ভোট পুনর্গণনা হলে বদলে যেতে পারে অংক!

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফলাফলে হ্যাকিংজনিত কারচুপির অভিযোগ প্রমাণিত হলে বদলে যেতে পারে পুরনো হিসাব নিকাশ। বদলে যেতে পারে হোয়াইট হাউসের আগামি প্রতিনিধি হওয়ার অংক। হিলারি ক্লিনটনের জন্য তা চূড়ান্ত সুসংবাদ হিসেবে হাজির হতে পারে। মিশিগানের ফলাফলের ব্যাপারটি এখনও নিস্পত্তি হয়নি। ফলাফল পর্যালোচনার পর যদি ওই মিশিগানসহ কারচুপির অভিযোগ ওঠা বাকি দুই অঙ্গরাজ্যেও হিলারি জয় পেয়ে যান, তাহলে তিনিই হয়ে যাবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলোক্টরাল ভোটের মালিক। অর্থাৎ আগামি মার্কিন প্রেসিডেন্ট!

উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট ছিল যথাক্রমে ১০, ১৬ ও ২০। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের দাবি, বিপুল সংখ্যক অ্যাকটিভিস্ট এবং অ্যাকাডেমিশিয়ান তিন অঙ্গরাজ্যের ভোটে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কারচুপি হওয়ার দাবি তুলেছেন। তারা মনে করছেন, বিদেশি হ্যাকাররা ওই তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সব কাউন্টির চূড়ান্ত ফলাফল জমা দেওয়ার পরও মিশিগানের ফলাফল অনিষ্পন্ন হয়ে আছে কেননা সেখানে দুই প্রার্থীর ব্যবধান ন্যুনতম এক শতাংশেরও কম। অবশ্য সেখানে রিপাবলিকানরাই এগিয়ে আছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের দলটির দাবি যদি সত্যি হয় অর্থাৎ তিনটি অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনা করা হয় এবং হিলারি জিতে যান তবে সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা আছে। পপুলার ভোটে হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে ১৭ লাখ ভোটে এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় তিনি হেরে গেছেন। কিন্তু তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ফলাফল যদি ভিন্ন কিছু হয়, তাহলে ট্রাম্পের ইলেকটোরাল ভোট কমে যাবে এবং হিলারির ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেড়ে যাবে। অর্থাৎ হিলারির ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোটের সঙ্গে যদি উইসকনসিনের ১০টি, মিশিগানের ১৬টি এবং পেনসিলভানিয়ার ২০টি ইলেকটোরাল ভোট যুক্ত হয় তবে তিনি জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। অর্থাৎ তার ইলেকটোরাল ভোট বেড়ে ২৭৮ এ এবং ট্রাম্পের ইলেকটোরাল ভোট কমে ২৬০ এ দাঁড়াবে।

আরও একটি বিষয় এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তাহল ‘ফেইথলেস ইলেকটর’। অর্থাৎ যেসব ইলেকটর তাদের নিজ নিজ রাজ্যে পপুলার ভোট পাওয়া প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে অন্য কাউকে ভোট দেন তারা ফেইথলেস ইলেকটর। ১৯ ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট হবে। সেখানে ৫৩৮ জন ইলেকটর তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কিন্তু যারা তা করবেন না তারা ফেইথলেস ইলেকটর হিসেবে বিবেচিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ১৫৭ জন ফেইথলেস ভোটার দেখা গেছে। তবে তারা কখনও নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারেননি। তবে এবারের নির্বাচনের পর ইলেকটরদেরকে তাদের অঙ্গরাজ্যের ফলাফল মাথায না রেখে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে করা পিটিশনে ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে।

গার্ডিয়ানের খবরে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কংগ্রেশনাল কমিটি এবং ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। আগামি সপ্তাহে কারচুপির প্রমাণসমেত ওই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির করা হবে। ভোট পর্যালোচনায় গঠিত মার্কিন সরকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট কমিশন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের একটি দল মিলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

ভোট পর্যালোচনায় গঠিত মার্কিন সরকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট কমিশনের একজন উপদেষ্টা বারবারা সিমন্স গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি ভোট পুনগণনায় আগ্রহী’। ভোট-পরবর্তী ব্যালট পেপারগুলো আবারও পরীক্ষানীরিক্ষা করে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। ফলাফল পর্যালোচনায় নিজের অন্তর্ভূক্তির ধরন সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি সিমন্স।

এদিকে দেশটির খ্যাতনামা কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের একটি দলও সিমন্সের সংগঠনের সঙ্গে মিলে ফলাফল পর্যালোচনার দাবি তুলছেন। তারা আগেই গুরুত্বপূর্ণ তিন অঙ্গরাজ্যে হ্যাকিংয়ের দাবি তোলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের ওই দল ওই প্রমাণ পাওয়ার পর পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ফলাফল চ্যালেঞ্জের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এখনও কারচুপির অকাট্য প্রমাণ পায়নি ডেমোক্র্যাটরা। তাই ফলাফল চ্যালেঞ্জের ব্যাপারেও কোনও সিদ্দান্ত নেননি হিলারি।

শুক্রবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত তিন রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন করার চূড়ান্ত সময়সীমা। ডেমোক্র্যাটরা এরমধ্যে পুনর্গণনার আবেদন করে কিনা, সে দিকেই তাকিয়ে আছে মার্কিনিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *