Pinched Nerves অথবা স্নায়ু পীড়া যা সারাক্ষণ ব্যাথা দিতেই থাকে। আমাদের শরীরে স্নায়ুগুলোর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের ব্রেইন থেকে মেরুদন্ড বেয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে স্নায়ুরা ছড়িয়ে রয়েছে এবং ব্রেইন থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত চলাচল ও সংযোগ স্থাপনে অবিরত সাহায্য করে চলেছে। স্নায়ুই শরীরের বিভিন্ন অংশগুলোকে জীবিত করে রাখে অন্য কথায় বলা চলে স্নায়ুই মানুষকে জীবিত রাখে। শরীরের সব স্নায়ু যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে এবং বাইরে থেকে আসা রোগ জীবানুকে প্রতিহত করে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারে।
পিঞ্চড নার্ভস বা নিপীড়িত স্নায়ূ কি?
একটি বিল্ডিং এর সব ইউনিটে বিদ্যুৎ চলাচলের জন্য সব ঘরে আলো জ্বালার জন্য বিল্ডিং এর দেওয়ালের ভেতরে ইলেকট্রিকের তার যেমন করে স্থাপন করতে হয় ঠিক একইভাবে স্নায়ুগুলো আমাদের শরীরের সকল অংশে ছড়িয়ে রয়েছে এবং যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছে। বিল্ডিং এর দেওয়ালের ভেতরে ইলেকট্রিকের কোন তার দুর্বল হয়ে গেলে বা ছিড়ে গেলে যেমন আলো জ্বলেনা ঠিক তেমনি স্নায়ু আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা ছিড়ে গেলে শরীরের যে অংশে ছিড়ে গেছে সেই অংশ থেকে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর ছেড়া স্নায়ু একাকী ঝুলে থাকে আর শরীরের সেই অংশে প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয়। শরীরের সেই অংশে স্নায়ু ছিড়ে যায় কিভাবে? চাপ লেগে কিসের চাপ? হতে পারে শরীরের হাড্ডির চাপ। হতে পারে শরীরের কোমল অস্থি, পেশী, রগের উপরে অতিরিক্ত চাপ লেগে স্নায়ু ছিড়ে গেছে বা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। অতিরিক্ত চাপের ফলে শরীরের যে অংশের স্নায়ু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, ছিড়ে গেছে সেই স্নায়ুতে প্রদাহ শুরু হয় এবং সেই স্নায়ূগুলো সব রকমের স্বাভাবিক কাজ কর্ম স্থগিত করে দেয়। ফলে অসহ্য ব্যাথা করে। অস্থি, পেশী, হাড্ডি, রগ ইত্যাদির অতিরিক্ত চাপ লেগে শরীরের যে অংশের স্নায়ুর ক্ষতি হয় সেই অংশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে বা অবশ হয়ে যেতে পারে। এই ব্যাথা যদি কিছুদিনের জন্য থাকে আর আপনা আপনি চলে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে একটি স্নায়ুতে এই চাপ লাগে এবং যা আপনাআপনি সুস্থ হয়ে গেছে বা সুস্থ না হলেও আশেপাশের অন্যান্য স্নায়ূগুলো উপরে চাপ না লাগার ফলে অন্যান্য স্নায়ুগুলো স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো চালিয়ে নিচ্ছে। আর যদি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথা করতে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে একগুচ্ছ স্নায়ূর ক্ষতি হয়েছে এবং স্থায়ীভাবে ড্যামেজড হয়ে গেছে বা নস্ট হয়ে গেছে।
একজন চিরোপ্রাক্টর কিভাবে চিমটানো স্নায়ুকে স্বাভাবিক করতে পারে?
প্রাথমিক মূল্যায়নের সময় কাইরোপ্রাক্টর নিপীড়িত বা চিমটানো বা চাপ লেগেছে এমন সব ইন্দ্রিয়গুলো চিহ্নিত করে। মেরুদণ্ড পুনর্নির্মাণ এর মাধ্যমে চিরোপ্রাক্টর বা কাইরোপ্রাক্টর শরীরের বিভিন্ন অংশের স্নায়ুগুলো যা মেরুদন্ডের চারিপাশে বেয়ে আছে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে মেরুদন্ড বেয়ে ব্রেইনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছে সেগুলোকে ঠিক জাগাতে এনে শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করতে পারে। মেরুদণ্ড পুনর্নির্মাণ এর পদ্ধতিটি সময় সাপেক্ষ এবং এর সফলতা নির্ভর করে রোগীর উপরে । রোগীকে সতর্ক থাকতে হয় এবং ঘরে বসে প্রচুর ব্যায়াম করতে হয় । স্নায়ূ যেহেতু খুব স্পর্শকাতর। অনেক ব্যাথা নিয়ে শরীরে যখন একজন মানুষ স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করে তখন এত ব্যায়াম ও নিয়ম মেনে চলা অনেক সময় সম্ভব হয়না। আর ফলে এই অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হয় এবং মেরুদন্ড পুননির্মাণের কাজ বিঘ্নিত হয়।
আমি প্রথম ব্যাথা অনুভব করি ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬। সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে বাসা ফিরে আসব বল বাসের জন্য দৌড় দিতে আর পারিনি। পা উঠাবার সাথে সাথে পা আটকে গেছিল। আমি কোনমতে বাসে এসে বসেছি। প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে। বাস থেকে নেমেছিলামও। বাসস্টপ থেকে আমার বাসা দেখা যায়। সেই দেখাই শুধু। হাটার ক্ষমতা ছিলনা। প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম বাসস্টপে। জীবনে এই প্রথম আমি এত অসহায় বোধ করলাম । জীবনে এই প্রথম আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম পথ হারা শিশুর মত। জীবনে এই প্রথম আমি অনুভব করলাম আমি আমার সবাই চাইতে প্রিয় বন্ধু আমার পা কে হারাতে যাচ্ছি। দেশে বিদেশে আমি প্রচুর লেখাপড়া করেছি। অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। তবে তার থেকে অনেক বেশি পরীক্ষা আমি দিয়েছি মহান আল্লাহ্ তালাহর কাছে। আমার ব্যাথা সহ্য শক্তির পরীক্ষা হলো ম্যারাথন পরীক্ষা যা থেকে আমাকে আল্লাহ্ পাক কখনো বের হতে দেননি। সেদিন ছিল শুক্রবার, ১৯শে আগস্ট, ২০১৬। বাসস্টপে কেউ ছিলনা। প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। ভাবছিলাম আমি কত অসহায়। এত বিশাল পৃথিবীতে আমি কত একা। একেবারে একা । তখন একটা কিশোরী এসে আমাকে প্রশ্ন করলো আমি তার সাহায্য চাই কিনা। তখন মনে হলো আল্লাহ্ শুধু পরীক্ষাই নেন না পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবার জন্য সাহায্যও পাঠিয়ে দেন। মেয়েটি আমাকে ব্যস্ত রাস্তা পাড় করে বাসায় এনে দিলো তারপর থেকেই এই ব্যাথার সাথে বসবাস করছি। ব্যাথাতে বরফ দিয়েছি। বাথটাবে গরম পানিতে শুয়ে থেকেছি। কাইরোপ্রাক্টর দেখিয়েছি এবং দেখাচ্ছি। মেডিক্যাল ডাক্তার দেখিয়েছি। পা এর আল্টট্রাসাউন্ড করে (Venous ultrasound) জানলাম পিঞ্চড নার্ভ এর কথা। মেডিক্যাল ডাক্তার সন্দেহ করেছিল ব্যাড ক্লট হতে পারে। সেটা হয়নি। ব্যাথা প্রচন্ড। অসহ্য ব্যাথা নিয়ে আমি সকালে উঠি রাতে বারে বারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রতিদিন অফিস করি। পাঁচ মিনিটের পথে পেড়ুতে পঞ্চাশ মিনিট লেগে যায়। পা ভাজ করতে পারিনা। এক এক সময় এক এক রকম ব্যাথা হয়। আমি চেস্টা করছি এই প্রচন্ড ব্যাথা থেকে বের হয়ে আসতে।
সমস্যা নিয়ে আমি চুপচাপ বসে থাকিনা। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত চেস্টা করি। এই ব্যাথা থেকে বের হবার চেস্টাও করছি। এতদিনে বুঝে গেছি মহান আল্লাহ্ তালাহ কেন আমাকে এই জটিল দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। উনি আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন এবং প্রতিদিন নানা রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেন আর অবলোকন করেন কিভাবে আমি এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবো সেটা। এখন আমি ব্যাথাকে ভালবাসতে শুরু করেছি। সারারাত আর সারাদিন আমি আর আমার ব্যাথা কথা বলি, হাসি ও কাঁদি । আল্লাহ্ আমাকে সহ্য ক্ষমতা দিয়েছেন বুদ্ধি দিয়েছেন বিদ্যা অর্জন করার জন্য আর নির্দেশ দিয়েছেন সমস্যা সমাধানের জন্য চেস্টা চালিয়ে যেতে আমি সে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মহান আল্লাহ্ পাক আমার সহায় হবেন।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউ২৪
টরেন্টো, কানাডা