মিয়ান্মারের ১৩টি বিদেশী বিনিয়োগকারী কোম্পানীর ভেতর তিনটি কোম্পানী সিঙ্গাপুর ও হংকং এর, দুইটি কোম্পানী সাউথ কোরিয়া এবং জাপানের, বাদবাকী বিনিয়োগকারী কোম্পানীগুলো চীন, থাইলান্ড ও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের।
মিয়ান্মারে চীনের ১৮৩ টি প্রজেক্টে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। মিয়ান্মারের অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশের মধ্য চীন অন্যতম বড় বিনিয়োগকারী দেশ । চীনের দ্বৈত সাগর কৌশলে (Twin-Ocean Strategy ) রাখাইনের মেড দ্বীপ থেকে দ্বৈত পাইপ লাইন এর একটা দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যটা দিয়ে তেল সরবরাহ করা হবে। সরবরাহকৃত এই প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল চীনের ৬% চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। এই পাইপলাইনটি ইতিমধ্য ব্যবহার করা সুরু হয়ে গেছে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা মনে করি রোহিঙ্গাদের রক্তাক্ত ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলে, পোষ্ট করলেই বিশ্ব বিবেক জেগে উঠবে। বিশ্ব বিবেক এসব নিয়া মাথা ঘামায় না। জাতীসংঘ জানে মিয়ানমারে গণহত্যা হচ্ছে।
মিয়ান্মার কেনো বিশ্বের কোন দেশের গণহত্যা বন্ধ করার ক্ষমতাই জাতীসংঘের নেই। ক্ষমতা নেই কেন? কারণ গণহত্যার নির্দেশ যারা দিয়েছে সেইসব দেশের চান্দার ডলারে জাতীসংঘের মহাসচীব আর কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। গনহত্যার নির্দেশদাতা ও গণহত্যার পরিচালকদের ভেতর সম্পর্ক হলো প্রভু-ভৃত্যের। গণহত্যা পরিচালনা ও কার্যকর করার জন্য আর্মী ও বৌদ্ধদের যারা নিয়োগ করেছে, বেতন দিচ্ছে তারা জাতিসংঘের শক্তিশালী সদস্য দেশ। যেমন চীন। আরাকানের নীচে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল রয়েছে যার রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে চীন। চীন সেখানে বন্দর তৈরি করেছে । মিয়ান্মারকে উন্নত করতে চীন ব্যাপক সাহায্য সহযোগীতা করেছে যদিও চীনের সাথে আরাকানের ব্যাপক সংঘর্ষ ছিল অতীতকালে।
আরকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ প্রকল্প চলছে বহু বছর ধরে। এবারে রোহিঙ্গা নাম চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেছে চীন, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের অন্যতম পুঁজিপতি, সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারনবাদী দেশ হলো চীন। চীন যখন তিব্বত দখল করে, তিব্বতের মানুষের উপরে নির্যাতন নিপীড়ন চালাবার আগে প্রথম কাজ যেটি করে সেটি হলো শান্তির দূত দালাই লামাকে পশ্চিমা দেশের ফাইভ স্টার হোটেলে সুইমিং পুলের পাশে ধ্যানের ব্যবস্থা।
দালাই লামা পশ্চিমের দেশে বসে শান্তির বানী দেয় ফাইভ স্টার হোটেলের লবিতে দামী ও আরমদায়ক সোফাতে বসে আর তিব্বতীদের উপরে চলে চীনা নিপীড়ন । সেকারনেই আমরা দেখি হাত জোড় করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মদীকে সুকির মুখোমুখী দাঁড়াতে। চীন মার্কিনযুক্তরাস্ট্রকে ঋন দেয়। নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে ঋণের অংক দেখে নেওয়া যেতে পারেঃ
https://www.thebalance.com/how-much-u-s-debt-does-china-own-417016
ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু। চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু। চীন-মিয়ানমার বন্ধু। ভারত-মিয়ানমার বন্ধু।
এখানে সব বন্ধুরাই রোহিঙ্গা গণহত্যার খবর রাখে। তাই রক্তাক্ত মানুষের ছবি শেয়ার কোন বিবেককে নাড়া দেয়না।
আরাকানে পালেস্টাইনের মত জাগা খালি করা হচ্ছে আর্মী আর বৌদ্ধদের দিয়া। যেন দেখতে এমন লাগে যে এটা আগের মত একটি সাম্প্রদায়িক গণহত্যা। ৭০ বছর ধরে পালেস্টাইনে গণহত্যা চলছে জাগা দখলের জন্য।
ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য জাগা দরকার। বহুতল কনডোমিনিয়াম ও অফিস বিল্ডিং করার জন্য জাগা দরকার। পালেস্টাইনীদের হত্যা করা হয় ওরা জাগা ছাড়তে চায়না সেজন্য। পালেস্টাইনে ইহুদীরা সুন্দর সুন্দর বাড়ী বানিয়ে বিক্রি করছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাড়া বিশ্বের ইহুদীরা সেখানে সাগরের পাড়ে ব্যয়বহুল বাংলো কিনছে আর সেকারণেই সন্ত্রাস সেকারণেই জাতীসংঘ ক্যাম্পের মধ্য পালেস্টাইনীদের পশুর মত রেখে দিয়ে রেশন সাপ্লাই দিয়ে বিশ্বকে দেখায় “দেখো জাতীসংঘ কত দয়ালূ” ইউনিসেফ কি বিশাল অবদান রাখছে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের ভাত, কাপড়, আর মাথার উপরে তাবু দেবার জন্য”
জাতীসংঘ আসলে কি? একটি যাত্রাদল আর দলের নট নটিরা সব হিজড়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোমা ফ্যালে, ইসরায়েল বোমা ফ্যালে, চীন গনহত্যা করে, মানুষ মরে,বসতহীন মানুষ প্রানের ভয়ে দলে দলে ছুটতে থাকে তখন জাতিসংঘ চুপচাপ বসে তামাক টানে। তারপর বিভিন্ন দেশের জনগনের জন্য ইউনিসেফ চান্দার জন্য হাত পাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ধংস করলো, জাতীসংঘ এই ধ্বংস ঠেকাইতে পারে নাই। এখন ইরাকের এতিম শিশুদের জন্য চান্দা চাইতেছে ইউনিসেফ। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রও চান্দা দিয়েছে। একদিকে জাতীসংঘের সদস্য দেশের বোমা বর্ষিত হয়, রিফুইজী সৃষ্টি করা হয় অন্যদিকে বোমা বর্ষণকারী সদস্য দেশের চান্দা দিয়াই রিফুইজীদের জন্য রিলিফের সামগ্রী কেনা হয়।
তবু মন মানেনা। আমরা সবাই দোয়া পাঠায় । আরাইতুল কুরসী পাঠ করি। রোহিঙ্গাদের বিপদ্মুক্ত করার জন্য। বুদ্ধি খারাপ না। তবে ইলেট্রনিক্যালী ও ভার্চুয়ালী আরাইতুল কুরসী পড়ে রোহিঙ্গাদের কতটুকু নিরাপদ করা যাবে আমি জানিনা। আমি জানিনা এই কারণে যেহেতু বাংলাদেশের তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ আর সাতক্ষীরা থেকে সীতাকুন্ডর কোন নারীপুরুষই নিরাপদ নয়। বাংলাদেশে কোন আইন আদালত নেই। কোন বিচার ব্যবস্থা নেই। আরাউতুল কুরসী তো বাংলাদেশের সবার পাঠ করা উচিৎ সারাদিন কারণ বাংলাদেশের মানুষেরা কেউ নিরাপদ নয়। যেকোন মানুষ যেকোন সময় চলে যেতে পারে পুলিশ হাজতে এবং তারপর মর্গে। যেকোন মেয়েই ঘরে বা বাইরে বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকেই ধর্ষিতা ও খন্ডিত লাশ হয়ে যেতে পারে।
জাতীসংঘ যেমন জানে কাহারা এবং কি কারণে মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সবাই জানে কাহারা বাংলাদেশীদের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, হত্যা করে, কাহারা মেয়েদের ধর্ষন করে ও হত্যা করে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না, সাজা দেবার জন্য রুখে দাঁড়ায় না, ঐক্যবদ্ধ হয়না। সবাই যার যার প্রান বাঁচায়। মিয়ানমার বা বজনিয়া বা বাংলাদেশে গণহত্যা হইলে জাতীসংঘ কিছু বলেনা কারণ গণহত্যার নির্দেশদাতাদের চান্দার ডলারেই জাতীসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল আর সব কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়, দেশ বিদেশে ভ্রমন, আরামের ব্যবস্থা করা হয়।
সাধারণ মানুষ কি করতে পারে? যার যেমন সামর্থ আছে তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। পুরানা কাথা, কম্বল, বাচ্চাদের, জামাকাপড় শাড়ী নিয়া যেতে পারে । অনেকেই যাচ্ছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহায্য করছে। অনেক প্রতারকেরাও উৎ পেতে আছে, শুরু করে দিয়েছে রোহিঙ্গাদের নামে চান্দা উঠিয়ে ইয়াবার টাকা যোগারের কাজ। অনেকেই অনেক রকমের ধান্দা করে। জাতীসংঘের ধান্দা হইল সদস্য দেশ থেকে চান্দা তুলে যে দেশের যত বেশী শক্তি সেই দেশের হুকুম মত ভাষন দিয়ে বেড়ানো ও বিভিন্ন জাগাতে লোক দেখানো সাহায্য দেবার নামে যাত্রার আসর বসানো।
এই তো কিছুদিন আগেই জাতীসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়ানমার সফরে গেছিল। সম্ভবত সবার দৃষ্টি মিয়ানমার থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য যাতে ওরা নিশ্চিন্তে আরাকান খালি করতে পারে।
অনেক গণহত্যার ছবিকে আরো বেশী উগ্র করা হয়েছে। বীভৎস জিনিষকে আরো বীভৎস করা হয়েছে। গণহত্যা হচ্ছে টের পাচ্ছি। বীভৎস কিছু দেখিয়ে কিছু মানুষ কি প্রমান করতে চায় আমি জানিনা তবে যতদিন আরাকান খালি না হবে ততদিন সেখানে মানুষ হত্যা হবে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সেটাই পরিকল্পনা। ফটোসপে বীভৎস ছবি আরো বীভৎস করার জন্য একদল মানুষ নিয়োগ পেলেও পেতে পারে। প্রপোগান্ডার জন্য পুঁজিপতিরা অনেক কিছুই করে থাকে।
পূজিপতি প্রপোগান্ডা সাধারণ মানুষের মনে দয়া মায়া জাগানো । তুরস্ক এগিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ওরা যাতে আর কোনদিন আরাকানে ফিরে না যায় তেমন একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করার জন্যই এই সন্ত্রাস এই বীভৎসতা এই গণহত্যার বীভৎস ছবি আরো বীভৎস করে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলাধুলা করা।
মিয়ানমার সরকারের জন্য বিশ্বের অনেক উৎসাহী বিনিয়োগকারী রয়েছে।
বাংলাদেশে আমরা দেখেছি বিভিন্ন জাগা থেকে মানুষকে কিভাবে উচ্ছেদ করা হয়। যেকোন উচ্ছেদ ফলপ্রসু করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা হয়। জাগা খালি করার নোটিশ দিলে কেউ ভিটে ছাড়বেনা। সেজন্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। একদল মানুষের সামনে অন্য আর একদল মানুষকে গর্ত খুঁড়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছে মিয়ানমার আর্মী । বাকী সবাই যাতে প্রান ভয়ে পালিয়ে যায়। এমন ঘটনা বহুবার হয়েছে। এবারে সম্ভবত সর্ব শেষ ধাওয়া। রোহিঙ্গা বলে কিছু থাকবেনা মিয়ানমারে। সেটাই বিশ্ব বিবেকের ইচ্ছা। নোবেল কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। নোবেল ফিরিয়ে নেওয়া যাবেনা।
হেনরী কিসিঙ্গার নোবেল পেয়েছিল বিভিন্ন দেশের মানুষ হত্যা করে পুঁজিপতিদের সহযোগীতা করার জন্য। ইয়াসির আরাফাত ভাগে নোবেল পেয়েছিল ইসরায়েলের সাথে ইহুদীদের জন্য ভেট হিসাবে নিয়মিত পালেস্টাইনী শিশুদের পেটে বোমা বেঁধে ইসরায়েলের বাজারে ধুলোর মতো উড়িয়ে দিয়ে তামাশা করার জন্য আর নিজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেতনে পারিসের বিলাসবহুল ফ্লাটে ষোড়শী পত্নির পেটে মেয়ে উৎপাদন করার জন্য । ওবামা নোবেল পেয়েছিল ইসরায়েলকে অর্থায়ন করার জন্য যাতে ওরা প্যালেস্টাইনে কার্পেট বোমাতে নারী ও শিশু হত্যা করতে পারে। মৃত্যু অবশ্যই শান্তি এনে দেয়। পালেস্টাইনে নারী ও শিশুর মৃত্যু নিস্তব্ধতা এনেছে, লাশ মানেই শান্তি, সে কারনেই যারা মানুষকে তাদের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কৌশল হিসাবে গণহত্যার আশ্রয় নেয় তারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। শান্তির সাথে গণহত্যার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
চীনের সাথে মিয়ানমারের ২ বিলিয়ন ডলারের উপরে দ্বিপাক্ষিক ব্যানিজ্য চুক্তি রয়েছে। মিয়ানমারে চীন বানিয়েছে বন্দর, ব্রীজ, সড়ক, বিদ্যুতকেন্দ্র, তেল ও গ্যাস নিচ্ছে আরাকান থেকে। মার্কিন তেল কোম্পানীরাও আসবে। চীনের জন্য একটু চুপচাপ আছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে চুক্তি হচ্ছে বহুতল ভবন নির্মানের। আগের কাজ আগে। সবার আগে রোহিঙ্গা মুক্ত হোক আরাকান । রোহিঙ্গাদের রক্তে মিয়ানমার আর্মী আর বৌদ্ধরা রাঙ্গা হাত বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে সন্তুষ্ট করেছে। সব কাজ ঠিকভাবে এগুচ্ছে। হংকং এর মতো একটি ঝকমকে দেশ হবে মিয়ানমার যেদেশে রোহিঙ্গা নামে কেউ থাকবেনা।
সফল গণহত্যার মাধ্যমে জগতের সকল পুঁজিপতি সুখী হোক।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।