জাসাসের যাদুকরী কমিটি , যোগ্য ত্যাগীরা বাদ

বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস। দির্ঘদিনের মেয়াদোত্তির্ন এই সংগঠনের কমিটি গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এই কমিটি থেকে সংগঠনটির নিবেদিত, যোগ্য আর ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অন্য সেক্টর থেকে নেতা এনে আর বিতর্কিতদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের।

সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, জাসাস দেশের কৃষ্টি কালচার আর সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যায়। রাজপথের আন্দোলনে তেজদীপ্ত রূপরেখা তৈরী করতে আর সমাজের বিভিন্ন পেশার সমারোহ ঘটিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনকে ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা দূরের কথা, এখন কেউ এই সংগঠন করতেও চাইবে না। এমনকি ঘোষিক কমিটির অনেকে পদত্যাগও করতে চাইছেন। আর দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট এই কমিটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিদ্রোহও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

এদিকে জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার রাতেই তড়িঘড়ি করে ঢাকা মহানগর দুই কমিটি (উত্তর ও দক্ষিণ) বিলুপ্ত করে এক মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মধ্যরাতের এই কমিটি ঘোষণার কারন সম্পর্কেও অন্ধকারে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

এসব বিষয়ে নতুন কমিটির সাধারন সম্পাদক হেলাল খানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, ৫০ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর কমিটি বৃহস্পতিবার রাতেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এত দ্রুততার সাথে কিভাবে কমিটি দিলেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। বরং নানারকম উচ্চবাচ্য করেন।

জাসাস নেতাকর্মীরা জানান, বিগত কমিটির সভাপতি আর সাধারন সম্পাদক নানা কারনে ব্যর্থ হলেও বিভিন্ন ব্যানারে সংগঠনটিকে জিইয়ে রাখতে যে সকল নেতাকর্মী নিজেদের অর্থ সম্পদ আর জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে গেছেন তাদেরকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি। তাছাড়া নতুন কমিটিতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাউকে রাখা হয় নাই ।

জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও মহানগর দক্ষিনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সিকদার দলের সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহনসহ নিজের অর্থায়নে সংস্কৃতিক অঙ্গনে দলের কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিতে ব্যপক ভূমিকা রাখেন। জিয়া পরিবারসহ নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টরী তৈরী করেছেন। বরন্যে ব্যক্তিদের স্মরনে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে জাসাসকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। এসকল কারনে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বদ্ধমূল ধারনা ছিলো তার হাতেই সংগঠনটির নেতৃত্বভার তুলে দেয়া হবে। কিন্তু সিন্ডিকেট নির্ভর বিএনপিতে তিনি কোন মোসাহেবি কিংবা অর্থ দিয়ে কমিটির সমর্থন ছিলেন না বলে তাকে কোথাও রাখা হয়নি বলেই নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

এসব বিষয়ে জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, বিএনপিতে অনেক দরবার শরীফ আছে। আমরা কোন দরবার শরীফের মুরিদ নই। আমরা খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের মুরিদ। তাই পদ পাইনি।

জাসাসের নেতাকর্মীরা জানান, ঘোষিত কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ একজন যোগ্য ব্যক্তিত্ব। তবে তা তার সেক্টরেই। তার ওই নির্দিষ্ট বলয়ের বাইরে পরিচিতি এবং সংস্কৃতিক অঙ্গনে কতটুকু সফল তা সকলেই জানেন। সাধারন সম্পাদক হেলাল খান একজন অভিনেতা (নায়ক) হলেও ওয়ান ইলেভেন সময়ে তার ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। শুধুমাত্র টাকা দিয়ে তিনি এই পদ কিনেছেন বলেও অভিযোগ নেতাকর্মীদের। সিনিয়র সহ সভাপতি বাবুল আহমেদও একজন অভিনেতা। তিনিও ওয়ান ইলেভেন বিতর্কিত। এছাড়া সহ সভাপতি হিসেবে অনেকে একেবারেই নতুন, অনেকে মাদক ব্যবসা সহ নানা কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত। আবার অনেকে দলের উপদেষ্টা গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আর খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের বিশেষ আস্থাভাজন হয়েও পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *