সুখ আর অসুখ

প্রতিটি মানুষের শরীরে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ২৪/৭ মিলিটারী ডিফেন্স সিস্টেমের মত গার্ড দিচ্ছে শরীরকে। শরীরের জন্মগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঁকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতির সাথে সহযোগীতা করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। একটু জ্বর হলেই আমরা দৌড়ে ডাক্তারের কাছে বাচ্চাকে নিয়ে যাই। তারপর বাচ্চাকে ওষুধ খাইয়ে এই জ্বর কমানো হয় অন্যদিকে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঁকে এই ওষুধ কাবু করে ফ্যালে। এবং শিশুকাল থেকেই মানুষ ওষুধের উপরে নির্ভরশীল হয়ে যায়। এক পর্যায়ে দেখা যায় কোন অষুধই কাজ হয়না। ফলে চিকিৎসকরা অসুখের এক লম্বা তালিকা হাতে ধরিয়ে দেয় আর ক্যানসার তাদের অন্যতম।

অতীতে এত ওষুধ ছিলনা। প্রচুর গাছগাছালি ছিল। প্রায় সবার বাসাতেই সবজী বাগান থাকতো। বড় বড় অট্টালিকা আর উঠোন বিহীন সমাজে এখন কোন গাছগাছালি নেই। কারু উঠোনে আগের মত আর লাউ, কুমড়া, সীম ঝোলেনা। আকাশমুখি লঙ্কা আকাশের দিকে তাকিয়ে রক্তিম হয়ে থাকেনা। পাশের বনবাদার থেকে আঁচলভরে কেউ আর সুষনির শাক তুলে আনেনা। সকালের নরম রোদে বসে কেউ আর বড়ি দেয়না।  পুকুরের পুটি মাছ, বাগানের আলু, পেঁয়াজ, আদারসুন, আর সবজী নেই এখন বাজারে ভারতের হোরমোন ইনজেকশন দেওয়া গরুর মাংস, ভারতের আদারসুনপেয়াজ আর বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ফরমালিন মেশানো সবজিফল। বাজারে ফরমালিন আর হাসপাতালে কসাই। বাজার থেকে কিনে আনছে বিষ। বিষ খেয়ে মরতে মরতে যাচ্ছে হাসপাতালে আর সেখানে আছে ডাক্তার কসাই। চারিদিকে লেগে আছে অসুখ আর মৃত্যু।

তারপর আছে অন্যান্য মৃত্যু । যেমন পুলিশে উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে হাজতে রেখে দিয়ে ব্লাক্মেইল করে টাকা চাইবে না দিতে পারলেই ক্রসফায়ারে মৃত্যু। বিরোধীদল করলেই উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তারপর লাশ পড়ে থাকবে খালেবিলে। ক্যান্সার হবার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে ভুল সময়ে ভুল জাগাতে ভুল পুলিশের সামনে পড়লেই জীবণের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

যাক ফিরে আসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রসঙ্গে। প্রায় প্রতিটি মানুষের শরীরেই রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। অন্যভাবে বলা যেতে বলে আসলে “ক্যানসার” বলে কিছু নেই। আমরা যখন কোন অসুখের চিকিৎসা করে তার নিরাময় করতে বা রোগ ধরতে ব্যার্থ হই তখন নিজেদের শরীরের উপরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করি। এই চাপ ভয়াবহভাবে আমাদের মনকে বিষন্ন করে। এই বিষন্নতা শরীরের ভেতরে এক আতংকিত পরিবেশের সৃষ্টি করে। আর এই আতঙ্কিত অবস্থাকে “ক্যানসার” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
বাইরের ওষুধ থেকে, কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার থেকে, কারখানার ধুঁয়া থেকে, পচাগলা, দূষিত পরিবেশ, শারীরিক, ও মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি যখন আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ডিফেন্স মেকানিজম বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাঁকে ক্ষমতায়ন করে তখনই আমাদের শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।

১- ওষুধ হলো ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার জন্য এক ধরণের কেমিক্যাল।
২ – কেমিক্যাল খাওয়া গরু, ছাগল, মুরগী, সবজী সব কিছুই ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য বিষ।
৩- প্রতিটি শহরের ছাদে ছাদে খারখানাও ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার জন্য স্থাপিত করা হয়েছে।
৪- গার্বেজ ফেলার জন্য শহরে কোন পরিকল্পনা নেই ফলে সবাই যার যার বাসা থেকে পথের পাশে গার্বেজ জমা করে। যার ভেতর থাকে বিষাক্ত কেমিক্যাল খাওয়া গরু, ছাগল, মুরগী, ফরমালিন মেশানো সব্জির উচ্ছিষ্ট যা বাইরে পচে গলে বাইরের পরিবেশকে দুষিত করে। এটা নগরবাসীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা।
৫ – প্রতিদিন বিভিন্ন নারীপুরুষেরা নানাভাবে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতণের ফলে শরীরের ভেতর যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তার কারণে শিরদাঁড়া থেকে শরীরের অন্যান্য অংশগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, রক্ত চলাচল ব্যহত হচ্ছে, শরীরের ভেতর মগজ থেকে পা পর্যন্ত সকল অংশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে ফলে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও পৌছুতে পারছে ফলে সেখানে অসুখেরা আস্তানা গড়ছে এবং মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্চে। শারীরিকভাবে নির্যাতিত হবার ফলে আমি এক কানে শুনিনা এবং কানে বাতাস বা পানি সহজেই প্রবেশ করে এবং আমি ভারসাম্যহীনতায় ভুগি
৬ – মানসিক নির্যাতন শরীরের উপরে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে দেখা যায় স্বামী বা স্ত্রী যখন একজন অন্যজনকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে তখন যার উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে বা যার উপরে নির্যাতন করা হচ্ছে তার মনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ফলে শরীরের পরিবেশ নস্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারে একজন মানুষের উপরে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক অনেক সদস্য নির্ভরশীল। একজন আয় করে অন্যান্যরা সবাই ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলে, টিভি দ্যাখে, ফেসবুকিং করে, ভাল ভাল কাপড় পড়ে সুন্দর সুন্দর সেলফি পোস্ট করে, রাত জাগে, প্রেম করে, কবিতা লেখে, মোবাইলে ফ্লেক্সলোড ভরে। খরচের উপায় অনেক । আয়ের উপায় সীমিত। যার আয়ের উপরে এইসব ফালতু ব্যয় হচ্ছে সেই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির মনের উপরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ফলাফল সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজারে যেসব জিনিষ বিক্রি হয় সেইসব জিনিষের বেশিরভাগই বাইরে থেকে আসে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলো বাংলাদেশকে কোন খাজনা দেয়না। আজেবাজে জিনিষের উপরে কোন ট্যাক্স নাই । ফলে বাংলাদেশের শত শত ক্যাবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে বাংলাদেশের এক একটি পরিবারের দুই থেকে পাঁচ বা সাতজন সদস্য সদস্যারা একজন মানুষের উপরে বসে এইসব ফালতু জিনিষ কেনার জন্য বায়না করছে। ফালতু জিনিষ কেনার জন্য অনেক মানুষ অসাধু উপায় অবলম্বনও করছে। যারা বাইরে শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন তারাও পরিবারের সদস্যদের হাতে অদরকারী ফালতু জিনিষ কিনে দিয়ে পরিবারের নিষ্টুর ও অবিবেচক সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য আমরণ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। চাপ যেভাবেই আসুক শরীর যেহেতু একটাই আর মন যেহেতু একটা তাই এই চাপ মন থেকে শরীরে আসছে এবং শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঁকে কাবু করে ফেলছে এবং শরীরের অসুখ এসে স্থায়ীভাবে আস্তানা গাড়ছে।

এই থেকে পরিত্রান পাবার জন্য সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে কাজ করতে হবে। নিজের খাবার নিজে উপার্জন করে খেতে হবে। দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ি দেশেই যদি খাদ্য উৎপাদন করা যায়, উৎপাদন করতে আগ্রহ ও সহযোগীতার জন্য বিনিয়োগ সহজ করা হয় এবং বাইরের পন্যের উপরে কড়া ট্যাক্স বসানো যায় তাহলেই কাজের সৃষ্টি হবে এবং একদল মানুষ যারা ঘরে বসে ফেসবুকিং, ভিডিও গেম খেলা বা সিরিয়াল দেখে ফালতু সময় নস্ট করছে তারা কাজ করতে পারবে এবং একজন উপার্জনকারী সদস্যের উপর থেকে চাপ কমবে।

গরু, ছাগল ও মুরগীকে হরমোন দেওয়া হয় । এই হরমোন হলো বিষ। এইসব মাংস থেকে শরীরে ক্যানসার হয়। ফরমালিনও বিষ। এখন বাংলাদেশের চারিদিকে নানা রকমের বিষাক্ত দূষিত বাতাস। কার্বন দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সোনায় সোহাগা। সব কিছু মিলিয়ে বেশ অসুস্থ হবার জন্য সাজ সাজ উৎসব ভাব লেগে আছে বাংলাদেশে।

তারপর আছে বিভিন্ন হাসপাতাল যেখানে আছেন ডাক্তার কসাই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুইপাররা রোগীর অপারেশন করে। এটা এক ধরনের উন্নয়ন।

কিমো থেরাপী — ক্যানসার হলে যারা কিমো থেরাপী করে তারা আসলে ধীরে ধীরে আত্মহত্যা করে। সাড়া বিশ্বের সব মেডিক্যাল সায়েন্স এই ব্যাপারে একমত যে কীমো থেরাপী ভাল করার চাইতে হাজার গুন বেশী ক্ষতি করে। বাংলাদেশের অনেক ক্যানসার রোগী কিমো থেরাপী করার জন্য বিদেশে যায়। আমি বুঝিনা এরা এত টাকা পায় কোথায় ? আর এত টাকা খরচা করে কীমো থেরাপী না করে যদি এই টাকাগুলো দিয়ে নিরিবিলি কোন এলাকাতে একটা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর খামার করে আর সব্জি গাছা লাগায় তাহলে এইসব খেয়েও কিছুদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে। অযথা দেশের মানুষের উপরে নির্যাতন করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যেয়ে কিমো থেরাপী করে বিদেশীদের হাতে টাকা গুজে দিয়ে নিজের চুল ও লোম হারিয়ে বিবর্ন হয়ে যায়। ক্যানসার সেলকে মেরে ফেলার শক্তি কীমো থেরাপীর চাইতে বেশী হলদীতে  রয়েছে । এছাড়া লাল জাম্বুরা, গমের তেল, সূর্যমুখীর তেল, বাধাকপি, আদা, আদা চা, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ব্রকলি, আম, আভাকাডো, কিউই ফল খাওয়া যেতে পারে কীমোর বিকল্প হিসাবে। কীমো যেহেতু কর্পোরেট ফাঁদ তাই সবাই কীমোর দিকে ছুটে লোম হারিয়ে ফ্যালে।

আপনার শরীরকে সূর্‍্যের বেগুনী রশ্নি থেকে রক্ষা করুন তাহলে চামড়াতে ক্যানসার হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

আরো সহজ করে বলতে গেলে বলতে হয় যে প্রতিটি মানুষের শরীরে হাজার হাজার ক্যানসার সেল রয়েছে কিন্তু প্রতিটি মানুষের ক্যানসার হয়না। কারণ প্রতিটি শরীরের রয়ে এই ক্যানসার সেলগুলোকে প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা। যখনই কারু শরীরে এই ক্ষমতা দুর্বল হয় তখনই শরীরের ভেতরের ক্যানসার সেলগুলো ক্ষমতায়ণ করে ফ্যালে এবং প্রতিরোধকারক সেলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নেয় ফলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

কি কি করণীয় আছে ?
বাগান করুন । সবজী ও ফলের বাগান। উঁচু উঁচু দালানেও জানালাতে বা ব্যালকনিতে গাছ লাগান। ছাদে গাছ লাগান। দেশের বাড়িতে সবজীর খামার করুন। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর খামার করুন, মাছ চাষ করুন। প্রতিটি পরিবার যদি সবজি ও ফলের উপরে নির্ভরশীল হয় তাহলে বাজারে দ্রব্যমূল্যে কমবে। পন্যের মান উন্নত করার জন্য প্রতিযোগীতা শুরু হবে। বিদেশী পন্যের উপরে ট্যাক্স বসাতে হবে। যাতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী পড়ে যায়। ফালতু পন্যের উপরে বেশী বেশী ট্যাক্স বসাতে হবে। যেমন ক্যাবল টিভি চ্যানেল, ভিডিও গেম, স্বর্ন, ফাস্টফুড, কোকাকোলা, বিদেশী ওষুধ, গ্যাস, গাড়ী, (ছোট ছোট শহরে হাজার হাজার গাড়ী থেকে আসা ধুঁয়া পরিবেশকে বিষাক্ত করে), গাড়ী কমাতে হবে, সাইকেলের উপর নির্ভরশীল হতে হবে, রিকশা চলবে, ফলে শরীরে মেদ কমবে, অসুখ কম হবে।

যেকোন মাংসই রক্ত সম্পুর্নভাবে ঝরিয়ে তারপর রান্না করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা পুরানা চাউল ও গম সম্পুর্নভাবে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

নিজের ভাল পাগলেও বুঝে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কাজ করুন, নিজের খাবার নিজে উপার্জন করুন, বাগান করুন, প্রতিটি খাদ্যই আল্লাহর নেয়ামত এবং এক একটি রোগের ওষুধ। প্রকৃতির সাথে সহযোগীতা করুন। প্রকৃতি আর মানুষ যদি বন্ধু হয় তাহলে অপ্রাকৃতিক অসুখকে প্রতিহত করা সম্ভব।

সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.