মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চতুর্থ দিনও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। নিবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধিতাকারীরা চলমান বিক্ষোভকে আন্দোলনে রূপ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জানুয়ারিতে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কয়েক লাখ মানুষের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ওই দিন ১০ লাখ নারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করবেন বলেও জানা গেছে।
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ শনিবারও অব্যাহত ছিলো। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চলমান বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। শনিবার তা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষজন বিক্ষোভে নেমেছেন। এমনকি মার্কিন প্রশাসনের কেন্দ্র হোয়াইট হাউসের সামনেও বিক্ষোভ করেন ট্রাম্পবিরোধীরা। ওয়াশিংটন ডিসিসহ অন্য অঙ্গরাজ্যতেও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ওয়েস্ট কোস্ট, নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, অস্টিন, সিয়াটল, ওকল্যান্ড, কালিফ, ফিলাডেলফিয়াসহ বিভিন্ন শহর। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ডেনভার, মিনিয়াপোলিস, মিলওয়াউকি, পোর্টল্যান্ড, ওকল্যান্ডসহ বিভিন্ন শহরে।
শনিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছে। নিউ ইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ারে বিক্ষোভের জন্য ইতোমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল যাবে ট্রাম্পের বাড়ি, তার কর্পোরেট অফিসেও। আরও রয়েছে অনেক পরিকল্পনা।
নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভের প্রচারণার আয়োজকরা তাদের ফেসবুক পোস্টে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘রাস্তায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিন! ট্রাম্প এবং তার গোঁড়ামি অ্যাজেন্ডা রুখে দাঁড়ান।’
আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতাগ্রহণ করবেন। বিক্ষোভকারীরা ওই সময়ে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তখন ওয়াশিংটনের রাস্তায় ১০ লাখ নারী বিক্ষোভ করবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। বামপন্থী ও অ্যানার্কিস্ট গ্রুপগুলোও ট্রাম্পের শপথগ্রহণের সময়ে রাজধানীতে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে।
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার-এর প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিস কুলার জানিয়েছেন, ‘তারা নির্বাচনের ফলাফলে হতাশ হয়েছেন। ট্রাম্পের শাসনকালে আমাদের কেমন প্রস্তুতি দরকার, তা নিয়ে আমরা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। শপথগ্রহণের সময়ে বিক্ষোভে আমরা বড় জমায়েত করতে পারব বলে আশা করছি।’
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ডেনভার, মিনিয়াপোলিস, মিলওয়াউকি, পোর্টল্যান্ড, ওকল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটেছে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা। কানাডার ভ্যানকুভারেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানেও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের।
শনিবার, অরিগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে ট্রাম্পবিরোধী মিছিলে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। খবরে বলা হয়, পোর্টল্যান্ডের মরিসন সেতুর কাছাকাছি গুলিবিদ্ধ হন একজন তরুণ মার্কিনি। পোর্টল্যান্ড পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি শঙ্কামুক্ত।
ক্যামেরন হাইটেন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অরিগন.কমকে জানান, তিনি ওই গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি দেখেছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা যখন সেতুর চারপাশজুড়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিল, সে সময় পূর্বদিক থেকে বেশকিছু মানুষ নিয়ে একটি গাড়ি আসছিলো। ওই গাড়িতে এক বন্দুকধারী ছিলেন। তিনিই মিছিলে গুলি চালিয়ে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ করেন।
ক্যামেরন হাইটেন জানান, ওই বন্দুকধারী প্রথমে খোলা আকাশে গুলি চালিয়ে মিছিলে থাকা ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশে গুলি করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেছে কিনা, তা জানা যায়নি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় অভিযোগ করেন, এসব বিক্ষোভকে ভাড়াটে বিক্ষোভকারীদের কাজ ও মিডিয়ার সৃষ্টি। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এই বিক্ষোভ অনুচিত এবং বিক্ষোভকারীরা ভাড়াটে।’ টুইট বার্তায় ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘মাত্র একটি খোলামেলা ও সফল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হলো, আর এখন মিডিয়ার উসকানি পাওয়া ভাড়াটে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ করছে। খুবই বাজে!’
এর কয়েক ঘণ্টা পর অপর এক টুইট বার্তায় অবশ্য তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রশংসাই করেন, ‘নির্বাচনের পর যারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে, তারা দেশের প্রতি ভালোসাবা ও আবেগ থেকেই এমনটি করছেন। আমাদের এই বিষয়টিকে ভালোবাসতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই এবং গর্বিত হতে চাই।’
উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বরের ভোটে নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের একাংশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলোর তথ্যমতে, এর পর থেকে অন্তত ৩০টি শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।