কসাইখানাতে নিরীহ পশু

সাড়া বিশ্বে লাখো কোটি মানুষ কস্টে আছে। মিয়ানমার গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা নাফ নদীতে ভেসে ভেসে খোলা আকাশের নীচে চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইনের অনেক মানুষ এখন নির্যাতন বা বোমার আঘাতে পঙ্গু হয়ে হয় কবরে নাহয় ক্যাম্পে নাহয় কারাগারে অর্ধমৃত। লাখো কোটি মানুষের জীবন বিভীষিকাময়। মানুষ সৃষ্টির সাথেই এসেছে পুঁজিবাদ আর খ্রীষ্টের জন্ম হয়েছে তারও অনেক পরে।

প্রতিটি ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে এবং পুঁজিবাদ সেই ধর্মকে ফ্রাঞ্চাইজ করে নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে বাজারজাত করেছে শোষনের নরম হাতিয়ার হিসাবে। তেল, জমি, হীরা, সোনা, তামা, কয়লা, যেদেশে সম্পদ আছে সেদেশেই উপনিবেশ গড়েছে, সেই দেশের স্থানীয় মানুষকে বানিয়েছে দাস, তাদের শ্রমের অপব্যবহার করে খনি থেকে সম্পদ উঠিয়ে পাচার করেছে নিজ দেশে, সম্পদের পাহাড় জড়ো করে এখন হয়েছে নামীদামী ব্রান্ডনেম ব্যবসায়ী। এখন তাঁরা সাড়া বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করে।

খ্রীষ্টের জন্মদিন তাই পুঁজিবাদের মুনাফা করার মৌসুম । মুনাফার জন্য বিভিন্ন মৌসুমের আয়োজন করা হয়েছে। খ্রীষ্টমাস, ইস্টার, মাদার’স ডে, ফাদার’স ডে, ভ্যালেনটাইনস ডে ইত্যাদি। সব দিবসই মুনাফার জন্য। বাজারে পন্য বিক্রির জন্য। বিবি মরিয়ামের গর্ভে যেদিন খ্রিষ্ট জন্ম নেন তখন বিবি মরিয়াম নিগৃহিতা ছিলেন সেই রোহিঙ্গা নারীর মত যার মৃতদেহের উপরে তার জীবিত শিশু তার দুগ্ধ পানের জন্য স্তনের শুকনো বোটা কামড়ে ধরেছে।

সেই রোহিঙ্গা শিশুটি দুধের অভাবে মারা গেছে। এভাবে অনেক রোহিঙ্গা শিশু মারা গেছে। অনেক রোহিঙ্গা নারীপুরুষবৃদ্ধ মারা গেছে। আন্তর্জাতিক মহল সাড়া দেয়নি। কেউ এদের বাঁচাতে যায়নি। কারণ রোহিঙ্গাদের বাঁচিয়ে কেউ কোন মুনাফা লাভ করতে পারবেনা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও স্বাধিনতা রক্ষার শ্লোগানও পুঁজিবাদের একটি ফ্রাঞ্চাইজ বা ব্রান্ড নাম। যে দেশে খনিজ সম্পদ আছে সে দেশের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষাই পুঁজিবাদী বিশ্বের অন্যতম কাজ। সেদেশে বোমার মাধ্যমে গনতন্ত্র নিক্ষেপ, সে দেশের নারীপুরুষশিশুকে গৃহহারা করা, ধর্ষন, হত্যা, নির্যাতনের মাধ্যমে সেদেশের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্টিত হয়। বিশ্বের যারা গোলাম বা দাস বা যারা জন্মান্ধ তারা পুঁজিবাদের গুনগানে মুখরিত। পুঁজিবাদের ধর্ম বাণিজ্য বা নানা রকমের দিবস বানিজ্যে পুরাপুরি অংশগ্রহণ করে দিশাহারা। সুন্দর সুন্দর আলো ঝলমল বাজারে শুভ্র দাড়িতে লাল পাতলুন পরিহিত হাস্যজ্বল সান্তার মুখ দেখে সকলেই ভুলে যায় ইহকাল ও পরকালের জ্বালা যন্ত্রনা। আহা কি প্রশান্তি। বড়দিনের শুভেচ্ছায় ভেসে গেছে বাংলাদেশ ফেসবুক।

ষিশুখ্রীষ্টকে যারা হত্যা করেছিল তারাই এখন ষীশুখ্রীষ্টের নামে খ্রিষ্টমাস বানিয়ে মুনাফা করছে। আমি বিশ্বকে দেখি একটি কসাইখানা হিসাবে। এখানে সবাই দৌড়াচ্ছে এক টুকরো মাংসের জন্য। অপেক্ষাকৃত দুর্বল যে সে হয়ে যাচ্ছে মাংস।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *