জামালপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি, ১৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

উত্তরাঞ্চলের জামালপুর ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাঙ্গাইলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫৮ কিলোমিটার হুমকি মধ্যে রয়েছে।

বন্যার পানির কারণে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের অপেক্ষায় এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে।

যুগান্তর জামালপুর প্রতিনিধি জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীগুলোরও।

বন্যায় জেলার ৬ উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের জন্য দুর্গত এলাকায় হাহাকার দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারিভাবে ১৪০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ১১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার  বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে জেলার ১১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, বন্যার কারণে ২৮টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ১৩ সেন্টিমিটার, তিস্তায় ৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ১২ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর-কুমারপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে পানি ঢুকে সংলগ্ন ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর পাকা সড়কে পানি ওঠায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলার ৯টি উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের সাড়ে ৩শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে তিন লাখ মানুষ। শতাধিক প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের দু’টি স্কুল। কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় তা মেরামতের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও ১০৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। যা বিতণের প্রক্রিয়া চলছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে টাঙ্গাইলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫৮ কিলোমিটার হুমকি মধ্যে রয়েছে। বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.