বহুদিন হলো আমার সাথে কারু কোন সম্পর্ক নেই। তাই ভাবলাম সম্পর্ক সম্পর্কে লিখি। এই লেখাটা আমি লিখবো ছত্রিশ মিনিটে। কারণ আমার বাসার নীচে লন্ডিতে মেশিনে কাপড় ধৌত হতে লাগবে ছত্রিশ মিনিট। এলিভেটর দিয়ে উপরে আসতে লেগেছে এক মিনিট। লেখাটা টাইপ করতে দেখি কত মিনিট লাগে।

আমার যেহেতু কারু সাথে কোন সম্পর্ক নেই তার অর্থ এই নয় যে আমি আকাশ থেকে পৃথিবীতে ঝপ করে পড়েছি। আমার কারু সাথে সম্পর্ক ছিল না তবে আমার মায়ের সাথে আমার বাবার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীকালে ভালবাসার সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল । এবং এভাবেই আমার জন্ম হয় এবং জন্ম হবার পরে আমি দেখি আমার আরো অনেক ভাই আছেন, বোন আছেন, অনেকের সাথেই আমার সম্পর্ক আছে। তারপর সম্পর্ক আর তেমন বিস্তার লাভ হতে পারেনি।

আরো বড় হয়ে বাইরের জগতে যখন পা দিলাম তখন দেখলাম সেখানে মানুষ মানুষের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করে। তারপর বুঝলাম সম্পর্ক অনেক রকমের হতে পারে।

ভাল সম্পর্ক, খারাপ সম্পর্ক, গভীর সম্পর্ক, স্নেহের সম্পর্ক, প্রেমের সম্পর্ক, ভালবাসার সম্পর্ক, মায়ার সম্পর্ক, মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক, চাকরমনিবের সম্পর্ক, শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক, ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্পর্ক,  ইত্যাদি অনেক সম্পর্কের জাল বিস্তার করা আছে সমাজের রন্ধে রন্ধে।  চারিদিকে

এত সম্পর্ক রয়েছে তবু কেনো যেনো আমি কারু সাথেই কোনদিন কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারিনি।
কর্পোরেশনগুলোতে কাজ করার সময় মালিক শ্রমিকের সম্পর্কে আমি সব সময়ই যেহেতু শ্রমের বিনিময়ে মূল্য পেতে চেয়েছি তাই কোন রকম চাটুকারিতা বিনিয়োগ করিনি। চাটুকারিতা আমার মজুত নাই। ছিলনা কোন কালে। কেউ যদি শ্রম ক্রয় করে ভাল না হলে না খেয়ে থাকা। এই আর কি। শ্রম ও চাটিকারিতা একসাথে বিনিয়োগ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সমাজেও কারু সাথে কোন রকম সম্পর্ক হয়নি নানা কারণে। আমার কোন বন্ধুও নেই।

সম্পর্ক হয় একজনের সাথে অন্য আর একজনের বা একজনের সাথে অনেকজনের বা অনেকজনের সাথে অনেকজনের। সম্পর্ক করতে গেলে অবশ্যই দুই পক্ষের ভেতর স্বার্থ থাকতে হবে । আমাদের সমাজে একটি বহুল প্রচলিত নিয়ম হলো বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাত্রীর বয়স কম হয় এবং পাত্রের বয়স বেশী। এটা একটি অলিখিত সংবিধান । এর মূল কারণ হলোঃ উপযোগীতা  –
মেয়ের বয়স কম থাকতে যদি বিয়া দিতে পারে তাহলে সংসারে একজনের থাকাখাওয়ার খরচা কম হয়, বয়স কম মেয়ের বাজারে চাহিদা বেশী,কারণ কম বয়সে সন্তান উৎপাদন করা সহজ এবং স্বাস্থ্যের জন্য কম ঝুকিপূর্ণ।  অন্যদিকে একটি প্রতিষ্টিত পাত্র পেতে গেলে পাত্র বয়স্ক হয়ে যায়।  যে নাকি বউকে ভাত, কাপড়, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, ঠিকভাবে দিতে পারবে, স্টার জলসা দেখার অবসরের জন্য গৃহকর্মী রাখার মত যার ক্ষমতা থাকবে। বয়স্ক পাত্র যদি ভাত কাপড় শাড়ী গহনা ঘর দিতে না পারে তাহলে কোন বয়সের মেয়েই তাকে বিয়ে করবেনা। পাত্র বিকোয় টাকায় পাত্রী বিকোয় টাকা, বয়স দুইটাই। এখানে মূলত বয়সের সাথে বিনিময় হচ্ছে ক্রয়ক্ষমতার । পাত্রী কেনার মত পাত্রের ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাই।  এইভাবে নানাবিধ স্বার্থ, বাণিজ্যিক লেনদেন, দরকষাকষি করে বৈবাহিক সূত্রে একটি   সম্পর্ক স্থাপিত হয়।  এই সম্পর্কে ভালবাসা নামের একটা শব্দ আছে তবে সেই শব্দটি থাকতোনা যদি পাত্র বেকার হতো। দুইজনের কাছে দুইজনের উপযোগীতা যতদিন থাকবে ভাল না বাসলেও ভালবাসে এমনই মনে হবে।  মানুষ পরিবার গঠন করে বা পরিবার গঠন করার জন্য এক সংসার ত্যাগ করে অন্য সংসারে আসে যার যার নিজ নিজ স্বার্থে। ভালবাসার কারণে নয়। মানব সেবার কারনেও নয়। জঠর ও জৈবিক ক্ষুধা মেটাবার উদ্দেশ্যে।

ক্ষুধা অনেক প্রকারের হতে পারে। জঠর ক্ষুধা, জৈব ক্ষুধার সাথে রয়েছে টাকা বানাবার ক্ষুধা, নাম যশ ক্ষমতার হাতে রাখার ক্ষুধা ইত্যাদি। তবে সব সম্পর্কের সাথেই  জড়িত রয়েছে জঠর ক্ষুধা আর জৈব ক্ষুধার স্বার্থ । ভাত, কাপড়, বাসস্থান দিতে না পারলে কেউ সেই মানুষকে বিয়ে করে সেই মানুষের জৈব ক্ষুধা নিবৃত করতে যায়না। এই সহজ সত্য মেনে নিতে লজ্বা সেজন্য রয়েছে লজ্বা ঢাকার  ঢাকনা ও মুখোশ একটি ঢাকনার নাম “বিয়ে”। অন্যটির নাম “প্রেম”। বৈবাহিক সম্পর্ক বা প্রেম দুই সম্পর্কই  জৈবিক চাহিদার জন্য স্থাপিত হয়। এবং এই দুই সম্পর্কেই ভালবাসার কোন দরকার হয়না। সেজন্য দেখা যায় অনেক নিষ্টুর মানুষ প্রেম করছে। অনেক বদমেজাজী মানুষ যে বাইরে চুপচাপ শান্ত ব্যবহার করে অথচ ঘরের ভেতর খিটখিট করে জৈব ক্ষুধা না মিটলে। নিষ্টুর ও বদমেজাজী মানুষ যে নাকি জঠর ও জৈব ক্ষুধা মেটাতে যেকোন কাজ করতে পারে যার ভেতর ভালবাসার নাম গন্ধ নাই সে হাজার হাজার লাইন প্রেমের কবিতা লিখছে। কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে। বিশ্ব প্রেমিক খ্যাতি লাভ করেছে। এটা স্বাভাবিক কারণেই সম্ভব হয়েছে যেহেতু  প্রেমের কবিতা লেখা আসে জৈবিক অনুভূতি থেকে ভালবাসা থেকে নয়। সেজন্য প্রেমিক কবিদের হৃদয়ে জৈব ক্ষুধা থাকে, ভালবাসা থাকেনা।

ভাত দিতে না পারলে বা দেহ দিতে না পারলে বেশীরভাগ সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। যেসব বেকার ছেলেরা ফেসবুকে সারারাত জেগে হস্তমৈথুন করে তাদের প্রেম ম্যালাদিন টেকেনা কারণ তাদের প্রেমিকারা প্রতিষ্টিত ছেলে পেয়ে যায় তাদের যার যার উপযোগীতার কারণে। প্রেমিক তখন অন্য একটি প্রেম সুরু করে এবং এভাবেই বেশ কিছুদিন চালিয়ে নেয় আর এইসব সম্পর্কের ভিত্তি হলো জৈবিক , এখানে কেউ কারুকে ভালবাসার কোন দরকার নাই।

মানুষ যখন গরু পালে তখন সেই গরুকে ছোটবেলা থেকে খড়, খুদ খাইয়ে বড় করে তারপর কুরবানী এলে অনায়াসে তার গলাতে চাকু চালিয়ে দেয় অথবা অন্য কেউ চাকু চালাবে বলে টাকার বিনিময়ে কসাইয়ের হাতে প্রিয় প্রানীটিকে তুলে দেয়। এখানে বাণিজ্য শুধু। জঠর জ্বালা মেটাতে ভালবাসা পরাজিত হয়।

কোন মা বাবাই শুধুমাত্র ভালবাসা পাবে বলে কোন ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেয়না। ছেলে বা মেয়ের জৈবিক চাহিদা মেটাতে নিজেদের অর্থনৈতিক বোঝা দূর করতে ছেলে বা মেয়ের সারাজীবনের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা দিবে এমন একজন সাথী খুঁজে নিয়ে বিয়ে দেয়। কোন নারী বা পুরুষ শুধুমাত্র ভালবাসার জন্য কোন সম্পর্কে জড়িত হয়না। যদি হতো তাহলে সম্ভবত পৃথিবী আর একটু উজ্বল হতো।

সম্পর্ক করতে গেলে স্বার্থ থাকতে হবে। যার সাথে সম্পর্ক করবে তার উপযোগীতা থাকতে হবে।
লেখাপড়া না জানা কারুকে কোন মালিক তার অফিসে চাকুরী দেয়না। মালিক তার অফিস বা কারখানাতে এমন একজন শ্রমিক বা অফিসার নিয়োগ করে যাকে নিয়োগ করলে তার মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। প্রেমের জন্য বা মানবতার জন্য নয়। একজন পুরুষ তার হাটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে যাতে তাকে ম্যানেজ করতে সুবিধা হয় যেহেতু সে বাইরের জগত সম্পর্কে অজ্ঞাত এবং অন্য পুরুষের সাথে মিশে নাই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে , সে একজন পুরুষকেই দেখছে বিয়ে হবার দিন থেকে বাচ্চা উৎপাদন, পালা, সব কিছু একজন পুরুষের অধীনে অথবা কমান্ড মেনে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে । সেখানে মালিক শ্রমিকের সম্পর্কের মত এক বৈবাহিক সম্পর্ক সেখানে ভালবাসার আদৌ কোন দরকার নেই। অথবা সেই গরুটির মত ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতেও পারে।  এই স্ত্রী যদি স্বামীর জৈবিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয় তাহলে স্বামী আর একটি নারীর সাথে সম্পর্ক করবে। এখানে স্বামী স্ত্রীর ভেতর ভালবাসা থাকলেও সেটা মূখ্য বিষয় নয় বলেই এমনটি ঘটবে ।
সমাজে অনেক ফাটলযুক্ত সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকে লোক দেখানো হিসাবে। ভালবাসাহীন সম্পর্ক টীকে থাকে যুগ যুগ ধরে হাসিমুখে। সে হাসির পেছনে হৃদয় বিদীর্ণ করা এক বিবর্ণ কান্না লুকিয়ে থাকে।

একটি মধ্যবিত্ত বেকার ছেলে একজন গৃহকর্মীকে জৈবিক কারণে ভোগ করতে পারে কিন্তু এমন দেখা যায়না যে একজন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে একজন গৃহকর্মীকে তথাকথিত “স্ত্রীর মর্যাদা” দিচ্ছে। একজন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ছেলে অন্য একটি উচ্চবিত্তে বিয়ে করতে চায় এবং অভাব থেকে বের হয়ে যেতে চায়। এটাও তার স্বার্থের কারনেই করে। গৃহকর্মীর দেহ ভোগ করে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় কারন তাকে বিয়ে করলে কোন প্রাপ্তি নাই না বিয়ে করলে কোন সমস্যা নাই। এই ক্ষেত্রে সে একজন মানুষের আর্থিক দৈন্যতার সুযোগ নিয়ে অস্থায়ীভাবে জৈবিক চাহিদা মিটিয়েছে । শুধুমাত্র দৈহিক সম্পর্ক হলেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়না, সম্পর্ক হিসাবে সমাজে স্বীকৃতিও পাওয়া যায়না। একজন যৌনকর্মীর উপযোগীতা আছে। উপযোগীতা আছে বলেই সে বাজারে টিকে আছে। সমাজই তাকে সৃষ্টি করে ব্যবহারের জন্য টিকিয়ে রেখেছে সমাজের চাহিদা মেটাতে, সমাজের স্বার্থে।

গৃহকর্মীর দেহ ভোগ একটি সম্পুর্ন ফ্রি এবং ব্যক্তিগত ভোগ যেক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক করার জন্য সমাজের অগ্নী চক্ষু দেখার ভয় নাই।  একজন গৃহকর্মীর দেহ ভোগ করলে তাকে বিয়ে করার দরকার হয় না। সেটাই সমাজের অলিখিত সংবিধানে । গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীর ভেতর পার্থক্য হলো একজন শ্রম বিক্রি করে অন্যজন দেহ। যে দেহ বিক্রি করে সে শ্রম বিক্রি করেনা আর যে শ্রম বিক্রি করে তার দেহ বিনা সম্পর্কে ভোগ যারা করে তাদের অনেকেই আবার সমাজের অন্যদের সাথে বিবাহের মাধ্যমে বা প্রেমের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা মেটাতে পারেনা নিজেদের আর্থিক সমস্যার কারণে।

বেকারদের সাথে কেউ বৈবাহিক বা প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন না করলেও বেকারদের জৈব ক্ষুধা থাকে ফলে তারা অন্য একজনের আর্থিক দৈন্যতার সুযোগ নিয়ে এই ক্ষুধা মিটিয়ে নেয়। দেহের সাথে দেহের মিলনে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তা  কিন্তু নয়। তাহলে সমাজের যেসব পুরুষেরা যৌনকর্মী ভোগ করে তাদের অনেকের সাথেই অনেক যৌনকর্মীদের সম্পর্ক রচনা হয়ে যেতো।  তবে একেবারেই যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়না তাও আবার ঠিক না। যারা যৌনকর্মী বা গৃহকর্মীদের জৈবিক চাহিদা মেটাতে ভোগ করে তাদের সবারই যৌনরোগ থাকে। সিফিলিস, গনোরিয়া, এইচ আইভি পজেটিভ থাকে। সিফিলিসে আক্রান্ত হয়েই কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন।

এইভাবে দেখা যায় সম্পর্কগুলো খুব বৈচিত্র্যময় আর সব সম্পর্কের সাথেই উপযোগীতা ও স্বার্থ জড়িত রয়েছে। পারস্পারিক স্বার্থ নেই তো সম্পর্ক নেই। স্বার্থ আছে অথচ সেই স্বার্থে সমতা নেই তাহলেও সম্পর্কে ফাটল ধরবে। স্বার্থ সমান সমান হতে হবে নয়তো  একজন আর অন্যজনকে যেভাবেই হোক ব্যবহার করার জন্য শোষন করবে। একজনকে উপায়হীন হতে হবে অন্যজনকে ব্যবহার করতে দেবার জন্য। একজন শ্রমিক উপায়হীন তাই সে উৎপাদনের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। একজন গৃহকর্মী উপায়হীন। একজন গারমেন্টস শ্রমিক উপায়হীন। একজন নারী উপায়হীন হয়ে যায় যখন সে একজন পুরুষের দ্বারা আক্রান্ত হয় । সে পুরুষ তার স্বামী হোক, বন্ধু হোক, প্রেমিক হোক বা পথ থেকে উঠে আসা নগর ছাত্রলীগ শাখার সাধারন সম্পাদক হোক।

অনেক স্ত্রী তার স্বামীর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও সম্পর্ক রাখে, তাকে চাহিবামাত্র দেহ দেয়, যেহেতু এই নারীর মেরুদ্বন্ড ভেঙ্গে গেছে। সে আর উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতা রাখেনা। সে আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনা। এই স্বামীর ঘরের বাইরে, সমাজে আরো অনেক ব্যক্তি অপেক্ষা করছে তাকে ছিড়েখুঁড়ে খেয়ে আস্তাকূড়ে ফেলে দেবার জন্য। ওদের সবার নানাজনের সাথে সম্পর্ক আছে।

যেখানে স্বার্থ নেই, চাহিদা নেই, উপযোগীতা নেই, সেখানে সম্পর্ক হতে পারেনা। স্বার্থ এক তরফা হলেও সম্পর্ক হবেনা।

একতরফাভাবে কোন স্বার্থ ছাড়া শুধুই ভালবেসে যদি কেউ  বন্ধুত্বের সম্পর্ক করে তাহলে যার স্বার্থরক্ষার জন্য সে বন্ধুত্ব করছে সে পুরাপুরি সুযোগ নিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে এই ভালবাসাকে শূণ্যে উড়িয়ে দেবে। যেহেতু দুইজনের স্বার্থ ছিলনা সম্পর্কে যেহেতু একতরফা  বা একজনের স্বার্থ ছিল সেহেতু মূলত কোন  সম্পর্ক সৃষ্টি  হয়নি বা হতে পারেনি।

ভালবাসা সম্পুর্ন মূল্যহীন এই সম্পর্কে।  সমাজের  বেশীরভাগ সম্পর্কেই ভালবাসার কোন উপযোগীতা বা দরকার নেই।অথবা বলা চলে শুধুমাত্র ভালবাসার উপর ভিত্তি করে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেনা। গড়ে উঠলেও তা টিকেনা। স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলেই ভেংগে যায়।

ভালবাসা কখনও কোন মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করতে পারেনা। কারণ ভালবাসার কোন মাপকাঠি নেই। ভালবাসা দেখা যায়না। স্পর্শও করা যায়না। খাওয়া যায়না।  শুধু অনুভব করতে হয়। একজন মানুষের মনে কি আছে অন্য একজন মানুষ তা বুঝতে পারেনা যদি সে স্বার্থান্ধ হয়। সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে উভয়ের ভেতর বাণিজ্যিক স্বার্থ বা এমন লেনদেন থাকতে হবে যা ছোঁয়া যায়,যার পরশে সুখ অনুভব করা যায়, পরিতৃপ্ত হয় দেহ এবং মন। হয় একজন অন্যজনের খাদ্য হতে হবে নতুবা খাদক হতে হবে। খাদ্য বা খাদকের সম্পর্কে “ভালবাসার” কোন চাহিদা বা প্রয়োজন  নেই।

মানুষ ছাড়া যেকোন প্রানীর সাথে খুব সহজেই ভালবাসা দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। কুকুরকে শুধুমাত্র ভালবেসেই আমৃত্যু সাথে রাখা যায়। এমন কি না খেতে দিলেও কুকুর নিজের খাবার নিজে যোগার করে খেয়েও যে তাকে ভালবাসবে তার কাছে এসে বসে থাকে।  চেষ্টা করে দেখিনি সম্ভবত সাপকেও ভালবাসলে সাপের সাথে একটা ভালবাসার  সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব । বেশীরভাগ মানুষের সাথেই সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ভালবাসার কোন স্থান, উপযোগীতা, চাহিদা, বা প্রয়োজন নেই।

সম্পর্কে ভালবাসার কোন প্রয়োজন নেই সেজন্য আমার সাথে কারু কোন সম্পর্ক নেই।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *