ক্রিকেটের জন্ম কোথায় হয়েছিল কেউ জানেনা তবে ধারণা করা হয় ক্রিকেট খেলা শুরু হয় ইংল্যান্ডের কেন্ট এবং সাসেক্সে। জুলিয়েন ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রথম ক্রিকেট খেলার রেফারেন্স পাওয়া যায় সোমবার, জানুয়ারী ১৭, ১৫৯৭।
এছাড়া ধারণা করা হয় ক্রিকেট খেলা শুরু হয় মার্চ ১০, ১৩০০ সালে। ওয়েস্ট মিনিস্টার এবং নিউএন্ডেনে। কে প্রথম এই খেলা খেলেছে তাই নিয়ে ইংল্যান্ডে অনেক মামলা মোকদ্দমা চলে। ক্রিকেট খেলা ইংল্যান্ড থেকে বের হয়ে আসে একই সাথে যখন ইংলিশরা সাড়া বিশ্বে লুটপাট করতে বের হয়। ইংরেজ, পর্তুগীজ, ফ্রেঞ্চ এরা সবাই যখন লুটপাটে বের হয় তখন সাথে করে তাদের বিনোদণের জন্য কিছু ব্যবস্থা ও যে এলাকাতে লুটপাট করবে সেই এলাকার মানুষের মগজ ধোলাই করার জন্য পাদ্রী বা ধর্মযাজক নিয়ে বের হতো।
অলৌকিকভাবে কিছু পাবার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে নাড়াচাড়া দিতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে যুগে যুগে। এর ফলে যে কারণে ধর্মের প্রবর্তন হয় তা আবর্তিত হয় লুটপাটের পরে স্থানীয় লুন্ঠিত মানুষের মগজের ঢাকনা হিসাবে। শোষন, নিপীড়ন, অন্যায় চলতে থাকে বিভিন্ন মোড়কের নীচে। সব অন্যায় সব শোষন সব নিপীড়ন সুন্দরভাবে প্রতিষ্টিত করা হয় নিয়ম হিসাবে, সাংস্কৃতি হিসাবে, বিনোদন হিসাবে, যুগে যুগে দেশে দেশে লঙ্ঘিত হয় মানবাধিকার ও স্বাধীনতা। রাজারা লুটপাট করে সাড়া বিশ্বে সন্মানিত হয়। জমিদার, জোতদার ও তাদের চ্যালাপেলা, চাটুকার, মোসাহেব, গায়ক, নায়ক, বাদক, কবি, সাহিত্যিকেরা সব যার যার তোষামোদী শোষন ভিত্তিক রচনা লিখে যুগে যুগে বরনীয় ও স্বরণীয় হয়। রবীন্দ্রনাথ যদি জমিদারের ছেলে না হতেন তাহলে আমরা তাকে ইংরেজের দালাল বলেই ঘৃণা করতাম। অনেক প্রজা শোষণ অনেক প্রজার জমি হরপ করেই একজন মানুষ জমিদার হতে পারে। এই লুন্ঠনকারীকে সবাই সন্মান করেছে। এখনো করে। ফিরে আসি উপমহাদেশে ক্রিকেটের আগমণের ইতিহাসে।
সাড়া বিশ্বের যেসব দেশে ইংলিশ কলোনী বা উপনিবেশ হয়েছে সেই সব দেশেই অদ্যবধি ক্রিকেটের প্রচলণ রয়েছে। ইংরেজের ছিল সন্মোহনী যাদু। সবাই যার যার নিজের ভাষাকে বাদ দিয়ে সাহেবদের ভাষা বলতে আগ্রহী হবার অনেক কারণ রয়েছে। ইংরেজেরা শুধু উপনিবেশ করেছে তা নয়। মানুষকে দাস হিসাবে ধরে বেঁধে জাহাজে ভরে এক এলাকা থেকে নিয়ে যেয়ে অন্য এলাকাতে চালান করেছে গরুছাগলের মতো। পথে অনেকেই মারা গেছে। একজনের উপরে আর একজনকে বেঁধে নেবার ফলে একজন মানুষ অন্যজন মানুষের উপরে বমি করেছে, মলমূত্র ত্যাগ করেছে। ইংরেজেরা ভারতের তামিলনাড়ু থেকে মানুষকে ধরে বেধে নিয়ে গেছে শ্রীলংকার চা বাগানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য।
ইংরেজরা আফ্রিকা থেকে মানুষকে ধরে বেঁধে এনে দাস হিসাবে বিক্রি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন ইংরেজ, পর্তুগীজ, স্পানীস, ফ্রেঞ্চ কলোনীতে। আমরা যখন ক্রিকেট খেলা দেখি তখন কি এইসব কথা ভাবি? ভাবিনা। বিভিন্ন কলোনীগুলোতে মানুষকে পশুর মত কাজ করিয়ে নেওয়া হতো আর ইংরেজরা ক্রিকেট খেলতো। ইংরেজদের সব কলোনীতেই ইংরেজের মোসাহেব ছাড়া বাকী সবাইকে ব্যবহার করা হতো জানোয়ারের মত। আমরা যারা ইসলামিক টেরোরিস্ট বলে বিভিন্ন মানুষকে ঘৃণা করি তখন ভাবিনা আসলে টেরোরিজমের জনক হলো ইংরেজরা।
পাকভারত উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা যখন চলে যায় তখন ক্ষমতা রেখে যায় ইংরেজদের চাটুকার মোসাহেবদের হাতে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহেরু এরা সবাই ইংরেজের প্রতিনিধি। ইংরেজরা যাবার আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করে। সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে কোটি কোটি হিন্দু মুসলমান মারা যায় ও গৃহহারা হয়। আজকের পৃথিবী বদল হয়নি। এখনো চলছে সেই দাঙ্গা। আফগানিস্তান এক কালে বিশ্বের সব চাইতে সুন্দর একটি সাজানো গোছানো দেশ ছিল কিন্তু এখন আফগানিস্থান ধ্বংসস্তূপ। মানব সভ্যতার শুরুই হয় ইরাক, প্যালেস্টাইন, জর্ডান, ইজিপ্ট, ইত্যাদি এলাকাতে। এখন সবগুলো দেশই ধ্বংসস্তূপ । অথচ ইংরেজরা যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করে আর ক্রিকেটের ব্যাট আর বল জাহাজে ভরে বিভিন্ন দেশে লুটপাট করতে বের হয় তখন ইংরেজরা গুহাতে বাস করতো। ইংরেজের ছিল বুদ্ধি এবং লুটপাট করার এমন কৌশল যাতে লুটপাট করে অন্য দেশ থেকে সম্পদ এনে নিজের দেশ সাজানো হবে একটা বরনীয়, স্বরনীয়, সন্মানিয়, আদোরনীয় ও গর্বিত ব্যাপার। কিন্তু সাদা চামড়া যাদের নাই তাঁরা যদি একই কাজ করে তখনই তাঁরা হয়ে যাবে ক্রিমিনাল বা অপরাধী ।
নিজেদের ভেতরে কলহের মাধ্যমে শোষিতেরাই শোষকের হাতে শোষণের হাতিয়ার তুলে দেয় । ইংরেজরা সেটা জানে। ইংরেজদের ফেলে যাওয়া ডিভাইড এন্ড রুল বা বিভাজন ও শাসন এখনো চলছে বাংলাদেশে ও বিশ্বের সব দেশেই যেদেশে রাস্ট্রদ্রোহীদের হাতে জনগন ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।
যারা ক্রিকেট খেলা দ্যাখে, ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য ক্যাবল টিভিতে টাকা খরচা করে, ক্রিকেট খেলাতে জয়লাভকে নিজেদের গৌরব মনে করে তারাই যখন কাশ্মিরের মানুষের জন্য কাঁদে তখন ব্যাপারটা খুব হাস্যকর হয়ে যায়। এটা অনেকটা বিপ্লবীদের বেনসন এন্ড হেজেস টানার মত হিপোক্রেসী । পালেস্টাইনীরা জাতিসঙ্ঘের তাবুর নীচে কার্পেট বোমাতে লাশ হছে বিগত আশি বছর ধরে সেটাই ইংরেজদের বদান্যতা। যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে, তুরাগে পিকনিকে যায় তারা যখন ক্রিকেট খেলার বিজয়ে কাপড় খুলে নাচে তখন সেটা অনেকটা আলেম হত্যার পরে শেখ হাসিনার ওমরা হজ্ব পালণের মত অর্থহীন হয়ে যায়।
স্বকীয়তা, জাতীয়তাবোধ, মানবতা ও স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায় আমরা তা বুঝিনা। আমরা বুঝি গ্লামার, আমরা বুঝি উঁচু উঁচু দালান কোঠা, আমরা বুঝি লুটপাট দুর্নীতি চুরি ডাকাতি ধোঁকাবাজি প্রতারণার মাধ্যমে কাগজ ছিনিয়ে এনে তা দিয়ে ভুড়ি বানিয়ে আর জামাকাপড় চাপিয়ে ভূড়ি ঢেকে আটা ময়দা মেখে গহনাগাটি চাপিয়ে সব শেষে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে যেয়ে দম ছেড়ে দিতে।
আমরা ভালবাসি ক্রিকেট, জানাজা, জনসমক্ষে কাপড় ছিড়ে ফেলা, হোলী খেলা, প্রেমহীন হৃদয় থেকে লেখা প্রেমের কবিতা লেখা,কাপুরুষের লেখা উপন্যাসের কোটেশনবাজী – আমরা এইসব ভালবাসি। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ। বাংলাদেশে সব অদ্ভুত মানুষ বাস করে। পেটে ভাত নাই হাতে মোবাইল আছে, ইন্টারনেট আছে আর আছে ক্রিকেট।
যেহেতু ক্রিকেট শোষকদের খেলা, যেহেতু ক্রিকেট বুর্জোয়াদের খেলা, সেহেতু একজন ক্রিকেট প্রেমিক একজন ভাঁড় বা মোসাহেব বা চাটুকার । যার ভেতর স্বকীয়তা নেই, জাতিয়তাবোধ নেই, দেশপ্রেম নেই ।