নিষ্টুরতা অনেক ধরনের হতে পারে। একটি কুকুর বা বিড়ালকে বন থেকে এনে ঘরে পালাপোষাও এক ধরনের নিষ্টুরতা। আমি একদিন পথে একটা বেড়ালের বাচ্চাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। বাচ্চাটা একা ছিল। কেউ ছিল না আসেপাশে। আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি ওর মা এর ফিরে আসার। আসেনি। কেউ আসেনি । তখন আমি বাচ্চাটাকে ঘরে নিয়ে আসি। বিড়ালের বাচ্চাটা এত ছোট ছিল যে আমার হাতের মুঠোতে বসে বেশ ঘোলাটে চোখ বের করে ধুকপুক করতে করতে আমার ঘরে এসে গেছিল। অনেক ক্ষুধার্ত ছিল। দুধ দেবার সাথে সাথে চেটেপুটে সাবার করে দিলো। তারপর সে খেলা শুরু করলো। আমি ওর নাম রাখলাম নেক্সাস। নেক্সাস আমার গলার উপরে ঘুমাতো। উষ্ণতা চাইতো। আমাকে কামড় দিতো ওর মা ভেবে। বিড়াল বা কুকুর বা পাখী সবার যার যার নীতি আছে যার যার নিয়মে সে সে চলে। তাদেরকে যখন ঘরে এনে রাখা হয় তখন বন্দী করা হয়। বন্দী অবস্থাতেও তারা তাদের প্রাকৃতিক নিয়ম বা নীতিগুলো মেনে চলে। বিড়াল বা কুকুর বা পাখীকে মানুষ যখন তার নিজের নিয়মে চলতে বাধ্য করতে চায় তখনই নিষ্টুরতার শুরু হয়। বাইরে থেকে পাখী এনে খাঁচায় বন্দি করে রেখে মানুষ ঘরে বসে পাখীর গান শোনে। আমি জানিনা এতে কি আনন্দ আছে। যেকোন পাখিকে খাচায় ভরে রাখা আর কাশিমপুরে বসবাসরত বিএনপি, জামাত বা রাস্তার নিরীহ ছেলেটিকে বন্দী করে রাখার মতই পাশবিকতা।
বিড়ালকে বশ মানানো যায়না। কিন্তু কুকুরকে খুব সহজেই বশীকরণ করা সম্ভব। বিড়ালকে ঘরে এনে রেখে অনেক আদোর করলেও সে নিজের নিয়মে চলে। নেক্সাস ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলো এবং আমার থেকে তার দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকলো। আগে গলার উপর ঘুমাতো এখন সে অনেক দূরে ঘুমায় কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে সারাক্ষণ। আমি যখন অফিসে যাই তখন সে কাঁদে। যখন ক্ষুধা লাগে তখন আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। খাবার বাসি হলে খায়না। গলার ভেতর থেকে এক ধরনের করুন শব্দ করে জানায় যে সে অসুবিধা বোধ করছে। জানালা দিয়ে সারাদিন বাইরেটা দ্যাখে। আমি তাকে বন্দী করিনি। আমি তাকে ঘরে নিয়ে এসেছি এই ভয়ে যে অন্য জন্তু জানোয়ার তাকে খেয়ে ফেলবে বা রাস্তায় যদি যায় তাহলে গাড়ীর নিচে পড়ে মারা যাবে। তবু নেক্সাস বন্দী।
নেক্সাস একা। কোন সাথী নাই। মাঝে মাঝে নেক্সাস অনেক শব্দ করে কাঁদে তখন সে আওয়াজ দিয়ে আশেপাশের অন্য বিড়ালদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। অন্য কোন বিড়াল যদি তার আওয়াজ শোনে তাহলে সে বা তারা আসবে আর নেক্সাস তাদের সাথে খেলা করতে পারবে। নেক্সাসের কন্ঠস্বর আমার ঘরের দেওয়ালের চারিপাশে ঘুরে মরে। বাইরে কোন বিড়াল নেই। থাকলেও নেক্সাসের আওয়াজ তাদের কানে পৌছাবেনা। নেক্সাসের জন্য একটা বন্ধু আনা দরকার ছিল। হয়ে উঠেনি।