কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে ভারতের রাজ্যসরকার পদপার্থী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশে ভারতের রাজ্যসরকার শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিলেন। উনি অনেক মহৎ। উনি অনেক দয়াবতী। উনি শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে নিজে সরে দাঁড়ান। উনি শেখ হাসিনার সাথে বসে হেসে হেসে ক্ষমতা ভাগ করে ভারতের রাজ্যসরকার প্রশাসনের স্বপ্ন দ্যাখেন। উনি ভারতের রাজ্যসরকার হবার জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বপ্ন দ্যাখেন । ভারতের রাজ্যসরকার হবার জন্য নির্বাচনের কোন দরকার নেই। মনোনয়নের দরকার আছে। হতে পারে ভারতের নির্দেশ ছিল এই
– যদি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় তাহলে দিল্লী বিবেচনা করে দেখবে ভারতের রাজ্যসরকার হিসাবে খালেদা জিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া যায় কিনা।
উনি ভারতের রাজ্যসরকারের সদস্যদের মৃত্যু হলে শোকাভুত হয়ে সব চাইতে আগে দৌড়ে যান।
উনি নিজে সহ উনার দলের মোটামুটি সব নেতাকর্মীদের নামে রয়েছে বিশ পচিশটা করে ভুয়া মামলা। অনেকে ভুয়া মামলা কাঁধে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে ইন্তেকাল করেছেন।
বাংলাদেশে আসলে কেউ অপরাধী নয়। সবাই নিরীহ সবাই সুন্দর সবাই ভুল করে ভুল করে ফেলেছে তাই একজন মানুষ না জেনে না বুঝে যখন অপরাধ করে ফ্যালে তখন তিনি বা তাহারা ক্ষমার পেতে পারেন বৈকি। আমরা শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনাকে কখনো ব্যংক ডাকাতি করতে দেখিনি। আমরা শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনাকে কখনো গুলি করে মানুষ হত্যা করতে দেখিনি। সেদিন যখন পুলিশ একটা ছেলের বুকের উপর বুট দিয়ে পিষ্ট করছিল, তখন সেই ছেলেটি দুইহাত জোড় করে মাফ চেয়েছিল। পুলিশ তাকে ক্ষমা করেনি। ছেলেটিকে গুলি করে চলে যায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা যখন বিশ্বজিৎ কে পিটাচ্ছিল তখন রক্তাক্ত বিশ্বজিৎ বার বার ক্ষমা চাচ্ছিল বার বার বলছিল তার নাম আর সে রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তবু বিশ্বজিতকে ক্ষমা করা হয়নি। যারা বিশ্বজিৎ কে হত্যা করেছে তারা ক্ষমা পেয়ে গেছে। তাহলে আমরা কি দেখছি? যারা হত্যা করে তারা ক্ষমা পেয়ে যায় কিন্তু যাদেরকে হত্যা করা হয় তাদের দুইহাত জোড় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। খুনী তাদের ক্ষমা করেনা। সেদিন মাদ্রাসা থেকে অনেক ছেলে এসেছিল মহানবীর অপমানের প্রতিবাদে। আর্মড পুলিশ যখন ওদের ঘিরে ফ্যালে তখন শাপলা চত্বরের চারিদিকে আগুন জ্বলছিল, গুলির আওয়াজে মুখরিত ছিল মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা। এতিম আলেমরা কানে ধরে মাফ চেয়েছিল সেদিন। ১৫৫০০০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ খরচা হয় তাদের উপরে কিন্তু মাফ করা হয় নাই। ক্ষমাভিক্ষারত দুই হাত নিথর হয়ে গেছে। পথে ফেলে যাওয়া তাজবিহ, রক্ত, বদনা, লাঠি আর ছেড়া দরুদ শরীফের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মধ্যরাত্রীতে, ক্ষমা করা হয়নি তাদের, তারা সবাই রং মেখে শুয়েছিল। পুলিশ দেখে পালাতে চেয়েছিল কিন্তু পুলিশ তাদের ধরে যার যার বাসাতে পৌছে দিয়ে এসেছে। সবাই যার যার বাসায় পৌছে গেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে খালেদা জিয়াও নিরাপদে তাঁর বাসায় পৌছে গেছেন।
সেদিন খালেদা জিয়ার দলের একজন সদস্যের চোখ বাঁধা লাশ পাওয়া যায়। বাঁধা দুটো হাত জোড় করা – সম্ভবত ছেলেটি তার খুনীর কাছে প্রান ভিক্ষা চেয়েছিল । ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু ক্ষমা করা হয়নি তাদের। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে, খালেদা জিয়ার দলের একজন কর্মী স্ত্রীর জন্য ধাত্রী খুঁজতে বের হলে তাকে গুলি করে হত্যা করে বন্দুক যুদ্ধে মৃত ঘোষনা করা হয়। ক্ষমা করা হয়নি তাঁকে। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ আর সীতাকুণ্ড থেকে সাতক্ষীরা – বিএনপি আর জামাত শিবির নেতাকর্মীদের গুম খুন করা হয়েছে – কারুকে ক্ষমা করা হয়নি। বাবাকে না পেয়ে মায়ের সামনে সন্তানকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। সেই ছেলে ক্ষমা পায়নি। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে খুনীরা ক্ষমা পেয়ে যায়। নির্দোষেরা ক্ষমা পায়না – হাত জোড় করা অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়া যায় পথের ধারে বা খালে বিলে। সমস্যা নেই। সেই মুক্তিযোদ্ধা উকিল, বিএনপির সদস্য যাকে টুকরো করে পানিতে ফেলে দেওয়া হয় সেই খুনী ক্ষমা পেয়ে যায়। তখন সেই উকিলের আত্মীয়স্বজনেরা খুনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়ায় । দেশান্তরী হয়, ক্ষমা পায়না।
রক্তাক্ত নয় মাস পাকিস্তানে নিরাপদে থেকে , পাকিস্তানের পাসপোর্টে ভারতের উড়োজাহাজে চড়ে ভারতে হিজরত শেষে ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিব ভারতের অঙ্গ রাজ্য বাংলাদেশে ভারতের রাজ্য সরকার নিযুক্ত হলে যুদ্ধপরাধীদের ক্ষমা করে দেয় সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার মাধ্যমে। কিন্তু বামপন্থীরা কেউ ক্ষমা পায়না। মুজিব বাহিনী আর রক্ষীবাহিনী সাড়া বাংলাদেশ ছেকে তুলে হাজার হাজার বামপন্থী হত্যা করে – কেউ ক্ষমা পায়না। জিয়াউর রহমান সেইসব মুজিব বাহিনী ও রক্ষীবাহিনীকে ক্ষমা করে দেয়।
মুজিব, জিয়া, খালেদা, — খুনীদের ক্ষমা করে দেয় যাতে সেইসব খুনীরা আরো অনেক খুনীর জন্ম দিয়ে নিরাপদে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে খুনের রাজত্ব কায়েম রাখতে পারে।
যত হয়রানিই করুক খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা — খালেদা জিয়ার স্পর্ধা নেই দিল্লীর নির্দেশ অমান্য করার । তবে এটা খালেদা জিয়ার দলের নেতাকর্মীদের মনে প্রশান্তি এনেছে। তাদের নেত্রীর এই ক্ষমা তাদের চোখে নতুন স্বপ্নের আবেশ এনে দিয়েছে। স্বপ্ন দেখতে কার না ভাল লাগে!!
খালেদা জিয়া রুমাল হাতে ড্রয়িং রুম থেকে বের হয়ে গণভবনে পা রাখলেই বাজারে দ্রব্যমূল্য নিমেষে কমে যাবে, সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষীরা গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ করে দেবে, গলায় ফুলের মালা দিয়ে চার্টার্ড শীত ও তাপ নিয়ন্ত্রিত প্লেনে করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ান্মার, জামাত শিবির ও বিএনপীর ক্রসফায়ারে মৃত বিধবা ও এতিমদের ভরণপোষনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের সকল খুনীকে সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে মিলিয়া মিশিয়া বসবাস করার জন্য পূর্ন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশে কোন বিচার বিভাগ নাই।
বাংলাদেশে কোন আইন নাই সেজন্য আইন ও শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর কোন কাজ নাই। আইন না থাকলে ওরা কি রক্ষা করবে? সবাই যার যার জাগায় শৃঙ্খলিত সুতারাং ওদের কোন কাজ নেই দেখেই ওরা ওদের জন্য নির্ধারিত স্বল্প বেতনে বাজারের পন্য মূল্যের উর্ধগতির সাথে প্রতিযোগীতা করে পেরে উঠেনা বলেই রাস্তা থেকে মানুষ উঠিয়ে নিয়ে থানাতে পিটিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাবী করে। সবাই যার যার প্রান রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে ভারতের রাজ্যসরকার মনোনিত হলে এইসব পুলিশেরা কাকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে কার পরিবারকে টাকার জন্য ব্ল্যাকমেইল করবে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। হতে পারে ওরাও সবাই সবাইকে ক্ষমা করে দেবে খালেদা জিয়ার মত।
তখন সাড়া বাংলাদেশের থানা ও হাসপাতালের মর্গগুলোতে গুলিবিদ্ধ যুবকের সব লাশগুলোকে শহীদ ঘোষনা করা হবে। যেসব পুলিশ তাদের গুলি করে হত্যা করেছে সেইসব পুলিশদের ক্ষমা করে দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হবে যাতে তারা ভারতের নতুন নতুন আমদানীকৃত পন্য কিনে ঘর সাজাতে পারে।
ক্ষমা আসলেই একটি সুন্দর ও মহৎ জিনিষ।
গত ৪৫ বছর ধরে নানা রকমের অপরাধীদের নানাভাবে নানা সময়ে ক্ষমা করে দেবার ফলেই আমরা যুগ যুগ ধরে বিদেশীদের সেবা করতে পারছি। বিদেশীদের পন্য কিনে বিদেশীদের মুনাফা করিয়ে দিতে পারছি। বিদেশে থেকে বড় বড় লেকচার না দিয়ে দেশে এসে ক্ষমার মাধ্যমে অপরাধীদের সাথে মিলে মিশে বিদেশীদের রাজ্যসরকার হয়ে বিদেশীদের সেবা করে যারা তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
অপরাধীদের ক্ষমা করে দিন। যাতে আপনি অপরাধে অংশ নিয়ে অপরাধ জগতকে নিরাপদ করতে পারেন।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা ।