হাওর অঞ্চলে মাছদের মৃত্যুতে শোকবানী

হাওর অঞ্চলে মাছেরা মরে যাচ্ছে। প্রভুর টিভি সিরিয়ালে, হিন্দি মুভিতে যে বিষক্রিয়া সেসবকিছু দাসেরা হজম করে অবলীলায় তবে মাছেরা পারেনি তা সহিতে। ফলে মরে যাচ্ছে। যাক। ওরা এবার স্বাধীনভাবে মরেছে। কারু পেটে যেয়ে মরেনি। মরতে তো হতোই একভাবে মরলেই হলো । নিজের এলাকাতে নিজের আত্মিয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে মরেছে। অন্যের বাজারে যেয়ে অন্যের হাতে দাঁড়িপাল্লাতে মেপে অন্যের নির্যাতিত নিপীড়িত গৃহকর্মীর বটিতে টুকরো হয়ে অন্যের পেটে যেয়ে মরেনি। মাছেরা ফসিল হবে তারপর হাজার বছর ধরে সলিড কয়লা তারপর বিদ্যুৎ উৎপাদনে পুঁজিপতিদের সাহায্য করবে।

হত্যা ও মরে যাবার পরে শোক একটি বিনোদন। যার যার অপছন্দের মানুষকে হত্যার জন্য দাবী ও যার যার পছন্দের ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক ও অপবাদ দেবার রেওয়াজ অনেকটা মাছ দিয়ে ভাত খাবার মত ব্যাপার। অবশ্য মাছ ও ভাত দুইটাই এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে দুস্প্রাপ্য। মাছে ভাতে বাঙ্গালী কথাটা এখন আর প্রযোজ্য না । মাছ জন্মে পানিতে। বাংলাদেশে মাছ বলতে কিছু নেই। বাংলাদেশে পানি নেই সেজন্য। অবিংসবাদী নেতা মুজিবে পানি বিক্রি করে আজীবন তালুক হিসাবে বাংলাদেশকে ক্রয় করেছে। এখন তার চোদ্দগুষ্টি বাংলাদেশের সম্পদ লুট ও পাচার করে খাচ্ছে। যেসব মাছ মাছ ভুল করে নদীর হাটু পানিতে বা নালাতে বা হাওড়ে জন্মেছিল তারা সব মরে যাচ্ছে। এখন শুধু আছে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরে শোক। শোক না করলেই যার যার প্রিয় মানুষ সে সে অভিমান করবে। মিয়া আপনে আমার সাথে অমুকের মরার জন্য শোক করেন নাই । যান মিয়া আপনের লগে কথা নাই!!!

আসেন ফাউ কাম কাজে সময় কাটিয়ে জীবনের সব জ্বালা যন্ত্রনা ভুলে থাকি। মিথ্যা কথার মালা সাজিয়ে, ভুয়া স্বপ্ন দেখে, বাস্তবকে ভুলে থেকে থেকে, পেটে পাথর বেঁধে কাটিয়ে দেই আমৃত্যু। আসেন সত্যকে লুকিয়ে রাখি মিথ্যার লাশের ভেতর। সত্য আর মিথ্যা মিলেমিশে হয়ে যাক একাকার। আসেন বড় বড় বুলি আওড়ে সেটাকে লেবাস হিসাবে পরিধান করে চোখে ধুলো দেই সব্বার। অনেক দিন হয়ে গেল মিথ্যা বলছি। আমি বুড়া হয়ে গেছি কিন্তু মিথ্যাগুলো সব কি সজীব, কি নবীন, কি অপূর্ব, তরতাজা খাস্তাভাজা!! নতুন প্রজন্ম আসছে আর মিথ্যাগুলো দিয়ে সাজছে। কি সুন্দর সুন্দর বাহারি মিথ্যা।

আসেন সব্বাই রচনা লিখি যার যার প্রিয় নেতা নিয়া। আমার নেতা ভাল তোমার নেতা খারাপ। আমার নেতা দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে তোমার নেতাকে আর তোমার নেতা সেই স্বাধীনতা বিক্রি করে পরাধিন হয়েছে সব শেষে আমরা সবাই গোলাম আমাদের এই মিরজাফরের রাজত্বে। নইলে মোরা দালালি করবো কার স্বার্থে?

আজকের ক্রসফায়ারের স্কোর কি?
কতজন নারীকে ধর্ষন করা হলো?
আমরা কি হানাদারের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে বিশ্বের সব চাইতে হিংস্র দেশ ও জাতী হিসাবে গর্বের সাথে জাতীসংঘে মশাল জ্বালাইতে পারছি? পারি নাই? হায়! হায়!!
আসলে ক্রসফায়ারে যারা মরে সবাই ড্রাগস ডিলার, জঙ্গি, ইসলামী মিলিটান্টস আর থানা হাজতে যেসব নারীকে ধরে নিয়ে ধর্ষন করা হয় ওদের চরিত্র খারাপ আর পুলিশে ধর্ষনের মাধ্যমে ওদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র করার জন্য সেকেন্ড চান্স দিতাছে। কাপুরুষ, জঘন্য, দালাল, দুর্নীতিবাজ, মিথ্যুক, প্রতারক, ধান্দাবাজ জাতী হিসাবে এ ছাড়া আর কিভাবে আমরা আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও সমুন্নত রাখতে পারি?

সেদিন দেখলাম একদল বাচ্চা বাচ্চা ছেলে রং মেখে শুয়ে আছে। আর সেদিন দেখলাম পালের গোদা কুতিয়ে কুতিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। বাচ্চা বাচ্চা এতিম আলেমদের রং বুলেট দিয়ে সাফ করে লাশ গায়েব করে দিয়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তাঘাটের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করার জন্য পেরধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। লাশের তেহারী সুস্বাদু ছিল।

আসেন লাশ ফেলি। লাশ গুনি। লাশের পাশে সেলফি নিয়ে প্রেমিক/প্রেমিকা সংগ্রহ করি। লাশের পাশে লাশের কাছে লাশের সাথে এক লাশময় বাংলাদেশের জন্য আমরা সেইসব লাখো মাবোনের ইজ্বত ও ত্রিশ লাখ (??) লাশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যাদের লাশের বিনিময়ে পেয়েছি আজকের দাসত্ব ও হিন্দি মুভি স্টাইলের জীবন।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *