বিয়ে আর ব্যবসা – পার্থক্য কোথায় ?

বিয়ে হলো পার্টনারশীপ ব্যবসা বা অংশীদার বাণিজ্য । অংশীদার বাণিজ্যে চলে লেনদেন। বিয়েতে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টাকা, স্বর্ণ, হীরা, আসবাব, গাড়ী, বাড়ী, সম্পত্তি ইত্যাদি। প্রেমের বিয়ে হোক আর এরেঞ্জ বিয়ে, সবাই দ্যাখে পাত্রের টাকা আছে কি নেই বা পাত্রীর বাপের টাকা আছে কি নেই। কি কি দিতে পারবে? সমাজের সবাইকে চমক লাগিয়ে দিয়ে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের বাজেট আকাশচুম্বী। সেজন্য গরীবের ঘরের মেয়েরা গার্মেন্টস বা ঝিয়ের কাজ করতে যায় আর গরীবের ঘরের ছেলেরা বড়লোকের মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। শুধু ঘরসংসার করার জন্য আজকাল কেউ বিয়ে করেনা। সুখ দুঃখ হাসি কান্না বিপদ আর আনন্দ ভাগ করে নিতে একে অন্যকে রক্ষা করতে, পরিবার গঠণের জন্য এখন আর কেউ বিয়ে করেনা। যেখানে টাকা নেই যেখানে পার্থিব বিষয়ের লেনদেন নাই সেখানে বিয়ার বাদ্য বাজতে তেমন শোনা যায়না। অনেকেই বড় বড় কথা বলে – আমি মেয়েকে এক কাপড়ে ঘরে তুলবো কিন্তু সেই মেয়েকে এক কাপড়ে ঘরে তুলতে চায় যার বাপের অনেক টাকা আছে আর ধানমন্ডিতে বা, গুলশানে বা, উত্তরাতে, বা বনানীতে বাড়ী আছে।

বাপে কেমন করে টাকা বানিয়েছে সেটা বিষয়না। একবার উপরে উঠে গেলে আগে কোথায় ছিল তা ঘেটে কেউ দ্যাখেনা। ঘাটাঘাটি করলে নর্দমা থেকে দুর্গন্ধ বেড়ুতে পারে, সেই ভয় তাছাড়া ঘেটে নয় মুখোশেই চলছে দুনিয়া। ঢেকেঢুকে রেখে শুধু বের করে সেইটুকু যেটূকু চকচক করে। যাতে ঝপ করে ধরা যায় আর ধপ করে মুখ থুবড়ে পড়া যায়।

বেকার ছেলেদের বিয়ে হয়না। বেকার ছেলের সাথে কোন মেয়ে প্রেম করতেও তেমন আগ্রহী হয়না। স্বর্গ এখন আর প্রেম সাপ্লাই দিচ্ছেনা। এখন প্রেম আসে লীলাবতীর বাপের টাকার গন্ধ থেকে। বাংলাদেশের সমাজের মূল ভিত্তি হলো চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি, মিথ্যাচার, ও প্রতারণা। সবাই সবার সাথে জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজি করে। বিয়েটাও একটা ধোঁকাবাজি। বিশ লাখ টাকা খরচা করে বিয়ে করে বিশ হাজার টাকা খরচা করে তালাক হয়ে গেলে তখন বিশ লাখ টাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কমিউনিটি সেন্টার বাবদ যে টাকা নিয়েছে তা ফেরত দেয়না। প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, সমাজের যেসব লোকেদের তাক লাগিয়ে দেবার জন্য দাওয়াত করা হয়েছিল তারা যারা বিয়েতে এসে বিড়িয়ানী, কোপ্তা, কাবাব খেয়েছে তা হজম হয়ে গেছে এবং যেখান থেকে এসেছে সেখানেই অদৃশ্য হয়ে গেছে। কেউ বলেনা
দেখো আমাদের বিয়েতে বিশ লাখ টাকা খরচা হয়েছিল। যারা যারা বিড়িয়ানী খেয়েছেন সবাই এই বিরিয়ানি ফেরত দিয়ে যান আর উপহার যা এনেছিলেন তা ফেরত নিয়ে যান। – তাহলেই ব্যাপক ক্ষতি হবে। এক তো বিয়ে টেকেনি উপর দিয়া যদি উপহার ফেরত দিতে হয় বিরিয়ানি বমির বদলে তাহলে সেটা ক্ষতিকারক। বিরিয়ানি বমি বাজারে বিক্রি হবেনা। বমি করা বিরিয়ানি থেকে চাল হয়ে গুদামে চলে যাবেনা। হজম করা খাদ্য রিফান্ড বা ফেরত দেওয়া যায়না। গহনা কেনার সময় অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়  কিন্তু সেই একই গহনা বা স্বর্ণলংকার যদি একই দোকানদারের কাছে বিক্রি করা যায় তাহলে তেমন মূল্য পাওয়া যায়না। টাকা একবার খরচা হয়ে গেলে তা ফেরত আসেনা।

বিয়েতে এই ধুমধামের দরকার কি? সবাই চায় বোম্বের হিন্দি মুভি স্টাইলে বিয়ে করতে। সেই বিয়ের ছবি উঠিয়ে রাখতে যা ওরা মাঝে মাঝে দেখবে তারপর একদিন সেই বিয়ের সিডির কথা ভুলে ঝগড়াঝাটিতে ব্যস্ত হয়ে যাবে। অথবা বিয়ের পরে বাচ্চা হবে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। তবে সামাজিক সমস্যাগুলো বিয়ের দিন থেকেই সবসময় সাথে থাকে। যেমন, অমুকের বিশাল টিভি আছে আমাদের নেই। অমুকের এত এত টাকার শাড়ী আছে আমার নাই। অমুকের জামাই অনেক টাকা কামায় করে আমার জামাইয়ের  তেমন টাকা নাই। একটা আফসোস থেকেই যায়। অমুকের বাড়িতে অমুক আছে তমূক আছে আমাদের নাই। ব্যস এই অভিযোগ শুনতে শুনতে একদিন তমুকের মতই সব আশা আকাঙ্ক্ষার জিনিষ এসে গেলো ঘরে। কিভাবে? দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত টাকা দিয়ে কেনা হলো অমুকের তমূক আছে প্রতিযোগীতার জিনিষপত্র।

বিয়েতে ধুমধাম না করে ধুমধাম করতে যে টাকা খরচা হয় তা পাত্রপাত্রীর ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রেখে দেওয়া যেতে পারে এই ভেবে যে এই টাকা থেকে আরো টাকা হবে সেখানে থেকে আরো টাকা হবে ফলে কোন সময় টাকার অভাব থাকবেনা। বিয়েতে কম পক্ষে দশ থেকে বিশ লাখ টাকা খরচা হয়। হয় পাত্রের পরিবারের উপরে চাপ দিয়ে নয়তো পাত্রী পরিবারের উপরে চাপ দিয়ে। যেভাবেই হোক বিয়েতে দেদারসে খরচা না করতে পারলে সমাজে মাথা হেট হয়ে যায়। অথচ যখন হাতে টাকা থাকেনা তখন সমাজ এসে হাতে টাকা তুলে দেয়না। ফালতু টাকা খরচা না করলেই সমাজ এসে তামাশা করে।

কারণ কি?
এই কারণ জানতে গেলে বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে হবে। বাণিজ্য অনেক প্রকার। মালয়েশিয়া যাবার নাম করে টাকা নিয়ে নৌকাতে উঠিয়ে দেওয়াও এক ধরণের বাণিজ্য আর পাত্রীর বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিয়েতে খরচা করার রীতিও এক ধরণের বাণিজ্য । দুইটাই অনিশ্চিত। যেখানে ব্যবসায়িক টাকার লেনদেন সেখানে “ভালবাসা” শব্দটা বেমানান।

ম্যারেজ ইনস্টিটিউশন ইজ এ লিগাল প্রসটিটিউশন। Marriage Institution is a legal prostitution. একজন পুরুষ বা নারী বেশ্যা কি করে? দেহ বিক্রি করে। দেহ বিক্রি করে সে যে টাকা পায় তা দিয়ে কি করে? মাথার উপরে ছাদ, পেটের জন্য ভাত, দেহকে রোদ, বৃষ্টি, ঝর থেকে বাঁচানোর জন্য কাপড় আর খরিদ্দার ধরার জন্য মোবাইল ও ইন্টারনেট ক্রয় করে। ফেসবুক, টূইটার, মেসেঞ্জার, ইউটিউবে আজকাল প্রচুর পুরুষ ও নারী বেশ্যা আছে। পার্থক্য হলো বেশ্যারা দেহ বিক্রি করে অনেকের কাছে আর বিয়েতে দেহ বিক্রি হয় একজনের কাছে। বেশ্যাদের নিরাপত্তা নাই। গ্রাহক টাকা না দিলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনা যেহেতু বেশ্যাবৃত্তি বেআইনি কিন্তু বিয়েতে নিরাপত্তা আছে। বিয়ে ভেঙ্গে গেলে তালাকের মামলা করে বেশ ভোগান্তি ও টাকা ম্যানেজ করা যেতে পারে।

কেউ কি হিজড়াকে বিয়া করে? করেনা। কারণ হিজড়ার দেহ ভোগ করার উপায় নেই। হিজড়া বাচ্চা দিতে পারেনা। একজন নারীকে একজন পুরুষ বিয়া করে পরিবার গঠন করার জন্য । এই নারী একটি মেশিনের মত। নিয়মিত পা উঠীয়ে দেওয়া  ছাড়াও এই নারী সারাদিন আরো অনেক ধরণের কাজ করে – সামাজিক জীব হবার খেসারত দিতে অন্যদিকে একজন বেশ্যা অনেকের জন্য পা উঠিয়ে দেয় কিন্তু অনেকের জন্য রান্না করেনা বা বাচ্চা উৎপাদন করেনা বা সংসারের পনেরো রকমের ফুটফরমাশ খাটেনা। বেশ্যার যেমন এইচ আইভি এইডস হতে পারে, গনোরিয়া হতে পারে, সিফিলিস হতে পারে একইভাবে স্ত্রীরও এইসব রোগ হতে পারে স্বামী যদি অন্য নারীদের ভোগ করে বেড়ায় বা পরোকিয়া করে। একই ব্যপার নারীর জন্যও প্রযোজ্য। টাকা বা অন্যকিছুর লেনদেন যেখানেই আছে সেটাকেই বলা হয় বাণিজ্য।

বিয়েতে যারা “পবিত্র” শব্দটি আনে তারা এই শব্দটিকে তখনই ব্যবহার করতে পারে যখন মসজিদে যেয়ে খোর্মা দিয়ে বিয়ে করে এবং বউ বাচ্চার ভরণ পোষন করে এবং বউ বাচ্চাকে কোন রকম শর্ত ছাড়াই ভালবাসে। এছাড়া বিয়েতে কোন পবিত্রতা নাই। বিয়ে অপবিত্রও নয়। বিয়ে হলো যেকোন ব্যবসা বাণিজ্যের মত।

বিয়ে হয় একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্য। সমাজের অন্যান্য লোকেরা সেখানে এসে কি করে? নারী ও পুরুষ যদি একজন অন্যজনকে ভালই বাসে তাহলে সেই বিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেনমোহরের শর্ত লাগানোর কি দরকার? বিশ্বাস নাই? আইনের আশ্রয় কেনো নেয় ? সাক্ষী কেনো লাগবে? একজন অন্যজনের জন্য কি সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট নয়? বিয়েতে শাড়ী, গহনা, আসবাব, গাড়ী, বাড়ী এসব কেনো দরকার হয়? বিশ্বাস আর ভালবাসা থাকলেই শুধু হয়না সাথে টাকা ও অন্যান্য সম্পদও লাগে। তাহলে বিশ্বাস ও ভালবাসার দরকার কি? টাকা দিয়ে কি বিশ্বাস ও ভালবাসা কেনা যায়? যে বিশ্বাস ও ভালবাসার কথা শুনি সেগুলো আসলে মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি। সেই একই ধোঁকাবাজি করে উপার্জিত টাকা যেখানে এত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে সেখানে ভালবাসা ও বিশ্বাস থাকার কোন দরকারই নাই।

ব্যবসা বাণিজ্যে যেমন বিশ্বাস ও ভালবাসার কোন স্থান নাই ঠিক তেমনি বিয়া যেহেতু বাণিজ্য তাই সেখানে টাকা ও সম্পদের অতলে বিশ্বাস ও ভালবাসা হারিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.