শীতের শুরুতে শ্বাসকস্ট যোদ্ধাদের জন্য কিছু কথা

এখন এখানে একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে। যাদের হাফানীর সমস্যা আছে এই সময়টাতে তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন গলায় স্কার্ফ পেচিয়ে বাইরে যাওয়া বা ঘুমানো। ঠিক মত শীতের কাপড় পরিধান করা যাতে মুখ, কান ও নাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ না করে।  সাধারনত তিনটি কারনে এ্যাজমা বা হাফানী হয়।

হাইপ্রোএকটিভিটি
ব্যবহার যদি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় বা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। অতিরিক্ত উত্তেজনাতে বা কোন ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে না পারার কারনে বা সেই কারনগুলো বা ঘটনা ঘটানোর জন্য দায়ী বস্তু বা ব্যক্তি যখন আওতার বাইরে চলে যায় তখন ঘটনার শিকার একাকী সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফ্যালে এবং শ্বাস নেবার জন্য ছটফট করে কিন্তু নিতে পারেনা তখন শ্বাসকস্ট শুরু হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করে যদি প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া যায় তাহলে হতাশা থেকেও শ্বাসকস্ট হতে পারে। ভাড়ী বস্তু উত্তোলোন, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা,  অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা করা বা কান্নাকাটি করলেও শ্বাস নিতে কস্ট হতে পারে।

ইনফ্লেমেশন
বাইরের কোন কেমিক্যাল থেকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হলে শ্বাস্ নিতে কষ্ট হতে পারে। গাছে নতুন পাতা বা ফুল এলে অনেকেই শ্বাস কষ্টে ভোগে। রক্তকণা জমাট বেধে প্রদাহ হতে পারে। সেল ড্যামেজ হয়ে, রোগ প্রতিরোধ করে যে টিস্যু, সেল সেগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে ইনফ্লেমেশন হতে পারে।

ব্রোনোকোপাজম – Bronochospasm
ঠান্ডা বাতাস অনেকভাবে গলার ভেতর প্রবেশ করে। asthma1
নাক দিয়ে
বা
কান দিয়ে
বা
মুখ দিয়ে

অনেকটা ফ্যানের (exhaust fan) মত কন্ঠনালী ঘিরে খুব সুক্ষ ব্রাশের মত থাকে যা নাকি বাতাস বা অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। । যখন ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে তখন এই সুক্ষ ব্রাশ ভারী হয়ে কন্ঠনালীকে খুলে ধরতে অক্ষম হয়ে যায়। তখন শ্বাস নিতে যুদ্ধ করতে হয় আর যেহেতু ব্রাশগুলো ভাড়ী হয়ে কণ্ঠনালীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে তাই বাইরে থেকে ইনহেইলারের সাহায্য ছাড়া কণ্ঠনালীর ব্রাশগুলোকে শুখিয়ে ফেলে কন্ঠনালীকে সুপ্রসস্থ করা যায়না। ঠান্ডা বাতাস জমে বুকে শেলস্যা হয় বা নাকের ভেতর পানি আর ধুলো থেকে হলুদ বস্তু জমাট বাঁধে। ঠান্ডা বাতাস কান দিয়ে প্রবেশ করেও কানের ভেতরে ক্যালসিয়াম জমে কানের সাথে মগজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভার্টিগো বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।

হাফানীর জন্য আমরা সাধারণত দুই ধরনের ইনহেইলার ব্যবহার করি। ভেন্টোলিন ও ফ্লভেন্ট।হাফানীর  ভেন্টোলিন বা সালবুটামল বা এলবুটেরল একটি ওষুধের নাম যা নাকি কণ্ঠনালীকে সুপ্রসস্থ করে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।
asthma2

ভেন্টোলিন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে নিতে হয়। ভেন্টোলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলোঃ কন্ঠনালী শুখিয়ে পানির পিপাসা পেতে পারে, বিষন্নতা দেখা দিতে পারে, শরীরের মাংসপেশী ব্যাথা করতে পারে, মাথা ব্যাথা করতে পারে, হৃদস্পন্দন দ্রুততর হতে পারে, শরীর দুর্বল লাগতে পারে । যাদের ভার্টিগো হয়েছে বা হতে পারে তাদের জন্য ভেন্টোলিন ব্যবহার সীমিত করতে হবে। হাফানী রোগ স্থায়ীভাবে সেরে যায়না তবে নিয়ন্ত্রনে রাখা যেতে পারে। বাইরে থেকে এসে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি পান সম্পুর্নভাবে পরিহার করতে হবে বিশেষ করে শীতের সময়। কুসুম কুসুম গরম পানি বা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা পানি পান করতে হবে। আইসক্রিম পরিহার করতে হবে বিশেষ করে শীতের সময় বা অতিরিক্ত গরম থেকে এসে । ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানি পান করার কারণ হলো কন্ঠনালীর সুক্ষ ব্রাশগুলোকে শুখনো রাখা যাতে ওরা ভারী হয়ে বাতাস চলাচল অবরুদ্ধ না করে ফ্যালে। হাফানী রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখার আরো কিছু বিকল্প রয়েছে তা হলো – নিয়মিত লক্ষ্য রাখতে হবে কখন, কিভাবে, কি খেলে, কি করার পরে হাফানী শুরু হয় আর সেইসব কিছুকে পরিহার করতে হবে।

আমি যখন বেকার হই বা অর্থ কস্টে ভুগি তখন আমার হাফানী হয়। কোন কারনে কারু সাথে মনোমালিন্য ঘটলে হাফানী হয়। ইলিশ মাছ খেলে হাফানী হয়। আমি গরুর মাংস খাইনি তবে শুনেছি গরুর মাংস খেলেও হাফানী হতে পারে। ভারী জিনিষ উঠানামা করে বুকে চাপ সৃষ্টি হবার জন্য হাফানী হতে পারে। দাম্পত্য কলহে বা প্রেমের কারনে মনে কস্ট পেলে হাফানী হতে পারে।  হাসি খুশী থাকলে হাফানী হয়না। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সবজি, ফল, ও প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। প্রোটিনের জন্য মটর বা ডাল খাওয়া যেতে পারে। শরীরের মেদ জমলেই হাফানী হবে। নিজের শরীরের উপরে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন আনার জন্য নিজের শরীরকে জানতে হবে।আপনার শরীরকে আপনার চাইতে ভাল আর কেউ জানেনা। বাইরে না দৌড়ে বা জীমে না যেয়েও ঘরে বসেই অনেকগুলো ব্যায়াম করা যায় যা নাকি শরীরকে সুঠাম রাখে। ঘরের ভেতর পায়চারী করাও বাইরে হাটার সমান। তাতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস লাগবেনা আর মেদ জমবেনা।

Fluticasone আর একটি ইনহেলার যা ভেন্টোলিনের সাথে নেওয়া হয় তা আসলে হরমোন যা নাকি সরাসরি মেটাবলিজম বা হজম শক্তিকে নিয়ন্ত্রন করে  হাফানীর চিকিতসার জন্য । অতিরিক্ত ব্যবহারে চোখের ক্ষতি হতে পারে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে, অস্টিওপোরোসিস হতে পারে যা নাকি শরীরের হাড্ডিকে স্পঞ্জের মত করে দেয় ধীরে ধীরে। কোন অশুধই দরকার ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে নেওয়া উচিৎ না। অন্য কথায় বলা যায় অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। নিজেকে শৃংখলার মধ্য রাখতে হবে তাহলে শরীর ও মন, উভয়ই ভাল থাকবে।

asthma3
বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত আছে – মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাঃ খাবারের ব্যাপারে কিছু নিয়ম মেনে চলতেন। পরিমিত খাবার খাওয়া। পেটে কিছুটা জাগা রেখে খাবার খাওয়া। বসে পানি পান করা ও খাবার খাওয়া। পেটে কিছুটা জাগা রেখে খাবার খাওয়ার কারণ এই যে খাবারগুলো হজম হবার জন্য পেটে কিছু জাগা রাখা দরকার। দ্রুত খাবার হজম হলে শরীরে অসস্থি ও রোগ দেখা দেয়না। হাত দিয়ে খাবার খাওয়া । হাতের পাঁচ আঙ্গুলে এক ধরনের চাপ থাকে যা হজমে সাহায্য করে। পশুর রক্ত পরিহার করতে হবে। অন্য পশুর রক্ত যদি মাংসের সাথে বা খাদ্যের সাথে শরীরে প্রবেশ করে তাহলে রক্তে তা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে তাতে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা আছে। খাবার খাওয়া শেষ হলে কুলিকুচি করা যাতে দাঁতে খাবার জমে না থাকে। এ থেকেও ইনফেকশণ হতে পারে। মেসোয়াক করা অর্থাত দাতন করে দাত পরিস্কার করা যাতে দাতের ফাকে খাদ্য জমতে না পারে। বসে খাবার খাওয়া যাতে ভুড়ি না হয়। প্রচুর পানি পান করা যাতে শরীরের রোগ জীবানু ধুয়ে বের হয়ে যায়। মেঝেতে ঘুমানো যাতে মেরুদ্বন্ড ৩৬৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকে। মেরুদ্বন্ড ঠিক থাকলে শরীরের সব অংগ ঠিকভাবে কাজ করবে।

আদা, মধু, লেবুর রস কুসুম কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। হাসি খুশী থাকুন। দরকারের অতিরিক্ত খাবার পরিহার করুন। অসম্ভব কিছু প্রত্যাশা করে নিজেকে কস্ট না দিলেন। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর জীবনের অভ্যাসগুলো রপ্ত করুন। ভাল থাকূন আর সুন্দর কাটুক আপনাদের সবার শীতকাল ।

আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.