টাকার লোভ – এই কথাটি অসন্মানজনক।
অথচ চারিপাশে যাকে দেখি সে-ই টাকার পিছে ছুটছে। সবার টাকা দরকার। টাকার প্রয়োজন আকাশচুম্বী।
সমাজে একজন লোভী মানুষকে সবাই ঘৃনা করে। টাকার লোভে অমুকে বড় লোকের কুৎসিত মেয়েকে বিয়ে করেছে। টাকার লোভে অমুকে হেন করেছে ত্যান করেছে ইত্যাদি অসন্মানজনক উক্তি করা হয় মাঝে মধ্য কোন বিশেষ ব্যক্তিকে লোভী হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য। আসলে কে টাকা ভালবাসেনা ? আমরা যদি টাকা ভাল না বাসতাম তাহলে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্য ধনী ও দরিদ্রে ভেতরে পার্থক্য বেড়েই যেতোনা। আমরা সবাই লোভী এবং স্বার্থপর আর সেজন্যেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য ব্যাপক। সবাই টাকা বানাতে চায়। যেভাবেই হোক। গাড়ী, বাড়ী, সুন্দর চেহারা বউ, দামী পোষাক, জুতা, ইত্যাদি চায়। শুধু নিজের জন্য। নিজেকে ভালবেসে আমরা বিয়ে করি, সন্তানের জন্ম দেই আর পরিবার গড়ে তুলি।
ব্যক্তিস্বার্থের পরিমন্ডল থেকে আমরা বেরুতে পারিনি তাই সমাজে স্বার্থপরতা, লোভ, রুচিবিকৃতি,অনাচার বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল বেশির ভাগ মানুষ যারা নিজেরা ধনী ব্যক্তির মেয়েকে বিয়ে করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি ক্ষতিপূরন হিসাবে তারা কর্মজীবি মহিলাকে বিয়ে করতে চান। বউ কাজ করে সংসারের চাল ডাল কেনার টাকার যোগান দিবে। গৃহবধু হিসাবে ঘরে থাকলে বউ আর যেসব দায়িত্ব পালন করতো সেইসব দায়িত্বসহ তাঁকে বাইরে কাজ করতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই বধু চব্বিশ ঘন্টাতে দুইটি কাজ করছে। ব্যক্তিগত জীবনে আমি ঘরের কাজ করেছি। বাইরের কাজ করেছি। পড়ালেখা করেছি। সন্তানদের লালন পালন করেছি। এইসব কাজ করাতে আমার কোন সমস্যা নাই। বরং আমি গর্ববোধ করি যে আমি একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থেকেছি বা বেঁচে আছি। লিঙ্গভিত্তিক নাম নিয়ে যাপন করিনি জীবন। আমি গর্বিত। সংসারে যখন স্ত্রী বাইরে কাজ করেন তখন তিনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেন। এই স্ত্রী সংসারের অন্যান্য ব্যাপারে সিদ্ধান্তে অংশগ্রহন করেন একজন স্বামীর মতই। তখন তিনি একজন গৃহকর্তী হবার সুযোগ, সন্মান ও গৌরব লাভ করেন। এই ব্যাপারটি সব পুরুষ সহজভাবে নিতে পারেননা।
একজন পুরুষ যিনি এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছেন যে পরিবারে বা সংসারে বাবাই সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন শুধু মেয়েলী ব্যাপারে মা সিদ্ধান্ত নেন । বিশেষ করে রান্নাঘরের ব্যাপারে । বা বোনের আচার আচরণ পোষাক পরিচ্ছেদ ইত্যাদির ব্যাপারে মা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু যেহেতু বাবা একা উপার্জন করেন মা শুধু ঘরের দায়িত্ব পালন করেন যেমন রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিস্কার, সন্তানের জন্ম দান তাঁদের লালন পালন, হাগামুত পরিস্কার, খাওয়ানো, গোসল করানো, হাগুমুতের কাপড় ধৌয়া, স্বামী সেবা, স্বামীকে যৌন সঙ্গ দেওয়া (এই ক্ষেত্রে অনেক পুরুষই মনে করেন যৌনসুখ লাভ একটি পুরুষ চিন্তা বা পুরুষেই আনন্দ উপভোগ করেন নারীরা একটি যন্ত্রের মত । আনন্দ দেবার যন্ত্র, যেমন রেডিও, বা টেলিভিশনে নাটক বা সিনেমা বা গানের মত, বিনোদনের একটি যন্ত্র হিসাবে নারীকে ব্যবহার করা হয় সেই পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান যখন কর্মজীবি জীবন সঙ্গিনী বেছে নেন তখন অনেক পুরুষই বাবা যেমন মায়ের সাথে ব্যবহার করতেন ঠিক একইভাবে তার নিজের জীবন সঙ্গিনীকে ব্যবহার করতে চান বা পেতে চান বা ভূমিকা পালন করতে দেখতে চান।সমস্যার সুত্রপাত তখনই হয়। একজন গৃহবধু যত কাজই করুক তার কাজকে টাকা পয়সার মূল্যে কোনদিন পরিমাপ করা হয়না। যদি এই মা বাইরে কাজ করতে যেতেন তাহলে তার অবর্তমানে পরিবারের কাজ কর্ম করার জন্য যদি বাইরে থেকে সাহায্য ভাড়া করা হতো তাহলে যে খরচা হতো সেই খরচার হিসাবে মা এর পরিশ্রমকে পরিমাপ না করে কবি, সাহিত্যিকরা বা ধর্মগ্রন্থে মা কে নানা রকমের ভাল ভাল কথা বলেই ব্যাপারটাকে মোটামুটি দফারফা করে দেওয়া হয়েছে। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। কিন্তু মা হিসাবে আমার পায়ের নীচে যদি কারু বেহেস্ত থাকে তাহলে বেহেস্তের উপরে বসে আমি মোটেই বেহেস্তের সুখ ভোগ করছিনা। কাজ, কাম সব করতে হচ্ছে, লাথি ঝাটা খেতে হচ্ছে। পায়ের নীচের এই বেহেস্ত কোনভাবেই আমাকে কোন সাহায্য করেনি। মায়ের সাথে খুব কম ছেলে সন্তানই ভাল ব্যবহার করেন। এটা একটি ধ্রুব সত্য। কারন পুরুষরা নিজেকে ছাড়া আর কিছু দ্যাখেনা । যা কিছুই করে সবই নিজের সুখের জন্য। তবে মাঝে মাঝে লেনদেনে ভ্যাজাল হয়ে যায়। বেশী সুবিধা করতে যেয়ে দেখা যায় বেশী সুবিধা পাবার চাইতে বেশী সুবিধা ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
যাই হোক ফিরে আসি কর্মজীবি জীবন সঙ্গিনী প্রসংগে। সংসারে সুখী হতে গেলে দেখতে হবে সংসারের সব সুখের জন্য মোট কত টাকা খরচা হচ্ছে। আর এই টাকা কোথা থেকে আসছে। যদি এই সুখ ক্রয়ের টাকার অর্ধেক স্ত্রী উপার্জন করে থাকে তাহলে স্ত্রীকে সংসারের অর্ধেক সুখের জন্য একজন জীবনসঙ্গিনীই শুধু না বরং সংসার নামক অংশিদারিত্ব ব্যবসায়ের একজন অংশিদার হিসাবে বিবেচনা করে সন্মান করা উচিৎ। জীবন সঙ্গিই শুধু নন একজন বোর্ড অফ ডিরেক্টর অফ হোম মিনিস্ট্রি। তাহলে সংসারে ফালতু ঝগড়াঝাটি কম হবে আর সুখী হওয়া যাবে। আর যদি স্ত্রী একাই কাজ করেন আর স্বামী কিছুই করেন না তাহলে স্বামীকে সেই ভূমিকা পালন করতে যে ভূমিকা একজন গৃহবধু করে এসেছে পৃথিবীর জন্ম হবার পরের দিন থেকে। আর স্ত্রিকে কর্তা হিসাবে বিবেচনা না করে একজন ভাল বন্ধু হিসাবে গ্রহন করতে হবে এবং প্রেমের সাথে জীবন যাপন করতে হবে যতদিন স্বামীর কোন কাজ কাম না হয়। তাহলে সকলেই সুখী হতে পারবে। সংসারে স্বামী স্ত্রী দু ধরনে লিঙ্গ হবার কারনে কোনভাবেই মানসিক, শারীরিক বা জ্ঞানবুদ্ধির ক্ষেত্রে কেউ কারু চাইতে ছোট বা বড় বা সম্পুর্ন নন।