আজ রাজনীতি নিয়ে লেখার ইচ্ছা নেই। প্রতারণা নিয়েও লেখার ইচ্ছা নাই। আজ গল্প লিখি। আমি কি গল্প লিখতে জানি? জানিনা। যে গল্প বাজারে বিক্রি হয় সে গল্প আমি লিখতে জানিনা। আমি যে গল্প লিখতে জানি সে গল্প বাজারে বিক্রি হবেনা। না হোক। আমি কিছু বিক্রি করতে পারিনা। সেটা আমার দুর্বলতা না। আমার গল্প বিক্রি হবার মত বাজার সৃষ্টি হয়নি। সেটা আমার শক্তি। আমার কথা কেউ বুঝতে পারেনা। কারণ আমাকে বুঝতে পারার মত মন কারু নেই। সেটাও আমার দুর্বলতা না। আমি যদি বলি আমি ভালবাসি সেটাও আমার দুর্বলতা না। আমি যদি বলি আমি বিশ্বাস করি সেটাও আমার দুর্বলতা না। ভালবাসা ও বিশ্বাস হলো শক্তি। এই শক্তি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। চলতে, বলতে, কাজ করতে সাহায্য করে। যেকোন জটিল ব্যাপারকে আমি সহজভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করি। জটিলতা ও সরলতার লড়াই লেগে যায়। আমি হেরে যাই। যেহেতু আমার সংখ্যা কম সেজন্য আমি হেরে যাই। সেটাও আমার কোন সমস্যা বা দুঃখের কারণ নয়।
যেকোন জটিল চিন্তাভাবনার মানুষের কাছে যদি কোনকিছু খুব সহজলভ্য হয়ে যায় তখন সে সেই সহজলভ্য জিনিষকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনা। তার মনে হয় এই প্রাপ্তির পেছনে নিশ্চয় কোন সুদূরপ্রসারী অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। অথচ কিছুই নেই। জীবন তো জুয়া খেলার মত। পাওয়া বা না পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০% । পেলে ভাল না পেলে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে। ভালবাসলে বুক ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বাসভঙ্গ হলেও বুক ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে। যে ভালবাসে ও বিশ্বাস করে সে এতসবকিছু চিন্তাভাবনা করে ভালবাসেনা বা বিশ্বাস করেনা।
ভালবাসা ও বিশ্বাসের খুব অভাব বিশ্বে। সেজন্য আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়। আর যেদেশে আইন বলে কিছু নেই, ভালবাসা ও বিশ্বাসও নেই সে দেশের মানুষের অবস্থা কি হতে পারে দেখার জন্য বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। বহু বছর হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছি। আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি। এ কেমন ভালবাসা যে ভালবাসাকে ছেড়ে আসতে হয়? বলছি। যাকে ভালবাসা যায় তাকে ছেড়ে দিতে হয়। আমি চলে এলে বাংলাদেশ আমাকে ভেবে ভেবে কাজ কর্ম ছেড়ে বসে থাকেনি। বাংলাদেশের একটি কাকও আমার জন্য উদাস হয়নি। তবে বাংলাদেশের সব কাকদের কথা ভেবে আমি উদাস হয়েছি। আমি কাক ভালবাসি। কাক একটি পরিচ্ছন্ন পাখী। আমার মনে আছে একবার এক কাকের বাচ্চা পাড়তে যেয়ে আমি গাছ থেকে পড়ে গেছিলাম। একদিন দুপুরবেলা দেখি আমাদের বাসার সামনের একটা গাছে এক কাকের বাচ্চা চি চি করছে। ব্যাস এটা দেখেই আমি ভাবলাম বাচ্চাটাকে রেসকিউ বা উদ্ধার করি। কিন্তু হলো উলটা। আমি বাচ্চাটাকে রক্ষা করতে যেই গাছে উঠলাম অমনি শত শত কাক এসে আমাকে ছিড়ে ফেলতে চাইল। তখন আমি ভয় পেলাম এবং ভারসাম্য হারিয়ে গাছ থেকে পড়ে পায়ে ব্যাথা পেলাম। এই ঘটনা থেকে আমি শিখলাম আমার প্রিয় পাখী কাক ঐক্যবদ্ধ পাখী।
ঐক্য শক্তি। ঐক্য ভালবাসা। বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ না। বিদেশীরা সহজেই এদের কিনে নিতে পারে। ফলে বাংলাদেশ একটি মিরজাফর উৎপাদনকারী দেশ। বিদেশীরা লুটপাট করে বাংলাদেশ ফতুর করে ফেলার কারণ বাংলাদেশীরা মিরজাফর, দেশপ্রেমিক না, নিজেকে পছন্দ করেনা, মইয়ুরপুচ্ছ ধারণ করে অন্যদের মত দেখতে লাগুক সেটাই পছন্দ। সেদিন ফেসবুকে দেখলাম কে যেনো ওড়না নিয়ে লিখেছে। ওড়না তো একটুকরো কাপড় মাত্র যা দিয়ে কিছুই ঢাকা সম্ভব না। পুড়া বাংলাদেশই তো উলঙ্গ করে লুট হয়ে গেছে শুধু একটুকরো কাপড় বক্ষে ঝুলিয়ে রেখে কি লাভ ! বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকেরা জেলে পচে মরছে। কেউ খবর রাখেনা তাদের। খবর রাখার প্রশ্নই উঠেনা। বাংলাদেশের ভেতরে চলছে চোরডাকাতখুনীধর্ষকদের উৎসব। সাধারণ মানুষেরা সব দাঁড়িয়ে আছে শাঁখের করাতের উপরে। কাটছে যেতে আসতে। কেউ কারু খোঁজ রাখেনা। কেউ কারুকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়না। বুড়িগংগাতে প্রতিদিন গার্বেজের সাথে লাশ ভাসে। বাংলাদেশের খালেবিলেডোবাতে এখন চোখ হাত পা বাঁধা লাশ ভাসে। এটা একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ এখন লাশের স্তুপে ভরা। এতে জনসংখ্যা কমছে। তবে এখনো দেওয়ালে পিঠ ঠেকেনি কারু। সবাই আশা করছে দেওয়ালে পিঠে ঠেকার আগেই আকাশে হেলিকপ্টার বা কোন জাদুর কার্পেট দেখা দেবে । তবে কাকের বাচ্চাকে উদ্ধার করতে যেয়ে আমার যে হাল হয়েছিল সেই হাল হয়তো হবেনা। কারন আকাশে জাদুর কার্পেট বা হেলিকপ্টারের আশা করা দুরাশা।
কাকের মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেকে ভালবাসতে হবে। অন্যকে ভালবাসতে হবে। তারপর ঐক্যবদ্ধভাবে মীরজাফরদের মোকাবেলা করতে হবে। এটা কি কোন গল্প হলো? হলোনা।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা