দোয়ার ফজিলত বরদোয়ার খেসারত

এখন বাইরে তুষারপাত হচ্ছে। শীতের পোষাক পরিধান না করে আমি যদি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে। কেউ যদি বলে যাও আমি দোয়া করে দিচ্ছি শীতের পোষাক পরিধান করতে হবেনা। আমার দোয়াতেই কাজ হবে, অনেক শক্তি আমার দোয়া’তে, আমি দোয়া পড়ে ফুঁ দেওয়াতে তোমার ঠান্ডা সর্দি জ্বর কিছু হবেনা। বলাই বাহুল্য এই দোয়া যিনি করছেন তিনি শীতের বেশীরভাগ সময়ে ফ্লু, সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগেন (সম্ভবতঃ উনাকে কেউ দোয়া করে ফুঁ দিয়ে দেয় নাই সেজন্য উনি ভাল হন নাই)।

প্রবল তুষারপাতের সময় আমি যদি শীতের জন্য প্রয়োজনীয় পোষাক পরিধান করেও পয়তাল্লিশ মিনিট বাইরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি তাহলেও আমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, জ্বর আসতে পারে, সর্দি কাশি হতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সহজেই রোগ দীর্ঘায়িত হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার কারণ হলো শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলোর উপরে ক্ষমতায়ণ করে। আর সেজন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন কারু সর্দি কাশি হলে সে বাইরে থুতু, কাশি, পোটা, যদি না ফ্যালে তাহলে অন্যেরা এই রোগ জীবাণু তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের ভেতর দিয়ে নিজেদের শরীরে টেনে নিয়ে নিজেদের শরীরের ভাল ব্যকটেরিয়াগুলোকে নাজেহাল করে না ফ্যালে। ঠান্ডা পানি পান না করা বা ফ্রিজ থেকে বের করে অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার না খাওয়া, ইত্যাদি। পরিমিত খাওয়া, প্রচুর পরিমানে পানি পান করা যাতে খারাপ জীবানু প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। আজেবাজে খাবার না খাওয়া। আজেবাজে খাবার হলো ফাস্ট ফুড বা কেক বা পিজা যেগুলোর দাম বেশী, খেতে মজা কিছু শরীরে প্রচুর পরিমানে মেদ সরবরাহ করে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চর্বিগুলো অবরোধ গড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

খাবারের দাম বা গ্লামার নয় খাবার খেতে হবে খাবারের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দোয়া করা লাগবেনা। বা বরদোয়াতেও কোন কাজ হবেনা।

শরীরের সাথে মনের ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে। মন হলো শরীরের ইঞ্জিন। মন খারাপ হলে শরীর খারাপ হবে। কারণ মন খারাপ হলেই খাবারে অনিয়ম হবে। শরীরের প্রতি অযত্ন হবে তখন শরীর খারাপ করবে। সেজন্য মন ভাল রাখা দরকার। যেসব কারণগুলো মন খারাপ করে দেয় সেসব কারণগুলোকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। বিভিন্ন কারণে ফেসবুক আমার মন খারাপ করে দেয় সেজন্য আমি আমার মোবাইল থেকে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, স্কাইপ ইত্যাদি এপ্লিকেশনগুলো রিমুভ করেছি। এতে মোবাইলে ব্যাটারী চার্জ দেওয়া লাগেনা বল্লেই চলে।

দোয়া ও বরদোয়া ছিল হুজুরদের একচেটিয়া ব্যবসা যা এখন ফেসবুকে আকর্ষনীয় ব্যবসাতে পরিনত হয়েছে। একজন মানুষ যে নাকি তার পরিবারের সদস্যদের কোন খোঁজ খবর নেয়না সে হঠাৎ করে একজন বৃদ্ধ মানুষের ছবি পোস্ট করে নীচে লিখতে পারে – আমার বাবা অসুস্থ, সবাই দোয়া করবেন। বাবাকে এইভাবে অসুস্থ করার জন্য তার কতটূকু অবদান আছে সেটা উল্লেখ করা নাই কোথাও। অথবা বাবা যাতে সুস্থ হয়ে উঠেন সেজন্য সে কতটূকু পরিশ্রম করেছে সেটাও উল্লেখ নাই। শুধু আশা করা হয়েছে ফেসবুকের পাঁচ হাজার বন্ধু যদি দোয়া করে তাহলে বাংলাদেশের যে হাসপাতালে বাবা শুয়ে আছেন সেই হাসপাতালের অদক্ষ ও সার্টিফিকেট কেনা ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে হয়তো বাবার মৃত্যু হবেনা।

ইসলামে বলা হয়েছেঃ
কোন খাবার খেতে হবে। কোন খাবার পরিহার করতে হবে।
কিভাবে ঘুমাতে হবে। কিভাবে শরীরের যত্ন নিতে হবে।
পরিশ্রম করতে হবে। অন্যের ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অন্যকে সাহায্য করতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে। মিথ্যা না বলা, যেকোন প্রানীকে আঘাত না করা, আল্লাহ্‌র সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হওয়া, এবং ইবাদত করা যাতে মন ও শরীরে শৃংখলা, শান্তি, সংযম, সংবেদনশীলতা বজায় থাকে। আর এইগুলা যদি ঠিকভাবে করা যায় তাহলে দোয়ার যেমন দরকার নেই তেমনি বরদোয়াতেও কোন কাজ হবার কথা নয়।

অতীতে হুজুরেরা দোয়া সিস্টেম চালু করার কারণ নিম্নরূপ ঃ

বেশীরভাগ হুজুর আরবীর অর্থ জানেন না। নিজেদের অজ্ঞতাকে ঢাকার জন্য নিজেদের পেট চালাবার জন্য যেকোন পুঁজিপতি বা মধ্যস্বত্বভোগী রাজনীতিবিদের মতই “দোয়া”কে পূঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন সেজন্য কোরআনের প্রতিটি সুরাকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করে দোয়ার ভেতরে আটকে রেখে হুজুরের অনুরাগীদের মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য “দোয়া” সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। ফেসবুকে এখন সেটাকে আধুনিকভাবে বন্ধুত্ব করার শর্ত হিসাবে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

হুজুরেরা পবিত্র কোরাআন মজিদের প্রতিটি সুরাকে যদি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করেন তাহলে কোন মানুষ আর হুজুরের কাছে আসবেন না। আল্লাহর নবীর নির্দেশগুলো সবাই যদি ঠিকভাবে মেনে চলেন তাহলে আর অসুখ হবেনা আর দোয়ার জন্য হুজুরের কাছে আসবেনা। কোন দোয়া কতবার করে পড়লে কি কি ফজিলত হবে এইসব বইগুলো বিক্রি হবেনা। হুজুরেরা ব্যবসা করতে পারবেনা। সবাই সবাইকে মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, শরিরের ক্ষতি করতে চায় যাতে এইসব মানুষেরা কোন এক অজানা যাদুর অপেক্ষাতে থেকেই অসুস্থ শরীর ও মন নিয়ে যুগ যুগ ধরে কাটিয়ে দিতে পারে আর দোয়াকারী হুজুরের ব্যবসাও যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে। যেকোন মানুষ পৃথিবীর যেকোন জাগাতে বসেই পবিত্র কোরাআন পাঠ করতে পারেন, এর ব্যাখ্যাও জানতে পারেন, ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে পারেন এবং সাড়া বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ একটি জাতি হিসাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। দোয়া বা বরদোয়ার কোন দরকার নাই।

এই সংসার হলো একটি বাণিজ্যকেন্দ্র । এই বানিজ্যকেন্দ্রে কিছু মানুষ পরিশ্রম করে আর কিছু মানুষ হুকুম করে। যারা পরিশ্রম করে তাদেরকে কিছু মানুষ গোলাম বানিয়ে পায়ের উপর পা রেখে পরিশ্রমি বোকা মানুষগুলোকে আরো বোকা বানিয়ে তাদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে বসে খায়। এই বাণিজ্যকেন্দ্রের কিছু মানুষ আছে যারা অলস তারা ভাল আর অসহায় মানুষের অভিণয় করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেস্টা করে। এই বাণিজ্যকেন্দ্রে অনেক মানুষ অনেক মুখোশ, অনেক প্রতারক, অনেক মিথ্যাচার, অনেক আঘাত অনেক প্রতিঘাত এই বাণিজ্যকেন্দ্র এক অদ্ভুত জাগা। নিমেষেই রং বদল করে গিরগিটির মত অথবা দরকারে একেবারেই মরা নদীর মত থেমে যায়।  দরকারে জংধরা তালার মত লটকে থাকে। দরকারে হাসে, হাসাই, কাঁদে, কাঁদায়, অচল সিকির মত থেমে যায়।

এই বাণিজ্যকেন্দ্রে সেই সুখী যে তার উপযোগীতাকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে অন্যের শ্রমের উপরে, অন্যের ক্ষতির উপরে, অন্যের কস্টের উপরে। যে বা যাহাদের শ্রম, ক্ষতি, কস্টের উপরে নিজের উপযোগিতা সৃষ্টি ও টিকিয়ে রাখতে পেরেছে সে বা তাহাদের নাম মুছে ফেলে সেখানে নিজের নাম লিখে রেখেছে।

শ্রমিক মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু আহরণ করে,মৌচাকে এনে জমা করে তারপর নিহত হয়। পাবলিকে যখন দোকান থেকে মৌচাক ভাঙ্গা মধু কিনে এবং তা নিজেদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করে তখন এইসব শ্রমিক মৌমাছিদের কথা স্মরণ করেনা।

দোয়া করবেন যাতে আমার এই লেখাটি অনেকেই পাঠ করেন।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *