মুর্তিতে মুসলমান

মৃণাল হকের তৈরি মূর্তিটি এক জাগা থেকে সরিয়ে আর এক জাগাতে বসিয়ে মহা ধুমধামের সাথে বাংলাদেশের তথাকথিত মুসলমান বনাম নাস্তিকেরা রমজান মাসের শুরু করলো।
বাংলাদেশের তথাকথিত মুসলমানেদের ঘটনাচক্রে তথাকথিত নেত্রী শেখ হাসিনা যখন জনগনকে রামছাগল বানিয়ে জনগনের গলায় দড়ি বেধে জনগনকে দিয়ে নানা রকমের সার্কাস খেলা দেখায় তখন জনগণ শেখ হাসিনার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুসারে নাচতে থাকে। কেউ ক্লান্ত হয়না। শেখ হাসিনার প্রতিটি ইস্যুই সুপার হিট। হিন্দি মুভির মতই শেখ হাসিনার প্রতিটি ইস্যু তৈরি হয়েছে সব ধরণের জনগনের চাহিদা, বিনোদন, ভাষা, ধর্ম, অনুভুতি ও চাহিদা মেটানোর ইচ্ছা রেখে।

শেখ হাসিনার ইস্যুগুলার মধ্য সুপারহিট ইস্যুগুলা ছিল
শফিকে ধরে স্টেজে বসিয়ে কুতিয়ে কুতিয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার দৃশ্য
একদিকে রাতের অন্ধকারে মূর্তি ভাঙ্গার লোকজন অন্যদিকে শাহবাগে বসা প্রতিবাদী ছাগলদের জন্য অর্থাৎ দুইদলের জন্য খরচখরচা বহন করা।

আব্দুল মজিদ মুনসি নামের মসজিদের একজন ইমামকে এশার নামাযে থাকা অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একজন বাহাত্তর বয়সের বৃদ্ধ কার কি ক্ষতি করতে পারে? কার এত শত্রুতা তার সাথে? যাই হোক মরহুমের রক্তাক্ত ছবি আমি এখানে প্রকাশ করছিনা। যেহেতু আব্দুল মজিদ মুনসি কোন চিত্র পরিচালক ছিলেন না বা নায়ক ছিলেন না বা গায়ক ছিলেন না বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না বা ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন না, যেহেতু উনার কোন চিনির কল ছিলনা, চাবাগান ছিলনা, সপিং মল ছিলনা, তার বর্বরচিত মৃত্যু সম্পর্কে কেউ কোন খবর রাখেনা। ফেসবুকের দেওয়ালে দেওয়ালে শোকবার্তা দেখা যায়নি। সমালোচনার ঝর বয়ে যায়নি। ঘৃণা, ক্ষোভ, খুনীর ফাঁসি চেয়ে কেউ আকাশপাতাল ফাটিয়ে চিৎকার করেনি।

নারায়ণগঞ্জ, রুপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মাঝিপাড়া এলাকার মাটির মসজিদের ইমাম ছিলনে আব্দুল মজিদ মুনসি। অজ পাড়া গাঁও। তাও আবার নাম আব্দল মজিদ মুনসী সেজন্য এ হত্যাকান্ড মিডিয়াতে স্থান পায়নি। শুনেছি বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলমান। শোনা কথা। এই কথার সত্যতার আদৌ কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। একটি দেশের বেশীরভাগ মানুষ যদি মুসলমান হয় সেদেশের মসজিদে জুতাপায়ে ঢূকে নামাযীদেরকে টেনে এনে পুলিশ লাঠি দিয়ে আঘাত করতে পারেনা। যেহেতু পুলিশদেরও বেশীরভাগ মুসলমান হবার কথা তাই একজন মুসলমান কেনো একজন হিন্দু বা খ্রিষ্টানও জুতা পায়ে দিয়ে মসজিদে ঢুকে নামাযীকে নির্যাতন করবেনা। এই ঘটনা শুধু মাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে। যেহেতু বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ তথাকথিত মুসলমান। পুলিশ যদি একজন হিন্দুও হতো তবুও জুতা পায়ে দিয়ে মসজিদে যেয়ে মুসল্লিদের লাথি আর বেয়োনেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করতে দ্বিধাবোধ করতো। একটি দেশের বেশীরভাগ মানুষ যদি মুসলমান হয় তাহলে সেদেশে ঘুষের আদানপ্রদান চলার কথানা যেহেতু ইসলাম দুর্নীতি, ঘুষ, সুদ, ইত্যাদি অনুমোদন করেনা। যেদেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলমান সে দেশের বাজারে যেসব খাদ্য বিক্রি হয় সেইসব খাদ্যে ফরমানিল থাকতে পারেনা।যে দেশের বেশীরভাগ মানুষ মুসলমান সে দেশে ধর্ষিতা নারীর খন্ডিত লাশ মাঠেঘাটেনদীনালাচৌরাস্তার মোড়ে পাওয়া যেতে পারেনা। ইসলাম ধর্মে পুরুষদের উপর নারীদের রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছে। পুরুষেরা যদি সবার যার যার দায়িত্বপালন করে তাহলে কোন নারীই অরিক্ষত ও অনিরাপদ থাকেনা। বাংলাদেশের ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো তাই প্রমান করে বাংলাদেশে কেউ মসলমান নেই।

সবচাইতে কৌতুককর ঘটনা দেখলাম সেদিন একজন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য ফেসবুকে মন্তব্য করেছে – মূর্তি সরিয়ে শেখ হাসিনা অন্তত একটা ভাল কাজ করেছ জীবনে। আহা!! আহা!! ধন্যবাদ শেখ হাসিনা – কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরানের জন্য । এইবারে আপনে একটা ভাল কাজ করেছেন। সেটাই তো শেখ হাসিনা চেয়েছিল। তথাকথিত মুসলমানেরদের ধন্যবাদ অনেকদিন মিস করেছে শেখ হাসিনা। গ্রীক দেবীকে শহর পদক্ষিন করিয়ে শেখ হাসিনা সর্বদলীয় ধন্যবাদ প্রাপ্তিলাভ করলো।
কাদের মৌল্লার যখন ফাঁসি হয়েছিল তখন ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরাও ধন্যবাদ দিয়েছিল শেখ হাসিনাকে। ধন্যবাদ শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে লাশ ফেলে সবাইকে রাম ছাগল বানিয়ে আজও বেশ শক্ত হাতে দড়ি টেনে রাখার জন্য। বাংলাদেশের তথাকথিত মুসলমানদের ইসলাম শুধু একটি মূর্তিকে ঘিরেই আবর্তিত।

মূর্তির ভাস্কর মৃনাক হক তার মায়ের মৃত্যুতেও এত কাদেনি মূর্তি সরালে যত কেঁদেছে। শেখ হাসিনার অমর বানী স্বরন করি

“কুত্তার জাতকে বেশ্যা দিয়েই নেতৃত্ব দেওয়াবো”
“ট্রাফিক জ্যাম দেখলে খুব আনন্দ লাগে, দেশের মানুষের কাছে টাকা আছে, গাড়ি কিনে সড়ক ভরে ফেলেছে”
“বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের নিয়ে এসেছে, সব রং মেখে শুয়েছিল, পুলিশ দেখে দৌড়ে পালাতে গেছে, পুলিশ যার যার বাসায় পৌছে দিয়ে এসেছে”। ভোর হবার আগেই মিউনিসিপালিটির ট্রাক এসে সব রক্ত, লাঠি, তাজবিহ টুপি সাফ করে ফেলেছে
“রাজনীতি শত্রু বা মিত্র বলে কিছু নেই”
বাংলাদেশের মানুষ মূর্তি নিয়ে আলোচনাতে এত ব্যস্ত হয়ে গেলো কেনো? বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা মূর্তির মতই একেকজন। তাদের পূজা করে অভ্যস্ত জনগন মূর্তি নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে ভালবাসে। দলের নেতাকে ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিছুদিন পর তার চোখ হাত বাঁধা লাশ পাওয়া যাচ্ছে, নামযে বসে মসজিদের ইমামকে মসজিদে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, সড়ক দিয়ে হেটে যাওয়া নিরীহ চুপচাপ ছেলেকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, টাকার জন্য পরিবারের উপরে চাপ দিচ্ছে, টাকা না পেলে ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের গল্প বানিয়ে হত্যা করছে। সবাই মূর্তি নিয়ে মহা ব্যস্ত।

সবার ভেতর মূর্তির মত ফাঁকা। তাই মূর্তির জন্য এত ভালবাসা।
মানুষের জন্য ভালবাসা নেই। মূর্তির জন্য ভালবাসা, হাতীর জন্য ভালবাসা, মৃত মানুষের জন্মদিবস পালন করে ভালবাসা, ভালবাসা, মানবতা ও ধর্মের এক নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করে চলেছে বাংলাদেশী। চোদ্দশত বছর আগের আরব দেশের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বর্বরতার নতুন রেকর্ড স্থাপিত করছে বাংলাদেশীরা।

সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *