তানজিনা আজম তনুঃ– “কালো কালো করিস না লো ও গোয়ালের ঝি,
আমায় বিধাতা করেছে কালো, আমি করবো কি”!
হ্যা আমি করবো কি? কালো ডাক সম্বোধনে কষ্ট পেয়ে চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিকেও অনেকে তুলনা করেন গড়িয়ে পড়া মুক্তোর সাথে। আমরা কালো বর্নের মেয়েরা কালো ডাক সম্বোধনে আঘায় প্রাপ্ত হয় মানসিকভাবে। কিন্তু আমাদের সমাজের চোখ থেকে ছানির পর্দা উঠবে কবে?
আদৌ কি আমাদের দেশের মেয়েরা নাইজেরিয়া, সুদান কিংবা ঘানার দেশের মানুষের মত কালো!
তাহলে কেন একটা ছেলে বা মেয়েকে তার বর্ন নিয়ে উপহাসের স্বীকার হতে হবে?
একটা মেয়ে যখন কোথায় তার যোগ্যতা উপস্থাপন করতে যায়, সেখানেও বাধা হয়ে ধারায় তার বর্ন।
এখানেও যোগ্যতার সাথে বর্নটাও মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
আমার বন্ধু লিস্টের অনেকেও আমাকে বর্ন নিয়ে ইঙিত দিয়ে নিজেকে মহান বানানোর চেষ্টা করেন!
ওহে আল্লার বান্দা- যেখানে তুমি অন্য বর্নের মানুষকে উপহাস করে নিজেকে মহান ভাবো, সেখানে নিজের অজান্তে তোমার উজ্জ্বল বর্নের কালো মনেটা দেখিয়ে দাও তা বুঝোনা?
আমাদের দেশে যাদের গায়ের বর্ন কালো বলে উপহাসের স্বীকার হতে হয়, বস্তুত তাদের রং-তুলীর শিল্পীরা তামাটে বলে আখ্যায়িত করেন এবং একশেড উপরের বর্নকে শ্যামা বর্ন রুপে ধরা দেন।
নিন্দুক মহল….,
আপনারা যারা আমাদের তামাটে বা শ্যামা বর্ন নিয়ে উপহাস করে নিজেদের কে উজ্জ্বল কিংবা ফর্সা রঙের পরিচয় দেন,বেলা শেষে কিন্তু সেই কালোতে ঘুমিয়ে আবার রাঙা সূর্যের আলোয় চোখ মেলেন! তাহলে কালোকে নিয়ে কিসের এত উপহাস হুম?
হীরার মধ্যে সবচেয়ে দামী ও দূলর্ভ হলো কালো হীরা বা ব্ল্যাক ডায়মন্ড। কালো মেয়েকে উপমা দিয়ে যদি ব্ল্যাক ডায়মন্ডের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে কালোকে এতো অবজ্ঞা করা হয়!
কালো মেয়ের রুপে মুগ্ধ হয়ে কত কবি কত কবিতা লিখেছেন, কত গীতিকার রচনা করেছেন গান। আমাদের বিদ্রোহী কবি নজরুল লিখেছেন “আমার কালো মেয়ে”।
অবশেষে কয়েকটি লাইন মনে পড়ে গেলো, কোথায় যেন পড়েছি ঠিক মনে নেই…
“অন্ধকারে একটা সুন্দরী মেয়ে যেমন
কালো মেয়েও তেমন
পার্থক্য টা শুধু আলোতে”
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি……
হ্যা আমি কালো, আমি শ্যাম বর্নের। এতেই আমি খুশি। আমার মন বর্ন বিদ্বেষীদের মতো তো আর কালো নয়! এতে আমি কালো হয়ে খুশি এবং সুখী। অন্যকে কালো বলার আগে হাজারবার কালো রুপের মনের কথা চিন্তা করুন দয়া করে।এতে অন্যের অন্তর আত্নাকে কলুষিত করা থেকে রেহাই দিতে পারবেন।
জিখান/প্রবাসনিউজ২৪.কম