হিজাব – অপরাধ ঢাকার বর্ম নয়।

যারা হিজাব পরিধান করেন তাঁরা কি সবাই মুসলমান? মোটেই না। আমি ফেসবুকে প্রায় প্রতিদিন দেখি হিজাব পরিহিতাদের ছবি পোষ্ট করা হয়েছে। মহিলা মধ্যবয়সী হিজাবী কিন্তু পাশে যুবতি মেয়ের হিজাব তো দূর ওড়নাও ঠিকভাবে রাখা নাই। কোরআনের কোন জাগাতেই লেখা নাই কিভাবে হিজাব পড়তে হবে বা কোন কোম্পানীর হিজাব পড়তে হবে বা বোরখাঁ পড়তে হবে বা শুধু চুল ঢাকতে হবে বা নাখ মুখ চোখ ঢাকতে হবে – এইসব কিছুই লেখা নাই। কিছুদিন আগে আমি ইংরেজী ও বাংলা অনুবাদিত কোরআন পাঠ সমাপ্ত করেছি।

হাদিসে বর্ণিত আছে পর্দার কথা। আরো বর্ণিত আছে পর্দা করার কারণ। মসজিদে মেয়েদের আসা নিষেধ করা হয়েছে। কেন নিষেধ করা হয়েছে তার কারণও বর্নিত আছে। আমি যখন পবিত্র কাবা শরীফে যাই তখন দেখেছি মহিলারা কাবা শরীফে এসেছেন এবং মসজিদে নামায পড়ছেন। কানাডার মসজিদে সুন্নী মুসলমানেরা যান নামায পড়তে। নামায ঘরেও পড়া যায়। মসজিদে যাবার দরকার হয়না। মসজিদে জামাতে নামায পড়ার জন্য মেয়েদের বলা হয়নি। মেয়েদের দায়িত্ব ভিন্ন আর ছেলেদের দায়িত্ব ভিন্ন। মেয়েদের নিরাপত্তা ও সন্মান নিশ্চিত করার জন্যই মূলতঃ পর্দা করার কথা বলা হয়েছে এবং ভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের দায়িত্বসমুহ ও তার কারনঃ

ছেলেরা সন্তানের জন্মদান করতে অক্ষম (বলাই বাহুল্য নারী পুরুষের মিলনেই একটি সন্তানের জন্ম হয়। অনেকের ধারণা শুধু পুরুষের বীর্যেই নারী গর্ভধারন করে। এই ভুল ধারণার জন্য অনেক পুরুষই গর্ববোধ করে থাকে। যদি সেটাই সত্য হতো তাহলে যেকোন গর্তেই পুরুষেরা বীর্যপাত করে যার যার সন্তানের জন্ম দিতে পারতো তাহলে আর নারীর সাথে মিলনের ঝামেলা পোহাতে হতোনা। নারীর ডিম্ব ও পুরুষের বীর্যের মিলনে একটি ভ্রুণের জন্ম হয়। একটি ভ্রুণের জন্মলাভের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের সমান অবদান রয়েছে। এর পরে রয়েছে গর্ভধাঁরণ ও বহন । পুরুষেরা গর্ভধারণ ও বহন করতে অক্ষম আর সেকারনেই একটি নারীর ঘরে থাকা আবশ্যক। যদি সবাই এই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে নাই। তবুও নারী যেহেতু সন্তান গর্ভে ধারন, বহন ও লালন পালন করে (যেহেতু পুরুষের স্তন নাই এবং স্তনে দুধ আসেনা যা নাকি শিশুর জন্য খাদ্য) সেই কারণেই নারীর ঘরে থাকা উচিৎ।

শিশুর জন্মের নয় মাস মাকে অনেক সাবধান থাকতে হয়। শিশুর জন্মের পরে যতদিন শিশু সাবলম্বি না হয় ততদিন মাকে শিশুর যত্ন নিতে হয়। এবং এর জন্য মাকে সুস্থ, সবল ও নিরাপদ থাকতে হয়। একটি শিশুকে পেটে বা কোলে নিয়ে মসজিদের জামাতে নামায পড়তে বলা হয় নাই। একটি শিশুকে ঘরে ফেলেও মসজিদে দৌড়াইতে বলা হয় নাই। এছাড়া বাইরে রয়েছে অনেক শুকরের পাল। এইসব শুকরের পাল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্যও ঘরে থাকা জরুরী।

এইসব কারনেই মূলত পর্দা করতে বলা হয়েছে বা নিরাপদে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর। যদি স্বামী এই দায়িত্ব পালন না করতে পারে তাহলে তাঁর বিয়ে করার কোন অধিকার নাই।
এটাই ইসলাম। কোরআন বা হাদিসে কোথাও বলা নাই স্ত্রীকে নিয়া কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের হাটু পানিতে হিজাব পড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য। হিজাব বা বোরখা পড়ে স্ত্রীকে অফিসে কাজে পাঠাতেও বলা হয় নাই। হিজাব পড়লে শুধু চুল ঢাকে। মহিলাদের চুল দেখানো খারাপ বা পাপ এই সম্পর্কে আমি কোন সুরা পড়িনি বা হাদিসেও এমন কিছু বর্ণনা নাই। তবে বাংলা অনেক হাদিস আছে যা ভুল ও মিথ্যা এবং হুজুরের নিজের মনগড়া আর সেখানেই চুল সম্পর্কে ভয়ভীতি দেখানো আছে। এইভাবে বলা নাই যে বুড়া হইলেই চুল ঢেকে ফেলো আর নিজের বাচ্চা মেয়েদের চুল খুলে ফেসবুকে মার্কেটিং করার জন্য পোষ্ট করে মেয়ের জন্য ভাল পাত্র দেখো। ইসলামী মতে বিয়েতে মেয়ের প্রতিনিধি থাকে মসজিদে এবং খোর্মা দিয়ে মসজিদে বিয়ে হয় যেখানে মেয়ে বা মেয়ের কোন বান্ধবী থাকার প্রশ্নই উঠেনা।

অনেকেই দেখা যায় পুরা বিছানার চাঁদর মাথায় লাগিয়ে অনেক গহনাগাটি পড়ে বিয়ে করার ছবি পোষ্ট করে ফেসবুকে। অনেক সময় মনে হয় এগুলা কাপড়ের অপচয়। মুখের ভেতর অনেক মেকাপ শরীরে অনেক কাপড়চোপড় আর গহনাগাটি – এইসব কিছুই যার যার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা বা অভিরুচি।

এখন দেখা যাক যারা এইভাবে বিশাল বিশাল বিছানার চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে রাখে তাদের উপার্জনের উপায় কি? তাঁরা কি সবাই হালাল উপার্জন খায়??

প্রশ্নই উঠেনা। চাকুরী পেতে গেলেই ঘুষ দিতে হবে। সেখানেই হারাম হয়ে গেলো উপার্জন। বাংলাদেশে যেসব পুলিশ ঘুষ খায়না তাদের চাকুরী নিয়ে টান পড়ে। যারা ঘুষ খায় তাদের অনেকের বউ হিজাব পড়ে। বাংলাদেশের অনেক অসাধু ব্যবসায়ীর বউয়েরা হিজাব পড়ে। অসাধু মন্ত্রী, ইয়াবা চোরাচালনকারী, খুনী, চোর, ডাকাত, ধর্ষকের স্ত্রী, কন্যা, বোনেরা হিজাব বা বোরখা পড়ে। সেটা ইসলামের দোষ নয়। যারা ইসলামকে ব্যবহার করে তাদের যার যার অপরাধ ঢাকার জন্য তারাই দোষী। তারা দোষী দুইভাবেঃ

এক – ইসলামের অপব্যবহার করার জন্য
দুই – ইসলামের লেবাসে নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য

 

ইসলাম পোষাকে নয় ইসলাম অন্তরে ধারণ করতে হয়। খুব অসহ্য লাগে যখন এটেসুটে কাপড় পরিহিতা হিজাবী দেখি। সবই দেখা যায় খামাখা অতিরিক্ত কাপড় চাপিয়ে মুখে দেখিয়ে বিশাল এক সাইনবোর্ড লাগিয়ে ধর্মের কল বাতাসে নড়বড় করে। বাংলাদেশের চারিদিকে অন্যায় আর অবিচার। সবাই সহ্য করছে। যারা অবিচার সহ্য করে যারা অপরাধীকে টিকে থাকার জন্য সাহায্য করে তারা কিভাবে মুসলমান হয়?

বাংলাদেশের সব মেয়ে যদি ঘরে থাকে, আর সব পুরুষেরা যদি কাজ করে তাহলে দেখা যাবে সেটাই যথেষ্ট কারণ বাংলাদেশ একটি আমদানীকারক দেশ। বাংলাদেশে কিছু উৎপাদন হয়না। বহুজাতীক কোম্পানীর পন্য আমদানী করে তা বিক্রি করে বাংলাদেশীরা আর সেজন্য পুরুষেরা উপার্জন করলেই যথেষ্ট। সব পুরুষের বেকার সমস্যা সমাধানের পরে যদি কর্মীর দরকার হয় তখন মেয়েরা অংশগ্রহণ করতে পারে। অনেকেই কামায় করা বউ চায়। নিজে ঘরে বসে কবিতা লেখে । সুন্দরী বউ বিয়া করে যে সহজেই কাজ পাবে। অলস কবি ঘরে বসে কবিতা লিখবে আর ফেসবুকে মেয়েদের সাথে আলাপ করবে আর বউ সারাদিন বাইরে কাজ করবে। অনেক পুরুষ যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে যা নাকি সম্পুর্ন ইসলাম বিরোধী । তাহলে যারা যৌতুক নিয়ে বিয়া করে তারাও তাদের স্ত্রীকে হিজাবের নীচে লুকিয়ে রাখে। তারা তো মুসলমানই না তাহলে হিজাব পড়লেই কি আর না পড়লেই কি।

হিজাব পরিধান করা বা না করা একজন নারীর ইচ্ছা।  ইসলাম যুক্তির ধর্ম – অপরাধ ঢাকার বর্ম নয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.