পুলিশের অসহযোগীতার কারণে অভিযোগের অনুপস্থিতি, সাংবাদিকদের মিথ্যাচার, সামাজিকভাবে লাঞ্ছিতা, অসন্মান, বিয়ে না হবার ভয় ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন কতজন নারী ধর্ষিতা হন এটা জানার কোন উপায় নেই। তবে ধর্ষনের খবর পাওয়া যায় তখন যখন ধর্ষিতার খন্ডিত লাশ পাওয়া যায় অথবা ধর্ষিতার বাবা বিচার না পেয়ে ধর্ষিতা কন্যাকে নিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই ধর্ষন একটি প্রতিদিনের ঘটনা। মাঠেঘাটেখালেবিলে বিরোধীদলের সদস্যদের লাশের সাথে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে ধর্ষিতা শিশু ও নারীর লাশ।
বিচার না পেয়ে সেদিন শ্রীপুরের হজরত আলী তার ধর্ষিতা কন্যা আয়শাকে নিয়ে ট্রেনের নীচে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। আয়শা প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। হজরত আলীর অভিযোগ গ্রহণ করেনি পুলিশ কারণ ধর্ষক একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। হজরত আলী ও আয়শার মৃত্যুর সাথেই এই ঘটনা সবাই ভুলে গেছে।
আমরা এখন এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে টাকা ছাড়া কেউ কোন কথা বলেনা। যেখানে টাকা নেই যেখানে স্বার্থ নেই যেখানে বিনোদন নেই যেখানে নিজের হীন মানসিকতাকে সুরুসুরি দেবার ব্যবস্থা নেই সেখানে সকলেই নিশ্চুপ। শুধু সমাজ সেবার জন্য সমাজে অপরাধ হ্রাস করার জন্য সমাজকে শুধরাবার জন্য, অপরাধীকে সাজা দেবার জন্য কারু কোন মাথা ব্যাথা নেই। সেজন্য একের পর এক অপরাধ ঘটেই চলেছে। মানুষ হত্যার মতই বাংলাদেশে শিশু ও নারী ধর্ষন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
সেদিন মধ্যরাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে স্বর্ণচোরাচালানীর ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে দাওয়াত খেতে যেয়ে দুইজন তরুনী ধর্ষিতা হলে ঘটনার এক মাস পরে ধর্ষনের অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেন। বনানীর হোটেলে ধর্ষন এখন একটি লাভজনক বাণিজ্য। দেশের সাংবাদিকেরা, টিভি রিপোর্টগুলোতে, ইউটিউবে, ফেসবুকে দুই তরুনী ধর্ষণের কাহিনী নিয়ে লাগাতার আলোচনা চলছে। দুই তরুনীর একজন ইউটিউবে তার বক্তব্য প্রকাশ করেছে।
ফিরে যায় হজরত আলী ও প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী আয়শা প্রসঙ্গে। হজরত আলী একজন মূর্খ মানুষ আর ধর্ষিতা আয়শা প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। বনাণীর রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষিতা দুই তরুনী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রথম শ্রেনীর ছাত্রীর বাবা বিচার না পেয়ে লজ্বায় মেয়েকে নিয়ে আত্মঘাতি হয়েছেন আর রেইনট্রির ধর্ষিতা তরুনী ইউটিউবে সাবলিলভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা করার সব শেষে সাড়া রাত নির্যাতন করেছে বলে একটু ফুফিয়ে কান্নার আভাষ দিয়েছে।
শ্রীপুরের আয়শা একটি শিশু
বনানীর রেইনট্রির মেয়ে দুইজন তরুনী
শ্রীপুরের হজরত আলীকে সাহায্য করার জন্য, বিচার পাইয়ে দিতে, ধর্ষকের শাস্তি দিতে সমাজের কেউ এগিয়ে যায়নি। ফলে হজরত আলী ও আয়শা মারা গেছে। শ্রীপুরের ধর্ষক বেঁচে আছে এবং অন্য একজন হজরত আলীর মেয়ে অন্য আর একজন আয়শাকে ধর্ষন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্যদিকে রেইনট্রির দুই তরুনী ধনীর পুত্রের দ্বারা ধর্ষিতা হবার ফলে পুলিশ, সাংবাদিক, দুই তরুনীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশা করছে যে মান সন্মানের ভয়ে সবার মুখ বন্ধ করতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়তো ম্যালা টাকা দেবে। দুই তরুনী ধর্ষনের কাহিনী আমরা জানতে পারি তার কারণ একটাই তাহলো – টাকা উপার্জনের সুবর্ণ সুযোগ ও সম্ভাবনা।
কিন্তু সে গুড়ে বালি।
স্বর্ণব্যবসায়ী একজন চোরাচালানী। পুলিশেরা সব সময় তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েই তার ব্যবসাকে চাঙ্গা করে রেখেছে। স্বর্ণব্যবসায়ী ও তার ছেলে পুলিশের সাথে মিলেমিশেই ধর্ষন ও স্মাগলিং করে থাকে সুতারাং টাকা পাবার আশা দুরাশা। সারাদিন এই সম্পর্কে কথা বলেও কেউ কারু থেকে কোন টাকা আদায় করতে পারেনি।
পুলিশে মাঝে মাঝে নিরীহ ছেলেদের রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে টাকার জন্য পরিবারের উপরে চাপ প্রয়োগ করে, ছেলেকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার হুমকী দেয়, ব্ল্যাকমেইল করে, বণানীর দুই তরুনী ধর্ষণের বর্ণনা শুনে সেটাই মনে হয়েছে যে এটাও এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল স্কীম। ইউটিউবে দুই তরুনীর একজনের বক্তব্য শুনে তাকে পেশাদার যৌনকর্মী মনে করা হলে কোন ভুল হবেনা। সব কথার ভেতরে সে একটি খুব গুরুত্বপূর্ন কথা বলতে ভুলে গেছে বা যে স্ক্রিপ্ট লিখেছে সে টাকার লোভে মগ্ন থাকার ফলে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ন কথা উল্লেখ করতে ভুলে গেছে সেটা হলো— ধর্ষন থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ওরা কি কি করেছে?
ধর্ষিতা বা ধর্ষকের শরীরে কোন ক্ষত নাই। ধর্ষিতা যখন বর্ণনা দিচ্ছে তখন বলছে আমাদের বার বার ফোন করার পরে আমরা সেখানে গেছি। হোটেলের বিভিন্ন ফ্লোরের বর্ণনা আছে, হোটেলের কোন কামড়া থেকে কি কি দেখা যায়, কাকে মারধোর করা হয়েছে , কে কখন কি বলেছে, মোবাইল, গাড়ীর চাবি নিয়ে নেওয়া হয়েছে, পিস্তল ধরে রাখা হয়েছে, এমনকি বাসায় ফেরার পথে ধর্ষিতা ও ধর্ষক একই গাড়িতে করে ধর্ষকের বাড়ীর সামনে এসেছে এবং ধর্ষক গাড়ী থেকে নেমে সুন্দর করে হেটে স্বাভাবিকভাবে বাসাতে ঢুকে গেছে, ধর্ষিতা গাড়িতে বসে চেয়ে চেয়ে দেখেছে, তখন ওর মুখ হাত পা কিছু বাঁধা ছিলনা। সে তখন চিৎকার করেনি। লোক জমা করেনি। সে অপেক্ষা করেছে এক মাস পরে মামলা করে ইউটিউবে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা দেবার জন্য।
বনানীর ধর্ষন কাহিনীর সত্যতা জানা সম্ভব না যেহেতু ধর্ষক ছাড়া সবাই মিথ্যা বলছে। ধর্ষক স্বীকার করেছে যে সে ধর্ষন করেছে এবং করে থাকে এবং সেটাই স্বাভাবিক। সাড়া বাংলাদেশের সবগুলো পুলিশ স্টেশনে ধর্ষন হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি ধর্ষনবাদী রাজনৈতিক দল। এই দলের মান্ডেট হলো শিশু ও নারী ধর্ষন ও হত্যা। স্বর্ণ স্মাগলারের ছেলেসহ বাংলাদেশের সকল ধর্ষকের বিচার হওয়া উচিৎ । ধর্ষক যার ছেলেই হোক আর যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হোক না কেনো আর যার পায়ে সালাম করেই রাজনীতি করুক না কেনো সকল ধর্ষকের উপযুক্ত সাজাই বাংলাদেশে ধর্ষনের হার হ্রাস করবে।
কিন্তু ধর্ষকেরা যদি বাংলাদেশে ভারতের রাজ্যসরকার হয় তাহলে অপরাধীদের কাছে অপরাধের বিচার চাওয়া অনেকটা আত্মহত্যার মতো । শ্রীপুরের হজরত আলী মাহমুদ সেজন্যই আত্মহত্যা করেছিলেন। ধর্ষক ও খুনীরা যখন পুলিশ ও সরকার তখন ধর্ষিতারা বিচার পাবেনা সেটাই স্বাভাবিক।