প্রতিটি মানুষের ভেতর একজন স্বৈরাচারী বাস করে। সেই অন্তরের অন্তস্থলের স্বৈরাচার জানোয়ারটি সুযোগ পেলেই তার চাইতে মানসিক ও শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল যে তার উপরে নিপীড়ন চালায়। নারীদের পুরুষের প্রতি দুর্বলতা । স্বামী হারাবার ভয় থেকে স্বামীরা সুযোগ পায় এবং স্ত্রীর উপরে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চালায়। পুলিশেরা রাস্তার চাওয়ালার কাছে চান্দা নিতে যায় আর বসদের হাতে সেই চান্দার শেয়ার তুলে দেয়। ঢাকার বাড়ীওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের আবাসিক সমস্যার সুযোগ নিয়ে বাড়ীভাড়া বৃদ্ধি করেই চলেছে। ভাড়াটিয়াদের দেবার ক্ষমতা থাক বা না থাক। বাড়ী খালী পড়ে থাকে তবুও ভাড়া কমায় না। প্রতি বছরেই ভাড়া বৃদ্ধি চলছে কিন্তু সেই অনুপাতে ভাড়াটিয়াদের বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। একজন যুবক ১৭-১৮ বছর লেখাপড়া শিখতে যে টাকা খরচা করে লেখাপড়া শেষ করলে বাকী ১৭-১৮ বছরেও সেই টাকা জমাতে পারেনা। বাংলাদেশে বাণিজ্যনীতি নাই। ভাড়াটিয়া সমিতি নাই। সরকার বাড়িওয়ালাদের উপরে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করেনা। সরকার বলতে কিছু নেই। বিচারবিভাগ বলতে কিছু নাই। দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নাই। অর্থনীতির ফরমূলা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
বিদেশী শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই বদ্বীপে যারা বসবাস করে তাদের জীবন দুর্বিসহ হবার অনেক কারনের মধ্য বাড়ীভাড়া অন্যতম। একজন আমাকে টেক্সট করেছে যা কিছুটা সংশোধন করে নীচে দেওয়া গেলঃ
QUOTE
বাদাম-চানাচুর-পান-বিড়ি বেঁচে একদিন বস্তির ওপরে বিল্ডিং দাড়া করায়। তারপর ’বাড়িওয়ালা’ হয়ে যায়। শিক্ষা-দীক্ষা কথা চুলোয় যাক। ন্যুনতম ভদ্রতা-নম্রতা জ্ঞান তো নেইই, বরং নিজেকে ‘মুই কি হনু রে’ মনে করে। এমন অনেক মাদারচৌদ বাড়িওয়ালা দেখেছি মাসের পর মাস বাসা ভাড়া হচ্ছেনা, তবুও ভাড়া কমাবে না। মাদারচৌদের যা ডিমান্ড তাই হলে সে ভাড়া দেবে।
এই মাদারচৌদগুলি মানুষকে মানুষ মনে করে না।
ঢাকায় আবাসন সংকট আছে। ব্যাপক চাহিদা আছে আর তাই এই মাদারচৌদগুলির গায়ের গরমে টেকা যায় না। বছর যাওয়ার আছে ভাড়া বেড়ে যায়। আমার বাড়িওয়ালা মাদারচৌদের সাথে ১ বছরের মৌখিক চুক্তি হয়েছিল। ১ বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়াবে না। জানুয়ারী আসার আগেই লিফট-জেনারেটর লাগানোর নাম করে ৩৫০০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর মৌখিক নোটিস দিয়ে দিয়েছে। ৮৫০ স্কয়ার ফিটের ২ রুমের ফ্ল্যাট একটা বাসায় ১১ হাজার টাকা ভাড়ায় ৫ মাস আগে ওঠেছিলাম। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি প্রভৃতি বিলসহ ১৩,০০০/- টাকা চলে যেতো আমার। তারপরও মাটি কামড়ে ছিলাম।
এখন আমার ৩১ হাজার টাকার বেতন থেকে ১৬ হাজার শুধু বাসা ভাড়া দিয়ে দিলে বাকি ১৫ হাজারে আমাদের ২ জনের একটা পরিবারে ন্যূনতম খরচ কিভাবে মেটাবো আমি? চাল-ডাল-নুন-তেল ছাড়াও আমার সংসারে নিত্য প্রয়োজনীয় আরো দশটা জিনিশ কিনতে হয়, একটু একটু সঞ্চয় করে একটা একটা করে একটা দরকারী জিনিশ কিনতে হয়, যাতায়াত ভাড়া দিতে হয় (পরিবহন মালিকগুলো আরেক মাদারচৌদ), বাড়িতে আমার অসুস্থ মা আছে, তার জন্য ওষুধপত্র কেনা লাগে।
ঢাকার ছেলে আমি। শহরের উপকণ্ঠে বাড়ি। কখনো ঢাকার গরম দেখাইনি। কিন্তু পরিযায়ী মাদারচৌদ বাড়িওয়ালাদের আচার-আচরণে আমি এতোটাই ক্ষুব্ধ, মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় থাপ্রাই। এই মাদারচৌদগুলি শুধুমাত্র একটা বাড়ির মালিক হয়ে যে মৌজ মাস্তি করে তা এই আমার মতো চাকুরিজীবির রক্তচোষা টাকায়। ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরি পেতে আমাকে ১৮ বছর পড়াশোনা করতে হয়েছে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ৪ বছর চাকুরি করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পর আমি ৩০ হাজার টাকা বেতনে পৌঁছাতে পেরেছি।
আর কোন যোগ্যতা ছাড়াই একটা বাড়িওয়ালা মাদারচৌদ শুধুমাত্র জায়গার ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বছরকে বছর। এই মাদারচৌদগুলির কাছে সব ভাড়াটিয়াই জিম্মি। ওদের মটো হচ্ছে থাকলে থাকো। না থাকলে আরো ভাড়াটিয়া আছে। ভালো-মন্দ সব জায়াতেই আছে। অনেক ভাড়াটিয়াও আছে মাদারচৌদ। তবে আমার দেখা বাড়িওয়ালা মাদারচৌদদের মতো আর মাদারচৌদ একটাও নাই।
UNQUOTE
এখানে এই বক্তব্য লিখে আমরা যা করতে পারি তা হলো অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের সাথে সংঘবদ্ধ হতে পারি এবং ভাড়াটিয়া সমিতি করতে পারি। সেটা করার পরে কি করতে পারি? বাড়ীওয়ালার ভাড়ানীতি প্রনয়ণ করতে পারি যা বাড়ীওয়ালারা না মানলে আইনের মাধ্যমে সাজা ও জরিমানা দিতে বাধ্য হবে। এমন কিছু করা যেতে পারে। বাড়ী অনুযায়ী বাড়িভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। সাড়া বাংলাদেশে যখন অব্যবস্থা আর অনিয়ম তখন বাড়িওয়ালাকে কিভাবে নিয়মের ভেতর আনা যাবে সেটা ভাববার বিষয়। তবে একটি বিল্ডিং এর সব ভাড়াটিয়া যদি একত্রিত হয় তাহলে বাড়িওয়ালার উপরে চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব। বাড়ীকে ভালভাবে মেইনটেইন করবে কিন্তু পাঁচ বছরের আগে ভাড়া বৃদ্ধি করবেনা – এমন কিছু।
সব কিছুই সম্ভব। সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেজন্য সংবেদনশীল হতে হবে। কমন গ্রাউন্ডে লড়াই করার জন্য এক অন্যের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। যদি কিছু ভাড়াটিয়ার ভাল চাকুরী থাকে, অপরাধকর্মকান্ডের মাধ্যমে জড়িত থাকার কারণে অনেক টাকা থাকে তাহলে তারা হয়তো ঐক্যবদ্ধ হতে চাইবেনা। আপনে বাঁচলে বাপের নাম নীতিতে বিশ্বাসী প্রায় দেশের বেশীরভাগ মানুষ। সেজন্য সবাই ভুক্তভোগী। সব কিছুই সীমান ছাড়িয়ে যাচ্ছে আর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলছে। বাজারের দ্রব্যমূল্যকে ধরতে যেয়ে মানুষ টাকার পিছে ছুটছে। টাকাকে ধরতে যেয়ে অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে আর তারপর অপরাধীরা হয়ে যাচ্ছে অধিক ক্ষমতাবান। নিরীহ মানুষ যারা অপরাধ করতে পারেনা তারা ভুগছে।
দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় শুনেছি তখন মানুষ বাঁচার শেষ চেষ্টা করার জন্য আপনাআপনি শক্তিসঞ্চয় করে লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ঢাকার ভাড়াটিয়াদের কি দেওয়ালে পিঠে ঠেকেছে?
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাজনিজ২৪
টরেন্টো, ক্যানাডা।