তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের তৎপরতা

প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনে ফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। দুই জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এ ফ্রন্ট গঠনে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। এ ফ্রন্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। ৩০০ আসনে দুই জোটের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট থেকে প্রার্র্থী দেয়ার পরিকল্পনা করছেন এসব দলের নেতারা। যদিও জোটের আনুষ্ঠানিক কোনো রূপরেখা এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে
পারেননি তারা। নেতারা জানিয়েছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যথা সময়ে নতুন ফ্রন্টের ঘোষণা আসবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর সভাপতি প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ আরো কয়েক দলের নেতারা তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গড়তে আগে বেশ কয়েক দফা উদ্যোগ নেন। তবে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার পর জোট গঠনের প্রক্রিয়া বেশি দূর এগোয়নি। সম্প্রতি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য নেতারা  বৈঠক করেন। বৈঠকে পুলিশি হানার পর নেতারা এটিকে ঈদ পরবর্তী পুনর্মিলনী বললেও বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা জানিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতা জানান, শুধু রাজনৈতিক দলই নয় নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্টে থাকবেন। সবাইকে নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হবে যাতে সামনে রাজনৈতিক ও নাগরিক ইস্যুতে আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। এই ফ্রন্ট গঠনের করণীয় বিষয়ে নেতারা আলোচনা করছেন। সামনে আরো আলোচনার পর নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সে সব দল ও সংগঠন জোটে আসবে তারা কমন ইস্যুতে কাজ করবে। তবে দলগুলোর নিজস্ব দলীয় কার্যক্রম হলে আলাদা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আসম রব ও কাদের সিদ্দিকী বিকল্প রাজনৈতিক জোট এনডিএফ’র ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মতো এনডিএফও নির্বাচন বর্জন করে।
এছাড়া বাসদ এবং বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি আলাদা রাজনৈতিক জোটের অংশ। এ দল দুটির নেতারা জানিয়েছেন তৃতীয় রাজনৈতিক জোট হলে সেখানে তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের অন্য দলগুলোকেও অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হবে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বৈঠকের বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, আমরা বসেছিলাম। একজন রাজনীতিকের বাসায় যেমন আলোচনা হওয়ার কথা সেরকম আলোচনাই হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যে আচরণ করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটাতো মানুষের নাগরিক অধিকারের খেলাপ। এভাবে সবকিছু বন্ধ করে দিলে দেশটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ ধরনের কাণ্ড করে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
বৈঠকে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেটে বাচ্চা আসলে মানুষ এমনিতে জানতে পারে। এটি সময়ই বলে দেবে। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতিক দূরদৃষ্টি নিয়েই সামনে এগোতে হবে।
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়েই মিলিত হয়েছিলাম। অনেক দিন ধরেই আমরা একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সামনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইস্যুতে আমরা একটি একক জায়গা থেকে কাজ করার জন্য কথা বলছি। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা বিকল্প কিছু করার কথা ভাবছি। তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। এ নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। এখনো চলছে। আমরা চাই কমন ইস্যুতে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা। আমরা কমন ইস্যুতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও। তবে দলগুলো তাদের নিজস্ব দলীয় গণ্ডি থেকে তারা স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তৃতীয় রাজনৈতিক জোটের তৎপরতার বিষয় জানিয়ে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জোটের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। সম্প্রতি আমরা আরো কয়েক দফা বসে আলোচনা করেছি। প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে মানুষ নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। পরিবর্তন চায়। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্যও এ পরিবর্তন প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতাদের ঘরোয়া বৈঠকে পুলিশের উপস্থিতি ও হস্তক্ষেপ নিন্দনীয় উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, দেশে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এ ধরনের আচরণ তাই প্রমাণ করে। মানুষ এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ চায়।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, বিকল্প ধারার সভাপতি প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও আ ও ম শফিউল্লাহ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। সন্ধ্যার পর ওই বৈঠকে পুলিশ হানা দেয়ায় পরে তা জানাজানি হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, রাত ৮টার পর নেতারা যখন কথা বলছিলেন তখন থানা পুলিশের একটি দল আ স ম রবের বাসার সামনে অবস্থান নেয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তা উপরে উঠে নেতাদের বৈঠক সংক্ষিপ্ত করতে বলেন। নেতারা ওই কর্মকর্তাকে জানান, এটি তাদের প্রীতি সম্মিলনী। খাওয়া-দাওয়া করে তারা চলে যাবেন। তবে নেতারা সেখানে থাকা পর্যন্ত বাসার নিচে পুলিশের অবস্থান ছিল। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী হোসেন খান জানিয়েছেন, ওই বাসায় বৈঠক হচ্ছে শুনে পুলিশ গিয়েছিল। তল্লাশির জন্য নয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সেখানে পুলিশ গিয়েছিল বলে ওসি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *