আজও জাসাস পদবঞ্চিতদের বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসে শো ডাউন

বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাস নিয়ে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড। সাংগঠনিক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে না থাকলেও কোন্দলে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
প্রতিদিনই পূর্নাঙ্গ কমিটির দাবিতে দলের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের বিদ্রোহ, ধর্না আর সংগঠনের অফিসের দখলকে ঘিরে উত্তেজনা-এসকল ইস্যুতে এখন দলটির নীতিনির্ধারকরাও যন্ত্রনায় রয়েছেন।
সম্প্রতি ঘোষিত জাসাস কমিটি নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সংগঠনের সভাপতিকে কোনঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন সাধারণ সম্পাদক। আবার সাধারণ সম্পাদকের পক্ষাবলম্বন করে কেন্দ্রীয় কমিটির জাসাস সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ব্যস্ত রয়েছেন গ্রুপিং-কোন্দলে। ভিন্নদিকে সভাপতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েই আগাচ্ছেন। তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
জাসাস নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি পূনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত ১৯ জানুয়ারী মেয়াদোত্তীর্ন এই সংগঠনের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করেন । ঘোষিত ওই কমিটিতে সংগঠনের নিবেদিত নেতাকর্মীদেও বাদ দিয়ে নতুন নেতা নির্বাচন করায় একদিকে যেমন হতবাক হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা তেমনি ক্ষোভেও ফেটে পড়েন। তারা লাগাতার বিদ্রোহ আরম্ভ করেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা এই কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে থাকেন। এই আন্দোলনের মধ্যে ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নায়ক হেলাল খান লাঞ্ছিতও হন।
এরপর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আশ্বাসে এবং সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় নেতাকর্মীরা আন্দোলন স্তিমিত করেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও জাসাসের আংশিক কমিটিকে পূর্নাঙ্গ করার কোন লক্ষণ দেখছেন না সংগঠনের বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তাদের এই হতাশা থেকেই আবারো আন্দোলনের পথে হাটতে শুরু করেছেন তারা।
জাসাসের বিষয়ে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতা বলেন, সংগঠনের মধ্যেই পচন শুরু হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী জাসাস কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দ। তারা সিন্ডিকেট নির্ভর হয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নেতাদের দিয়ে এই কমিটি গঠনের খেসারত দিতে হবে পুরো দলকেই।
প্রমাণ হিসেবে ওই নেতা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলো জাসাস। বিএনপির মতো একটি বড় আর জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এতো অবহেলা আর অব্যবস্থাপনা আগে কখনো হয়নি। আমরা কোনোদিন দেখিনি। সম্পূর্ন অনুষ্ঠনটিই ফ্লপ হয়েছে। বড় কোনো শিল্পীর উপস্থিতি ছিলো না, দর্শক-শ্রোতা-তো দূরে থাক আমরাই বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর এ কারনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও রাগ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে আসেন।
এদিকে জাসাস কমিটিকে পূর্নাঙ্গ করার জন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্দেশনা দিলেও গুরুত্ব নেই। তার এই নির্দেশনায়-বিগত কমিটির বাদ পড়ে যাওয়া ত্যাগী আর যোগ্য নেতাকর্মীদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি থাকলেও তা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কমিটি নিয়ে সভাপতি বসতে চাইলেও সাধারণ সম্পাদক নিরূত্তাপ। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাযহারুল আনোয়ার, আর সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জলের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে হেলাল খান নিজের মতো করে কমিটি গঠনের কাজ করছেন। নিজের বলয় সৃষ্টির জন্য অনুসারীদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে চাইছেন তিনি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারনে জাসাস কেন্দ্র, ঢাকা মহানগর আর সারাদেশের কমিটিই স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরকে অভিভক্ত করে বিতর্কিতদের হাতে রাতের আঁধারে নেতৃত্ব তুলে দেন বর্তমান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সারাদেশের ৭৫টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ন অবস্থায় রয়েছে।
নিজেদের প্রাণের সংগঠন জাসাসের এমন দূরাবস্থায় অস্থির আর হতাশ হয়ে পড়েছেন সংগঠনটির নিবেদিত নেতাকর্মীরা। যার কারনে অসহিঞ্চু হয়ে উঠেছেন। আর এ কারনে কমিটিকে পূর্নাঙ্গ করার জন্য আল্টিমেটামসহ জাসাস কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেওয়ার কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। গত শনিবার আর সোমবার তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচি পালনকালে সংঘর্ষেও ঘটনাও ঘটে।
আজও বুধবার জাসাস পদ বঞ্চিতদের বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসে শো ডাউন করে জাসাস অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় । এই সময় পদধারীদের কাউকে দেখা যায় নাই ।
এসব বিষয়ে জাসাসের জনপ্রিয় ও পদবঞ্চিত নেতা আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, আমরা তো বলবো- অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী আর যোগ্যদের দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হোক। আর তা না হলে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন করে দ্রুত পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হোক। এর মাধ্যমই জাসাস ঘুরে দাড়াতে পারবে। অন্যথায় আগামীতে আরো অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছি।

জিখান/প্রবাসনিউজ২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *