শুভেচ্ছা – এর সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় সুভ ইচ্ছা। আমি যখন কারুকে শুভেচ্ছা জানাবো তখন নিছক একটা অর্থহীন শব্দ লিখবোনা। আমি আসলেই চাই সেই ব্যক্তির শুভ হোক। আর যদি আমি তাকে দিনরাত অভিশাপ দেই। ঘুমে জাগরনে বলি – তোমার অনেক ক্ষতি হবে। অনেক ক্ষতি হবে তোমার।
তারপর লিখি – ঈদের শুভেচ্ছা জেনো।
তখন আমি কি বুঝবো?
ভুল করে আমার ইনবক্সে ঈদের শুভেচ্ছা এসে গেছে। অথবা পাইকারি হারে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে যেয়ে যদিও আমি বন্ধু তালিকাতে নেই তবুও যেহেতু মেসেঞ্জার তালিকাতে আমার নাম শোভা পাচ্ছে সেজন্য হতে পারে এই অনাকাঙ্খিত শুভেচ্ছা আঙ্গুল ফস্কে এসে গেছে আমার ইনবক্সে।
তখন আমার রাগ হবে। মনে আসবে অতীতের অভিশাপ বানী। আমার অনেক ক্ষতি হবার অভিশাপ। এই অভিশাপ যখন আমি শুনেছিলাম বা যখন এই অভিশাপ আমাকে দেওয়া হয়েছিল তখন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কষ্ট পেয়েছিলাম । যখন শুভেচ্ছার পাইকারি টেক্সট পেলাম তখন কষ্টগুলো মনে এলো। আমার ক্ষতি ছাড়া কিছুই হয়নি কোনদিন। যার পাশেই গেছি বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেছি নিজের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে নিজের ভবিষ্যতের । নতুন ক্ষতি হবার অভিশাপ আর কত ক্ষতি করবে?
এই অভিশাপে আমি পঙ্গু হয়ে যেতে পারি।
আমি এমনিতেই একা মানুষ। দিনরাত পারিপার্শ্বিক সব কিছুর সাথেই লড়াই করে টিকে আছি। এই অভিশাপ যদি আমাকে পঙ্গু করে দেয় তাহলে আমি হুইল চেয়ারের উপরে নির্ভরশীল হয়ে যাবো। আমার সুন্দর পা দিয়ে আমি আর সদর্পে হেটে যেতে পারবোনা। দৌড়ে বাস ধরে অফিসে যেয়ে কাজ করে কামাই করে সেই টাকার সিংহভাগ ঋন পরিশোধ করতে পারবোনা তখন আমাকে দেওলিয়া হতে হবে আর পঙ্গু ভাতার উপরে নির্ভরশীল হতে হবে। অভিশাপ যদি আমি মেনেই নেই আর অপেক্ষা করি এই অভিশাপ আমার কাছে কিভাবে কোন রুপে কোন আঘাতে এসে হাজির হবে। সেই অপেক্ষার মধ্য যদি শুভেচ্ছা বানী আসে তাহলে আমি বিভ্রান্ত হই।
তখন ভাবি – আসলে কোনটা মেকী? কোনটা ঠিক। যখন অভিশাপ শুনেছিলাম তখন আমি খুঁজে পাইনি কোন দোষে আমি অভিশপ্ত। আমি তো লেখার সময় কারুকে শুভেচ্ছা জানাইনে তবে তাদের যাতে শুভ হয় সেজন্য পাশে যেয়ে দাঁড়াই নিজের ক্ষমতা না থাকলেও নিজের আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে, নিজেকে সমস্যাই ফেলে অন্যকে সাহায্য করতে যাই সেক্ষেত্রে আমাকে অভিশাপ কেনো?
মনস্থির করেন ঃ শুভেচ্ছা জানাবেন? নাকি অভিশাপ দেবেন?
যদি অভিশাপ দেন তাহলে আর শুভেচ্ছা জানাবেন না। প্লীজ। অভিশাপকে আমি রেখে দিয়েছি না জেনেই আমার অপরাধ কি ছিল এই অভিশাপ প্রাপ্তির।
আর অভিশাপ জানিয়েও যদি আবার কিছুদিন পরে শুভেচ্ছা জানান তাহলে আমি আপনাকে অনেক ঘৃণা করবো। কেনো জানেন? কারণ আমি আপনার মত মুখোশ লাগিয়ে চলিনা। আমি যখন না খেয়ে থাকি তখন চোর ডাকাত আর ধোকাবাজেদের সাথে প্রেম করার জন্য বড়লোকের অভিনয় করিনা। যার পেটে ভাত আছে, অপচয় করার জন্য অন্যের চোষা রক্তে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স আছে তাদের সাথে আমার প্রেম আসেনা। বমি আসে।
তাদের শানে ন্যাকা ন্যাকা কবিতা আসেনা
তাদের সুখের সাথে অন্য মানুষ ঘাম, রক্ত, কস্ট মিশ্রিত আছে। অনেক মানুষের দুঃখের বিনিময়ে তাদের সুখের প্রাপ্তি ঘটেছে আর আমি এখন অভাবী মানুষ যদি তাদের সাথে যেয়ে সুখী হবার অভিনয় করি তাহলে আমি একজন নিকৃষ্টতম আত্মপ্রবঞ্চক।
একজন আত্মপ্রবঞ্চক যখন অভিশাপ দেয় আবার শুভেচ্ছাও জানায় তখন আমি সেই আত্মপ্রবঞ্চককে ঘৃণা করি।
আসসালামুওয়ালাইকুম – কথাটার অর্থ হলো আপনার উপরে আল্লাহ্র শান্তি বর্ষিত হোক। যেকোন মানুষকে দেখলেই আমরা সালাম দেই। অথচ আমরা সবার ভাল চাইনা। আমরা অনেকেই নিজের ছাড়া আর কারু ভাল চাইনা। কথার সাথে কাজের মিল থাকেনা। মুখে একটা বলি কাজে আর একটা করি তাহলে কেনো এই সালাম বিনিময়? কেনো এই শুভেচ্ছা বিনিময়। শুভ হোক এটা চাইলে তো আপনি আমার দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াতেন । অর্থ দিয়ে না হোক – ভালবাসা দিয়ে, হাসি দিয়ে, ভাল কথা দিয়ে। অভিশাপ দিয়ে নয় পাইকারি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নয়। একজন বন্ধু অন্য একজন বন্ধুর পাশে থাকে সুখে, দুঃখে, অসুখে, আর্থিক অনটনে, অভাবে, আর মৃত্যুর সময়ে।
যদি না থাকে তাহলে সে বন্ধু নয়। সে শত্রুও নয়। সে একজন ভন্ড।
আমি যখন বাণিজ্যিক পত্র লিখি তখন ব্যবসায়ীকে শুভেচ্ছা জানাইনে। কাজের কথা লিখি। আমি যদি দেনাদার হই তাহলে আমি আমার দেনা পরিশোধ করে লিখি – এখানে তোমার দেনা পরিশোধ করা হইল। আমি যদি পাওয়াদার হই তাহলে লিখি – দয়া করে আপনার জন্য কৃত আপনার ঋণগুলো পরিশোধ করুন। আমি আমার ব্যণিজ্যিক গ্রাহকদের বন্ধু বলে ডাকিনা। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক আর্থিক লেনদেনের। আমি আমার বাণিজ্যিক গ্রাহকদের অভিশাপ দেইনা আশীর্বাদ দেইনা। এসবে কিছু আসে যায়না।
আমি কারুকে বন্ধু ডাকিনা যদি সে আমার বন্ধু না হয়। আমি বিশ্বাস করি আমি তাকেই শুভেচ্ছা জানাবো আমি যার ভাল চাই। আমি যার সুভ কামনা করি। ব্যাঙ্ক ছাড়া আমি কারু থেকে কোন দিন ঋন নেইনি। ব্যাঙ্ক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান। ঋণের টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করলে আমাকে কোর্টে নেবে আমার সম্পত্তি যা কিছু আছে তা বিক্রি করে আমাকে ঋন পরিশোধ করতে বাধ্য করবে। অভিশাপ দেবেনা বা শুভেচ্ছা জানাবেনা।
যখন স্বামীস্ত্রীর তালাক হয়ে যায় বা বিচ্ছেদ হয় তখন এরা কেউ তাদের অতীতের প্রেমময় সময়ের কথা মনে রাখেনা। বেশীর ভাগ তালাক হয় আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে । আমার মত নির্বোধ অনেক কম আছে যারা ভালবাসা না পেলে তালাক দেয়। আমি আমার প্রাক্তন স্বামীকে শুভেচ্ছা জানাইনা। আমি তার অসুভ কামনাও করিনা। যেহেতু সে আমার কেউ নয় তাই সে পৃথিবীর অন্য সব মানুষের মত। আমি পৃথিবীর সবার জন্য শুভ কামনা করি। আমাকে যে অভিশাপ দিয়েছে তার জন্যও আমি শুভ কামনা করি। তবে সেটা সময় প্রমান করবে। টেক্সট করে আমি কিছু প্রমান করতে পারবোনা
“Sorry” এই শব্দটি আমরা খুব ঘণ ঘণ ব্যবহার করি যাতে আবার দরকার হলে করতে পারি। এই শব্দের আসলে কোন অর্থ নেই। কেউ দুঃখিত হয়না। একজন ভাল বন্ধুকে যে অভিশাপ দেয়, স্পষ্ট করে বলে
“তোমার অনেক ক্ষতি হবে”
যে যদি “sorry” বলে তাহলে আমি বুঝে নেবো । সে আমার আরো ক্ষতি করার সুযোগ চায়। আমাকে অভিশাপ দিয়ে, আমার আর্থিক ক্ষতি করে সে আমার আর্থিক ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করছেনা। “দুঃখিত” বলে পুষিয়ে নিতে চাইছে।
sorry I cannot be your friend
sorry I cursed you
sorry I dumped you
sorry I hate you
sorry I hurt you on purpose
sorry I didn’t count you as a human being
sorry I got to go, someone is waiting for me
sorry I lied
sorry I hang up on you because my girlfriend was calling me (my girlfriend is daughter of the biggest thief in Bangladesh so she is very important)
উপরোক্ত কোন “Sorry” ই দুঃখ প্রকাশ নয়। ইংরেজেরা এই শব্দ আবিস্কার করেছে তার পেছনে যুক্তি ছিল এইটা । ওরা সাড়া বিশ্বের সম্পদ চুরি করে নিজেদের দেশে এনে জমা করে নিজের দেশকে সুন্দর করে বলবে “বিশ্ববাসী সরি আমি তোমাদের দেশে যেয়ে তোমাদের মানুষকে কুকুরের মত গুলি করে হত্যা করে তোমাদের দেশের সম্পদ লুট করে নিয়া আসছি – যা পারো করো গিয়া – সরি। মাফ করে দিও ভুল করে থাকলে। আমার কাজ হয়ে গেছে। মাফ না করলে বসে থাকো আর যা যাইয়া যা খুশী করো। তোমার ক্ষতির বিনিময়ে আমার লাভ হয়েছে – sorry and take it easy!!
এই কথা শুনিয়া সাড়া বিশ্বের দাসেরা বলিলো – আহা সাহেবরা কি মহান। আচ্ছা সাহেব খাড়ান আমি আপনেদের পাদুকা আমার জিহ্বা দিয়া ধুইতে গ্রেট বৃটেনে আসিতেছে।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা