বিভিন্ন দেশের সরকারের নিরাপত্তাহীনতা বোধের কারণসমুহ

অসুস্থতার কারণে অনেকদিন লিখিনি। অসুস্থ থাকলে মন হারিয়ে যায়। মন খুঁজে পেতে গেলে ছুটতে হয় সেইসব কারনের পিছু যা মনকে নিরুদ্দেশ করে। কারণ খুঁজে পেলেও মন নিরুদ্দেশই থাকে। মন যেখানেই যাক, যার কাছেই যাক, যেভাবেই থাক, ভাল থাকুক এই কামনা করি। হেয়ালী ছেড়ে আসল কথাই আসি। কাল শুয়ে শুয়ে ফেসবুক নিউজফিডে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখলাম ভিডিও ক্লিপে জাস্টিন ট্র্যুডো, কানাডার প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে কোন এক সাবওয়েতে (subway – underground train) আসলেন। সাবওয়েতে তিনি সবার প্রথমে যার সাথে হাত মেলালেন তিনি একজন গৃহহীন মানুষ। কানাডার গৃহহীন মানুষের সাথে বাংলাদেশের গৃহহীন মানুষের পার্থক্য রয়েছে। সে প্রসংগে পরে আসছি। ট্রেন স্টেশনে দেখা গেলো অনেক পথচারীই লক্ষ্য করেনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নিচে ট্রেনের প্লাটফর্মে যাবার সিঁড়ি বা এসকেলিটরের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই যার যার মত হেটে চলে যাচ্ছেন। জাস্টিন ট্র্যুডো দাঁড়িয়ে আছেন। পথচারীদের সাথে এগিয়ে যেয়ে হাত মেলাচ্ছেন। একটা মেয়ে এসে প্রথমে হাত মিলিয়ে উনার সাথে ছবি নেবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী মিস্টি হেসে মেয়েটির সাথে ছবি নিলেন। মেয়েটির পিঠের উপরে প্রধানমন্ত্রীর হাত এমনভাবে রাখা ছিল যাতে পিঠ না স্পর্শ করে। এরপর অনেক পথচারী এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে হাত মেলালেন এবং ছবি নিলেন। ভিডিওতে আমি কোন পুলিশ দেখিনি। একজন ক্যামেরাম্যানকে দেখা গেছে। সেদিন সেই সাবওয়েতে কোন পথঘাট বাস ট্রেন কিছুই বন্ধ ছিলনা। সবাই যার যারা কাজে গেছে। অনেকেই তাদের মোবাইলে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তোলা ছবিও সাথে নিয়ে গেছে। সেদিন সেখানে কোন যানজট সৃষ্টি হয়নি। কেউ পথে আটকে থাকেনি। কোন এমবুলেন্স থেমে থাকেনি। কোন অসুস্থ মানুষ কস্ট পায়নি। কোন পরিক্ষার্থী পথে আটকে থাকার ফলে পরীক্ষা মিস করেনি। সবাই যার যার গন্তব্যে পৌছে গেছে সময়মত।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী বা ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা যখন পথে চলাফেরা করেন তখন পথচারীরা অনেকেই টের পাননা যে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা আসেপাশে আছেন। কারণ সেখানে কোন পুলিশ থাকেনা। কেউ কারু পথরোধ করেনা। সেটাই হবার কথা। কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে কানাডিয়ানরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে জনগণের সেবা করার জন্য ।জনজীবন অতিষ্ট করার জন্য নয়। জনগণের জীবনে বিভীষিকা সৃষ্টি করার জন্য নয়। দেশের সকল জনগন দেশের প্রসাশনিক দায়িত্ব নিতে পারেনা সেজন্য নির্বাচণের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দলকে জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করে। একটি দেশের মালিক সেই দেশের জনগণ। প্রধানমন্ত্রী এবং তার ক্যাবিনেট মন্ত্রীরাও জনগন। সাধারন জনগণের সাথে তাদের পার্থক্য হলো এই যে তাদের উপরে জনসেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ফিরে দেখি বাংলাদেশে। বাংলাদেশে যখন তথকথিত নির্বাচন অনুষ্টিত হয় তখন ভোটকেন্দ্রগুলো এক একটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা তো অনেক দূরের কথা বাংলাদেশের জনগনের তো বেঁচে থাকার অধিকারও নেই। পূর্ব বাংলা, পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ – এই বদ্বীপকে যেনামেই ডাকা হোক না কেনো আর্থসামাজিকরাজনৈতিকভাবে এই দেশ সর্বকালেই বিদেশীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই দেশে বিদেশীরাই তাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করে বিদেশীদের পন্য বিক্রি, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার, ও অন্যান্য সেবা করার জন্য। হাত বদলের সময় জনগণের চোখে ঠুলি আর মগজ ধোলাই করার জন্য মনগড়া গান, কবিতা আর ভাষন দেওয়া হয়।

বৃটিশ আমলে বৃটিশ রাজ বাহাদুরেরা যখন এদেশের পথে চলাফেরা করতেন তখন সাথে আর্মড সেপাই রাখতেন। উপনিবেশের চারিদিকে চোর, ডাকা্‌ত, ভূমিদস্যু ও নানা রকমের অপরাধিদেরকে রায় বাহাদুর, রাজা, জমিদার ইত্যাদি বানিয়েছিল দেশের সম্পদ পাচারের সুযোগ সুবিধা আদায় করাসহ বিদ্রোহী জনগনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আর দেশের উপনিবেশিক শক্তিকে আজীবন আস্টেপিষ্টে বেঁধে রাখতে করে রেখেছিল  ধারা ১৪৪ এর মতন নানা রকমের আইন যা এখনো বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে।

বিদেশীরা যখন দেশ শাসন করে তখন তারা ভীত থাকে । হাজার হলেও অন্য দেশে এসে চুরি, ডাকাতি, সম্পদ পাচার করছে, শাসন করছে, সেজন্য পুলিশ পাহাড়া ও রাস্তা ফাঁকা করা জরুরি হয়। চোরেরা সব সময়ই ভীত থাকে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসন যেহেতু বিদেশীদের দ্বারা নিযুক্ত তাই তাদেরকে ভীত থাকতে হয়। এই বুঝি দেশের মানুষেরা কেউ বিদ্রোহ করলো । এই বুঝি নির্যাতণের প্রতিবাদে অপরাধীদের শাস্তি দেবার জন্য জনগন ঝাপিয়ে পড়লো। এই কারনেই বিদেশীদের দ্বারা নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকার বাহাদুর যখন পথে বের হয় তখন পথে জনগণের চলাফেরা করা নিষিদ্ধি হয়ে যায়। সরকার জনগণের পথরোধ করে রাখে।

বাংলাদেশ সরকার বিদেশের দ্বারা নিযুক্ত, অপরাধী তাই প্রহরী ছাড়া পথ চলতে ভয় পায় ।
[কানাডার একজন মানুষ গৃহহীন হয় দায়িত্বজ্ঞানহীন হবার কারণে, ড্রাগস নেবার কারণে, অলস হবার কারণে, এছাড়া আর কোন কারণ থাকতে পারেনা। কানাডাতে যেকোন মানুষকে পুনর্বাসিত করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্টান নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডিয়ান সরকার মানুষকে স্বনির্ভর হবার জন্য বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। এইসব সাহায্যের ভেতর রয়েছে ভাতা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। যারা ড্রাগস নিয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকে বা সাবওয়ে স্টেশনে পড়ে থাকে বা পথে বসে ভিক্ষা চায় তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্টান দ্বারা নিয়মিতভাবে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েও আবার পথে ফিরে আসে। অন্যদিকে বাংলাদেশের গৃহহীণ মানুষের অনেকেই প্রতিদিন প্রচন্ড পরিশ্রম করে খাবার জুটাবার জন্য। বাংলাদেশের অনেক গৃহহীন মানুষই রাস্তায় ফেলা গার্বেজ থেকে আহার করে। মেক্সিকোর পরে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশেই মানুষ গার্বেজ থেকে খাবার খায়। কানাডার কোন মানুষ গার্বেজ থেকে খাবার খায়না। এইভাবেই একজন কানাডিয়ান ও বাংলাদেশীর গৃহহীনতার পার্থক্য বর্ণনা করা যেতে পারে। ]

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *