বাংলাদেশ খুনীদের স্বর্গ আর যারা খুন হয়ে গেছে তাদের জীবিত পরিবারের জন্য নরক ।
বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের বর্ডার গার্ড এসে বাংলাদেশী হত্যা করে প্রায় প্রতিদিন । কেউ কিছু বলেনা। বাংলাদেশে কোন সীমান্ত আইন নাই। ভারতে আছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশী হত্যা করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশীরা ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয় হত্যা করেনা।
ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে টাকা চুরি করে। বাংলাদেশে কোন মামলা হয়না এই ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ভেতরে খুনীরা যখন খুশি তখন যেভাবে খুশী সেভাবে মানুষ হত্যা করে কিন্তু বাংলাদেশের আদালতে যত মামলা আছে সব নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে। খুনীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। খুনীরা বাইরে নিরীহ মানুষ জেলখানাতে। খুনীরা প্রশাসনে, আদালতে আর আইন রক্ষাকারী সংস্থাতে আর সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে।
খুনীরা প্রশ্ন করে – খুন করার সময় কেনো ভিডিও করা হয়?
ভিডিও যে করেছে সে একজন মেয়ে। যে মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঠিক সেই মেয়েটির মতই সে অসহায় । তবে সাহসী । সে প্রতিবাদ করতে পারেনি ঠিক, মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেনি ঠিক কিন্তু সাহস করে ভিডিও করেছে না হলে এই খুনীও অন্যান্য সব খুনীদের সাথে মিশে যেতো।
খুনীরা বলেছে এই খুনীর সাথে অন্যান্য খুনীদের কোন সম্পর্ক নেই। এই খুনী বাংলাদেশ খুনী লীগ বা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সদস্য না। ফেসবুকে কার যেন একটা স্টাটাস খুব ভাল লাগলো। সে লিখেছেঃ
বদরুল আওয়ামীলীগের কেউ না
আওয়ামীলীগের সবাই বদরুল
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা নার্গিস হত্যাচেস্টাকে নানাভাবে তুলে ধরছে। নার্গিসের রক্তমাখা কোপ লাগা মাথার গ্রাফিক ছবি পোস্ট করছে বিরোধিতা করার জন্য। আমি মনে করি বাংলাদেশের যেকোন রাজনৈতিক দলের প্রশাসনকালেই এই ঘটনা ঘটতে পারতো। কারন সব রাজনৈতিক দলেই খুনী বা খুনীদের সহযোগী রয়েছে।
২০১৬ সালে নার্গিসকে কোপানো হয়েছে আর পথের চারিপাশে মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে।
২০১৩ সালের মে মাসের ৫-৬ তারিখে হাজার হাজার হেফাজতে ইসলামের সদস্যদেরকে মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকাতে গুলি করে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে আর ঢাকাবাসী অপেক্ষা করেছে মিউনিসিপালিটির ট্রাক এসে কখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান আর্মী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করেছে আর
——————————–শেখ মুজিব পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। পাকিস্তানের সামরিক সরকার যাতে দোষ না দিতে পারে। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। মুজিব পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। এরা পাকিস্তানের সাথে পূর্ন সহযোগীতা করেছে।
——————————- আওয়ামীলীগের নেতারা সব ভারতে পালিয়ে গেছে ভীরু কাপুরুষের মত। মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
——————————- জামাতে ইসলামের সদস্যরা সবাই শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সহযোগীতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
——————————- বিএনপির প্রতিষ্টা যিনি করেছেন তিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধ করলেও যারা মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেছে তাদেরকে নানাভাবে সহযোগীতা করেছে।
১৯৭২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে বহুবার জনসমক্ষে মানুষকে পিটিয়ে বা জবাই করে বা গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আর সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। কারণ খুনীরা প্রশাসনে, আদালতে ও আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীতে । সবাই খুনীদের ভয় করে। মানুষকে বাঁচাতে যেয়ে এখন বাংলাদেশের কেউ কারু জীবন বাজী রাখবেনা। সাহস হারিয়ে ফেলেছে। বা সাহসীরা কেউ আর নেই। বীরেরা মরে গেছে। কাপুরুষেরা রয়ে গেছে।
মানুষকে হত্যা করা হয় আর যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে বা দেখেছে তারাই বাংলাদেশে প্রতিষ্টিত। মানুষ হত্যা হতে দেখে যারা মানুষকে রক্ষা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল পরবর্তীকালে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করার ফলে এখন খুনীদের স্বর্গ হয়ে গেছে বাংলাদেশ।
মানুষ হত্যা করা হয় আর সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে পরে লাশের জানাজাতে সেলফি উঠিয়ে তা নিরাপদে দোয়াদররুদের সাথে ফেসবুকে পোস্ট করে । মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে নার্গিস আর ফেসবুকে নার্গিসের রক্তাক্ত দেহের ছবি পোস্ট করে সবাই যার যার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। নার্গিসের নিস্প্রাণ রক্তাক্ত দেহের পাশে দাড়িয়ে সেলফি নিয়ে দেশের সবাইকে জানাচ্ছে কোপাইবো আর খন্ডিত রক্তাক্ত দেহের পাশে সেলফি পোস্ট করবো — কেউ খুনীদের কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস পাবেনা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ – একটি গর্বিত খুনী রাজনৈতিক দল যারা নাকি সরাসরি ভারতের রাজ্য সরকার হিসাবে বাংলাদেশে খুন, ধর্ষন, লুট ও সম্পদ পাচার করে । সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে। কেউ বাধা দিতে পারেনা।
বাংলাদেশে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশীদের হত্যা করে আর জীবিত বাংলাদেশীরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে।
বাংলাদেশে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশীদের ধর্ষন করে, খন্ডিত লাশ ফেলে রাখে রাস্তায় বাংলাদেশীরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে।
বাংলাদেশে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুট করে বাংলাদেশীরা সবাই চুপচাপ থাকে।
আর সেজন্যই বাংলাদেশে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশীদের কোপায়ে মারে আর চারিপাশে সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে। হত্যা করা ও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা এখন বাংলাদেশের একটি বিশেষ সাংস্কৃতি।
মৃত বা আহতের রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করা আর দল বেধে জানাজাতে যেয়ে সেলফি তোলা এবং তা ফেসবুকে পোস্ট করে নানা রকমের স্টাটাস দেওয়া এখন বাংলাদেশের সাংস্কৃতির অংশ। কে কার ফেসবুক স্টাটাস পড়বে? সব খানেই হয় খুনী আর নাহয় যারা খুনীদের ভয় পায় সেই কাপুরুষ। এক দলের সাথে অন্য দলের তেমন বিশেষ কোন পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশ পুলিশ বা র্যাব বা আওয়ামীলীগের গুন্ডারা যখন মানুষ হত্যা করতে যায় বা মানুষকে নির্যাতন করে পঙ্গু বানায় তখন সাথে করে ফটো সাংবাদিকদের নিয়া যায়। এইসব ফটো সাংবাদিকরা কোপে কোপে হেলে দুলে ছবি উঠিয়ে তা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে স্বগর্বে প্রকাশ করে। দেখো আমরা পিটিয়ে পিটিয়ে বা জবাই করে বা গুলি করে এই মানুষকে বা মানুষগুলোকে হত্যা করেছি। খুনীদের স্বর্গ বাংলাদেশে মানুষ হত্যা একটি গর্বের ব্যাপার আর তাকিয়ে তাকিয়ে খুন হতে দেখা, ভিডিও করা ও সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে নানা রকমের স্টাটাস দেওয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতির আর একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ।
একজন বাংলাদেশী হিসাবে আমি গর্ববোধ করতে পারছিনা। ক্ষমা চাইবার মুখও নেই।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা