরো এয়ারপোর্ট সজ্জিত জাতীয় পতাকা দিয়ে তবে হাফমাস্ট! জনাব ফসি জানালেন, কয়েকদিন আগে চেয়ারম্যান মাও দেহত্যাগ করেছেন বিধায় সারা দেশে শোক পালিত হচ্ছে।
VIP Lounge এ পৌঁছার পর কমরেড চেন বললেন
চীন সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সাদর উষ্ণস্বাগতম জানাচ্ছি। আশা করি, আপনাদের অবস্থান সুখকর হবে।
টুকটাক কথাবার্তা চলছিল। এরই মধ্যে সাথের এক চৈনিক ভদ্রলোক এসে জানালেন মালপত্র সব গাড়িতে রাখা হয়েছে। আমরা সবাই উঠে পড়লাম। একটা গাড়িতে কমরেড চেন আমাকে আর নিম্মিকে নিয়ে উঠে বসলেন সাথে একজন দোভাষীকে নিয়ে। অন্য গাড়িগুলোতে বাকি সবাই। গন্তব্যস্থান পিকিং হোটেল। সেই সময় পিকিং শহরে একটি মাত্র পাঁচ তারকা বিশিষ্ট হোটেল, সেটা হল পিকিং হোটেল। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে ঘন্টা খানেকের ড্রাইভ। রাত তেমন গভীর না হলেও পথে বিশেষ লোকজন দেখা গেলো না। হোটেলে পৌঁছানোর পর অল্প সময় থেকে কমরেড চেন এবং অন্যরা বিদায় নিয়ে যাবার আগে বলে গেলেন, আগামী কাল রাতে আমাদের সম্মানার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছে সন্ধ্যা সাতটায়। যথাসময়ে তার প্রতিনিধি আমাদের হোটেল থেকে নিয়ে যাবে। ওরা বিদায় নেবার পর জনাব ফসি ও তার স্ত্রীর সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করলাম। জানলাম, পিকিং এ দুইটা ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ আছে। পুরনোটি সান লি তুং- এ। সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখন নতুন আর একটা আধুনিক এনক্লেভ গড়ে তোলা হচ্ছে অতিদ্রুত গতিতে ওয়াং ফু চিং-এ। আমাদের দূতাবাস ওয়াং ফু চিং-এ। পিকিং হোটেল থেকে পনেরো মিনিটের ড্রাইভ। ফসি জানালেন, অতি দ্রুত উন্নয়নের পথে এগুচ্ছে গণচীন। একই ভাবে বেড়ে উঠছে বহির্বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক। ফলে কূটনীতিকদের বাসস্থানের সংকুলানে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই আমাদেরকেও কয়েক মাস হোটেলেই হয়তো থাকতে হবে নির্ধারিত আবাসিক ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত হবার আগে।
ওয়াং ফু চিং এর নির্মাণ কাজ খুবই দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাতে আশা করা যায় অল্পসময়ের মধ্যেই এই সংকট কেটে যাবে। সেখানে বহুতল বিশিষ্ট সব অট্টালিকা বানানো হচ্ছে। তাতে বিভিন্ন আকারের আবাসিক ফ্ল্যাট বানানো হচ্ছে পদবী অনুসারে কূটনীতিকদের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে।
পিকিং হোটেলটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সামনেই তিয়েন আন মেন স্কোয়ার, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শান বাঁধানো চত্বর। মাঝখানে শহীদ মিনার যার সামনেই এখন প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে চেয়ারম্যান মাও -এর সমাধিসৌধ। একদিকে ‘The Great Hall of the People’, অন্যদিকে ‘National Museum’. উল্টোদিকে চুন হান হাই (Forbidden City)- চীনের ঐতিহ্যবাহী রাজ প্রাসাদ। সেখানেই প্রয়োজনমত পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সুরক্ষিত কার্যালয় এবং বাসস্থান। চেয়ারম্যান মাও-ও থাকতেন ঐখানেই। একপ্রান্তে রয়েছে গণচীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের হেড কোয়ার্টার। অল্প দূরত্বে অবস্থিত রেডিও পিকিং(বেইজিং)। সেখান থেকে তখন ১৮টি বিদেশী ভাষায় প্রোগ্রাম প্রচারিত হতো।
বাংলা বিভাগও রয়েছে সেখানে। জনাব জাহেদ নামের এক ভদ্রলোক পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলা বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরে আমার অবস্থানকালীন সময়ে জনাব সাযযাদ কাদির এবং জনাব মাহফুজউল্লাহকে বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশ থেকে আনিয়ে বাংলা বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়। রেডিও পিকিং থেকে অল্পদূরে অবস্থিত চীনা বিপ্লবের জাদুঘর। এখানে ঢুকলে দীর্ঘ ২৮ বছরের বিপ্লবের সমস্ত ইতিহাস জানা যায়। জীবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি ঘটনা। ফসি আরো জানিয়েছিলেন, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬/৭ জন বাংলাদেশী ছাত্র পড়ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে এক ক্যাপ্টেন মাহবুব, ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার। তাকে আর্মির তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে চীনা ভাষা শিখার জন্য। পরে ক্যাপ্টেন মাহবুব সেনা প্রধান হোয়ে অবসর গ্রহন কোরে বিএনপি তে যোগদান করেন। দূতাবাসের লোকজন আর এই কয়েকজন ছাড়া চীনে আর কোনও বাংলাদেশী নেই। প্রথা অনুযায়ী সৌজন্য সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করে পুরোদমে কাজ শুরু করে দিলাম।
কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, কৃষি, সেচ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, বাণিজ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কুটির শিল্প, প্রচার মাধ্যম প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত মজবুত করার জন্য। একটি বিষয় পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের সাথে জোরদার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য চৈনিক সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহের কমতি নেই। সবখান থেকেই একটি কথা সুস্পষ্ট করে আমাদের জানিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়, বাংলাদেশের সাথে ঐতিহাসিক ভাবে চীনের রয়েছে সুপ্রাচীন সম্পর্ক, আর সেই সম্পর্ককে দুইপক্ষের স্বার্থেই আরও জোরদার করে তোলার জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে গণচীনের বিপ্লবী সরকার এবং নেতৃবৃন্দ। তারা আরও জানিয়ে দেন, গণচীন ঐতিহাসিকভাবে আধিপত্যবাদ এবং সম্প্রসারণবাদে বিশ্বাসী নয়। তাদের কাম্য সমতা ভিত্তিক বন্ধুত্বমূলক সুসম্পর্ক। এটা তাদের পররাষ্ট্র নীতির স্পষ্ট অঙ্গিকার। তাছাড়া চীনের জনগণের কাছে আদি বাংলাদেশ একটি প্রাচীন সভ্যতার পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত। এই দুইটি প্রাচীন সভ্যতার জনগণের মধ্যে সর্বদাই বিরাজমান থেকেছে ভাতৃত্বমূলক বন্ধুত্ব। বর্তমানের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বাংলাদেশকে একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসাবেই গণ্য করে। গণচীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হুয়াং হুয়া এক বৈঠকে একটি অতি মূল্যবান মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন
কোনও দেশ কিংবা জাতি তাদের প্রতিবেশী বেছে নিতে না পারলেও বন্ধু অবশ্যই বেছে নিতে পারে। বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ এই কূটনীতিকের এই ভাষ্য শুধু উষ্ণতাই প্রমাণ করে তাই নয়, তাঁর এই ধরনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বাংলাদেশের সাথে আন্তরিকভাবেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী গণচীন।
সর্বক্ষেত্রেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম, তবে ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে মজবুত করে তোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার এবং বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলাম। সামরিক বাহিনী যেকোনো দেশের মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড মজবুত না হলে দৈহিকভাবে শক্তিশালী হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। জেনারেল জিয়াও সেটাই চাইছিলেন।
অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, PLA (পিপলস লিবারেশন আর্মি) এবং ক্ষমতা বলয়ে অনেক প্রভাবশালী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।
চীনের সাথে দ্রুত উন্নয়নে শঙ্কিত হয়ে ভারত CMLA জেনারেল জিয়াকে রাষ্ট্রীয় সফরের নিমন্ত্রণ জানালো। উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। তাকে ডেকে বাংলাদেশ এবং গণচীন সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করা তাছাড়াও এই সফরের পেছনে চাণক্যদের রাজনৈতিক আর একটি উদ্দেশ্য ছিল যেটা জিয়াকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছিলো। তিনি বুঝতে পারেন, ডঃ কামাল হোসেন, তোফায়েল আহমেদ আর ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি ভারতের সাথে যে গোপন বোঝাপড়া করেছেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে সফরের পর যখন হাসিনা আর রেহানা দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠবে তখন দেশবাসীর কাছে তার ভারত বিরোধী জাতীয়তাবাদী ইমেজের মুখোশটা খুলে পড়বে। একই সাথে তার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দর্শন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। জনগণ আরও বুঝতে পারবে, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের বৈপ্লবিক চেতনার সাথে জিয়ার রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই এবং ভারতের সাথে সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতেই হাসিনা এবং মৃতপ্রায় আওয়ামী-বাকশালীদের আবার বাংলাদেশের রাজনীতির মূল ধারায় পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন সয়ং জেনারেল জিয়া। জিয়া খাল কেটে অ্যানাকন্ডাদের ডেকে এনে তাদের সাথে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করেই রাজনীতি করতে চলেছেন।
এই সংকট থেকে পরিত্রাণের আশায় তিনি অনেক দেশেই ধর্না দিলেন একটি রাষ্ট্রীয় সফরের নিমন্ত্রণ যোগাড় করার, যাতে করে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ভারতের মাধ্যমে শুরু না হয়। কিন্তু বিধি বাম, কোনও দেশই CMLA জিয়াকে নিমন্ত্রণ জানালো না। হতাশ জিয়া তখন নিরুপায় হয়ে জানালেন, যে করেই হউক গণচীনে সফরের একটা ব্যবস্থা করতে। প্রস্তাবটা চীন সরকারের কাছে উথাপন করতেই তারা জানালেন, তাকে বর্তমানে সফরে আমন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ, এই ধরনের সফরের প্রস্তুতির জন্য সময়ের প্রয়োজন। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর অনেক ভেবে চিন্তে তারা জানালেন, তাকে অফিসিয়াল সফরের নিমন্ত্রণ জানানো হবে বাংলাদেশ এবং গণচীনের সম্পর্কের ক্রান্তিকালের বিবেচনায়। হাঁফ ছেড়ে জিয়া সেই নিমন্ত্রণই গ্রহণ করলেন।
সফরের প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আলোচনায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের তরফ থেকে যা কিছু সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া হবে তার পুরোটাই পর্যায়ক্রমে পূরণ করার জন্য প্রস্তুত গণচীন সরকার। তাদের এই ধরনের অভিপ্রায় খুবই সন্তোষজনক। খবরটা শুনে জেনারেল জিয়াও অত্যন্ত খুশি হলেন।
হঠাৎ একদিন কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই চীনা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হল, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেনারেল জিয়া এবং তার সফর সঙ্গীদের ঢাকা থেকে নিয়ে আসার জন্য গণচীনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেনটিকেই ঢাকায় পাঠানো হবে। এ এক বিরল প্রস্তাবনা। কিন্তু খবরটা যখন জেনারেল জিয়াকে জানালাম, তখন মনে হল তিনি যেনো কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন। তিনি আমাকে জানালেন, যদিও প্রস্তাবটা খুবই প্রশংসনীয় কিন্তু তিনি দুই-একদিনের মধ্যেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তার এই জবাবে বুঝতে কষ্ট হল না এই প্রস্তাব জিয়ার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। কারণটা অতি পরিষ্কার। যেখানে জিয়া ভারতের আনুকূল্য পাবার জন্য সমঝোতা করেছেন সেই প্রেক্ষিতে গণচীনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্লেন যার একদিকে উড়তে দেখা যেতো গণচীনের পতাকা আর অন্যদিকে বাংলাদেশের পতাকা সেই প্লেনে কোরে জিয়া ও তার প্রতিনিধি দল কি কোরে চীন সফরে আস্তে পারেন!
সেটাই হল। জিয়া জানিয়ে দিলেন প্রস্তাবটা তার পক্ষে গ্রহণ করলে ভারতের সাথে সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হবে সুতরাং তিনি বিমানের ফ্লাইটেই ক্যান্টন পৌঁছাবেন।
জিয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আমরা সফর সূচি চূড়ান্ত করার জন্য পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমি অনুভব করলাম, চৈনিকদের তরফ থেকে আগের তুলনায় সফরের ব্যাপারে আগ্রহ যেনো কিছুটা কমে এসেছে! আমি শঙ্কিত মনে এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য ভাবতে শুরু করলাম।
জেনারেল জিয়ার সিদ্ধান্ত থেকে চৈনিক শীর্ষ নেতৃবৃন্দও জিয়াকে সঠিক ভাবে মেপে নিয়েছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে কি তারা বুঝে নিয়েছেন, ভারতের সাথে ব্যালেন্স করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু সম্পর্কই গড়ে তুলবেন জিয়া গণচীনের সাথে? তারা হয়তো আরও বুঝতে পেরেছেন জেনারেল জিয়ার পররাষ্ট্র নীতির ফোকাস হবে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলো এবং আমেরিকা সহ ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলোকেন্দ্রিক। জেনারেল জিয়া বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবে একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসাবে পুনর্গঠন করবেন এবং অতীতের কায়েমী স্বার্থবাদীদের স্বার্থে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও কনও মৌলিক পরিবর্তন আনবেন না। পরিণামে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমার পরিবর্তে উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে সময়ের সাথে। দেশে তৈরি হবে এক পরগাছা নব্য পুঁজিপতি শ্রেণী যারা তাদের অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ আর পেশীশক্তির জোরে জিয়ার তল্পিবাহক হয়ে রাষ্ট্র এবং সমাজপতি বনে গোষ্ঠী স্বার্থে বিদেশী শক্তিগুলোর তল্পিবাহক হয়ে তাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখবে নিজেদের মুঠোয়। অবশ্য এই নব্য শাসকগোষ্ঠীর গায়ে জড়ানো থাকবে গণতন্ত্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের নামাবলি।
লক্ষ প্রাণের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণের স্বপ্ন ছিল যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার পর প্রতিষ্ঠিত ঘুণে ধরা কায়েমী স্বার্থবাদীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ একটি দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যারা আত্মপ্রত্যয়ের সাথে কঠোর হস্তে স্বচ্ছতার সাথে দেশবাসীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করবে সার্বিক পরিসরে। কিন্তু জেনারেল জিয়া যে অপরাজনীতির সূচনা করতে চলেছেন সেখানে আবারো ক্ষমতাসীনদের শত্রুতে পরিণত হতে যাচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র এবং নিপীড়িত জনগণ!
ফিরে চলা যাক জিয়ার সফর সংক্রান্ত বিষয়ে।
চৈনিক নেতৃবৃন্দ কিছুটা হতাশার সাথে তার এই সফরটাকে যেন একটি গতানুগতিক সফর হিসাবেই পরিগণিত করছেন। এই অবস্থাতেই এলেন জিয়া নির্ধারিত দিনে। অন্যান্যদের সাথে রয়েছেন জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু মানে আমাদের শিশুভাই। সাদর সম্ভাষণই জানান হল CMLA জেনারেল জিয়া এবং তার সফরসঙ্গীদের।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জিয়া তেমন বিশেষ কিছুই চাইলেন না। কেন চাইলেন না! যদিও অগ্রিম তাকে জানানো হয়েছিলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পুনর্গঠনে বিশেষ করে দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য চীন সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত।
তিনি চাইলেন, পাকিস্তান আর্মির ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র যেগুলো ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে যেতে পারেনি সেগুলোকে কার্যকরী করার জন্য কিছু নাট-বল্টু মানে স্পেয়ার পার্টস এবং গাজীপুরের স্মল আর্মস অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিটা সচল করার জন্য কারিগরি সহযোগিতা। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মুজিব আমলে আনা মিগ জঙ্গি বিমানগুলোকে সচল করার জন্য কিছু স্পেয়ার পার্টস এবং ব্যাটারি। নেভির জন্য চাইলেন কয়েকটা গানবোট।
তার চাওয়ার বহর আমাদের অবাক করে দিয়েছিলো। কারণ চৈনিক নেতারা আশা করছিলেন জিয়া চাইবেন একটা সুদূরপ্রসারী সার্বিক বিষয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে। কিন্তু তিনি তেমন কিছুই কেনও চাইলেন না সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও আসল মোজেজাটা জানার জন্য শিশুভাইকে একান্তে আমি প্রশ্ন করেছিলাম এই ব্যাপারে। তিনি কোনও জবাব না দিয়ে শুধু বলেছিলেন, বুঝে নেবার চেষ্টা করো। এই ভাবেই শেষ হল জেনারেল জিয়ার সফর।
বেশ কিছুদিন পর এক বৈঠকে PLA এর Foreign Affairs Bureau এর ডাইরেক্টর বন্ধুবর লং মার্চ ভেটেরান জেনারেল চেন সাই চেন আমাকে কথাচ্ছলে বলেছিলেন
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমরা যেই পর্যায় পর্যন্ত এগুতে প্রস্তুত ছিলাম তোমাদের নেতা তো তার সিকিভাগ পর্যন্তও এগুবার সাহস দেখাতে পারলেন না।
তার সেই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নের জবাব আমার কাছে ছিল, তবে কোনও জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ ছিলাম।
চীন সফরের পরই জিয়া গেলেন ভারত সফরে। চূড়ান্ত বোঝাপড়া এবং রোডম্যাপ ফাইনাল করা হল হাসিনা আর রেহানার দেশে ফেরার ব্যাপারে। ১৯ দফার উপর গৃহীত হল ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলো জিয়ার। জাগোদল এর সূতিকাগার থেকে জন্ম নিল ভিন্নপথের বিভিন্ন মুনিদের নিয়ে তার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)। এরপর ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি হয়ে বসলেন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। এই নির্বাচনে খন্দকার মোশতাক কিংবা কর্নেল ফারুককে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে দেয়া হল না। হাসিনা ফিরে এসে লাইফ সাপোর্টে রাখা আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করলো জিয়ার সার্বিক সাহায্য সহযোগিতায়। কিন্তু ফারুক আর রশিদকে রাজনৈতিক দল গঠন করতে দেয়া হল না। সুযোগ দেয়া হল না খোন্দকার মোশতাককে তার দল ডেমোক্রেটিক লীগকে রাজনৈতিক ময়দানে প্রতিষ্ঠিত করার। এটাই ছিল জাতিকে বহুদলীয় রাজনীতি ফিরিয়ে দেয়ার গণতান্ত্রিক চেহারা। যেকোনো দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার মৌলিক দুইটি উপাদান হল সহনশীলতা এবং প্রতিপক্ষের প্রতি সৌহার্দমূলক আচরণ। এখন দেখা যাক জেনারেল জিয়া তার দলের শীর্ষনেতৃবৃন্দ কিংবা তার দল BNP তে এই দুইটি উপাদানের কদর কতটুকু।
খন্দকার মোশতাকের পার্টি ডেমোক্রেটিক লীগের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের স্টিম রোলার চালিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। তার দলকে কোথাও মিটিং-মিছিল কিংবা সভা করতে দেয়া হল না। বোমাবাজি, টিয়ার গ্যাস, ওয়াটার ক্যানন, ধরপাকড়, জেল-জুলুম এমনকি সভামঞ্চে জ্যান্ত বিষাক্ত সাপও ছেড়ে দেয়া হল। এরপরও সাহসী খন্দকার মোশতাককে কাবু করতে না পেরে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এভাবেই তার দলকে অঙ্কুরেই শেষ করে দিয়ে নিজের দলের বিজয় সুনিশ্চিত করেছিলেন ’৭৯ সালের নির্বাচনে জেনারেল জিয়া। অসহায় জনাব খন্দকার মোশতাককে গৃহবন্দী অবস্থাতেই দেহত্যাগ করতে হয়েছিল। সহনশীলতা এবং প্রতিপক্ষের প্রতি সৌহার্দমূলক আচরণের এ ছিল এক অদ্ভুত নিদর্শন!
অন্যদিকে শেখ হাসিনা অ্যানাকন্ডা শাবক ও তার আওয়ামী লীগ জিয়ার বদান্যতায় ক্রমান্বয়ে অ্যানাকন্ডায় রূপান্তরিত হতে থাকলো যার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে জিয়াকে অসময়েই চলে যেতে হল ইহলোক ত্যাগ করে।
আজ জাতি সেই অ্যানাকন্ডার নাগপাশে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই অ্যানাকন্ডা কিন্তু শুধু জাতিকেই গলাঃধকরণ করেই ক্ষ্যান্ত হবে তা নয়। বিএনপি স্বৈরশাসক এরশাদের সৃষ্ট জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মীয় চেতনার ধ্বজাধারী হিসাবে ঘোষণা দিয়ে তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতা ভোগ করেছে দৈত্যসম এই সরীসৃপের সাথে সহাবস্থান করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তাদেরও গিলে খাবে। সেটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জিয়া, এরশাদ, বেগম খালেদা, গোলাম আজম এবং নিজামীর মত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এই স্বার্থপর আত্মঘাতী নীতির জন্য দেশবাসীর কাছে ইহজগতেই জবাবদিহি করতে হবে এবং পরকালের শেষ বিচারের দিনেও হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।
১৯৭১ সালে এ মাটির মানুষেরা জাতীয় মুক্তির আশায় একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল শুধুমাত্র ভৌগোলিক স্বাধীনতার জন্যই নয়, তাদের প্রত্যাশা ছিল সার্বিক জাতীয় মুক্তি।
অমিত সম্ভাবনা এবং সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধোঁকাবাজি, ক্ষমতার লোভ এবং স্বার্থপরতায় আজ সেই আশা বিভীষিকায় পরিণত হতে দেখছে দেশবাসী। তাদের পাতানো খেলার রাজনীতিতে দেশের স্বাধীন অস্তিত্বই বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। জাতিকে পরিণত করা হচ্ছে দাসে এবং রাষ্ট্রকে আগ্রাসী ভারতের উপর নির্ভরশীল একটি করদ রাজ্যে।
জিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সংক্ষেপে আমি কিছুটা আলোচনা করবো।
প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ভারতের ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগ কনও প্রার্থী দাঁড় করালো না নিশ্চিত পরাজয় এড়াবার কৌশল হিসেবে। অন্যদিকে খন্দকার মোশতাক এবং রশিদ-ফারুককেও ময়দানে নামতে দেয়া হল না। আমাদেরকে বাংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই জিয়া গ্রহণ করেছিলেন নিজের রাজনীতির স্বার্থেই।
কারণ, এর ফলে ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বর এর কৃতিত্ব জিয়ার পক্ষে নেয়া সম্ভব হতো না।
ফলে, প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচনে বৈধতার একটা সমস্যা সৃষ্টি হল।
তখন কূটবুদ্ধির অধিকারী জেনারেল জিয়া হলিডে পত্রিকার সাদেক খান, ইত্তেফাকের ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে লাগালেন জেনারেল ওসমানীর পেছনে। ৭ই নভেম্বর পর জিয়ার আচরণে জেনারেল ওসমানী খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, বিশেষ করে ভারতের সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী আপোষকামিতা, সামরিক বাহিনীতে তার বর্বর হত্যাযজ্ঞ, খন্দকার মোশতাকের প্রতি তার আচরণ, আমাদের ফেরত না আনার বিষয়গুলো তিনি মেনে নিতে পারেননি। সেই সুযোগটি গ্রহণ করে চাতুর্যের সাথে তারা জেনারেল ওসমানীকে জিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে রাজি করাতে পেরেছিলেন। ভারতের ইশারায় হাসিনার আওয়ামী লীগ শুধু মৌখিকভাবে জেনারেল ওসমানীকে সমর্থন দেবার এলান করে। জেনারেল ওসমানীর নির্বাচনের জন্য লন্ডনের সিলেটি প্রবাসীরা মুক্ত হস্তে বিস্তর টাকা দিয়েছিলেন সাদেক খানের হাতে। আমি সেই সময় লন্ডনে অবস্থান করছিলাম। যাই হউক, নির্বাচনে জেনারেল ওসমানী পরাজিত হলেন আর জিতলেন ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বর সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের স্বত্বভোগী জেনারেল জিয়া।
এই বিজয়ের পর খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করা হল। হলিডে পত্রিকার অত্যাধুনিক প্রেস কেনার জন্য অর্থের অনুদানের ব্যবস্থা করে দিলেন জিয়া। সাদেক খানের ছোটভাই জনাব এনায়েতুল্লাহ খান হলেন মন্ত্রী, পরে রাষ্ট্রদূত। পুরস্কৃত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও।
এরপর ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সিটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় অক্লেশে।
আওয়ামীলীগকে সেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়। সবক্ষেত্রেই তখন জিয়ার জয়-জয়কার! এভাবেই সব ক্ষমতা নিজের মুঠোয় নিয়ে দর্পের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন জিয়া।
ঠিক তখনই পর্দার অন্তরালে জিয়ার ড্রামার ড্রপসিন ফেলার ষড়যন্ত্রকারীরা তারই নিযুক্ত সেনা প্রধান জেনারেল এরশাদের নেতৃতে শেষ অঙ্কের দিকে এগুচ্ছে।
সূচীপত্র [প্রতিটি পর্বে্র নীচে ক্লিক করলেই সেই পর্বটি পাঠ করতে পারবেন]
১ম পর্ব “জিয়া থেকে খালেদা তারপর” – লেখকের কথা
২য় পর্ব শ্রদ্ধেয় মওলানা ভাসানীর সাথে শেষ সাক্ষাত
৪র্থ পর্ব – কিছু বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের জবাব
৭ম পর্ব – বঙ্গভবনে কি হচ্ছিল রাত ১২ টায়!
৮ম পর্ব – বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হলো জেনারেল জিয়াকে
৯বম পর্ব – “সংঘর্ষের পথে জিয়া”
১০ম পর্ব – খন্দকার মোশতাকের বিশেষ দূত হিসেবে এলেন সাদ্রে ইস্পাহানী
১১তম পর্ব – শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে
১৩তম পর্ব ১ম কিস্তি – রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৩তম পর্ব – ২য় কিস্তি- রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে লিবিয়ার পথে
১৪তম পর্ব – বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জমির এলেন সস্ত্রীক
১৬তম পর্ব – শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ
১৭তম পর্ব – ১ম কিস্তি – জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে
১৮তম পর্ব – বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস
১৯তম পর্ব – জেনারেল মনজুরের সাথে বৈঠক
২০তম পর্ব – লন্ডন হয়ে ফিরলাম বেনগাজীতে
২১তম পর্ব – ঢাকা হোয়ে পিকিং-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
২২তম পর্ব – বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ
২৩তম পর্ব – জিয়ার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে
২৪তম পর্ব – রাষ্ট্রপতি হিসাবে জিয়ার গণচীনে দ্বিতীয় সফর
২৫তম পর্ব – আব্বার উপস্থিতিতে প্রথম রাতে জেনারেল জিয়ার সাথে আমার বৈঠক
২৭তম পর্ব – জিয়ার নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের চীন সফর
২৮তম পর্ব – চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসার পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতিক্রিয়া
২৯তম পর্ব – চীন থেকে লন্ডনে নির্বাসন কালে
৩০তম পর্ব – জেনারেল মঞ্জুরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল
৩১তম পর্ব – নিউইয়র্কের পথে জেনারেল এরশাদের সাথে লন্ডনে সাক্ষাৎ
৩২তম পর্ব – খালেদা জিয়া হলেন বিএনপির চেয়ার পার্সন
৩৩তম পর্ব – জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় রশিদ-ফারুক বানালো ফ্রিডম পার্টি
৩৪তম পর্ব – ১ম কিস্তি – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ
৩৪তম পর্ব – এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ক্রান্তিকালে খালেদা জিয়ার পাশে সেনা পরিষদ-শেষ কিস্তি
৩৫তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – ১ম কিস্তি
৩৬তম পর্ব – ১৯৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিজয়ে সেনা পরিষদের অবদান – শেষ কিস্তি পেশাওয়ারের পথে
৩৭তম পর্ব – ফিরে এলাম নাইরোবিতে
৩৮তম পর্ব – নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে ঢাকার পথে যাত্রা
৪০তম পর্ব – ১ম কিস্তি – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ – ২য় কিস্তি
৪০তম পর্ব – প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে খালেদা জিয়ার সরকারের পাশে সেনা পরিষদ- শেষ কিস্তি
৪১তম পর্ব – রুহানী জগতের আর এক সূফি সাধকের সান্নিধ্যে
৪২তম পর্ব – আমাকে আবার খালেদা জিয়ার জরুরী তলব
৪৩তম পর্ব – ব্যাংকক ট্রানজিট লাউঞ্জে
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – ১ম কিস্তি
৪৪তম পর্ব – হংকং হয়ে বেইজিং – শেষ কিস্তি
৪৫তম পর্ব – হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়
৪৮তম পর্ব – নাইরোবিতে প্রত্যাবর্তন
৫১তম পর্ব – ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
৫২তম পর্ব – দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের
প্রতিক্রিয়া
৫২তম পর্ব -দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়েতের
প্রতিক্রিয়া – শেষ কিস্তি
৫৩তম পর্ব – বিশ্বায়নের মোজেজা, রাষ্ট্র ও ধর্ম – ১ম কিস্তি