অপরাধে গর্বিত জাতী

অপরাধের বিরুদ্ধে যারা রুখে না দাঁড়ায় তারা অপরাধ হতে সাহায্য করে। সাড়া বাংলাদেশে প্রতি মূহুর্তে নানা ধরণের অপরাধ ঘটে যেতে দেখেও যেসব মানুষ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে তারা সবাই এইসব অপরাধের সহযোগী এবং অপরাধীদের সাথে সমানভাবে অপরাধী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিলিয়ন ডলার চুরি গেছে – বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কিছু করতে পারেন নি। প্রতিবাদ করতে পারেননি বা যারা চুরি করেছে তাদের ক্ষমতা থেকে এক চুল নড়াতে পারেননি – বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কি গর্বিত?

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে। উৎপাদন শুরু হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশী হিসাবে আপনি এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করতে পারেননি। সুন্দরবণের ধবংস ঠেকাতে পারেননি । বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কি গর্বিত?

বাঁশখালীর গন্ডামারা গ্রামের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ শুরু করার অনুমতি পেয়ে গেছে। গন্ডামারা গ্রামের মানুষেরা প্রতিবাদ করার ফলে কিছু গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সকল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করা হয়েছে, পুলিশে গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছে, গন্ডামারা গ্রামে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হলে সুন্দর একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সবাই গুলশাণের নাম জানে কিন্তু অনেকেই বাঁশখালীর গন্ডামারা গ্রামের নাম জানেনা। এই গ্রামে গুলি করে মানূষ হত্যা করা হলে সে খবর রাখেনা। সাড়া দেশে প্রতিদিন কতজন নিরীহ মানুষকে জনগণের খাজনার টাকায় কেনা বুলেট দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে সে খবর না রাখার জন্য আপনি কি গর্বিত?

আইন শৃংখলা বলতে বাংলাদেশে কিছু নাই। চোর, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজেরা বাংলাদেশের আদালত নিয়ন্ত্রন করে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অপরাধির ভূমিকা পালন করছে। আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীরা যেভাবে জনগনের উপরে নিপীড়ন চালাচ্ছে তাতে যেকোন দাগী খুনের আসামী লজ্বা পেয়ে যাবে।  বাংলাদেশী হিসাবে আপনি এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেন নি। বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কি গর্বিত?

বাংলাদেশের সম্পদ আপনি রক্ষা করতে পারেননি । বাংলাদেশের জনগন হিসাবে নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেন না। নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেননি, মানবাধিকার প্রতিষ্টা করতে পারেননি, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্টা করার জন্য চেষ্টাও করেননি।  নিজেকে বা নিজের ভাইকে রক্ষা করতে পারেননি, নিজের ধর্ম ইসলামকে রক্ষা করতে পারেননি,  বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কি গর্বিত?

সাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জেলগুলোতে বাংলাদেশীরা আটকে আছে, মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বাংলাদেশী অবৈধ থাকার কারণে দৌড়ের উপরে আছে, অনেক নারী শ্রমিকেরা যৌন নীপিড়নের শিকার হচ্ছেন, নিজেদের দেশের অপরাধীদের দ্বারা প্রতারিত ও পাচার হয়ে। বাংলাদেশী হিসাবে আপনি কি গর্বিত?

শুধু ক্রিকেট খেলার বিজয়েই আপনাদের সব গর্ব নিহিত। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে আসা কিছু ছেলে এখন ভাল ক্রিকেট খেলছে। আর সেইসব অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলেদের বলিং আর ব্যাটিং আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেয়ে বিজয় বাংলাদেশকে বা বাংলাদেশের কিছুই রক্ষা করতে পারেনি।
রক্ষা করতে পারেনি ২৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক রিজার্ভ, রক্ষা করতে পারেনি সুন্দরবন, রাখতে পারেনি নদীর পানি, বন্ধ করতে পারেনি সীমান্তে ভারতীয় বর্ডার গার্ড দ্বারা বাংলাদেশী হত্যা, বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশের গ্রেফতার ব্যণিজ্য, ক্রসফায়ার, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষন ও দুর্নীতি। বন্ধ করতে পারেনি খাদ্যে ফরমালিন, পথে ঘাটে নদী নালাতে ভেসে থাকা মানুষের লাশের যোয়ার, বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশে ভারতের স্থায়ী বাজার, বন্ধ করতে পারেনি বাংলাদেশে ভারতের উপনিবেশিক আউটসোর্সিং। ক্রিকেট খেলার বিজয়ে যদি দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে কোনই পরিবর্তন না আসে তাহলে আর কিসের এত লাফালাফি আর কিসের গর্ব? এ বিজয় অনেকটা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের বিজয় দিবসের মত ভুয়া, ফাঁকা, আই ওয়াশ (eye wash), সান্তনা পুরস্কার হিসাবে এক হাতে পতাকা আর অন্য হাতে হাতকড়ি নিয়ে শাক দিয়ে ঢাকা মাছ।

নাকি লজ্বার পরিবর্তে এখন গর্ব শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে?
নাকি অপারগতা, স্বার্থপরতা, পাশবিকতা এইসব শব্দগুলোর পরিবর্তে “গর্ব” শব্দটি ব্যবহার করে সবাই গর্বিত?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *