Multiple Personality Disorder এক ব্যক্তিত্বের মাঝে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব

Multiple Personality Disorder
মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসওর্ডার
এক ব্যক্তিত্বের মাঝে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব

যখন কোন মানুষের ভেতর দুই বা অধিক ব্যক্তিত্ব থাকে তখন সেই মানুষকে এই ব্যক্তিত্বগুলো নানাভাবে  নিয়ন্ত্রন করে। এই অবস্থাকে বলা হয় বহু ব্যক্তিত্বের সংঘাত বা মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসওর্ডার। মালটিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের উপর সিডনী সেলডনের লেখা একটি বই আছে । বইটির নাম Tell me your Dreams. বইটির প্রচ্ছদ এখানে দেওয়া হলো , আগ্রহী হলে পড়তে পারবেন।

আজকে আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে এই অসুস্থতা সম্পর্কে লিখবো। একটি মানুষের ভেতর অনেক ব্যক্তিত্ব এসে ভীর করার অনেকগুলো কারণ আছে। সব চাইতে বড় কারণ হলো “আঘাত”। শিশু বা কিশোরেয়া যখন মানসিক বা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন প্রতিঘাত করতে পারেনা। একজন সাদারন সহজ সরল নারী যখন আঘাতপ্রাপ্ত হন তখন প্রতিঘাত করতে পারেন না। নীরবে সেই আঘাত সহ্য করেন। মনের কোনে তখন একটি সুপ্ত ইচ্ছা জাগে প্রতিঘাত করার কিন্তু কোনভাবে প্রতিঘাত করা সম্ভব হয়না। তখন মনের ভেতরে ধীরে ধীরে অন্য এক অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব জন্ম নেয়। একটি মনের ভেতর দুই বা তার চেয়ে বেশী ব্যক্তিত্ব জন্ম নিতে পারে। এক ব্যক্তিত্ব অন্য ব্যক্তিত্বের আচরণের খবর রাখতে পারে নাও রাখতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ঘটে নিজের মনের অবচেতনে।

শিশুদের সব সময়ই সাবধানে রাখা উচিৎ। ছেলে বা মেয়ে কোন শিশুকেই একাকী দোকানে বা স্কুলে পাঠানো উচিৎ নয়। শৈশব বা কৈশরেই শিশুরা সব চাইতে বেশী খারাপ অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হয় যা নাকি ওরা লজ্বায় বা সংকোচে কারু সাথেই শেয়ার করতে পারেনা।  Child molestation  বা যৌন হয়রানীর কারণে শিশু বা কিশোরেরা শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শিশু বা কিশোরেরা পথে বা স্কুলে বা মোক্তবে যখন যৌন হয়রানী বা নির্যাতনের শিকার হয় তারা কারু কাছেই সে কথা শেয়ার করতে পারেনা। পারেনা এই ভেবে যে তাকে কেউ বিশ্বাস করবেনা বা মারবে। কারণ যৌন নিপীড়ক একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি বা বাবার বন্ধু অথবা মায়ের আত্মীয় অথবা পারিবারিক প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবী।

যাদের ভেতর একাধিক ব্যক্তিত্ব থাকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই  তাদের অরিজিনাল ব্যক্তিত্ব লাজুক থাকে, দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব রুক্ষ হয় কারণ এই ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে আঘাত পেয়ে বা প্রতিঘাত না করতে পেরে। লাজুক ব্যক্তিত্ব যখন রুক্ষ ও নিষ্টুর ব্যক্তিত্বের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন সে বুঝতে পারেনা তার ভেতর কি হতে যাচ্ছে। সে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। খুব অসহায়ভাবে সে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। লাজুক ছেলেরা ভীত হয়। বহুদিন বাবা বা মায়ের হাতে নিগৃহীত হবার ফলে বা পরিবারের কোন আত্মিয়ের দ্বারা নির্যাতিত হবার ফলে তার ভেতরে যে ভয় জন্ম নেয় তা বড় হলেও থেকেই যায় সেই ভয় আরো ভীত হয়ে পড়ে সেই রুক্ষ ও স্বেচ্ছাচারী দ্বিতিয় ব্যক্তিত্বের কাছে।

সে তখন স্বপ্নের আশ্রয় নেয়। সে স্বপ্নে শান্তি খুঁজে পায়। সে এক স্বপ্ন থেকে অন্য স্বপ্নে নিজেকে ভাল রাখতে চায়। নিজের ইচ্ছাগুলো নিজের চাওয়াপাওয়া গুলো স্বপ্নের ভেতর মিটিয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু সেই রুক্ষ ব্যক্তিত্ব স্বপ্নেও এসে হাজির হয়।  সেই আঘাতপ্রাপ্ত শিশু বা কিশোর যে নাকি এখন পূর্ন যুবক বা যুবতি সে তার জীবনে কারুকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। সবার চোখেই সে সেইসব ব্যক্তিদেরকে দ্যাখে যারা তার উপরে নিপীড়ন চালিয়েছিল।

দাম্পত্য জীবনে বা প্রেমের ক্ষেত্রে এরা বিভ্রান্ত থাকে বিশ্বাসের অভাবে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তিত্বের বিঘ্ন ঘটাবার কারণে বা নিয়ন্ত্রনের কারণে। মেডিটেশন কখনই মালটিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার ভাল করতে পারেনা বরং সেই খারাপ স্বত্বাটি আরো জেঁকে বসে এবং ক্ষতি করে।  যাদের এই সমস্যা আছে তারা যখন একজন নতুন মানুষের সাথে মেশে তখনই হয় বিপত্তি । নতুন মানুষটি বন্ধু হোক বা অন্য কেউ হোক এই দ্বিতীয় স্বত্বা তাকে সহজভাবে নেবেনা। ফলে সে ভীত হবে সঙ্কিত হবে। নিজেকে আঘাত করতে যাবে। রেগে যাবে। চিতকার করবে।

এই অবস্থা থেকে বের হবার উপায় হলো – বাস্তবের মুখোমুখী নিজেকে নিয়ে যাওয়া। একজন কারুকে বিশ্বাস করা। জীবনে যা কিছু ঘটেছে সব কিছু তার কাছে খুলে বলা। ভালবাসা এবং ভুলে যাওয়ার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করা। নামায পড়া ( নামায পড়েন তিনি যিনি শর্তহীনভাবে আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস আনেন। আল্লাহ্‌র কোন শরীক নেই এবং আল্লাহ্‌ সাড়া জাহানের সৃষ্টিকর্তা – এটা বিশ্বাস করা মানেই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্‌র দেওয়া শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে মনের ভেতর থেকে দ্বিতীয় স্বতাকে যা নাকি শুধু শধু প্রাত্যাহিক কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বা আরো ভয়ানক কিছু ঘটাতে পারে তাকে মন থেকে বিতারিত করে আল্লাহ্‌ র কাছে নিজেকে সপে দিতে হবে।)।

এই ব্যক্তিটি যিনি নাকি মালটিপল পারসোনালিটি ডিসওর্ডারে ভুগছেন তিনি হতে পারেন সমকামী। আমাদের সমাজে সমকামীদের সহজভাবে গ্রহন করা হয়না এবং যারা সমকামী হিসাবে শিশু বা কিশোরের উপরে যৌন নির্যাতন চালায় তারা বাইরে সমাজে লোকের সামনে জানায় না যে তারা সমকামী কারণ তাদের অনেকেই  বিবাহিত এবং বাচ্চার বাবা।  এই শিশু বা কিশোরটি যার উপরে এই ব্যক্তিটি যৌন নির্যাতন চালিয়েছে শুধু সেই জানে  আসল ঘটনা। সে কোন দিন এই লোকের বউকে যেয়ে বলেনি বা বলতে পারেনি। সে কারুকেই বলতে পারেনি শুধু নিজের ভেতর পুড়া  ঘটনা পুষে রেখে দিয়ে নিজেই কষ্ট পেয়েছে।

সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সে নিজের ভেতর জন্ম দিয়েছে অন্য এক স্বত্বা।  হঠাৎ সে টের পায় কে যেন এসে ঢুকেছে ঘরে। কে যেন হাটছে। কে যেন পাশে এসে বসছে। সে গন্ধ পায় অন্য এক স্বত্বার। একাকী ঘরের ভেতর সেই দ্বিতীয় স্বত্বা যখন আসে তখন সে চিৎকার করে গলা ভেঙ্গে ফ্যালে। ঘুমের ভেতরে সে নিজেকে নিজের সামনে দ্যাখে । বুকের ভেতরের সেই ভয় এসে সামনে দাঁড়ায়। এইসব কিছু থেকে বের হয়ে আসতে হলে তাকে বাস্তবের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে সেই সমাজের সামনে চিতকার করে সমাজের সেইসব কীটের মুখোশ উন্মোচিত করে দিতে হবে যারা তার এই হাল করেছে।   এই অভিজ্ঞতার কথা জেনে হয়তো আরো অনেক শিশুকিশোরের অভিভাবকেরা সতর্ক হবে এবং সন্তানদের রক্ষা করার জন্য যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।  তাহলেই সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে ।

জেনেশুনে সমাজের জটিল, কুটিল, খারাপ লোকেদের সাথে হেসে হেসে ভালবাসার অভিনয় করে মেলামেশা করে যখন সে নিজের ঘরের নির্জনে যায় তখন তার সামনে এসে দাড়ায় তার সেই স্বত্বা যার জন্ম হয়েছে আক্রোশ থেকে , অসহায় এক শিশুর প্রতিরক্ষা করতে না পারার বেদনা থেকে কিন্তু সেই স্বত্বা তেমন কিছু করতে পারেনি বরং ক্ষতি করছে বা করবে।

যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে সেই সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হবে, তারপর সেই সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে, তারপর সেই সমস্যা যারা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে তারপর সেই সমস্যা সমাধান করে তা অতীত করে ফেলতে হবে। সমস্যা বুকে বেঁধে পথ চলা যাবেনা। সমস্যা বাঁধা হয়ে বুকের ভেতরে টিউমার সৃষ্টি করে পথ রোধ করে দাঁড়াবে।

অন্তত নিজের সামনে নিজেকে ভালবেসে দাঁড় করিয়ে বলতে হবে – আমার ভেতর সমস্যা হচ্ছে। আমি এই সমস্যা থেকে বের হতে চাই। আমি এই সমস্যার সাথে সন্ধি করতে চাইনা। আমি এই সমস্যাকে সমূলে আমার ভেতর থেকে বের করে বিলুপ্ত করতে চাই। —- এই ইচ্ছাটুকু অন্তত থাকতে হবে।

যেকোন চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারেরা রোগীকেই রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। রোগী যদি না বলতে পারে তার অসুবিধা কোথায় তাহলে দুনিয়ার কোন ক্লিনিক্যাল সায়েন্স  সে রোগীকে সাহায্য করতে পারেনা।

যেকোন রোগ সারাবার জন্য রোগীর ইচ্ছা থাকতে হবে। রোগীর রোগ আছে তা স্বীকার করতে হবে। রোগী সাহায্য চায় সেই ইচ্ছা ব্যক্ত করতে হবে। আর নিজের রোগ সারাবার জন্য সে ডাক্তারের সাথে সম্পুর্নভাবে সহযোগীতা করবে সে ইচ্ছাও ব্যক্ত করতে হবে।
মাল্টিপল পার্সোনালিটি  ডিসঅর্ডার ও সারিয়ে তোলা সম্ভব যেহেতু অসম্ভব বলে কিছু নেই। আর এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এই ব্যক্তির ইচ্ছা থাকতে হবে। নিজেকে নিজের সাহায্য করতে হবে। নিজের ভেতর প্রচেষ্টা থাকতে হবে। নিজেকে ভালবাসতে হবে। অন্তত একজন মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে। বাস্তবের মুখোমুখী দাঁড়াতে হবে এবং স্বপ্নকে মুছে ফেলতে হবে। স্বপ্নহীন সুন্দর  ও দীর্ঘ ঘুমের পরে আসবে সুন্দর রৌদ্দজ্বল সকাল।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.