প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ দেশে আসছে না। বিদেশ থেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের টাকা। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের ওই বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে তারা সেই অর্থ মালেয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ, কানাডায় মাইগ্রেশন, চোরাচালান, দুবাইতে ব্যবসা-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদ অর্জনের জন্য ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিভিন্ন কারণে অনেক ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অপরাধীদের অনেকেই বর্তমানে বিদেশে পরিবারসহ অবস্থান করছেন। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহসহ ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশে তাদের সম্পদ বা ব্যবসা-বাণিজ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন বা চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এই চাহিদা তারা পূরণ করছে হুন্ডিওয়ালাদের মাধ্যমে প্রবাস আয় সংগ্রহের মাধ্যমে। এ ধরনের হুন্ডি তৎপরতায় ব্যবহার হচ্ছে হোয়াটসআপ, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবারসহ নানা ধরনের অ্যাপস। এছাড়া ডাটাবেজ শেয়ারিংয়ের জন্য ব্যবহার হচ্ছে গুগল স্প্রেডশিট। প্রবাস আয় প্রবাহ নিম্নমুখী হওয়ার কারণ অনুসন্ধান এবং প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশমালা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এ ধরনের একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, রেমিট্যান্স পাচার হয়ে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমতে থাকবে। অর্থনীতিতে যা মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে। জানা গেছে, হুন্ডিওয়ালারা প্রথমে প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রবাস আয় সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে তারা প্রবাসীদের ব্যাংক রেটের চেয়ে তুলনামূলক উচ্চ রেটে বিনিময় হার দেন। আর বেশি রেট পাওয়ায় প্রবাসীরাও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিওয়ালাদের দিয়ে দিচ্ছেন। পরে হুন্ডিওয়ালা সংগৃহীত ওই রেমিট্যান্স দেশে না পাঠিয়ে এ দেশে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে সমপরিমাণ টাকা সুবিধাভোগীদের পরিশোধ করে দিচ্ছেন। আর হুন্ডিওয়ালাদের কাছ থেকে ওই বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অপরাধীদের হাতে। এভাবেই পাচার হয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে মুদ্রা প্রবাহে একটি শূন্যতা তৈরি হচ্ছে যা অর্থনীতির জন্য মারাত্মক। উদাহরণ দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ধরা যাক : কোনো প্রবাসী ৫০ হাজার টাকা দেশে পাঠানোর জন্য হুন্ডিওয়ালাকে দিলেন। সে ম্যাসেঞ্জার বা ভাইবার ব্যবহার করে দেশে থাকা তার এজেন্টের মাধ্যমে সমপরিমাণ টাকা প্রবাসীর আত্মীয়কে পরিশোধ করে দিল। যে টাকা দেওয়া হলো সেটা কিন্তু দেশেরই টাকা। এতে দেশে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকার চাহিদা তৈরি হচ্ছে। অথচ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে না। সেটি বিদেশে হুন্ডিওয়ালার কাছে থেকে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুন্ডিওয়ালাদের কাছ থেকে এ ধরনের ব্যক্তি (রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও অপরাধী) সহজেই অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে হুন্ডিওয়ালারা অতীতের চেয়ে তুলনামূলকভাবে উচ্চহারে প্রবাস আয় সংগ্রহ করছেন যা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমিয়ে দিচ্ছে। যে সব ডরমেটরিগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করেন সেখানে মোবাইলভিত্তিক অর্থ সেবা ও হুন্ডিওয়ালাদের অবাধ বিচরণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে বিকাশ, রকেট-এর মাধ্যমে দেশে অর্থ বিতরণের জন্য হুন্ডিওয়ালারা সাধারণত ব্যক্তিভিত্তিক সফটওয়্যার বা অ্যাপস (হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি) ব্যবহার করেন। এই সফটওয়্যারগুলোর সরবরাহকারী হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খ্যাতনামা সফটওয়্যার ডেভেলপার কোম্পানি। ধারণা করা হয়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভার থেকেই বিকাশ/রকেট লেনদেনের ইন্টিগ্রেশন ও সেটেলমেন্টের কাজটি পরিচালিত হয়। এছাড়া মোবাইলভিত্তিক অর্থ সেবার ব্যাপক বিস্তারের ফলে নতুনভাবে বিদেশগামী বাংলাদেশিরা যাওয়ার সময় সুবিধাভোগীর বিকাশ নম্বর নিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে নিয়মিত সেখানে টাকা পাঠাচ্ছেন যা বৈধ চ্যানেলে যুক্ত হচ্ছে না। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুবিধা নিয়ে হুন্ডিওয়ালারা এখন একাউন্ট ক্রেডিট সুবিধাও দিয়ে আসছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
Related Posts
১৯৭১-২০১৮ – রাজাকারদের ফাঁসী হয়েছে কিন্তু ধর্ষন অব্যাহত রয়েছে ।
- Ayesha Meher
- মার্চ ৩১, ২০১৮
- 1 min read
বাংলাদেশে ধর্ষিতা শিশু, কিশোরী, যুবতীর লাশ দেখে দেখে শক্তি হারিয়ে ফেলছি লেখার। শৈশব থেকেই লাশ…
ইউনিফর্মে ’সেক্সি’ সেলফি: চীনে নারী পুলিশ অফিসার চাকরিচ্যুত
- Ayesha Meher
- মে ১২, ২০১৬
- 0 min read
চীনের এক নারী পুলিশ অফিসার শখ করে ইউনিফর্ম পরেই কিছু ‘সেক্সি’ সেলফি তুলে পোস্ট করেছিলেন…
জিয়া থেকে খালেদা তারপর – বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম
- Ayesha Meher
- জুলাই ৮, ২০১৮
- 1 min read
৫১তম পর্ব ২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ‘৭১ সালে সেনা বাহিনীর…