আকাশে মেঘ জমে বৃষ্টি নামে । বুকে ব্যাথা জমে । কান্না আসে। কেউ কাঁদতে পারে কেউ কাঁদতে পারেনা। মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন চিৎকার করে কাঁদে। যখন মরে যায় তখন আর কাঁদতে পারেনা। তখন অন্যরা কাঁদে। কেউ কাঁদে লোক দেখানো কান্না। কেউ কাঁদে সামনে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে ভেবে । বুকের ভেতর শূন্য হয়ে গেছে এমন অনুভূতি অনুভব করে ক’জনা কাঁদে?
আবেগ থেকে কান্না আসে। অনেক কারণে মানুষ আবেগে আপ্লূত হতে পারে। দুঃখ পেলে। সুখ পেলে। ভালবেসে। ভালবাসা হারিয়ে। স্বপ্ন হারিয়ে। কর্ম হারিয়ে। ঘরবাড়ী হারিয়ে। স্বজন হারিয়ে। খুশীতে বা আনন্দে মানুষ কাঁদে।
সাড়া বিশ্বে সব সময়ই কান্নার রোল লেগেই থাকে। পালেস্টাইন কাঁদছে, রোহিঙ্গা কাঁদছে, আফগানিস্তান কাঁদছে, সিরিয়া কাঁদছে, ইরাক কাঁদছে, আফ্রিকা কাঁদছে। তারপরেও দেখা যায় অনেকেই সুখে বিভোর। ঈদ উতযাপিত হচ্ছে। নিরীহ পশু জবাই করে আল্লাহ্কে খুশী করার নামে পেট পূজা চলছে। আল্লাহ্ খুশী কিভাবে হন সেটা কোরআনের পাতায় পাতায় লেখা আছে। এতিমকে বিয়ে করলে আল্লাহ্ খুশী হন। মানুষে বিয়া করে পুঁজিপতির মেয়েকে। একজন এতিমকে ঘর দিলে আল্লাহ্র এবাদত করা হয়। একজন দরিদ্রকে খাদ্য দিলে, কাজ দিলে, কাপড় দিলে, মাথার উপরে ছাদ দিলে আল্লাহ্ খুশী হন। মানুষে মানুষের মুখ থেকে দুর্ণীতির মাধ্যমে খাদ্য কেড়ে নিচ্ছে, কাজ কেড়ে নিচ্ছে, যা করা কর্তব্য তা না করে আল্লাহ্ কে খুশী করার জন্য সবাই নিরীহ পশুর গলাই চাকু চালায় কারণ সবাই গোসত খেতে পছন্দ করে। এতিমদেরকে ভাত, কাপড়, বাসস্থান দিলে কোন লাভ নাই বরং ক্ষতি। মানুষের সাথে খাবার শেয়ার করে খেলে কারুকে কাজের ব্যবস্থা করে দিলে কোন লাভ নাই। সেজন্য কেউ ফরয কাজগুলো করেনা। কারু পাশে যেয়ে কেউ দাঁড়ায়না। কেউ কারুকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়না। সেজন্য সবাই কাঁদছে । বিশ্ব কাঁদছে। যারা কাঁদছে না তারা এই সব কান্নার ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে আশা করছে যে একজন বা একদল মানুষ এসে এই সব কান্নারত বিশ্বের চোখে রুমাল ধরবে।
সবাই আশা করে। কেউ এগিয়ে যায়না।
কেউ এগিয়ে যায়না কারণ যে এগিয়ে যাবে তাকেও কাঁদতে হবে।
কারণ এগিয়ে যেয়ে কারুকে সাহায্য করার মানুষের সংখ্যা কম।
আর সেজন্যই সাড়া বিশ্বে কান্নারত মানুষের সংখ্যা বেশী
অনেকের চাহিদা বেশী। অতিরিক্ত চাহিদার সাথে রয়েছে স্বার্থপরতা। ফলে এরা অল্পতে সন্তুষ্ট নয়। এরাও কাঁদে । তবে সেটা মেকী কান্না। এদের দুঃখবোধ মেকী । শোষকেরাও অশান্ত। আরো অনেক রক্ত দরকার চোষার জন্য। তাই শোষকেরা পেতে রেখেছে নানা রকমের ফাঁদ । হাসিখুশী মানুষ না বুঝে সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফিরে আসছে ক্রন্দনরত।
ফেসবুকেও ফাঁদ আছে । বন্ধুত্বের ফাঁদ। কেউ একাকীত্বের কারণে বন্ধু খোঁজে। কেউ তার পন্য বিক্রি করার জন্য ক্রেতা খোঁজে। বন্ধু শব্দটা ফেসবুকের শব্দ। ফেসবুকে অনেক মানুষ অনেক উদ্দেশ্যে একাউন্ট খুলেছে। নিছক বন্ধুত্ব করার জন্য কেউ বন্ধুত্ব করেনা। বন্ধুত্ব করার পেছনে সবার উদ্দেশ্য থাকে। একজন কবি তার কবিতার জন্য পাঠক চায় সেজন্য সে বন্ধুদের এড দেয়। কবিতার পাঠক বৃদ্ধি পেলে কবি জনপ্রিয় হবে। বেশীরভাগ কবিরাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। কবিতাই তাদের আবেগ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। কবিতার মাধ্যমে বোঝা যায় কবির মানসিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে। একজন কবি কাঁদে তখন যখন তার উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। নিজে ব্যবহৃত হয় অন্য আর একজনের উদ্দেশ্য পূরণ বা স্বার্থসিদ্ধির কাজে। একজন ব্যবহৃত কবির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় আর সেই কান্না সেই আবেগ কবিতার ভেতর হাহাকার হয়ে প্রকাশ পায়।
একজন দুর্বল মন ও শরীরের কবিকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য একজন শক্ত মনের মানুষ আকৃষ্ট করবে তবে সে তাকে কখনও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেনা কারণ দুর্বল মন ও শরীরের মানুষের ভেতর হীনমন্যতাবোধ থাকে যা তাদেরকে সবার থেকে দূরে রাখে। সে শক্ত মনের মানুষের কাছ থেকে শক্তি নিতে চায় কিন্তু পারেনা। তখন সে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। একজন শক্ত মনের মানুষ যতই শক্ত হোক না কেনো সে আঘাত পায়। শক্তি মন থেকে মনে ট্রান্সফার করা যায়না। শক্তি অর্জন করতে হয়। মানসিক অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। মনের শক্তির জন্য কিছু আদর্শ দরকার কিছু নীতি দরকার। কিছুটা নিঃস্বার্থ হওয়া দরকার। সব চাইতে বেশী দরকার ভালবাসার। একজন দুর্বল মনের মানুষের ভেতরে ভালবাসা থাকেনা সেজন্য সে মনকে শক্ত করতে পারেনা। কারুকে কিছু দিতে পারেনা। সে শুধু পেতে চায়। নিতে চায়। তারপর যাদের কাছ থেকে পেয়েছে তাদের আঘাত করে তাদের উপর নানা রকমের দোষ দিয়ে অপবাদের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সরে যেতে চায়। তখন শক্তিশালী মন যার সে সব বুঝতে পারে। আঘাত পায়। আঘাত থেকে ব্যাথা জমে বুকের ভেতর তখন তার কান্না পায়।
এই বিশ্বে কেউ কারু বন্ধু নয়। যদি হতো তাহলে আমরা চারিদিকে এত ক্রন্দনরত মানুষ দেখতাম না। এত নিপীড়িত অত্যাচারিত মানুষ দেখতাম না। কেউ কারুকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়না। সেজন্য বিভিন্ন সীমান্তে সেনা মোতায়েন থাকে। গনহত্যা থেকে পালিয়ে আসা মানুষের উপরে গুলি বর্ষন করা হয়। যেসব সেনারা সীমান্ত পাহাড়া দেয় তারা তাদের নিজ দেশের নাগরিক হত্যা করে অভ্যস্ত।
এ বিশ্বে কেউ কারু নয়। যেখানে স্বার্থ নেই সেখানে সহযোগীতার হাত নেই। কারণ অতীতে যারা সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেছিল তাদের হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ বিশ্বে কেউ কারু বন্ধু নয়। ভালবাসা নেই সেজন্য। যারা বন্ধু হতে এসেছিল যারা ভালবেসেছিল তাদেরকে আঘাত করা হয়েছে। তখন ভালবাসা মরে গেছে। শোসকের স্বার্থে। শোষনের স্বার্থে।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা