খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন ১৫ জুলাই

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আগামী সপ্তাহেই লন্ডন যাচ্ছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর এবারের লন্ডন যাওয়া প্রাথমিকভাবে তার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য হলেও এ সফর রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বের দাবি রাখে বলে জানা গেছে। প্রায় দু’বছর পর লন্ডনে যাচ্ছেন বলে সেখানে অবস্থানরত দলের আরেক শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে তার। আগামী একাদশ নির্বাচনের আগে তাদের মধ্যে আর সাক্ষাৎ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফাঁকে দলীয় বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। এ কারণে এবারে তার ব্যক্তিগত সচিব ও সহকারী ছাড়াও দলের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতাও সফরসঙ্গী হচ্ছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে লন্ডন যাওয়ার জন্য বেশ আগেই মনস্থির করলেও বিভিন্ন মামলায় হাজিরা ও রাজনৈতিক নানা ব্যস্ততার জন্য এতদিন পর্যন্ত এ সফরের দিনক্ষণ ঠিক করতে পারছিলেন না। আগামী ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা রয়েছে তার। তিনি হাজিরা শেষ করে আগামী ১৫ জুলাই শনিবার লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে তিনি তার চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য দু’বার লন্ডনে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। এবারো তার লন্ডন সফরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ফলোআপ চিকিৎসা। তবে এর বাইরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রার্থী মনোনয়নসহ নানা নীতিগত বিষয় নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের দ্বিতীয় প্রধান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মানবকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। সেখানে যাওয়ার তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসা।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন যান। ওই সময় তিনি তার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে ওই বছরের ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া তার লন্ডন সফরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৭ জুলাই সময় নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু মামলাসহ আরো নানা কারণে তা পিছিয়ে দিতে হয়। তবে দুর্নীতি ও নাশকতার অভিযোগে যে মামলাগুলো আছে- সেগুলো বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা নয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এ মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব মামলায় প্রায়ই খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। তবে মামলার কারণে বিদেশে যাওয়ায় কোনো সমস্যা হতে পারে কিনা জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মেজবাহ জানান, কোনো সমস্যা হবে না। সফরের কারণে যেসব মামলায় তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না, হাজিরার দিন আমরা আদালতের কাছে ‘প্রেয়ার’ দেব যে, তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার এবারের লন্ডন সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তারা মনে করছেন, লন্ডনে অবস্থানকালে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের ব্যাপারে বিএনপির এই দুই হাইকমান্ড বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাংগঠনিক পদক্ষেপগুলো চূড়ান্ত হতে পারে। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নের বিষয়েও তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বিএনপিপ্রধানের।

এ ব্যাপারে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, লন্ডনে আমাদের দলের দ্বিতীয় প্রধান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবস্থান করছেন। বহুদিন পর্যন্ত দলের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা হয়নি। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এবার লন্ডনে গেলে এ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই সুযোগে দেশের রাজনীতি ও দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে উভয় নেতার মধ্যে আলোচনা হবে। খসরু বলেন, তারেক রহমানের মতামত নিয়েই এসব স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত হবে। এ জন্য আমাদের নেত্রীর লন্ডন সফর এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, এসব স্ট্র্যাটেজির অন্যতম একটি হচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরেই এই রূপরেখা উপস্থাপন করবেন খালেদা জিয়া। তাই খসড়া রূপরেখার ব্যাপারে তারেক রহমানের মতামত নিয়েই দেশে ফিরে তা চূড়ান্ত করা হবে। তার পরই তা উপস্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন। এই রূপরেখা নিয়ে তিনি দলের দ্বিতীয় প্রধান তারেক রহমানের মতামত নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *