দাসত্ব কত মধুর হতে পারে তা আজকের ফেসবুক দেখলে অনুধাবন করা যায় । আমি ভাবছি আমি যদি একজন গৃহকর্মী হতাম তাহলে প্রতিদিন বৈষম্য দেখে দেখে কি একদিন মারমুখী হয়ে উঠতাম? ভাবছি আমি যদি একজন গার্মেন্টস শ্রমিক হতাম প্রতিদিন মালিকের অপমান সহ্য করে করে একদিন কি আমি মালিকের জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলতাম? আমি একজন হিসাব রক্ষক , শ্রম বিক্রি করি, মালিকের রোষানলে অন্য কেউ কিভাবে রিএক্ট করতো আমি জানিনা তবে আমি মুখের উপরে কথা বলি যদি সে অন্যায় কিছু বলে । আমি অন্যায় সহ্য করিনা। কারণ আমি শ্রম বিক্রি করে টাকা কামায় করি মাগনা কেউ টাকা দেয়না।
ইংরেজের উপনিবেশের উপর আমি একটি বিস্তারিত থিসিস লিখেছিলাম বছর দশেক আগে কানাডাতে যখন আমি বাণিজ্যে আমার দ্বিতীয় গ্রাজুয়েশন করছিলাম । এটা ছিল অপশনাল বিষয়। ইংরেজেরা কিভাবে উপনিবেশ গড়ে, দাস বানিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ ধরে আনে তার চিত্র তুলে ধরেছিলাম। ইংরেজের রাজতন্ত্র এখন নেই কিন্তু রানী আছেন। বৃটেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজপুত্রদের যখন বিয়ে হয় তখন সাড়া বিশ্বের মানুষেরা তা উপভোগ করে কাজ কাম ফেলে। ঠিক সেইসব দাসেদের মত বিভিন্ন দেশ থেকে যাদের গরুছাগলের মত জাহাজভর্তি করে আনা হতো বৃটেনের বিভিন্ন মাঠে, বাসাতে, কারখানাতে কাজ করার জন্য। পথিমধ্য মরে গেলে, লাশগুলো সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হতো বাসি বা পচা খাবারের মত।
দাসেদের উপর ইংরেজেরা একটি টিভি সিরিয়াল করেছিল নাম রুটস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেলগুলোতে বেশিরভাগ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধিরাই কালো। এর অর্থ হলো মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র যতই লম্বা চওড়া কথা বলুক যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িকতা পোত্থিত রয়েছে দেশটির রন্ধে রন্ধে।
- ইতিহাসের সবচাইতে বৃহৎ রাজতন্ত্র বৃটিশরাজ, ১৯১৩ সালের মধ্যেই বৃটিশেরা তাদের নিয়ন্ত্রনে এনে ফ্যালে সাড়া বিশ্বের মোট মানুষের ২৩% অর্থাৎ ৪১২ মিলিয়ন মানুষ। আর ১৯২০ সালের ভেতর বৃটিশের নিয়ন্ত্রন সম্প্রসারিত হয় ৩৫,৫০০,০০০ কিলমিটার অথবা গোটা বিশ্বের ২৪%। বলা হতো বৃটিশ রাজ্যে সূর্য কখনো ডুবেনা। কারণ পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণে সবখানেই বৃটিশেরা উপনিবেশ গড়েছিলো আর যেসব দেশে উপনিবেশ গড়েছিল সেই সব দেশের অধিবাসীদের দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছিল। কেউ ছিল দাস আর কেউ ছিল মোসাহেব বা দালাল। যারা ইংরেজের কথা মান্য করেনি বা বিদ্রোহ করেছে তাদেরকে ফাঁসীতে, গুলিতে বা সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গাতে প্রান দিতে হয়েছে অথবা দিপান্তরে পাঠানো হয়েছে জনশূন্য দ্বীপে একাকী শকুনের খাদ্য হবার জন্য।বৃটিশ উপনিবেশগুলোর অধিবাসিরা মোটামুটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত।
- বিদ্রোহী বিপ্লবী অন্যায় মেনে না নেওয়া মানুষ
- দাস প্রজা চুপচাপ মাথা নীচু করে আদেশ মেনে নেওয়া মানুষ
- সৈন্য – দেহে শক্তি আছে কিন্তু মন দুর্বল এবং মেধাহীন যারা
- মধ্যস্বত্বভোগী দালাল মোসাহেব কবি সাহিত্যিক শিল্পী ভাড় অভিনেতা বুদ্ধিজীবি শিক্ষক ধর্মযাজক
- রাজা জমিদার জোতদার সাহুকার ব্যবসায়ী
বৃটিশেরা বিভিন্ন দেশে যেয়ে লূটপাট সুরু করে ১৪৯৭ সাল থেকে এবং যেসব দেশ থেকে সম্পদ লূট করে এনে বৃটিশরা গ্রেট বৃটেনকে সমৃদ্ধশালী করেছে আজ পর্যন্ত সব দেশের উপরেই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বৃটিশ রাজের প্রভাব রয়েছে এবং থাকবে।
“বিদ্রোহের ফলে বা স্বদেশী আন্দোলনের ফলে দেশ স্বাধীন হয়” এর চাইতে ভুয়া কথা আর কিছুই নাই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মতই বৃটিশ কলোনী বা উপনিবেশগুলো “স্বাধীন “ । এক পর্যায়ে উপনিবেশগুলো আর তেমন লাভজনক ছিলনা সেজন্য সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে বিভাজন, ঘৃণা ও শাসনের বীজ বপন করে ইংরেজের কুত্তা অনুগত দালালদের হাতে ক্ষমতা সপে দিয়ে বৃটিশেরা চলে যায়। পাক ভারত উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহ, শাস্ত্রি প্রমুখেরা সবাই বিভিন্ন মুখোশের আড়ালে বৃটিশেরই ভাড়া করা লোক ছিল যাদের হাতে ক্ষমতা থাকা অর্থ পুঁজিপতিদের হাতেই ক্ষমতা থাকা। শোষকের পরিবর্তন কখনো শোষিতের স্বাধীনতা হতে পারেনা ।
নয় মাস গণহত্যা শেষে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে যেমন পূর্ব বাংলার নিয়ন্ত্রন পাকিস্তানের হাত থেকে ভারতের হাতে হস্তান্তর করা হয় তারপর বিদেশে লুকিয়ে থাকা ভারতের দালাল এনে পূর্ব বাংলার সরকার গঠন করে গনহত্যা অব্যহত রাখা হয়েছিল ঠিক তেমনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে পাক ভারত উপমহাদেশকে দুইভাগ ভাগ করে বৃটিশের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিভাজন, ঘৃণা ও শাসন চলতে থাকে।
বৃটিশদের হাতে আমাদের মৃত্যু (এখন অবশ্য আমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করছি ; খুনাখুনিতে আমরা এখন স্বাবলম্বি খুনাখুনি করতে এখন আর বিদেশীদের আসা লাগেনা। তবে মাঝে মাঝে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তে দেখা দেয় ও বাংলাদেশী নির্যাতন ও হত্যা করে তারপর বাংলাদেশী গার্ডরা হাসিমুখে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশীর লাশ নিয়ে আসে।
জুন-জুলাই ১৮৫৭ জেনারেল নীলের নির্দেশে হাজার হাজার বিদ্রোহীদেরকে হত্যা করা হয় আহমেদাবাদ, কানপুর এবং আশেপাশের এলাকা থেকে (১৯৭২-৭৫ রক্ষীবাহিনী অভিযান চালিয়ে আওয়ামীলীগ বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের একইভাবে হত্যা করে)
১৬ই মে, ১৮৫৭ – দিল্লী পালেস হত্যাকান্ড – আগের দিনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে ৪০-৫২ জন বিদেশীদের ধরে বাহাদুর শাহ প্রাসাদের শ্রমিক/গৃহকর্মীরা এবং তাদেরকে প্রাসাদেই হত্যা করে।
৫-২৫ জুন ১৮৫৭ – ইউরোপিয়ান সৈন্য, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, তাদের বউ বাচ্চা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেপাই যারা খ্রিষ্টান এমন প্রায় ১০০০ জনকে হত্যা করা হয়
২৭শে জুন ১৮৫৭ কানপুরে নানা সাহেবের লোকেরা ২০০ বৃটিশ অফিসারকে হত্যা করা হয়।
১৫ই জুলাই ১৮৫৭ বিবিঘরে নানা সাহেবের লোকেরা ২০০ বৃটিশ নারী ও শিশুকে হত্যা করে।
১৭-১৮ জানুয়ারী ১৮৭২ কুকা নামধারীতে হত্যা করা হয় ৬৫জনকে । কাউন সাহেব গুলি করে সবার খুলি উড়িয়ে দেয়।
১৩ই এপ্রিল ১৯১৯ পহেলা বৈশাখে অমৃতসরের জালিয়েনওয়ালাবাগে সভা আহ্বান করা হয় ফলে স্থানীয়রা সবাই সেখানে সমবেত হয় সেখানে গান্ধিজীর উপস্থিত হবার কথা ছিল । কিন্তু গান্ধীজী না এসে এসেছিল বৃটিশ পুলিশ ডিউয়ার আর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিল ৩৮১ জন পাঞ্জাবীকে আর আহত করেছিল ১১০০ জন। (৫-৬ মে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের অপেক্ষা করতে বলা হয় শফী হুজুরের জন্য । শফি না এসে সেখানে আসে বিজিবি আর আর্মড পুলিশ এবং ঘিরে ফেলা হয় শাপলা চত্বরের আলেমদের। হত্যা করে লাশ গুম করে সংসদে বলা হয় “রং মেখে শুয়েছিল। পুলিশ দেখে পালাতে গেছিল যখন তখন পুলিশ তাদের ধরে যার যার বাসাতে পৌছে দিয়ে এসেছে)
অক্টোবর ১৯২১ মোপ্লা (মালাবার, কেরালা) বিদ্রোহ – ২৩৩৭-১০০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়
৯-১১ সেপ্টেম্বর ১৯২৪ কোহাটে ১৫৫ জন মানুষকে হত্যা করা হয় ।
১৫ই জুলাই ১৯২৬ সালের কলকাতাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে ১০০ জন মানুষ মারা যায় আর ২০০ জন আহত হয়।
১৯২৩ – ১৯২৭ এ উত্তর প্রদেশে ৮৮টা বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হয় যথাক্রমে নাগপুর, লাহোর, আর হতাহতের সংখ্যা প্রায় ১০০০ এর মত ছিল
২৩শে এপ্রিল ১৯৩০ সালে – কিসসাকাহিনী বাজারে সংঘর্ষে একটি মিছিলের উপর দুইটি আর্মড গাড়ী উঠিয়ে দেওয়া হয় গুলি চালানো হয় ফলে ২০ থেকে ২৩০ জন প্রতিবাদী হতাহত হয়
১৫ আগস্ট থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ – কলকাতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে ৭০০০ থেকে ১০০০০ মানুষ হতাহত হয়
সেপ্টেম্বর অক্টবর ১৯৪৬ নোয়াখালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে ৬০০০ মানুষ হতাহত হয়।
নোয়াখালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতি উত্তরে ৩০ অক্টোবর – ৭ই নভেম্বর ১৯৪৬ বিহারে ২০০০-৩০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়।
নভেম্বর ১৯৪৬ সালে লূটপাট শেষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাহাদুর তপ্লিতপ্লা গুটিয়ে নিজেদের পোষা কুত্তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাবার প্রাক্কালে বিভাজন, ঘৃণা ও শাসনের বীজ বুনে হিন্দু মুসলমানের মধ্য দাঙ্গা লাগিয়ে চলে যাবার প্রাক্কালে উত্তর প্রদেশে সেমি ফাইনালে ২১৪ জন মানুষকে হত্যা করে।
দেশ বিভাগ ১৯৪৭ পাক ভারত উপমহাদেশে মৃতের সংখ্যা ছিল ২০০,০০০ থেকে ২,০০০,০০০। ১৪ মিলিয়ন মানুষ হয়েছিল বসতহারা ।
বিশ্বের অনেক দেশেই বৃটিশরাজের শাসন ও শোষন চলেছে। আফ্রো-এশিয়া-লাটিন আমেরিকার সব সম্পদশালী দেশে দেশে যেয়ে স্থানীয় লোভী মানুষদেরকে সাথে নিয়ে চলেছে লুটপাট। এভাবেই গ্রেট বৃটেন এত সম্পদশালী হতে পেরেছে। আজকে রাজপুত্রের বিয়েতে সাড়া বিশ্বের মানুষ সব কাজ কাম ফেলে টিভিতে চোখ এঁটে যে সম্পদ দেখেছে সেই সম্পদে অধিকার রয়েছে অনেক দেশের।
লুটেরাদের রাজকীয় ব্যাপার। রাজা অর্থাৎ লুটেরা।
যে শোষন করতে পারে সে শাসন করে আর সেই শোষকই হয় শোষিতের প্রিয় প্রভু।
ইতিহাসের পাতায় পাতায় নাম লেখা আছে বৃটিশের পদলেহনকারী তোষনকারী সকলের। শোষিতেরা সব দাস। দাসদের অবনত মস্তকে পা রেখেছিল প্রথমে লর্ডেরা তারপর লর্ডদের বীর্যে জন্ম নেওয়া দালালেরা। উপনিবেশ গড়ার জন্য এখন আর সৈন্য সামন্ত নিয়ে দেশে দেশে যেয়ে থাকা লাগেনা। সব দেশেই দালাল নিয়োগ করা যায়। দূর থেকে নির্দেশ দিলেই দালালেরা নিজ নিজ দেশ থেকে সম্পদ লুট করে প্রভুদের দেশে পাচার করে দেয়।
এককালের রপ্তানীকারক দেশ পূর্ব বাংলা থেকে পানি লূট হয়ে যাবার পরে পূর্ব বাংলার ভূমি বন্ধাত্ব গ্রহণ করেছে, কৃষকের লাশের উপরে বালু জমেছে তাই প্রায় সব শস্যই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। শিল্প বলেও কিছু নেই। আছে শুধু মানব সম্পদ । অজস্র মানুষ। সেইসব মানুষ একে অন্যের সাথে লুটপাট চুরি দুর্নীতি খুন জখম ধর্ষন মিথ্যাচার প্রতারণা ইত্যাদি করে অতঃপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতেছে।
আর চলছে পরিবেশ দুষনের মৌসুম। সুন্দরবনকে সুন্দরভাবে ধ্বংস করবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাঁশখালীর গন্ডামারা গ্রাম কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর রুপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশ দূষনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে হাসপাতাল ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের মুনাফা করিয়ে দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবে।
এত কিছুর পরেও পূর্ব বাংলার সুখী মানুষের প্রতিচ্চবি দেখা যায় ফেসবুকের দেওয়ালে দেওয়ালে। আজ রাজপূত্রের বিয়েতে পূর্ব বাংলার দাস দাসীরা নানা রঙ্গের টুপি লাগিয়ে সজ্বিত হয়ে লাজুক রাজপূত্রের বিয়ে দেখেছে। ওরা কেবলি হাসে কেবলি গায় হাসিতে হাসিতে মরিতে চায়। না জানে বেদন না জানে রোদন না জানে সাধের যাতনা যাতন…।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা
https://www.youtube.com/watch?v=q5DODfH-mwM&t=11s