সেই অনেক দিন আগের কথা…….
সবাই নিজের ট্রেনে যাত্রা করছে। প্রতি স্টেশনে কেউ নামছে আর কেউ উঠছে। কারো কোন পরিচয় নেই। কত অপরিচিত মানুষ কেউ কাউকে চিনে না অথচ বসে আছে পাশাপাশি দুটো সিটে। সময় কাটানোর খাতিরেও কেউ কারো সাথে কথা বলে না!
একজন বলতে চাইলেও অন্যজনের অনিহা। মনে হচ্ছে যদি কথা বলে অজ্ঞান পার্টির মত কথার যাদু দিয়ে ভুলিয়ে দেয়? আর সর্বশান্ত করে দিয়ে সব কিছু নিয়ে চলে যায়! এই হলো আমাদের যাত্রা পথের যাত্রা……..
বাসের যাত্রা…..
সেই তো অন্যরকম মাত্রা। কত মানুষ এক পথে উঠে আর কত মানুষ ভিন্ন পথে নামে। কেউ খায় পান, সিগারেট আর বিড়ি। আর কেউ পড়ে পেপার, পত্রিকা। অপর প্রান্ত থেকে হেল্পারের চিল্লাচিল্লি…..
ওই মতিঝিল….
মহিলা যাত্রীরা চিন্তায় থাকে জায়গামত নামার আর মেয়েরা আছে আধুনিক যুগের ভিত্তি মোবাইল চালনায় ব্যস্ত।
মধ্য বয়স্করা কেউ শান্তির ঘুম দিয়ে নিচ্ছেন যাত্রা পথের ক্লান্তি কাটাতে আর কেউ ব্যস্ত তার শেয়ার বাজারের হিসাব নিকাশ মিলাতে!
অনেকে তো পাক্কা রাজনীতিতে। কয়েকদফা ধোলায় করেন সরকার ও বিরোধী দলকে। দিন শেষে দেখা যায় তিনি নিজেও কোন না কোন দলের সমর্থক!
পথে মধ্যে যাত্রা বিরতিতে উঠে এমন কিছু হকার যাদের ব্যাবহার শুনলে মনে হয় পাক্কা ডাবল গ্র্যাজুয়েট করা!
তবুও কারো সাথে কারো আলাপচারিতা হয় না। হয়না কোন বাক্য বিনিময় তবুও তারা এক সাথে যাচ্ছে গন্তব্যে……..
দিন যত যাচ্ছে মানুষের চিন্তা চেতনা থেকে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ববোধ ততই বিলুপ্ত হচ্ছে ঠিক ডায়নোসরের মত। হয়তো একদিন জাদুঘরে খোজা লাগবে বিবেকবোধ কে।
সেইদিন যাচ্ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বরসহ। প্রেস ক্লাবের একটু আগে দেখলাম এক আলিশান কার একটি রিকশাকে ধাক্কা দিয়ে গেল। একটু দূর গিয়ে ড্রাইভার এসে রিকশা ওয়ালাকে সেই বকাঝকা অথচ রিকশাওয়ালার বিবেকবোধ ছিল বলে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়া মধ্যবয়সী মহিলা ও তার ছেলেকে নিয়ে সে ব্যস্ত তাদেরকে তুলতে রাস্তা থেকে। দু’এক জনকে দেখলাম তাদের হাত থেকে পড়ে যাওয়া প্যাকেটের আলু বেগুন তুলতে! আর বাকিরা নির্বাক দর্শক হয়ে দাড়িয়ে দেখছে।
সব সময় দেখছি চোরের মার বড় গলা, এখানেও তাই।
শেষে বাংলা সিনেমার মত সার্জন্টের আগমন আর জনতার মায়া কান্না এই দুই অবলা যাত্রীর জন্য! অথচ ওখানে পুলিশ বক্সে বেশ ভালো ছিলো সার্জেন্ট সহ পুলিশের সংখ্যা।
আমাদের রিকশা যাচ্ছিলো গন্তব্যে। আমাদের দুইজনের আলাপচারিতা শুনে রিকশাবাহক বলে উঠলো মানুষ আর মানুষ নাই।
আরেক দিনের কথা….
ঠিক কোথায় যাচ্ছিলাম মনে নেই…….
রিকশা ওয়ালা তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ইউ টার্ন নিলো কিন্তু ওই দিক দিয়ে সার্জেন্ট ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করছে। রিকশা টার্ন করলো কেন তাই জনাব সার্জেন্ট রিকশা ওয়ালার কানে কষে বেশ ভালোই জোরে কষাঘাত করে বাহুর বল আর পদের বল বুঝালেন আর সাথে লাঠি দিয়ে ফ্রি দুটো বারি দিলেন হাতে!
এরপর যা শুনলাম তার মুখে আমরা নিজেরাই হতবাক!
যাত্রী বলে পথের শেষ নেই সেই জীবনের হোক আর রাস্তার হোক…..
কিন্তু কতই কিছুই না দেখছি আর কতই কিছুই দেখেও বিবেকের কাছে বারে বারে ধাক্কা খাচ্ছি।
বিবেক কোথায় হারিয়া যাচ্ছে? আছে কি সেই জাদুর ছড়িতে!
নাকি বিবেকও আজ আমাদের যাত্রা পথের যাত্রী হয়ে মনুষ্যত্ববোধকে হারিকেন দিয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে?
ওহে বিবেক উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ কে জাগিয়ে দাও …… দয়া করে।
জিখান/প্রবাসনিউজ২৪.কম