পুঁজিপতিদের সুখে দুখে হাসিতে কান্নায় শোকে অংশগ্রহণ করার অধিকার আমাদের নেই। একজন শোষিতের চামড়া গন্ডারের মত হয়। যুগ যুগ ধরে শোষন চলার ফলে চামড়াতে আর শোক অনুভূত হয়না। বিশ্বের যেকোন সমাজেই শোষিতের দুঃখ কস্ট কান্নার জন্য মূলত পূজিপতিরাই দায়ী। একদল মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার ভাত, কাপড়, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা ইত্যাদি থেকে বঞ্ছিত করেই সমাজের কিছু মানুষ পুঁজির মালিক হয়।
পূঁজি, ক্ষমতা থেকে আভিজাত্য আসে। অভিজাত ঘরের কোন মহামানব আত্মহত্যা করলে সাড়া বিশ্বের সবাই দুঃখি হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত। পুঁজিপতিদের পূজিপতি হতে সব চাইতে বেশী সাহায্য করে মধ্যবিত্তেরা। পুঁজিপতিদের প্রপোগান্ডা মেশিন হিসাবে মধ্যবিত্তেরা প্রতিনিধিত্ব করে। শোষনকে ধামাচাপা দিতে নানাভাবে সাহায্য করে । মধ্যবিত্ত জনগোষ্টির ভেতর রয়েছে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি ও সাধারণ মানুষ। তারা নিজেদেরকে নিচু শ্রেনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়না সেজন্য পুঁজিপতিদের পদলেহন করে শোষনের প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে শ্রমিকের রক্ত ঘামকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে তার মুনাফা পৌছে দেয় পুঁজিপতির ব্যাংক একাউন্টে।
সেজন্য আমরা দেখি শিশু ধর্ষনের তীর্ধস্থান বাংলাদেশে দরিদ্র বাবা তার শিশুকে নিরাপদ করতে পারেনা বিধায় শিশুটি ধর্ষিতা হয় আর পুলিশকে ঘুষ দেবার সামর্থ না থাকার কারণে ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হয়। তারপর ধর্ষিতা শিশুকন্যাকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাপিয়ে পড়ে বাবামেয়ে দুইজনে আত্মহত্যা করে। কোন নীল তিমি খেলার কারসাজি ছিলনা এই আত্মহত্যার পেছনে। এই শিশুটি ও তার বাবা কোন অভিজাত পরিবারের কেউ নয় সুতারাং সাড়া দেশে কেউ কান্নাকাটি করেনি। যে সমাজ শিশু ধর্ষন রোধে দরিদ্র শিশুকে নিরাপদ করার জন্য কোন রকম ব্যবস্থা নিতে পারেনা সেই একই সমাজে যখন একটি সম্পদশালী পরিবারের শিশু নীল তিমি খেলার নির্দেশনা মেনে আত্মহত্যা করে তখন সাড়া দেশে শোক, দু;খ, সতর্কতার বানীতে ছেয়ে যায়।
ক্ষুধা নয়, নিরাপত্তার অভাব নয়, টাকার অভাব নয়, ধর্ষন নয় – এই আত্মহত্যার কারণ ছিল একটি ভিডিও গেম।
সব মৃত্যুই দুঃখজনক তবে এই মৃত্যু রোধ করা যেতো । নেশা এক ধরনের মৃত্যু । নিজেকে নেশার নিয়ন্ত্রনে তুলে দিয়ে আত্মহত্যা করার আগে সতর্ক হবার অনেক সময় ছিল। সতর্ক করার সময় ছিল। এই শিশুটি যে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে ঠিক সেই সিলিং ফ্যানের সামনে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলে দেখতে পেতো হাজার হাজার মানুষ ছুটছে, ছুটছে আর ছুটছে। ছুটছে বেঁচে থাকার আশায় – আগামীকাল পেটে একটুখানি খাদ্য দেবার জন্য যদি কিছু কাজ পাওয়া যায় সেই আশায় ছুটছে, যদি কোথাও কোন সাহায্য পাওয়া যায়, শ্রম দিয়ে, সন্মান দিয়ে, ক্ষুধা মেটানোর জন্য ছুটছে। সবাই বাঁচতে চায়। যার টাকা নেই, চাকুরি নেই, আগামীকাল কি খাবে তা জানা নেই সেও বাচতে চায়। [একজন ফাঁসীর আসামীর শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হলে সে বলে
—- হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের এক কোন ধরে ঝুলে থেকে যদি বাঁচতে দেওয়া হয় তাহলে সেভাবেই সে বাচতে চায় তাকে বাঁচতে দেওয়া হোক (সংগৃহীত)]
ছাত্রলীগ বা আওয়ামীলীগের সদস্যেরা ধর্ষন করলে, হত্যা করলে তাদের কোন শাস্তি হয়না। নীল তিমি গেম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হতে পারে যদি আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ বা মুজিব পরিবারের কেউ এই গেম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আত্মহত্যা করে। ওরা কেউ সম্ভবত আত্মহত্যা করে না বরং অন্যদেরকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
দুর্নীতি করে বাপে টাকা উপার্জন করে আনে পরিবারের সদস্যদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য, মেয়ের হাতে উঠিয়ে দেয় দামী মোবাইল, মেয়ে সেই মোবাইলে সেলফি উঠিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে পাঠায় সারারাত বয়ফ্রেন্ডের সাথে গেম খেলে একদিন তার দেখা মেলে নীল তিমির সাথে।
ছুঁড়ে দেয় চ্যালেঞ্জ। জমে উঠে নেশা। স্বর্না নেশার কাছে আত্মসমর্পন করে। নীল তিমি আত্মহত্যা গেম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে সেই নেশা তাকে টেনে নিয়ে চলে এক অদ্ভুত দেশে। এই নেশার দ্বারা সে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। সেই মেয়ে যে পরিবারে জন্ম নিয়েছে, যেদেশে বসবাস করে, সেই দেশে, তার বাবার সেই বহুতল ভবনের নীচে আরো অনেক মানুষ বাস করে, কিন্তু স্বর্না জানেনা কিভাবে তারা বেচে আছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮০% মানুষের জীবন সম্পর্কে এই শিশুটির কোন ধারণা নেই। অথচ প্রযুক্তির উন্নয়ণের সুফল ভোগে তার নেশা তার পারিপার্শ্বিকতা ছেড়ে উঠে গেছে অনেক উঁচুতে মহাশুন্যে এক অবাস্তব জগতে। যেখানে নীল তিমি বাস করে।
Blue Whale (game)
নীল তিমি আত্মহত্যা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যারা প্রান দেয় তাদের তালিকা দেওয়া হলোঃ
উরোগুয়েতে একটি তেরো বছরের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করে ।
যুক্তরাষ্ট্র
৮ই জুলাই, ২০১৭ – ১৫ বছরের একটি ছেলের লাশ পাওয়া যায় টেক্সাসে
ছেলেটির মোবাইল ফোন ছেলেটির মৃত্যু ঘোষনা করে।
এর পরে আটলান্টাতে একটি মেয়ে মারা যায় এই গেমের কারণে
এই গেমে অংশ নিয়ে ওকলাহামাতে একটি ১১ বছরের ছেলে আত্মহত্যা করে
তুরস্কের একটি পরিবার সরকারকে এই গেম সম্পর্কে তদন্ত করার আবেদন করে, পরিবারের বিশ্বাস তাদের ছেলের আত্মহত্যার কারণ এই নীল তিমি খেলা
স্পেনের বার্সিলোনাতে একটি কিশোরী মানসিক হাসপাতালে আসে এই গেমে প্রভবিত হয়ে
সার্বিয়াতে একটি ১৩ বছরের ছেলে নিজের হাত ক্ষতবিক্ষত করে ফ্যালে এই গেমে প্রভাবিত হয়ে
৫ই জুন, ২০১৬ – সৌদী আরবের একটি ১৩ বছরের ছেলে আত্মহত্যা করে। সে তার প্লে স্টেশনে এই গেম খেলতো
মার্চ ২০১৭ – ১৩০ জন কিশোর কিশোরী আত্মহত্যা করে রাশিয়াতে।
ফেব্রুয়ারিতে একটি ১৫ ও ১৬ বছরের কিশোর আত্মহত্যা করে ১৪ তলা ভবন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে
সাইবেরিয়াতে ১৫ বছরের একজন আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে নীচে তুষারের উপরে পড়ে আঘাত পায়, আহত হয় কিন্তু বেঁচে যায়।
পর্তুগালে ১৮ বছরের একটি কিশোরী ট্রেনের নীচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে
পোলান্ড – পোল্যান্ডের তিনজন কিন্ডারগার্টেন ছাত্র নিজেদের আঘাত করে
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭ পাকিস্তানের দুইজন নীল তিমি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আত্মহত্যা করে
৩রা মে, ২০১৭, কেনিয়াতে একজন কিশোর তার দাদার হোটেল কক্ষে আত্মহত্যা করে নীল তিমি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে
ইতালী – ইতালীয়ান মিডিয়া সব চাইতে বেশী সোচ্চার ছিল এই নীল তিমি খেলা সম্পর্কে ফলে ইতালীতে কোন আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়নি । মিডিয়ার সতর্কতার কারণে অভিভাবকেরা সতর্কই শুধু হয়নি সন্দেহজনক কোন খেলা খেলতে দেখলে সাথে সাথে হস্তক্ষেপ, অনুসন্ধান, ও পরিহারের ব্যবস্থা করেছে।
ভারত – পুরা ২০১৭তে বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ভারতে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। গরু জবাইয়ের অপরাধে ভারতে মানুষ হত্যা করা হলে ভারত সরকার নির্লিপ্ত থাকে। পাশের দেশ বাংলাদেশে ভারতের বর্ডার গার্ড মানুষ হত্যা করলে ভারত তাদের সীমান্ত রক্ষীদের পুরস্কৃত করে – Trigger Happy (The Bangladesh-India Border shoot at sight policy) আর নীল তিমি চ্যালেঞ্জে ভারতের শিশু কিশোরকে সতর্ক করার ব্যাপারে ভারত সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানা যায়নি। সাড়া বিশ্বের সব দেশের চাইতে ভারতের আইটি বিশেষজ্ঞেরা এগিয়ে আছেন এবং তারা ইচ্ছা করলেই ভারত থেকে এই গেমকে চিরতরে বিদায় দিতে পারে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তবে প্রতিটি গেম এপসই তৈরি করা হয় বাণিজ্যি ও মুনাফার স্বার্থে। গেম এপস যারা ডেভেলপ করে তারা এই কাজ করে খুব ভাল বেতন পায় এবং এই কাজে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। গেমস এপস এর মাধ্যমেই বিভিন্ন প্রতিযোগী সার্ভারে ভাইরাস ছড়ানো হয়। পুঁজিপতিরা তাদের ইনফরমেশন টেকনোলজীকে নিরাপদ করতে আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। এই গেম যদি তাদের স্বার্থের পরিপন্থি হয় তাহলে এই নীল তিমি চ্যালেঞ্জের টিকিও খুঁজে পাবার কথা নয়।
চীন – প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা আর একটি দেশ। যে দেশের মানুষ মূলত মেশিনের মত। বিস্মিত হয়েছি। চীনেও নীল তিমি দংশন করেছে। যারা বিশ্বের বাজারে এমন কি চাঁদে গেলেও চীনের পন্য পাওয়া যাবে। নীল তিমি গেম চ্যালেঞ্জের মত চীন সাড়া বিশ্বের জন্য একটি অর্থনৈতিক দ্যালেঞ্জ। যাই হোক চিনের একটি ১০ বছরের কিশোরীও নীল তিমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আত্মহত্যা করেছে।
চিলি – ১২ বছরের একটি মেয়ে তার শরীর ক্ষত বিক্ষত করে ১৫ জাগাতে কেটে। ১৩ বছরের একটি মেয়ে তার হাত কাটে। ১১ বছরের একটি ছেলে ফেসবুকের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে পরে অন্য একজনের বলাতে তা প্রত্যাখান করে।
বুলগেরিয়া – ফেসবুকের মাধ্যমে সবাই সচেতন হয় এবং জনগনকে সতর্ক করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে
ব্রাজিল – বেশ কিছু আত্মহত্যা ও নিজেদের আঘাত করার খবর পাওয়া গেছে।
আর্জেন্টিনা – নীল তিমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ১৪ বছরের করে একটি ছেলে হাসপাতালের ইনটেনসিফ কেয়ারে ভর্তি হয়।
শেষ কথা
শেষ কথা বলে কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষ পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের কবরে, লুকিয়ে থাকে পুলিশের ভয়ে। বাংলাদেশের মানুষ পাওয়া যায় ইউনাইটেড আরব আমিরাতস এর পথে পথে – ভিসা নাই কাজের অনুমতি নাই দৌড়ের উপরে আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাওয়া যায় ইতালীর পথে পথে, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। বাংলাদেশের মেয়েদের পাওয়া যায় ভারতের বেশ্যালয়ে, যৌনদাসী হিসাবে সৌদী আরবের ঘরে ঘরে, ওমানে, কাতারে, বাংলাদেশের বাসের ভেতর বাংলাদেশের মেয়েরা ধর্ষিতা হয়। বাংলাদেশের নারীপুরুষ কারু জীবনের কোন মূল্য নাই – নিরাপত্তার চিন্তা করা অমূলক। যারা পেটের ভাত যোগাড় করতে পারেনা তাঁরা যদি তাদের শিশুর হাতে দামী মোবাইল তুলে দেয় – অসুবিধা নাই। বাস্তবে সুন্দর জীবন দেখেছে উঁচু উঁচু ভবনে বসবাসরত মানুষের মুখেতে, অভিজাত এলাকাতে, পথভর্তি প্রাইভেট গাড়িতে তাই এইসব স্বপ্ন যদি কোনদিন মোবাইলের ভেতর গেমের মাধ্যমে ধরা দেয় – মন্দ কি? যারা রাস্তায় বসে গার্বেজ খায়, যারা মানুষের বাসাতে কাজ করে, যারা গার্মেন্টস শ্রমিক, যারা যৌনকর্মী বা যারা পথে বসে ভিক্ষা করে তাদের সবার হাতেই মোবাইল আছে তবে আমি জানিনা তারা তাদের মোবাইলে নীল তিমি ডাউনলোড করে এই নীল নীল আত্মহত্যা চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে কিনা বা করার সময় আছে কিনা। কারণ প্রতিদিন তারা মৃত্যু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে দক্ষ হয়ে গেছে সেখানে নীল তিমি পরাজিত । তাঁরা বেঁচে থাকার প্রেরণা পায় প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে, তাদের জীবনে মৃত্যু তো যেকোন সময় ঘটতে পারে। পুলিশের গুলিতে, গ্রাহকের রোগজীবানুতে, ইয়াবাতে, গাড়ীর তেল, গ্যাসের ধুয়াতে কার্বন মনোওক্সাইডে, ক্ষুধাতে, ধর্ষনে, জবাইয়ে, গণপিটূনীতে – যেকোনভাবেই মৃত্যু হতে পারে তাদের। অভিজাত মোবাইলের অভিজাত নেশা নীল তিমি চ্যালেঞ্জের দরকার নাই।
সহজলভ্য জিনিষ যা বাংলাদেশে পাওয়া যায় তা হলো – মৃত্যু ।
সব চাইতে কঠিন হলো বেঁচে থাকা।
তাই নীল তিমি আত্মহত্যা চ্যালেঞ্জ গেম কিছুটা পিছিয়ে আছে।
মৃত্যুর জন্য আরো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে যা বাংলাদেশের জনগণকে ঘিরে রেখেছে।
নীল তিমি চ্যালেঞ্জ কেবল মাত্র ভীরের ভেতর উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। এর ভেতর স্বর্না দেখে ফেলেছে নীল তিমিকে। স্বর্ণার মাবাবা স্বর্নাকে বাস্তব থেকে দূরে রেখেছিল বলে, স্বপ্ন এসে সহজেই তাকে বন্দী করে ফেলেছে।
বাংলাদেশের অভিজাত পরিবারের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশে বসেই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানসিকভাবে উন্নত দেশে বসবাস করে।
দেহ থাকে বাংলাদেশে আর মগজ থাকে উন্নত দেশে। সেকারনেই স্বর্ণার কাছে জীবনের কোন মূল্য ছিলনা। স্বর্নার জীবনের নিয়ন্ত্রন চলে যায় নীল তিমির হাতে।
নীল তিমি আত্মহত্যা গেম চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে স্বর্না যখন নেশাগ্রস্ত ছিল তখন ঠিক সেসময়েই বেঁচে থাকার জন্য বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ কঠোর পরিশ্রম করছিল – স্বর্না যা জানতে পারেনি। লাখো লাখো নারীপুরুষবৃদ্ধ শিশু গণহত্যা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য হাজার হাজার মাইল দুর্গম পথ নদী পাহাড় অতিক্রম করে সুদূর বার্মা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। স্বর্না যখন আত্মহত্যা করার জন্য গলায় ওরনা পেচিয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে হয়তো একটি রোহিঙ্গা শিশু কাঁধে তার শিশু ভাই বা বোনকে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল জীবন বাঁচাবে বলে। তার চ্যালেঞ্জ ছিল জীবন বাঁচানো। শিশুটির চোখের সামনে তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে ধর্ষন করা হয়েছে, শিশুটি নিজেকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দৌড়াতে সুরু করেছে। বাঁচার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য কোন প্রযুক্তি বা খেলাতে অংশগ্রহণ করতে হয়না। – স্বর্ণা যদি গুগলে যেয়ে “নীল তিমি” না লিখে “রোহিঙ্গা” শব্দটি লিখতো তাহলে জীবণের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ জন্মাতো। তাহলে সে উপলবদ্ধি করতো সে কতো সৌভাগ্যবতী যারা মাথার উপরে সুশীতল ছাদ আছে, বাবামা আছেন,পেটে ভাত আছে, পরণে কাপড় আছে, হাতে দামী মোবাইল আছে আর আছে নীল তিমি আত্মহত্যা চ্যালেঞ্জ।
জীবন তো এমনিতেই সংক্ষিপ্ত । জীবনের পরিসমাপ্তি তো ঘটবেই একদিন। এত তাড়াহুড়া কেনো?
যেহেতু মৃত্যু অবধারিত তাই চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিৎ বেঁচে থাকার।
জীবিত থাকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।
যেভাবেই হোক আমরা বাঁচবো।
আমাকে বাঁচতে হবে। ক্ষুধাকে পরাভুত করে, দেশের কৃত্রিম অর্থনৈতিক মন্দাকে পরাভুত করে, সব বাঁধা অতিক্রম করে, ধুলোবালি, বৃষ্টি, রোদ, বন্যা, ক্রসফায়ার, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল, মিথ্যাচার, প্রতারণা, বুলেট,দা, লগী, বৈঠা, গুম, সব সব সব কিছুকেই পরাভুত করে বাঁচতে হবে। সেটাই হওয়া উচিৎ চ্যালেঞ্জ। সুন্দর পৃথিবীতে খারাপ মানুষের তৈরি কুৎসিত বাধাগুলোকে অতিক্রম করে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। নেশার কাছে আত্মসমর্পন করে আত্মহত্যা করে যারা তারা কাপুরুষ। বীরেরা বেঁচে থাকে। বীরেরা বাঁচার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। যদি বেঁচেই থাকতে হয় তাহলে বীরের মতো বাঁচতে হবে । মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। নিজের পরিশ্রমে, নিজের বুদ্ধিতে, নিজের শক্তিতে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচতে হবে। প্রতিদিন বাঁচতে হবে সুন্দর জীবন। সততাই সুন্দর করে, সততাই শক্তি যোগায় মনে আর দেহে, একজন বীর আল্লাহ্র দেওয়া সকল নেয়ামত ব্যবহার করে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে।
স্বাগতম জীবন।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।