নারীর অপূর্নতার শিকল – তানজিনা আজম তনু

নারীর স্বাধীনতা, আজো কি…
নারীকে দিয়েছে পরিপূর্নতা?
পেয়েছি কি তার সম্মান!
লড়তে গিয়ে হচ্ছে সে
কতই না আপমান!……
ওমা মেয়ে তো দেখছি কালো, টাকা জমাও বেশি করে বিয়ের সময় লাগবে তো!
এত্ত বেটে মিনিমাম তো ৫ ফিট ২/৩ হওয়া চায়, ছেলে পাওয়া যাবে তো!
রেজাল্ট কেমন? অতো ভালো না, তাইলে কি আর করার মানবিকে পড়াও। দেখবে তেমন খরচ ও লাগবে না, বিয়ে দিতে ও সমস্যা পোহাতে হবে না। টেনেটুনে পাশ তো করে যাবেই।
রান্না কেমন পারো মেয়ে তুমি? পাশ থেকে উত্তর আসলো, সেই ভালোই পারে।হাতে কলমে যে শিক্ষা দিয়ে পাক্কা করেছি।
ও আচ্ছা! কাজের কাজ এই একটাইই করেছেন, তাহলে তো অন্তত বিয়ে তে আর কেঊ ঠেকাতে পারবে না। বুদ্ধিমানের কাজটায় নিজ দায়িত্ব সেরেছেন।
নবম শ্রেনীতে তো উঠেছ, সাবজেক্ট কি নিবে?
ব্যবসায় শিক্ষা নাকি মানবিক?
না আমি বিজ্ঞানে পড়ব, উহু ওটা তোমাকে দিয়ে হবে না।
পিছনে থেকে বয়স্ক একজন…
অত টাকা নেই যে, প্রতি বিষয়ে প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়ার খরচ চালাবে তোর বাপে!
বয়স তো আর কম হলো না! এবার ছোট ভাইটার কথা ভাব। ওর তো একটা ভবিষ্যত আছে নাকি? কত স্বপ্ন নাতির হাতে নিজের চিকিৎসা করাবো। তুই তো কয় দিন পরে পরের বাড়ি চলে যাবি। এত পড়ে কি করবি?
ওই এত্ত খাস কেন? জামাইর বাড়ি গিয়ে খাইস। এখন তো একটু মেপে খা।
আরে ভাবি দেখতে দেখতে তো বেলা কম যাচ্ছে না, বিয়ে দিবেন কখন মেয়ে? যদি আরেকটু রং টা উজ্জ্বল হতো কবেই পার করে দিতে পারতাম আপনার মেয়েকে! তাই বলে ভাববেন না যে চেস্টা করছি না!
একটু ডায়েট করতে বলেন মেয়েকে।
কলেজ যাচ্ছিস কত টাকা দিব? এগুলো দিয়ে চালিয়ে জমানোর চেস্টা করিস!
ছেলে বিয়ে করিয়েছেন ভাবি কিন্তু এ কি করলেন? দেশে বুঝি আর মেয়ে ছিলনা সুন্দরি?
বাসা ভর্তি করে দিয়েছে বুঝি মেয়ের বাপ?
হুম পছন্দ করো ঠিক আছে কিন্তু এই মেয়েকে তো আর বউ করে ঘরে আনতে পারিনা। মেয়েদের খালি কি পড়াশুনা থাকলে হয়? সুন্দরি, কর্মঠ, লম্বা, ফর্সা হতে হয়। নয়ত প্রজম্ম যে ওগুলো পেয়ে জম্মাবে তখন কি করবে?
এই হলো আমাদের সমাজ…..
একটা মফস্বলের মেয়ে যখন শহরে পড়তে আসে তখন প্রতিবেশিরা কত না খোড়াক যোগায় মেয়েটিকে রসদ বানাতে অথচ ছেলেদের বেলায় রসদ দূরের কথা সেই তো সম্পদ!
কিসের কি নারী দিবস! নারীর জন্য আবার দিবস কিসের? সম্মান একদিনের নয়, সম্মান সারা জীবনের।
যে নারীর যোগ্যতা ধরা হয় তার বর্ন, উচ্চতা, শারীরিক গঠন, রান্নাবান্না দিয়ে সেই নারীকে উপলক্ষ্য করে দিবস পালনের বেহুদা আয়োজনের দরকার কি?
যেখানে ছেলেদের বেলায় তার কানাকড়ি নেই!
নারী দিবস কি শুধু মিটিং, মিছল সেমিনার দিয়ে?
নারী দিবসের অনুষ্ঠানে কয়জন বা আসতে পারছেন নিজের ইচ্ছায়? তা কি খেয়াল করেছে কেউ?
আজো মেয়েরা সমাজের প্রতিটি স্তরে হয়ে আছে পন্য।
মেয়ে ন্যায্য হকের কথা বললে তখন আসে হাদিস,
কোরআন আর ইসলামের দোহায়!
কয় যখন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়,পিটিয়ে তক্তা বানানো হয় তখন রেফারেন্স পিছনের পকেটে থাকে কেন?
শ্বশুর বাড়িতে গেলে একটা মেয়েকে নড়তে হয় চারপাশ নিয়ে। পান থেকে চুন খসলেই চলে বাপের বাড়ি খবর, হয়ে যায় বাপ মায়ের গোষ্ঠী উদ্ধার, আর সাথে ফ্রি হুমকি বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার।
প্রতিদিন পেপার খুললেই দেখা যায় ধর্ষন, হত্যা, খুন্তির ছেকা খাওয়ার সংবাদ।
তাহলে নারী দিবস কিসের, কার জন্য কাদের জন্য?
একজন মেয়ে কয়টি রুপে পরিপক্ষ হয়ে নারী হয় শুধু সে বুঝে।
আল্লাহ সবাই কে সৃষ্টি করেছে মানুষ হিসেবে তারপর করছে লিঙ্গ নির্ধারণ।
নারীর আসল পরিচয় ও স্বীকৃতি হতে হবে সে একজন পরিপূর্ন মানুষ, নয়তো সে পাবে না তার নিজস্ব স্বাধীনতা, পাবে না তার উচ্চশিরে বাচার অধিকার।
আসুন না প্লিজ….
আগে আমরা সবাই মানুষ হয়ে বাচতে শিখি! লিঙ্গ ভেদাভেদ না করে নারী পুরুষ একে অপরকে যার যার আসনে রাখি সম্মানের সাথে।
তবেই তো নারী দিবসের যথার্থতা ফুটে উঠবে আর বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিন হবে নারীর।
(তনু)

জিখান/প্রবাসনিউজ২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.