প্রতারক রক্তচোষা বাদুড় – ১

দৃক গ্যালারীতে ছবির প্রদর্শনী করলেই কি নামীদামী হওয়া যায়? মুছে ফেলা যায় অতীত? বাংলাদেশের জন্ম ও ইতিহাসের মত সবাই যার যার অতীতকে মুছে ফেলতে চায় মিথ্যার আবরণ দিয়ে সাজিয়ে। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাত্রে আকাশে ধুঁয়া আর দূরে রাজারবাগ পুলিশলাইন থেকে থেকে ভেসে আসছিল গোলাগুলির আওয়াজ ।  আমাদের এলাকার সবাই তখন বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ধূসর আকাশ। তখন  কেউ জানতেন না কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে। রাজারবাগ আমাদের এলাকা থেকে অনেক দূরে। যেহেতু এক নাগারে প্রচুর গোলাগুলি চলছিল সেজন্য শব্দ আসছিল। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল যার জন্য দূর থেকে আমরা ধুঁয়া দেখতে পাই। সর্ব প্রথমে  পুলিশেরাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে । পুলিশদেরকেই প্রথমে আক্রমণ করা হয়েছিল । পরের দিন সকাল থেকে অগুনিত মানুষ আসতে শরু করে আমাদের এলাকার দিকে। আমাদের বাসাতে অনেক মানুষ এসে আশ্রয় নেন।  এটা ছিল প্রথম রাত এবং পরেরদিন সকালের ঘটনা।  সবাই বলতে থাকে পথে পথে লাশ দেখার কথা।

সে বছরে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি । কোন স্কুল নেই। আমার সব চাইতে ভাল লাগার দিন ছিল তখন যখন স্কুল থাকতোনা। আমি সারাদিন খেলা করতে পারতাম। বাসাতে অনেক মানুষ থাকার ফলে রান্নাবান্নাতে সবাই ব্যস্ত থাকতেন। কেউ আমার খোঁজ খবর নিতো না। আমি স্বাধীন । আমাদের এলাকাতে বেশ কিছু খালি প্লট ছিল। যেখানেই খালি প্লট থাকতো সেখানেই ছিন্নমূল মানুষেরা যারা গ্রাম থেকে জমি হারিয়ে বা খাবারের অভাবে শহরে কাজের খোঁজে এসেছে কাজ পায়নি কোন রুজিরোজাগার নেই থাকার জাগা নেই তারাই খালি প্লটে একটু খানি ছাদ লাগিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে নিতেন। কাজ খুঁজতেন । ওরা দিনমজুর বা আসেপাশের বাসাতে কাজ করতেন। জমির আসল মালিক এলে তখন ওরা অন্য কোথাও চলে যে্তেন বা অন্য কোন খালি প্লটে বা রেল লাইনের ধারে খালি জাগাতে স্থান করে নিতেন।

সাড়া বিশ্বের মানুষের চরিত্র যদি দুইভাগে ভাগ করা যায় তাহলে দেখা যাবে
এক দল মানুষ শুয়ে বসে আরামে হুকুম করে খেতে চায়
অন্যদল মানুষ হুকুম মেনে পরিশ্রম করে খেতে চায়
একদল মানুষ মনে করে তাদের শুয়ে বসে হুকুম করে খাবার অধিকার আছে। অন্যরা তাদের কথা শুনবে এবং তাদের হয়ে কাজ করবে। অন্যদল মানুষ মনে করে কাজ করে খাওয়া গর্বের ব্যাপার। যারা কাজ বা পরিশ্রম করে খায় তারা জানেনা শুয়ে বসে মানুষ কিভাবে খেতে পারে। অন্যদল যারা শুয়ে বসে খায় ওরা নিজেদের খুব চালাক ভাবে আর মানুষকে প্রতারিত করে খেয়ে তারা খুব আনন্দ পায় এবং মনে করে প্রতারণা একটি শিল্প, সন্মোহনী শক্তি। ওরা মনে করে প্রতারণা করা মিথ্যা বলে কারু থেকে টাকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা একটি সন্মানজনক পেশা।  এই দলের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুদ্র মন মানসিকতার হয়, ভীতু হয়, নরম ও চুপচাপ সুযোগ খুঁজে, ধীরে ধীরে কথা বলে, ঝোপ বুঝে কোপ মারে, ফলে যারা পরিশ্রম করে খায় ওরা বুঝতে পারেনা এইসব কলা কৌশল তারা ফটাফট প্রতারকের ফাদে এসে হাবুডুবু খায়।

যাই হোক ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সাল থেকে আমাদের স্কুল বন্ধ । সারাদিন হৈ চৈ করে কেটে যেতো সাড়া রাত সবাই রেডিওর কাছ কান দিয়ে বসে থাকতো। সাইরেন, ব্ল্যাক আউট, গুলির শব্দ। এক বাসাতে বহু মানুষ সবাই মেঝেতে শুয়ে থাকতেন। কেউ জোরে কথা বলতেন না। পুরুষেরা মসজিদেই থাকতেন বেশির ভাগ সময় আর মহিলারা ঘরে নামায পড়তেন। সকাল হলেই আমি বেড়িয়ে পড়তাম রোজকার মত। কার বাগানে কোন ফুল কোন ফল ধরেছে সেই খোঁজ খবর আমার গরু টুটুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, প্রতিবেশী বন্ধুদের সাথে ওদের বড় ভাইও ক্যারাম, লুডু সেইসব খেলাতে এসে যোগ দিতেন। এমন একজন বড় ভাইয়ের নাম হারুন ভাই যিনি পরবর্তীতে নিজেকে হারুন দা বলে পরিচয় দিতেন। হারুন ভাই সব সময় আমাদের সাথে ক্যারাম খেলতেন। চড়ুইভাতি খেলতেন বা  নানা রকমের গল্প বলতেন । হারুন ভাইয়েরা কিছুদিন আগে ফরিদপুর থেকে আমাদের এলাকাতে এসে ফুপাতো বোনের বাসাতে উঠেন । সেখানেই আমরা ক্যারাম খেলতাম। ফুফাতো বোনের স্বামী একজন হুজুর মানুষ কোন এক অফিসের কেরানী । তিনিও মসজিদে যেতেন । বাসার ভেতর বড় উঠোন , গাছপালা, আমরা ছোট ছেলেমেয়েরা যেখানে খেলতাম সেখানে হারুন ভাই সব চাইতে বড় ছিলেন। তখন উনার বয়স আনুমানিক ২৭-২৮ হতে পারে। তখন বুঝতাম না এসব এখন ভাবছি তেমনি হতে পারে । যাইহোক আমার আরো একটি প্রিয় কাজ ছিল বাসার পেছনের লেকে নৌকা চালানো। বা মাছ ধরা। বা সাঁতার কাটা।

আমি মাছ ধরাতে মোটেই পারদর্শী নই। বরশী নিয়ে বসে থেকেছি কতদিন । মাছেরা আমার বরশি পছন্দ করেনা। এখন বুঝতে পারি, সম্ভবত মাছেরা বুঝেছিল যে আমি শুধুমাত্র শিকার হতে পারি, শিকারী হতে পারিনা। একজন শিকারকে অন্য একটি শিকার কিভাবে শিকার করতে পারে?

চলে গেল নয় মাস। নয় মাসে আমার বয়স বৃদ্ধি পেলো নিরানব্বই বছর। সেই নয় মাস এমনই নয় মাস। এই নয় মাসে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। ভাইয়েরা মারা গেছেন। খবর পেয়েছি। অনেকেই ফিরে আসেন নি খবর পেয়েছি ওরা নেই। এই নয় মাসে অনেক কান্না দেখেছি কিন্তু কান্নার শব্দ শুনিনি। কেউ শব্দ করতো না ভয়ে। এই নয় মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে।  সব চাইতে অবাক করা ঘটনা ছিল এই নয় মাসে আমি কোনদিন ভয় পাইনি।  এই নয় মাসে আমাদের বাসাতে পাকিস্তানী আর্মি এসেছে তিনবার সাথে একদল রাজাকার। চৌকী এবং খাটের নীচে ওরা মুক্তিযোদ্ধা খুজেছে । আমাদের বাসাটা মোড়ের একেবারে শেষে। যখন আর্মির গাড়ী আসে তখন দেখা যায় । আমি সিগনাল দিলে বাসার সব মেয়েরা লেকের পানিতে কচুরীপানার নীচে লুকিয়ে যেতো। একটা ঘাটের নীচে কিছু বাঁশ তা ধরে ভেসে থেকেছে সেসব মেয়েরা সাঁতার জানেনা তারা।  পাকিস্তান আর্মি এসেই খোঁজা সুরু করত কাগজপত্র , খাট আলমারী তোষক ইত্যাদি উল্টাতে থাকত। তারপর মাকে দেখে চুপচাপ। আমার মা সাধারণভাবে শাড়ি পড়তেন। মাথায় গোমটা দিতেন সবসময়। মা উঠোনে বসে রান্না করছিলেন আমি পাশে বসেছিলাম। ওরা চারিদিকে ঘুরে চলে যায়।  একবার পানির নীচে লুকিয়ে থেকে আমার এক বোনের অনেক জ্বর আসে। বেশ কিছুদিন ভুগে।

ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে  দেখি হারুন দা কমান্ডার হয়ে গেছেন। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম
–  হারুন দা আপনি কেমন করে কমান্ডার হলেন?
নয় মাস আপনি তো ক্যারাম খেললেন, আমরা চড়ুইভাতি করলাম আর আপনে খাইলেন, আপনি তো মুক্তিযুদ্ধে যান নাই। আপনি কিভাবে কমান্ডার হলেন?
আমার কথাতে বেশ রেগে গেলেন হারুন দা । যত বড় মেয়ে না তার মুখে তত বড় কথা ।
ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে খান সেনারা যখন আর শহরে নেই তখন আবার আমরা বুটের শব্দ শুনলাম আমাদের বারান্দায়।
বিজয় দিবসের ৯ দিন পরে অন্য এক হানাদার বাহিনীর আগমণ ঘটলো আমাদের উঠোনে।
তারপর আদুরী আর টুটুর পায়ের শব্দ। আমি ছুটছিলাম কিন্তু মা আমাকে জাপ্টে ধরে ছিলেন সারারাত। যেতে দেননি। সকাল হলে আমি ছুটে বাইরে যেয়ে দেখলাম আদুরীকে ওরা নিয়ে গেছে। বেবীকে নিতে পারেনি। টুটুকেও নিয়ে গেছে। আদুরী ছিল আমাদের গরু। বেবী আদুরীর মেয়ে আর টুটু আদুরীর ছেলে। টুটু আমার বন্ধু। আমি পাগলের মত ছুটলাম । টুটুর খোঁজে। কারন আমি জানি টুটুকে কেউ নিয়ে যেতে পারবেনা।

মাটির মসজিদের কাছে যেয়ে দেখি টূটু আসছে। আমাকে দেখে সে থমকে দাঁড়ালো। তারপর আমি আর টুটু বাসায় ফিরে এলাম। আদুরী নেই। মন খারাপ হয়ে গেল। আদুরীর বাচ্চা মেয়ে বেবীটা মায়ের জন্য খুব কস্ট পেতো।  আমি বুঝলাম  হারুন কমান্ডার আমাদের গরু চুরি করে নিয়ে গেছে।

তখন সুরু হলো ১৯৭২ – এক গণহত্যা থেকে অন্য এক গণহত্যা সুরু হলো। আমার বয়স বৃদ্ধি পেতে লাগলো জ্যামিতিক হারে। আদুরী চুরির ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারিনি। আমি মেনে নিতে পারিনি হারুন দা এর কমান্ডার হবার ব্যাপারটা।

মুক্তিযুদ্ধে দুইজন ভাই হারিয়ে ১৬ই ডিসেম্বরের মুক্তিযোদ্ধাদের মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। যারা সাড়া বছর তাস খেলেছে তারা ১৬ই ডিসেম্বরের পরে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। ভারতের প্রপোগান্ডাতে প্রথমে বিজয় দিবস পরে আওয়ামীলীগ হয়ে গেলো দেশের সরকার। কোন নির্বাচন ছাড়াই। পাকিস্তানের নির্বাচনকে মেনে নিয়ে বাংলাদেশের সরকার গঠিত হলো যারা মূলত ভারতের জন্য কাজ করবে আর সেটাই ছিল গনহত্যার জন্য ভুট্টোর ইয়াহিয়াকে উস্কে দেওয়ার অন্যতম কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা চলতে দিয়েছে কারণ ভারতের হাতে দায়িত্ব ছিল সোভিয়েত ভাঙ্গার। ভারতকে পূর্ন সমর্থন দিয়ে গণহত্যা চলতে দেওয়া হয়। শরনার্থীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেয় ১০০ মিলিয়ন ডলার ।  ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে ভারত যেয়ে পাকিস্তান থেকে মুজিবকে এনে বাংলাদেশে সরকার প্রতিষ্টা করে। ইতিমধ্য ভারতের ইন্দিরা সরকার ভারতের বামপন্থী হত্যা সুরু করে দিয়েছিল।

ভারত যদি সোভিয়েতের বন্ধু হয় তাহলে ভারতের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদের কেনো হত্যা করবে? এটা বুঝার জন্য কোন পন্ডিতের কাছে যেয়ে পরামর্শ নেওয়া লাগেনা।  অন্যদিকে বাংলাদেশে সুরু হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা হত্যা।  কারণ আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। সাধারণ মানুষ, পুলিশ, আর্মী, বাম পন্থিরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। শুরুতে যেসব  বামপন্থীরা ভারতে গেছে ভারত সরকার তাদেরকে গ্রেফতার করে  এবং জেলে নিয়ে নির্যাতন করে। ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নিয়মিত অনুসন্ধান করা হয় কে মুজিবের অনুগত আর কে অনুগত নয়। যারা অনুগত নয় তাদেরকে হত্যা করা হয়। অনেকেই ভয়ে অনুগত হবার ভান করে। পরবর্তীকালে যারা আওয়ামীলীগ ভেঙ্গে তৈরি জাসদে যোগ দেয়। জাসদ সৃষ্টি করার পেছনে মূল কারণই ছিল বামপন্থিদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও ছেকে তুলে হত্যা করা। ভারত এবং ভারতের রাজ্যসরকার বাংলাদেশে ধুমসে বামপন্থি ও মুক্তিযোদ্ধা এবং যারা মুজিব বিরোধী তাদেরকে হত্যা করে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত।

ফিরে আসি আমার এলাকাতে। যেখানে ছিন্নমূল মানুষেরা একটুখানি ছাদের নীচে ঘুমাতো। হারুন কমান্ডার তাদের ভাগিয়ে দিয়ে টিনের ঘর তুলে পুড়া পরিবার নিয়ে বসবাস সুরু করে দিলো। এখন সেটা হারুন কমান্ডারের বাড়ী। হারুন কমান্ডার লেখাপড়া জানেনা। অশিক্ষিত গ্রামের ছেলে। ৭১ এর গণহত্যা ও উপনিবেশ পরিবর্তন প্রথমে তাকে মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডারের বেশে ডাকাত ও পরে একটি ছয় কাঠা জমির মালিক এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বানিয়ে সমাজের বুকে সদর্পে প্রতিষ্টিত করলো। হারুন কমান্ডারের মত এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে বাংলাদেশে । অনেকেই এখন প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ী।

প্রতিমাসে দৃক গ্যালারীতে যিনি ফটো প্রদর্শনী করছেন তিনিও আর একজন হারুন কমান্ডার। এখন আর বুটের শব্দ নেই। নিঃশব্দে ভার্চ্যুয়াল ফেসবুকের ইনবক্সে, হোয়াট’স আপে কথা হয়।  এখন আর গুলির শব্দ নেই আছে মিথ্যাচার ।  একটি পরিবার । সাভারের ব্যাঙ্ক কলোনীতে বসবাস ছিল ছোট্ট টীনের চালা ঘরে। পক্ষাঘাতে পংগু বাবা সাভারের পথে হাটতেন , এর ওর কাছে পাঁচ দশ টাকা চাইতেন, একদিন বাবা মারা গেলেন, হঠাৎ করে সেই পরিবার উঠে এলো ছয়তলার ফ্লাটে।

চারজন যোয়ান শক্ত সমর্থ মানুষ। কোন কাজ না করে দিব্যি সেজেগুজে দামী আইফোন হাতে দৃগ গ্যালারীতে ফটো এক্সিবিশন এসে হেসে ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে সবাইকে দেখিয়ে দেয়, দেখো,তোমরা পরিশ্রম করে, রক্ত পানি করে টাকা পাঠাও আর আমরা পুরা পরিবার ফুর্তি করি, তোমরা ছাগল আমরা স্মার্ট। এমন ভাগ্য ক’জনের আছে?  এমনও হতে পারে ওদের চৌকির নীচে আলাদিনের চেরাগ থেকে বের হওয়া দৈত্য বাস করে যে নাকি চাহিবা মাত্র ডলার দিতে বাধ্য থাকিবে অথবা ওদের কারু ফেসবুকের ফ্রেন্ড তালিকাতে একজন বয়স্কা মহিলা আছেন যিনি অলস মানুষকে কর্মঠ হিসাবে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখার ইচ্ছা পোষন করে অর্থায়ণ করে পরে উপলব্ধি করলেন হারুন কমান্ডারেরা কখনও বাংলাদেশ ত্যাগ করেনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়ছে বা মারা গেছেন।
একদিন বাংলাদেশে যারা শ্রেণী সংগ্রামে জড়িত ছিলেন সেইসব কমরেডেদের হত্যা করা হয়েছে।
কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করেছেন।
দেশ স্বাধীন হয়নি।
বিজয় আসেনি।
বাংলাদেশ ভারতের পরোক্ষ উপনিবেশ,  চলে দিল্লীর নির্দেশে।
একদল হারুন কমান্ডার সাড়া বাংলাদেশ জুড়ে রাজত্ব করছে।
এদেরই কেউ কেউ খাদ্যে ফরমালিন দিয়ে বাজারে বিষ বিক্রি করছে
এদেরই কেউ কেউ সারারাত বাসে  অথবা ঘরের আগল ভেঙ্গে নারী ধর্ষন করছে
এদেরই কেউ কেউ সাওতাল বস্তীতে আগুন লাগিয়ে মানুষকে বিতারিত করে তাদের জাগা জমি দখল করছে
এদেরই কেউ কেউ হাসপাতালে মৃত শিশুকে জীবিত বলে দিনের পর দিন সদ্যজাত মৃত শিশুর মাবাবার আশার সাথে প্রতারণা করে টাকা উপার্জন করছে
এদেরই কেউ কেউ পথ থেকে ছেলেদের উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে দিনরাত থানাতে নির্যাতন করে সেই ছেলের বাসাতে ফোন করে লাখ লাখ টাকা দাবী করছে
এদেরই কেউ কেউ সিঙ্গাপুর মালইয়েশিয়া থাইল্যান্ড পাঠাবার নামে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নৌকাতে উঠিয়ে দিচ্ছে

সেই হারুন কমান্ডার মরেনি। সেই হারুন কমান্ডার এখনো আছে বাংলাদেশের চারিদিকে।
সেই হারুন কমান্ডার এখন ফেসবুকে আমার বন্ধু হয়ে তার দুঃখের জীবন কথা, গান, কবিতা আর তার স্বপ্নের কথা শুনিয়ে ধোঁকা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দার্জিলিং ময়মনসিংহ সিকিম বর্ধমান দৃক গ্যালারী আর বলছে আমি কোটিপতি

কিছুদিন আগে তাকে দেখা গেছে উত্তরাতে
অথবা শুখানো মুখে শ্যামলীতে
অথবা শিকারের খোঁজে ধানমন্ডীতে কোন মহিলার বাসাতে
অথবা সাভারের ইয়াবা পার্টিতে

এই কোটিপতিকে দেখা গেছে কোন দোকানীর কাছে দশ টাকা রিকশা ভাড়া চেয়ে নিতে
এই কোটিপতিকে দেখা গেছে বাসা ভাড়া দিতে না পেরে লজ্বায় ঘরের ভেতর নিজেকে আটকে রাখতে
এই কোটিপতিকে দেখা গেছে মুদীদোকানে বাকী খেতে
এখন সে  চুলে চকচকে জেল লাগিয়ে লাল আইফোনে কার সাথে যেনো জরুরী কথাই ব্যস্ত থাকে দৃক গ্যালারীতে
সাম্পানে বার্থডে পার্টি করে।
নস্টালজিয়াতে বসে আড্ডা মারে।
আফটার অল কোটিপতি বলে কথা!!
এই কোটিপতি এখন সেই হারুন কমান্ডারের ভূমিকাতে আবার মুখোমুখি হয়েছে সেই শিশুর
১৯৭১ সালে প্রতারিত হয়েছিল মক্তিযোদ্ধারা
২০১৭ সালে মধ্য বয়সে প্রতারিত হয়েছে সেই শিশু
হারুন কমান্ডার এখন দেনাদার
সেই শিশু এখন পাওনাদার

লড়াই চলছে
লড়াই চলবে

হারুন কমান্ডারের গুষ্টিতে ভরে গেছে বাংলাদেশ
লড়াই চলছে দূরপাল্লার
যেকোন যুদ্ধেই একদল যোদ্ধা হেরে যায়
অন্যদল জিতে যায়

হার জিৎ নির্ভর করে যুদ্ধের কৌশল, যোদ্ধার মনোবল, যোদ্ধার সময় জ্ঞান, যোদ্ধার শক্তি ও নীতির উপর।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো । কানাডা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *