দুবাইয়ে শপিংমলে চুরির দায়ে বাংলাদেশ বিমানের পাইলট আটক
দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে গেলেই তিনি ওই শপিংমলে চুরি করতে যেতেন। চুরি করে মোবাইল, আইফোন, আইপ্যাড নিয়ে আসতেন। এবার বিধিবাম…
শপিং মলে চুরি করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে দুবাই কারাগারে গেলেন বাংলাদেশ বিমানের একজন কো-পাইলট। তার নাম ক্যাপ্টেন এন হাসান ওরফে নাদিম হাসান। তিনি এয়ারবাস ৩১০-এর ফার্স্ট অফিসার। দুবাই পুলিশ মঙ্গলবার অভিনব কায়দায় তাকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় গোটা বিমানজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
দুবাই পুলিশের বরাত দিয়ে বিমানের স্থানীয় স্টেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, ফার্স্ট অফিসার এন হাসান দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ের ঐতিহ্যবাহী শপিং সেন্টার ‘ক্যারিফোর’ থেকে আইফোন, আইপ্যাড, পারফিউমসহ মূল্যবান পণ্যসামগ্রী চুরি করে আসছিলেন। কিন্তু কখনও
হাতেনাতে ধরা যায়নি তাকে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে পুলিশ কো-পাইলটকে শনাক্ত করে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই চুরি করে কৌশলে শপিং সেন্টার থেকে সটকে পড়তেন তিনি। কখনও একা কখনও বিমানের অন্য পাইলট ও কেবিন ক্রুদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ওই শপিং সেন্টারে যেতেন। ক্যাপ্টেন হাসান শপিং সেন্টার থেকে আইফোন, আইপ্যাডসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে প্রথমে বাথরুমে যেতেন। এরপর গোপনে ওইসব পণ্য থেকে অ্যালার্ম ট্যাগ খুলে ফেলতেন। তারপর ব্যাগে ভরে সটকে পড়তেন। এর আগে ৭ দফা তিনি এভাবে চুরি করে সটকে পড়েন বলে জানায় দুবাই পুলিশ। দুবাই পুলিশ কো-পাইলট এন হাসানকে ধরতে না পেরে তার সঙ্গে আসা অন্যান্য পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও কেবিন ক্রুদেরও খুঁজতে থাকে।
মঙ্গলবার এয়ারবাসের অপর এক পাইলট মোহাম্মদ আলী ওই শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে যান। ক্যাপ্টেন আলী শপিং সেন্টারে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মলের সিকিউরিটি লাইট জ্বলে উঠে, বেজে উঠে সিকিউরিট অ্যালার্ম। এরপর পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ তল্লাশি করে জানতে পারে এর আগে কো-পাইলট এন হাসানের সঙ্গে পাইলট আলী কয়েকবার ওই শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন আলী কোনো ধরনের চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। এরপর পুলিশ ক্যাপ্টেন আলীকে তাদের কাস্টডিতে নিয়ে যায়। সিসিটিভিতে কো-পাইলট নাদিম হাসানের ছবি দেখিয়ে তার নাম-পরিচয় জানতে চায়। ক্যাপ্টেন আলী ছবি দেখে কো-পাইলট নাদিম হাসানকে শনাক্ত করেন। নাদিম হাসান বাংলাদেশ বিমানের একজন কো-পাইলট ও তার সহকর্মী বলে পরিচয় দেন। এরপর পুলিশ বিষয়টি বাংলাদেশ বিমানের দুবাই অফিসকে জানায় এবং বাংলাদেশে বিমান অফিসকে অবহিত করে।
দুবাই পুলিশ জানায় যে, কো-পাইলট নাদিম হাসানকে তাদের হাতে সোপর্দ না করা পর্যন্ত ক্যাপ্টেন আলীকে ছাড়বে না তারা। তাৎক্ষণিকভাবে বিমানের দুবাই ও ঢাকা অফিস কো-পাইলট এন হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে তিনি আবুধাবিতে আছে। এরপর বিষয়টি গোপন রেখে ঢাকা অফিস থেকে এন হাসানকে জরুরিভিত্তিতে দুবাই গিয়ে পাইলট আলীর কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়। খবর পেয়ে এন হাসান ২ ঘণ্টায় আবুধাবি থেকে দুবাই আসেন। এসেই তিনি পাইলট আলীকে ফোন দিলে তাকে ‘ক্যারিফোর শপিং সেন্টারে’ আসতে বলেন। তখনও এন হাসান বিষয়টি জানতেন না। কো-পাইলট এন হাসান ওই শপিং সেন্টারে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুবাই পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে ও গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
দুঃখ প্রকাশ করে তাকে ছেড়ে দেয়। তবে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ের হায়াত হোটেলে আছেন। কো-পাইলট নাদিম হাসানের গ্রেফতারের বিষয়টি বিমানে জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদ জানান।
পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, কো-পাইলট নাদিম হাসানের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে একটি মামলা করা হয়েছে। ক্যারিফোরের হেড কোয়ার্টার প্যারিসে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এন হাসান দুবাই পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এ পর্যন্ত যা কিছু চুরি করেছেন তার পুরো অর্থ পরিশোধ করবেন। ক্যারিফোরের পক্ষ থেকে অর্থ পরিশোধের বিষয়টি তাদের প্রধান কার্যালয় প্যারিসে জানানো হয়েছে।