ঢাকা: স্বপ্নভঙ্গ হতে যাচ্ছে ৮৬ বাংলাদেশির। এরা প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য দালালকে মাথাপিছু ২৫ লাখ করে টাকা দিয়েছিল। এক পর্যায়ে বৈধ পথ ছেড়ে বহু দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমায় এই ৮৬ বাংলাদেশি।
কিন্তু বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় মার্কিন সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়ে তারা।
এর পর দু’বছরেরও বেশি অভিবাসন দফতরের ডিটেনশন সেন্টারে থাকার পর এদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।
‘ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ তথা আইসের পক্ষ থেকে ১৭ অক্টোবর এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে এই ৮৬ বাংলাদেশি জানান, বাংলাদেশে বিরোধী দল তথা বিএনপির কর্মী/সমর্থক হিসেবে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক অকথ্য নির্যাতনের শিকার, জেল-জুলুমের আশঙ্কা এবং প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল বলেই তারা সকলে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
তবে কয়েক দফা সময় চেয়েও এমন বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয় তারা। আর তাই তারা যে দেশের মাটিতে নির্যাতনের শিকার সেটি ভুল বলে ধরে নেয় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৩/৪ বছরে দুই হাজারের অধিক বাংলাদেশি মেক্সিকো হয়ে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গ্রেফতার হন। এদেরকে টেক্সাস, আরিজোনা, আলাবামা, লুইঝিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডাসহ বিভিন্ন রাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছিলেন টেক্সাসের এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারে।
বছরাধিককাল অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও মুক্তি না পাওয়ায় গত বছরের শেষার্ধে এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারের অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি অনশন ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। তাদের সঙ্গে ভারতীয় এবং পাকিস্তানিরাও অংশ নেন সে ধর্মঘটে। টানা ৭দিনের অনশনে বিচলিত বোধ করেন মার্কিন প্রশাসন।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় সে ধর্মঘটের অবসান ঘটানো সম্ভব হলেও অধিকাংশকেই জামিনে মুক্তি দেয়া হয়নি। যারা বিভিন্ন শর্তে মুক্তি লাভ করেছেন তারাও কোর্টের নিয়ন্ত্রণে দিনাতিপাত করছেন। যারা মুক্তি পাননি তাদের মধ্যে দেড় শতাধিককে এ বছরের শুরুতে দু’দফায় বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মার্কিন বিমানে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৮৬ জনের মধ্যে ৪৬ জনের একটি তালিকা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা পাসপোর্টও দেখাতে পারেনি। পথে পাসপোর্ট খোয়া গেছে কিংবা সীমান্তে রেখে দেয়া হয়েছে বলে জানায় এই ৮৬ বাংলাদেশি।
আইসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এই ৮৬ বাংলাদেশি জড়িত বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
এই ৮৬ জন বাংলাদেশি কিনা সেটি নিশ্চিত হলেই তাদের দেশি ফেরত পাঠাবে মার্কিন সরকার।
বহিষ্কারের তালিকাভুক্তদের নামে এখানে দেয়া হলো— হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ উদ্দিন, মো. আলম, সোহরাব হোসেন, মো. মোহসিন, বাচ্চু মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাম্মেল হোসেন, গাজী কবির, আহম্মদ রুমন, আবুল কাশেম, মো. রহমান, এনামুল ইসলাম, মো. শিপন আহম্মেদ চৌধুরী, আবু বক্কর, মো. আজিজুর রহমান, রিপেন নজরুল, জাহিদুর রহমান, সাবুল হাসাইন, সৌরভ দেব, বিবেক কান্তি দাস, আব্দুল মাসুদ, সাব্বির আহমেদ, জয়নাল আবেদীন, মামুন আলম, মোহাম্মদ শাহাদত, হেলাল উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, মনিরুল মুন্না, বি. হুসাইন, মো. আরাফাত, তাজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, সামসুদ্দিন, আব্দুর রহীম, মোহাম্মদ ইসলাম, আকতার হুসেইন, শাহীন আহম্মেদ, নাসির উদ্দিন, ফারুক আহমদ, মোহাম্মদ রহিম, মোহাম্মদ সোহেল, আহমদ শেখ সিব্বিন, শিব্বির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ ইসলাম, মো. ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, জাহেদ আহমদ, আবু সাঈদ, মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাসান মোহাম্মদ, শরিফুল হাসান, মো. ওহিদুর রহমান, মোহাম্মদ উদ্দিন, এনায়েত করিম, রিপন সর্দার, ফয়েজ মোল্লাহ, আব্দুস সামাদ, বশির বাবু, মোহাম্মদ হুদা, মোহাম্মদ রহমান, মাইনুল ইসলাম, অহিদুল ইসলাম, সুলতানুল আরফিন, মিনহাজুর রহমান, হুমায়ুন কবির, নাসের এম. ডাবু, আব্দুল রহমান, মোহাম্মদ ইসলাম, মামুনুর রশীদ, রুহুল আমিন, কালু চৌধুরী, নূরল আলম, শরীফ উল্লাহ, মালিক খসরু, আকরাম হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আল আমিন, অসীম চন্দ্র দাস, আসাদুল সিদ্দিকী, মিল্টন রোজারিও, ইকবাল হোসেন ও মো. শফিকুল আলম।
এদিকে এখন পর্যন্ত এই ৮৬ জনের মূল পরিচয় নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে ধোঁয়াশা থাকলেও অধিকাংশই সিলেট ও নোয়াখালী অঞ্চলের বলে জানা গেছে। তাদের প্রায় সকলেই উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস। সবার বয়সই ২৮ বছরের কম।