নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন বাবুল আক্তার

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) মো. কামরুজ্জামানের ডাকে দ্বিতীয় দফা চট্টগ্রামে হাজির হন তিনি।

বিকাল পৌনে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা সোয়া চার ঘণ্টা বাবুল আক্তারের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার কক্ষে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবুল আক্তার বলেন, মামলার বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে ডেকেছিলেন আইও। অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন।

আমি জানিয়েছি। মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার জড়িত- শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাবুল আক্তার বলেন, অভিযোগ তো যে কেউ করতে পারেন। তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজন তথ্য-প্রমাণ। তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, আপনি কি স্ত্রী হত্যায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। বাবুল আক্তার বলেন, অবশ্যই।

অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, মিতু হত্যা মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাদী হিসেবে তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম বাবুল আক্তারকে। তিনি আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছেন।

মামলা সংক্রান্ত অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমার ক্রসচেক করা প্রয়োজন। ওইসব বিষয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও নিজ থেকে আমাকে এ মামলা সংক্রান্ত অনেক তথ্য দিয়েছেন।

মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত- শ্বশুরের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে বাবুল আক্তার কিছু বলেছেন কিনা বা তদন্তে বাবুল আক্তারের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।

তদন্তে যদি বাদীর (বাবুল আক্তার) বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয় তবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে বাবুল আক্তার কালো একটি পাজেরো জিপে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪-২২১০) চড়ে ঢাকা থেকে সরাসরি সিএমপি সদর দফতরে পৌঁছেন।

গাড়ি থেকে নেমেই তিনি সরাসরি দোতলায় ডিবি অফিসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলে যান। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো ধরনের কথা বলেননি।

এর আগে কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারকে ডাকা হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে এর আগে গত ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এসেছিলেন বাবুল আক্তার। গত বছরের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছেই খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। তাকে মাথায় গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাবুল আক্তার নিজেই পদত্যাগ করেন বলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার জানায়।

এ পর্যন্ত মিতু হত্যা মামলায় পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হল : আনোয়ার, ওয়াসিম, এহতেশামুল হক ভোলা, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু, শাহজাহান, আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন। এর মধ্যে আবু নাসের গুন্নু এবং শাহজামান ওরফে রবিনের এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাননি তদন্ত কর্মকর্তা।

সাইদুল ইসলাম ওরফে সাকুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তিনিই সরবরাহ করেছে তার বড় ভাই মুসা ওরফে আবু মুসাকে। মুসা এ মোটরসাইকেল চালিয়েই মিতুকে খুন করে। এহতেশামুল হক ভোলা অস্ত্র সরবরাহকারী।

শাহজাহান, ওয়াসিম এবং আনোয়ার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মুসাকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ৭ আসামির মধ্যে আবু নাসের গুন্নু ছাড়া বাকিরা বর্তমানে কারাগারে।

এ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাশেদ ও নবী পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। বর্তমানে পলাতক আছে মুসা ও কালু। মুসাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *