সাহায্য সংস্থা – প্রতারণা বাণিজ্য

বাংলাদেশে প্রচুর সাহায্য সংস্থা আছে। এরা আসলে কাকে সাহায্য করে? এতগুলো সাহায্য সংস্থা যদি আসলেই বাংলাদেশীদেরকে সাহায্য করতো তাহলে তো দেশে কারু কোন সমস্যাই থাকতোনা। যেহেতু এই সাহায্য সংস্থাগুলো এক ধরণের প্রতারণা বাণিজ্য তাই এরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করে। বাংলাদেশের কিছু দরিদ্র মানুষকে গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করে বাণিজ্য করে। ধারাবাহিকভাবে এই লেখাতে আমি বাংলাদেশে অবস্থিত সাহায্য সংস্থাগুলোর নাম, কাজ ও শ্লোগান তুলে ধরবো।

http://www.caritas.org.au/learn/countries/bangladesh – এদের শ্লোগান হলো এন্ড পোভার্টি অর্থাৎ দারিদ্রতা দূরীকরণ, প্রমোট জাস্টিস অর্থাৎ ন্যায় বিচার প্রমোট করা, আপহোল্ড ডিগনিটি – মর্যাদা প্রতিষ্টা করা। অস্ট্রেলিয়ান এই সাহায্য সংস্থার ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং এর একটা লাইন তুলে ধরছিঃ

২০১৬ সালে সংস্থাটি গ্রান্ট ও ডনেশন পেয়েছে ৪০ মিলিয়ন ডলার। আর বিভিন্ন সাপ্লাইয়ার,প্রগ্রাম, ও কর্মচারীদের বেতনের জন্য খরচা করেছে ৪১ মিলিয়ন ডলার। এখানে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশসহ এই সংস্থাটি কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া, হাইতি,  নেপাল, ইথিওপিয়া, ইস্ট টিমুর, সামোয়া, বলিভিয়া, কেনিয়া, কংগো, মালাই, মোজাম্বিক, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্থান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ইন্ডিয়া, ইন্ডোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, এল সালভেদর, পেরু, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনি, ভানুআতু, সলোমন দ্বীপে। এই সংস্থার অয়েবসাইট সুন্দর। ভাল ভাল কথা লেখা আছে। এই সংস্থাটি মোট গ্রান্ট ও ডনেশন যা পায় তার মাত্র ৫% খরচা হয় বাংলাদেশে।

এখন যাচ্ছি এই সংস্থার শ্লোগানে – আপহোল্ড ডিগনিটি। এই সংস্থাটি মিয়ানমারেও কাজ করে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ধর্ষন করা হচ্ছে, জবাই করা হচ্ছে, চামড়া ছিলে ফেলে গরুর মত ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। পানিতে নারীপুরুষশিশুর লাশ ভাসছে। জাতিসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারী জেনারেল কফি আনন এই এলাকা পরিদর্শন করতে গেলে তাকে বাঁধা দেওয়া হয় এবং মিয়ানমার থেকে ফিরে এসে তিনি বলেন মিয়ানমারের অবস্থাকে গণহত্যা বলা যায়না। কিছু টেনশন বিরাজ করছে মাত্র।

এই মূহুর্তে হাজার দুইয়েক নৌকা ভাসছে নাফ নদীতে। গণহত্যা থেকে প্রান বাঁচিয়ে অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষেরা ভাসছে তীরের কোন মানুষের খোঁজে। তীর থেকে গুলি ছুড়ছে মানুষের মত দেখতে অদ্ভুত জানোয়ারেরা। এই মূহুর্তে কোথায় এই সাহায্য সংস্থাগুলো? একটাকেও দেখছিনা রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে।

এই রকম অনেক সাহায্য সংস্থা রয়েছে মিয়ানমারে। তাদের সবার অনেক সুন্দর সুন্দর অয়েবসাইট আছে ।সেইসব ওয়েবসাইটে ভাল ভাল কথা লেখা আছে ।কিন্তু যখন সেই দেশে রোহিঙ্গা গনহত্যা চলছে তখন এইসব সাহায্য সংস্থাগুলোর কারুকে কোথাও দেখা যায়না। বীভৎস কিছু চিত্র দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে। যাই হোক এরা বাংলাদেশে কি করছে ? কার জীবনে কি পরিমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে তা এক নজরেই বোঝা যায় সংস্থাটির ফাইনানসিয়াল রিপোর্ট দেখলে।

এইতো সেদিন বাংলাদেশে বন্যা হয়ে গেল। বন্যা দুর্গত এলাকাতে এই সংস্থাকে দেখা যায়নি। নদনদী জলাশয় যা কিছু আছে সবই ইন্ডাস্ট্রিয়াল আবর্জনাতে ভরা। এই সংস্থা আসলে করেটা কি? বহুজাতিক ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীরা বাংলাদেশের দরিদ্র নারীপুরুষ শিশুদের গিনিপিগ হিসাবে ব্যবহার করে তাদের ওষুধ বাজারজাত করার আগে। এই সংস্থা তাদের সাহায্য করে। গিনিপিগদের খুঁজে বের করা ও তাদের উপরে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য। বাংলাদেশে এই সংস্থাটি কি দারিদ্রতা দুরীকরণের জন্য কিছু করতে পেরেছে? কারু জীবনে কি কোন পরিবর্তন এসেছে? পরিবর্তন আনা সম্ভব না কারণ বাংলাদেশের বেশীরভাগ পন্য বাইরের দেশ থেকে আসে। দেশে উৎপাদন না থাকলে মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবেনা। বেকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বলে কিছু থাকেনা। বাজারে প্রতিদিন দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিকে ভোক্তারা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। ভোক্তারা অপরাধকে বেছে নিয়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিকে স্পর্শ করার জন্য। এই সংস্থাটি দুর্নীতি ও ন্যায় বিচার প্রমোট করার কথা লিখেছে। সেটা কিভাবে করছে আমার জানা নেই। বাংলাদেশের অনলাইন পত্রিকা খুললেই হয় মিথ্যা নয় লাশের ছবি দেখা যায়। আমরা যদি বিগত দশবছরে বাংলাদেশ দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরি তাহলে দেখা যাবে এই সংস্থা আসলে কিছুই করেনি। বাস্তবিকভাবে বিদেশী একটি সাহায্য সংস্থার দারিদ্রতা দূর করা, দুর্নীতি রোধ করা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করার মত কাজ করা সম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়া উপনিবেশ করেছিল সাউথ আফ্রিকাতে। এখনো সাউথ আফ্রিকার মূল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ অস্ট্রেলিয়ান শ্বেতাংদের হাতে। উপনিবেশিক শক্তিগুলো যখন কোন দেশে লুট করতে এসেছে তখন সাথে নিয়ে এসেছে পাদ্রী ও সাহায্য সংস্থা । প্রথমে দেশের সম্পদ লুট করেছে তারপর ধর্ম দিয়ে মানুষের চোখে পটি লাগিয়ে দিয়েছে। তারপর সাহায্য সংস্থা দিয়ে মলম লাগানো হয়েছে। সাড়া বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলো থেকে সম্পদ লুট করার জন্য মূলত এই কৌশলই ব্যবহার করা হয়েছে। খ্রীষ্টধর্ম সাউথ আমেরিকা বা সাউথ আফ্রিকাতে বা ফিলিপিনসে কিভাবে এসেছে? উপনিবেশিক শক্তিগুলো খ্রীষ্টধর্মকে নিয়ে এসেছে মানুষের চোখে পটি লাগিয়ে আবেগ প্রবাহকে স্থিমিত করার জন্য। শোষকেরা লুটপাট করে আর জনগন চোখ বন্ধ করে ষীশুর অপেক্ষা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.