ভুল বানানে ভরা ১৫ আগস্টের ব্যানার, পোস্টার ও তোরণ

আগস্টের জায়গায় লেখা ‘আগষ্ট’। জাতি বানান লেখা হয়েছে ‘জাতী’। শ্রদ্ধাঞ্জলি এখনও ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীতে যেসব ব্যানার, পোস্টার কিংবা তোরণ করা হয়েছে সেগুলোতে এমন অসংখ্য ভুল বানান চোখে পড়ছে। কেউ কেউ শোক প্রকাশ করতে ব্যবহার করেছেন কোনও জনপ্রিয় কবিতা বা স্লোগানের কয়েক পংক্তি, কিন্তু বানানের ব্যাপারে মনোযোগ না থাকায় এসব শোকের ব্যানার-পোস্টার সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠছে হাস্যরসের উৎস। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা ছেয়ে গেছে এমন ভুল বানানের ব্যানার-পোস্টারে। এসব ‘প্রচারপত্রের’ বেশিরভাগই ছাপিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন কিংবা দলের নেতাকর্মীরা।

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের সড়কমুখে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কলাবাগান শাখার পক্ষে একটি পোস্টার টানানো হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি মোশারফ হোসেন ও মো. রুবেল হোসেনের পক্ষ থেকে ছাপানো ওই পোস্টারে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি কবিতার দুটি লাইন উল্লেখ করা হয়েছে। মূল বানান অনুযায়ী কবিতাটির ওই পংক্তি দুটি হচ্ছে, ‘রক্তে ভেজা সিক্ত মাটি, বিবর্ণ এ ঘাস, তারই মাঝে শুয়ে আছে, জাতির পিতার লাশ’। কিন্তু ওই নেতার ব্যানারে তা লেখা হয়েছে, ‘ রক্তে বেজা সিক্ত মাটি বিভন্ন এই ঘাস…’, ভেজা বদলে ‘বেজা’ আর বিবর্ণ শব্দটির বদলে ‘বিভন্ন’ লেখায় ওই পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের বদলে সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরসের। ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অনেক পথিককেই দেখা গেছে এমন পোস্টার দেখে মুখ টিপে হাসতে, অনেকে আবার অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারেননি।

ভুলে ভরা ব্যানারভুলে ভরা ব্যানার

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্য একটি বড় ব্যানার লাগানো হয়েছে ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি সড়কের মুখে। সেখানে লেখা রয়েছে-‘‘কোন কোনো দিন ‘অমাসস্যার’ রাতের চেয়েও অন্ধকার হয়ে আসে। তেমনি একটি প্রভাত এসেছিল বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট…।’ এখানে অমাবস্যাকে ‘অমাসস্যা’ লেখায় শ্রদ্ধা প্রকাশ দূরে থাক বাক্যটিই হয়ে গেছে অর্থহীন। তারচেয়েও বড় ব্যাপার দুটি বাক্যের মধ্যে দিন-রাতের তালগোল তো আছেই ইতিহাসকেও পাল্টে ফেলা হয়েছে, কারণ, ১৫ আগস্ট ‘প্রভাতে’ নয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের বেলা। অসংলগ্ন ব্যানারটি যে বড় অযত্নে তৈরি তার আরেকটি প্রমাণ ইতিহাস শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘ইতিসাস’, জাতি লেখা হয়েছে ‘জাতী’, ভূখণ্ডকে লেখা হয়েছে ‘ভূখন্ড’, শ্রেষ্ঠকে লেখা হয়েছে ‘শেষ্ঠ’।শ্রদ্ধাঞ্জলির স্থলে লেখা ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’! একবার লেখা হয়েছে বাঙালি তো নিচে আবার সেই একই বানান লেখা হয়েছে ‘বাঙ্গালী’। শুধু তাই নয়, এ ব্যানারটিতে বঙ্গবন্ধুর নামের বানানটিও ভুল।

এ ব্যানারটি টাঙানো হয়েছে পলাশ মোল্লা নামের ঢাকা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তরের এক নেতার সৌজন্যে।

রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ স্কয়ার হাসপাতালের দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার ওপরে একটি তোরণ বানানো হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের সৌজন্যে। সেখানে লেখা রয়েছে। সেখানেও ‘আগস্ট’ বানানটি লেখা হয়েছে ‘আগষ্ট’। এমনকি ফজলে নূর তাপসের পেশাগত পরিচয় ব্যারিস্টার বানানটিও ভুল করে লেখা হয়েছে ‘ব্যারিষ্টার’।

শুধু শোকদিবসেই নয়, প্রতিবছর প্রতিটি জাতীয় দিবসে রাজধানীসহ সারাদেশেই চোখে পড়ে এমন ভুলে ভরা পোস্টার ব্যানার লিফলেট।

এমন অশুদ্ধ বানানে করা পোস্টার ব্যানার শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে হাস্যরস তৈরি করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন  বলেন, ‘এগুলো স্থানীয় নেতাদের নির্দেশে পাড়ার লোকজন করে থাকে। ভুল বানান নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তবে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের ব্যানার, পোস্টার কিংবা তোরণে এ ধরনের বানান ভুল মেনে নেওয়া যায় না। এগুলো নিয়ে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক  বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ব্যানার, পোস্টার করবেন, তাদের বানান নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নাম যেখানে ব্যবহার করা হয়, সেখানে আরও সচেতনতা জরুরি।’

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এসব ব্যানার, পোস্টার ও তোরণ একেবারেই ওয়ার্ড, থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা করে থাকেন। তাই এগুলো ভুলভাবে সন্নিবেশিত হয়। এটি দুঃখজনক। অনাকাঙ্ক্ষিত।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। সবকিছু মনিটরিং করা যায় না।

 

সুত্র- বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *