The Quran says: “You [Muslims] are the best nation brought out for Mankind, commanding what is righteous (معروف Ma’rūf) and forbidding what is wrong (منكر Munkar)” [3:110].
আমি একজন সাহসী মানুষ। কিন্তু আজকাল ফেসবুকে এসে ভয় পেয়ে যাই। ভয় পাই ফেসবুক পোষ্ট দেখে। দ্রুত স্কল ডাউন করি। পাগলের মত ভুলে যেতে চাই এই দৃশ্য। সেদিন আমি কিছু গ্রুপ থেকে বিদায় নিলাম কারণ এইসব পোষ্ট এইসব গ্রুপ থেকেই নিউজফিডে আসছে। সেদিন এক পোস্টে একটা কাফন পরিহিত লাশের ছবির নীচে লেখা আছে মৃত্যু কত ভয়ংকর দেখুন।
একটি লাশ কিভাবে ভয়ংকর হতে পারে?
লাশ তো প্রানহীন। যে উঠতে পারেনা। মারতে পারেনা। গালি দিতে পারেনা। বকতে পারেনা। অপমান করতে পারেনা। চিৎকার করতে পারেনা। কারুকে আঘাত করতে পারেনা। লাশ তো লাশ। আমি তো ভয় পাই জীবিতকে। সেই জীবিতকে যে নাকি যেকোন সময় আমাকে প্রানহীন লাশ বানাতে পারে।
ফেসবুকে লাশের ছবি, নির্যাতণের ছবি, নগ্ন, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত নারী, পুরুষ, শিশুর ছবিতে ভরে যাচ্ছে। বলা হয়েছে দ্রুত শেয়ার করুন। মুসলিমদের উপরে নির্যাতন হচ্ছে আর রক্তাক্ত লাশের ছবি যদি ফেসবুকে শেয়ার করা হয় তাহলে মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করা যাবে বা যাবেনা সে প্রসঙ্গে যাবোনা।
প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে অনেক নৌকা আসছে বাংলাদেশের সীমান্তে। বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডরা সেইসব নৌকাতে গুলি করে শরনার্থীদের হত্যা করছে। ভয় দেখাচ্ছে যাতে তারা তীরে না ঘেষে। এখন বাংলাদেশে যারা নবী করিম সাঃ এর উম্মত, মুসলমান আছেন তাদের দায়িত্ব কি? ফেসবুকে মুসলমানদের মৃতদেহের ছবি পোষ্ট করা? নাকি যারা এখনও জীবিত আছে যারা অকুল নাফ নদীতে ভাসছে তাদের কুলে এনে আশ্রয় দেওয়া? বাংলাদেশে যারা মুসলমান আছেন তাদের উচিৎ সেইসব সীমান্তে যাওয়া যেখান থেকে নৌকাতে করে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আসছে এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডকে সরিয়ে দিয়ে শরনার্থীদের জন্য তাবু, চিকিৎসা, খাবার ও ঘুমের ব্যবস্থা করা। সেটা করলেই মুসলমানের দায়িত্ব পালন করা হবে। ফেসবুকে তাদের লাশের ছবি পোষ্ট করে কোন লাভ নেই। যারা জীবিত আছেন সেইসব রোহীঙ্গাদের রক্ষা করা যেতে পারে। তারা যাতে বাংলাদেশের বর্ডার থেকে ধাওয়া খেয়ে ফিরে যেয়ে লাশ না হয় সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্ব বাংলাদশের মুসলমানদের। এখন সীমান্তে বর্ডার গার্ডেরা বাংলাদেশের মুসলমান যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে যাবে তাদের গুলি করে হত্যা করবে। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে মুসলমান বেশী না বিজিবি বেশী? মুসলমানদের জন্য মুসলমান যদি প্রান না দেয় তাহলে কে দেবে? ইসলামী ব্যাঙ্ক জাতীয় সংগীত গাইবার জন্য কোটি টাকা খরচা করতে পারে কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য কিছুই করতে পারেনা? তাহলে ইসলামী ব্যাঙ্ক তাদের নামের আগায় “ইসলাম” শব্দটি ব্যবহার করার অধিকার রাখেনা।
ধরে নিচ্ছি বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা নগন্য তাই কেউ রোহিঙ্গাদের নৌকা থেকে নামিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় দেবার সাহস পাচ্ছেনা । রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবেনা – বাংলাদেশ সরকারের স্থায়ী নির্দেশ রয়েছে বিজিবির উপরে। আর সেকারনেই বিজিবিরা রোহিঙ্গা নৌকাতে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে।
অন্যদিকে বিএসএফ বাংলাদেশী হত্যা করছে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে এসে। বিজিবির দায়িত্ব কি বাংলাদেশ রক্ষা করা? বাংলাদেশীদের রক্ষা করা? নাকি গণহত্যা থেকে জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা নৌকা ভর্তি নারীপুরুষশিশুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া?
বাংলাদেশে যারা নবী করীম সাঃ এর উম্মত আছেন তাদের দায়িত্ব কি ? ফেসবুকে মুসলমানদের মৃতদেহের ছবি পোষ্ট করা নাকি সরকারের স্থায়ী নির্দেশ অমান্য করে বিজিবির বন্দুকের গুলিকে অগ্রাহ্য করে মুসলমানদের জন্য বুক পেতে দেওয়া? যদি না দিতে পারেন তাহলে নিজেকে মুসলমান বলার কোন অধিকার নেই আর ফেসবুকে মুসলমানদের মৃতদেহ পোষ্ট করে নিজেদের দীনতা ও হীনতা প্রকাশ করারও কোন প্রয়োজন নেই।
দোজগের আগুণের ছবি দেখার জন্য ফেসবুকে যাবার দরকার নেই। বাংলাদেশ নামক দেশটি একটি জলজ্যান্ত জাহান্নাম। এই জাহান্নামের অভিজ্ঞতা থাকলেই হবে । কবরের আযাবের কথা চিন্তা করা লাগবেনা। বাংলাদেশের মানুষ যত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে আমার মনে হয়না জাহান্নামে এর চাইতে ভয়ংকর কেউ থাকবে। বাংলাদেশে বাস করে এলেই জাহান্নাম দেখা হয়ে যাবে ধরে নিলাম। আমি বাস করেছি। আমি জাহান্নামের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এখন ফেসবুকে বসে পরোক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করছি বাংলাদেশ নামক জাহান্নামের। যেখানে ধর্ষিতা নারীর টুকরো লাশ পাওয়া যায় আর মানুষ গার্বেজ থেকে আহার করে আর কিছু নারী পুরুষ দেশকে ভালবেসে হাজার হাজার টন ফুল কিনে সিমেন্টের উপরে ফেলে পচায়। বাংলাদেশ হইল সেই জাহান্নাম যেখানে গণহত্যা থেকে বেঁচে পালিয়ে আসা ভয়ার্ত মানুষের অসহায় আর্ত চিৎকার ঢেকে দেয় বন্দুকের গুলির শব্দে। এইভাবেই মিয়ান্মারের আর্মীর সাথে মিলেমিশে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডেরা গনহত্যা অংশ নিচ্ছে।
আর বাংলাদেশের মুসলমানেরা প্রতিবাদে প্রতিবাদের সড়কে আছড়ে পড়ছে। প্রতিবাদ মিছিল সড়কে না করে সীমান্তে নিয়া যান। বর্ডার গার্ডদের সরিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। প্রতিবাদ কার কাছে করেন? কেনো করেন? করে কি লাভ? সেলফি তোলার জন্য প্রতিবাদ? নেতাদের পেছনে সমর্থন দেবার জন্য প্রতিবাদ? যার যার আখের গোছানের জন্য প্রতিবাদ? নেতাদের মন যুগাবার জন্য প্রতিবাদ? নগদ ক্যাশের জন্য প্রতিবাদ? সবই ভুয়া সবই লোক দেখানো। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত আন্দোলন হয়েছে সবই ব্যর্থ হয়েছে যেহেতু আন্দোলন করার মূল উদ্দেশ্যের সাথে প্রকাশিত উদ্দ্যেশের কোন মিল ছিলনা। একটি পরাধিন দেশকে স্বাধীন স্বাধীন বলে গলা ফাটালে যেমন সেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়না ঠিক তেমনি নামায পড়ে কপালে কালো দাগ করে মুসলমান মুসলমান করে গলা ফাটালেও মুসলমান হওয়া যায়না। মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাঃ এর অনুসারী যারা তাদের মুসলমান বলা হয়। মহানবীর নির্দেশ অনুসারে মুসলমানদের কোন দেশ নেই। সাড়া বিশ্বের সব মুসলমান একটি জাতি, একটি দেশ, এক রাসুল এক আল্লাহ্। বিশ্বের এক কোনে কোন মুসলমান বিপদে পড়লে সাড়া বিশ্ব থেকে সব মুসলমান তার পাশে যেয়ে দাঁড়াবে আর যদি তা দাঁড়াতে না পারে তাহলে সে মুসলমান নয়।
প্রথমে পরিবার, তারপর প্রতিবেশী, তারপর সমাজ, তারপর দেশ তারপর বিশ্ব। রোহিঙ্গাদের নৌকা বেশী দূরে নেই – নাফ নদীতে এই তো একটি দূরে যেখানে আপনারা সমুদ্র সৈকতে হাওয়া খাইতে যান তার কিছু কাছেই। যার যার আপন প্রান বাচায় যারা দুর্বল, ইঁদুর আর কাপুরুষ তারা ।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা
http://edition.cnn.com/2016/11/24/asia/myanmar-rohingya-refugees-bangladesh/